বন্ধু,
ইতিহাসের পাতায় মাত্র আটাত্তর বছর আগে ফিরে যাওয়া। আজও মানবমননে অমলিন আধুনিক মানব সভ্যতার ইতিহাসের সর্বোচ্চ কলঙ্কময় নরমেধ যজ্ঞের দুর্বিষহ দগদগে স্মৃতি। ১৯৪৫ সালের ৬ই এবং ৯ই আগস্ট। লিটিল বয় আর ফ্যাট ম্যান– দুই পারমাণবিক বোমার আঘাতে নিমেষে শেষ হয়ে গেল জাপানের দুটো শহর। মারা গেল চার লক্ষেরও বেশি মানুষ। তেজস্ক্রিয় বিকিরণে পঙ্গু হয়ে গেল কয়েকটা প্রজন্ম। মানবতা খুনী, চূড়ান্ত আধিপত্য কামী, যুদ্ধবাজ মার্কিন রাষ্ট্রপতি হ্যারি ট্রুম্যান যখন নারকীয় আনন্দে উল্লাসে মত্ত, তখন আতঙ্কে, আর্তনাদে, ক্ষোভে ফুটছে বিশ্বমানবতা। আজও ক্ষমা চায় নি ট্রুম্যান এর উত্তরাধিকারীরা। উল্টে আজও যুদ্ধের দামামা বাজানো চলছে সমান উচ্চগ্রামে, মার্কিন রাষ্ট্রশক্তির প্রত্যক্ষ প্রণোদনায়। বদলেছে ধরণ, বদলেছে মাধ্যম। পুরো বিশ্বকে হস্তগত করে, সমস্ত দেশকে আর্থিক ও রাজনৈতিক ভাবে পরাধীন করে রাখার উদগ্র লোলুপতা। যেখানেই প্রতিবাদ, সেখানেই যুদ্ধের হুমকি। রাষ্ট্রীয় মদতে নরসংহার আজও একইভাবে চলছে, বিরতি নেই। মানুষকে ভাগ করে, আর্থিক শোষণকে তীব্র করে এবং খেটে খাওয়া মানুষের ঘাম রক্তের শ্রমমূল্য লুঠে নিয়ে সর্বোচ্চ মুনাফার নিশ্চয়তা রক্ষা করার যুদ্ধ চালাচ্ছে তারা সমান তালে।
সেই হ্যারি ট্রুম্যানের ভাবনার প্রতিমূর্তিরা পৃথিবী জুড়ে আজও বিদ্যমান। বিরুদ্ধবাদী, শান্তিকামী মানুষের স্বরও বাড়ছে বিপ্রতীপে। এক অক্ষের স্বৈরাচারী আধিপত্য মানতে নারাজ বিশ্ব জোড়া সংগ্রামী শ্রমজীবী জনতার বিপুল অংশ।
আমাদের দেশও আজ কি কোনোভাবেই এর বাইরে? কি আমাদের অভিজ্ঞতা? মার্কিন রাষ্ট্রশক্তির রক্তচক্ষুর কাছে শিরদাঁড়া বিকোনো চলছে ।বন্ধক দেওয়া আছে দেশের আত্মসম্মান। আর্থিক ,রাজনৈতিক মতাদর্শগত প্রশ্নে অদ্ভুত একতা। তাঁদেরই নির্দেশিত ধান্দা পুঁজির রমরমায় মানুষ মরছে। ভুগছে ভারতবাসী।বৈষম্য চওড়া হচ্ছে। জাতি ধর্ম লিঙ্গের মৌলবাদী আগ্রাসন ও হানাহানিতে মানুষ সংক্রামিত হচ্ছে, মানুষ খুন হচ্ছে প্রতিনিয়ত । যুদ্ধ চলছে অবিরত।ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র বনাম সংগ্রামী জনতার। অন্যরকম যুদ্ধ চলছে গণতান্ত্রিক মানুষের মননে–একদিকে উগ্র মতাদর্শের ভোগবাদী হাতছানি, গোয়েবলসীয় বচনে আকস্মিক মোহগ্রস্ততা আর অন্যপাশে বিবেকের আহ্বানে মানবতার মুক্তি, সমাজ জীবনে শান্তির খোঁজে যুদ্ধবাজ দর্শন থেকে মোহমুক্তি।
মানবতার মতাদর্শই আর শ্রমজীবীর আপোসহীন সংগ্রামই পারে দেশ জুড়ে রাষ্ট্রের মদতপুষ্ট যুদ্ধ উন্মাদনাকে থামাতে। চিরতরে বন্ধ হতে পারে বহুমাত্রিক মানুষ খুন। একই সাথে ব্যর্থ হতে পারে শিক্ষিত মানুষের মননের উপর রাষ্ট্রীয় অনুপ্রেরণায় আক্রমণ, নষ্ট হতে পারে যুদ্ধ উপচারের সব জমানো যোগান।
আমরা চিকিত্সক। মানুষকে বাঁচাতে পারাতেই আমাদের আনন্দ। হ্যাঁ, আমরাই পারি, পাশে থাকা সহনাগরিককে সঙ্গে নিয়ে, মানবতার অটুট প্রাচীর নির্মাণ করে সব যুদ্ধবাজদের, প্রতিস্পর্ধী মশালের আগুনে খাক করে দিতে। চাই না আর একটাও নাগাসাকি বা হিরোশিমা । চিরতরে বন্ধ হোক মানবতার মৃত্যু। শেষ হোক বৈষম্য, বিভেদ, জাত ধর্মের দাপাদাপি। প্রতিষ্ঠিত হোক প্রকৃত মানবাধিকার , সমানাধিকার। মানুষ বড় কাঁদছে, সমাজটা একটু বদলাক– এই হোক আজকের দিনের স্মরণে শপথ। আমাদের। শুভবুদ্ধি সম্পন্ন সমস্ত সুধী গুণিজনের।