অঞ্জনা বাস থেকে নেমে রিক্সা ধরল। শনি মন্দিরটা ছাড়িয়ে বটতলা বাজারের ভীড় পেরিয়ে চৌহাটি যখন পৌঁছলো ততক্ষণে বেলা প্রায় পড়ে এসেছে। রাজপুর মিউনিসিপ্যালিটির এই দিকটায় এখনো বেশ গ্রাম গ্রাম ভাব। ফাঁকা ফাঁকা বাড়িঘর। মাঝে মাঝে গাছপালা। দুএকটা বাঁশঝাড়। এখনো বেশ কিছু ডোবা-পুকুর বোজাতে বাকি রয়ে গেছে। এখনো সাবেক কলকাতা থেকে কেউ কেউ পাখীর ছবি তুলতে আসে। পাড়াটা বেশ ভালো লাগে অঞ্জনার।
তবে শুধু ভীড়ভাট্টা কম বলেই নয়। বাড়িভাড়াও এখানে অনেক কম। আর সেই কারণেই এই ছোট্ট বাড়িটার একতলাটা ভাড়া নিয়েছে সে এবং বাঁকুড়ার মেয়ে সুনন্দা। সে বারুইপুরের স্কুলে পড়ায়। সুনন্দা টালিগঞ্জের স্কুলে ড্রইং টীচার। বারোশো টাকা ভাড়ার ঘর দুটোকে ছবির মত সাজিয়ে রাখে সে।
মে মাস, বৈশাখের শেষ। ঠান্ডা জলের ধারায় শরীরে জড়িয়ে থাকা আগুনের হল্কা ধুয়ে ফেলল অঞ্জনা। তারপর হলুদ ম্যাক্সিটা জড়িয়ে স্নানঘর থেকে বেরিয়ে বারান্দায় এলো। সেখানে এক কোণে দুটো চড়াই কিচির মিচির করছে।
‘পাখীগুলো রোজ আসে আজকাল।’ সুনন্দা বলল।
‘তোর জন্যই আসে।’
‘না রে, মানুষ দেখে আসে। যে বাড়িতে মানুষ বাস করে না, সেখানে ওরা যায় না।’
‘একটু খাবার দিস ওদের।’ অঞ্জনা প্রায় অনুনয় করে।
‘দিই তো। চালের খুদ, রুটির টুকরো। কিন্তু ওরা খায় না।’
‘এখানে তো গাছে গাছে অনেক ফল, পোকামাকড় খুঁজে পায়। তাই হয়তো। কিন্তু এই গরমে একটা পাত্রে একটু জল তো দেওয়া যেতে পারে?’
‘দিয়ে দেখেছি। তাও খায় না।’
‘মানুষকে বোধহয় বিশ্বাস করে না ওরা।’
‘তা হতে পারে।’
‘কেন বলতো?’
‘মানুষ ভোটে দাঁড়ায় তো! তাই বোধহয়….