নারী আর শাড়ি নিয়ে ভারী গোলমাল হলো কয়েকটা দিন।
যুযুধান রথী মহারথীদের মাঝে সন্ধি হবার আশা অতীব ক্ষীণ,
আজ অবধি কেই বা কোনো তর্কে হেরেছে,
বিতণ্ডা সমাপনে যে যার ধারণা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছে,
এখানেও ব্যত্যয় নেই। তবু এই সংঘাত ভালো,
মগজে ধূসর কোষ কেউ তো শানালো,
যুগের গণিতে ভারী সরল হিসেব,
প্রতি রামমোহন পিছু থাকবেনই অন্তত একজন রাধাকান্ত দেব,
কে ঠিক কে ভুল, সমকাল সে বিচার কদাচিত করে ,
আগামী কেবল জানে,
কাকে বিস্মৃতি ধুলোচাপা দেবে,
মূর্তি উঠবে কার গড়ে।
সুতরাং অপেক্ষা করা যাক, যুগের মর্জি কাল কোনদিকে হাওয়া দেবে পালে,
ভাবী নারীই জানে বিম্বে দেখবে কাকে আয়নায় সটান তাকালে,
কিন্তু এ তালেগোলে গাল খেয়ে গেলো যে আরেক বেচারা,
তাকে নিয়ে দেখো কেউ কিছু লিখছে না..
সভ্যতা হয় না কি ল্যাম্পপোস্ট ছাড়া?
ল্যাম্পপোস্ট। বাতিস্তম্ভ। যখনই পত্তন কেউ করেছে শহর,
তখনই সড়কে তারা সটান হয়েছে খাড়া,
নগর-যাপন বড় আলো-নির্ভর,
কোন পথ কোনদিকে কতখানি যায়, আঁধারে হদিশ দেয় পথ-বাতিদান,
ল্যাম্পপোস্ট শেষ হলে চেনা পথও শেষ,
অচেনা হাতড়ে তার পরে অভিযান,
ল্যাম্পপোস্ট বলে দেয় মানুষ রয়েছে কিছু কাছেপিঠে আনাচেকানাচে,
রাতের পথিক জানে অতন্দ্র-সাথী হয়ে চাঁদ ছাড়া কারা জেগে আছে।
দরিদ্র কত ছেলে পণ্ডিত হলো পরে পথ-আলো জ্যোৎস্নায় পড়ে,
এখনো দেখতে পাবে গাঁ-ঘেষা স্টেশনের নিশাকালে ফাঁকা চত্বরে,
বাতির নিচেই কারো বই-খাতা খোলে, একুশ শতক ঘরে বিজলি আনেনি,
ল্যাম্পপোস্ট অনিমেষ লেখে স্নেহভরে,
আঁধারের থেকে শুরু নানারঙা আলোর কাহিনী।
ঘরে ঢুকবার আগে সিগারেটে শেষ সুখটান দেওয়া গার্হস্থ্য
ল্যাম্পপোস্টের জানা,
‘এসে গেছি, চলে এসো’, প্রেমসাথী বুঝে নেয় অস্থায়ী বাইক-ঠিকানা,
সুদূর প্রবাসে গিয়ে অকালে হারানো ছেলে কৈশোর ফটো থেকে চেয়ে থাকে,
বাপ এসেছেন পথে মা’কে লুকিয়ে, আলো-চিকচিকে ভেজা চোখ বলে দেয়,
ভোলেননি একফোঁটা তাকে।
কুকুরের গু-মুত, মাতালের বমি আর শরীরী পসরা দরদাম,
শুধুই এটুকু নিয়ে কাটায় না দিন আলো-থাম,
মিলন আর বিচ্ছেদ,
একাকী বিষাদ বা জমাটি জটলা,
দ্রুত চোরাচুম্বন,
ছিঁড়ে কুটি প্রেমচিঠি ঝগড়াঝাঁটি,
ল্যাম্পপোস্ট মনে রাখে সব খুঁটিনাটি,
মানুষকে কোনোদিন যে সব গল্পগাছা বলবে না সে,
নগরীর শুরু থেকে চুপচাপ রয়ে গেছে মানুষের পাশে।
ল্যাম্পপোস্ট নিয়ে তাই আলোচনা হোক।
নারীকে রেহাই দাও,
সেটাই করুক মেয়ে যেটা ভালোবাসে।