একটা জটিল আর অত্যন্ত কুচুটে কাহিনি
______________________________
আমার নিজের বংশের শাখাটিতেও পাশকরা উকিল ছিলেন। এক না, দুই দুই জন। দুজনই স্বর্গত। একজন আমার পিতামহ, অন্যজন আমার খুল্লতাত, আমার পিতৃদেবের যমজ ভাই।
পিতামহ ওকালতি পাশ করলেও পরবর্তী কাজটাজ বিবেচনা করলে সেই অর্থে আদৌ আইনজ্ঞ ছিলেন বলে মনে হয় না। কিন্তু খুড়ামশাই বিলক্ষণ আইনজ্ঞ ছিলেন। ব্যাঙ্কশাল কোর্টের সরকারি আইনজীবী ছিলেন রিটায়ারমেন্টের আগে অবধি। তারও বহু আগে বেলঘরিয়ার ইনু মিত্তির বা এই জাতীয় কোনও নামের দুষ্কৃতীকে শায়েস্তা করার আইনি ব্যাপারে তিনি জড়িত ছিলেন। সেই গুণ্ডাটি, আজ লিখতে গিয়ে মনে হচ্ছে তত নামকরা কেউ ছিলোও না। কেন বলছি? নইলে, সর্বজ্ঞ গুগল বাবুর কাছে তার উল্লেখমাত্র নেই কেন?
যা হোক, যে কথা বলতে গিয়ে এত কথার অবতারণা সেটি বলি। কাকাকে কোনও আইনি ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি তা শুনতেন না তা নয়, মন দিয়েই শুনতেন। কিন্তু উপদেশ চাইলে দিতে চাইতেন না। দুটি কথা বলতেন। তার প্রথমটি যে কোনও জাগতিক ব্যাপারেই প্রযোজ্য বলে মনে করি। দ্বিতীয় কথাটি আমার লেখার শেষে বলব।
প্রথম কথাটি হল, সেধে কারওর উপকার করতে নেই।
তার আগে ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ একটু বলে নিই। আমার ডাক্তারি ডিগ্রি মানে এমডিতে একটা আইনি অমীমাংসিত প্যাঁচ জড়িয়ে আছে। মহামান্য কলকাতা হাইকোর্ট একটা ইন্টারিম অর্ডার দিয়ে আমাকে এমডি কোর্সে ভর্তি করার নির্দেশ দেন। এই জাতীয় ভর্তির পরে প্রতিটি স্তরে ইউনিভার্সিটি তার তরফে যা যা বাধা দেওয়ার দিতে থাকে। যেমন ভর্তি করতে অর্ডার দিয়েছে, পরীক্ষা তো নিতে বলেনি। ইত্যাদি প্রভৃতি। প্রত্যেক বারই পড়াশুনো, সংসারধর্ম, চাকরি ইত্যাদি সামলে আদালতের নির্দেশ আনতে হয়েছি। পরীক্ষাও দিয়েছি। লোকশ্রুতিতে শুনলাম নাকি প্রথম হয়েছিলাম। প্রমাণ নেই। ইউনিভার্সিটির ওই এক কথা, পরীক্ষা নিতে বলেছে, মার্কশিট তো দিতে বলেনি। মনের দুঃখ চেপে দিন কাটাচ্ছি। আমার পিতৃপ্রতিম অ্যাডভোকেট আরএন মিত্র মারা গেলেন এরই মধ্যে। আমি হতোদ্যম। একদিন ইউনিভার্সিটির তরফে চিঠি এলো। সমাবর্তনে ডাক এসেছে। আমি সেই কনভোকেশনে ডিগ্রির সার্টিফিকেটটা কোনওক্রমে হস্তগত করে সুট করে অনুষ্ঠান শেষের আগেই কেটে পড়লাম। পাছে কেউ কান ধরে, ‘অ্যাই, তুই তো সাবজুডিস, দে আমাদের কাগজ ফিরিয়ে দে’ বলে কেড়ে নেয় সেই সাত রাজার ধন এক মাণিক ডিগ্রিটাকে।
শেষ অবধি যদি ইউনিভার্সিটি কেসটাকে শেষ অবধি টেনে নিয়ে যায়, আর আমার তো সুপ্রিমে যাবার রেস্ত বা যোগ্যতা কিছুই নেই, ভেবেই অস্থির।
আনুপূর্বিক ইতিহাস শুনিয়ে কী করণীয় জিজ্ঞেস করায়, যেটুকু মনে পড়ে মানে আমি যা বুঝেছিলাম কাকার কথা থেকে, তা হল, কিচ্ছুটি করার দরকার নেই। ওরা ভুলে যাবেই। ডিগ্রির কাগজই যথেষ্ট। মার্কশিটের জন্য মন খারাপ করিস না। কুড়ি তিরিশ বছর ডিগ্রি ভোগদখল করলে তোর একটা অধিকার সত্ত্ব জন্মে যাবে। কাকার উপদেশ মেনে অ্যাদ্দিন অবধি দিব্যি চলে গেল।
যে কথা বলছিলাম। হ্যাঁ, ওই সেধে উপকার করতে গিয়ে একাধিক বার ইয়ে হয়েছি।
আমার এক আত্মীয়া বলতেন, ওদের বাড়ি আর যাব না। কিল মেরেছে, চড় মেরেছে, মুখে থুতু দিয়েছে। এর পর গেলে যদি অপমান করে!
সেই রকমের আশঙ্কা হয়, সেধে উপকার করতে গেলে।
কাকার দ্বিতীয় যে কথাটা শেষে বলব ভেবেছি, ডাক্তার বা উকিল হতে গেলে, লজ্জা, ঘেন্না অপমানের তোয়াক্কা করলে চলবে না।
এখন বুঝি।
লগে রহো মুন্নাভাই।
আরে আমিও তো ডাক্তার ছিলাম একদা। না কি?
আর সেধে ক্ষতি