Skip to content
Facebook Twitter Google-plus Youtube Microphone
  • Home
  • About Us
  • Contact Us
Menu
  • Home
  • About Us
  • Contact Us
Swasthyer Britte Archive
Search
Generic filters
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Menu
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Menu
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Search
Generic filters

মাতঙ্গিনীর কুয়ো

IMG_20220508_105220
Dr. Aniruddha Deb

Dr. Aniruddha Deb

Psychiatrist, Writer
My Other Posts
  • May 8, 2022
  • 10:53 am
  • No Comments

বৃদ্ধা মাতঙ্গিনী আমার হাতে চাবির গোছাটা দিয়ে বললেন, একটা কথা কই দেওয়া ভালো। সাঁঝের আন্ধার পড়তি না পড়তি সব ঘরেতে ধুনো দিয়া গলার জোর লাগায়া চিৎকার করি, দূর হ, দূর হ, বলি হাঁক পারবা। এ গাঁয়ে তেনাদের প্রকোপ বড় বেশি।

আমার পাশে বসা পিনাক একটু কাঁটা হয়ে উঠল। ওর বয়সটা এখন সেইখানে যখন অন্ধকারে অস্বস্তি বাড়ে, তবে অত ছোটো নয়, যে বাইরের লোকের সামনে মাকে এ–কথা সে–কথা জিজ্ঞেস করবে।

একটু হেসে জানতে চাইলাম, গ্রামের সবাই কি সন্ধেবেলায় একইভাবে ধুনো দিয়ে তেনাদের তাড়ায়?

কাঠ কাঠ গলায় মাতঙ্গিনী বললেন, সনঝে হলিই বোঝবা। শহুরে মেয়েছেলে — ওস্তাদি বারোয়ে যাবা দুই দিনে।

শহুরে মেয়ে আমি নই, কিন্তু সেদিকে না গিয়ে বললাম, তা বলিনি। সন্ধেবেলায় কী করতে হবে তা যদি অন্যদের দেখে শিখি তা হলে সহজ হবে।

মাতঙ্গিনী বোধহয় খুশি হলেন, কিন্তু মুখে শুধু বললেন আজকের দিনটা তিনি রোজের মতো ধুনো দিয়ে যাবেন, এবং সেইসঙ্গে ঠিক কিভাবে ‘দূর হ’ বলতে হয়, তা–ও শিখিয়ে দেবেন যাতে কাল থেকে আমার ভুল না হয়।

কথামতো ছ’মাসের ভাড়া আগাম দিয়ে তবেই চাবির দখল পেয়েছি। যেভাবে টাকা ক’টা গুনে নিয়ে কোমরের গেঁজেতে গুঁজে তবেই চাবি বের করেছেন, তাতে মনে হলো না ‘তেনাদের’ কথা আগে বলেননি বলে বাড়ি ভাড়া নিতে না চাইলে টাকা ফেরত দেবেন। অবশ্য ভূত–টুতের ভয় আমার নেই, বরং মাতঙ্গিনী সম্বন্ধে যা যা শুনেছিলাম সবই মিলে যাওয়াটা আমার পক্ষে আরামদায়কই ছিল।

শুনেছিলাম মাতঙ্গিনী ঘর ভাড়া দেবার সময় যেমন, পরেও কোনও দিন কিছু জিজ্ঞেস করবেন না এবং ভাড়াটের ব্যক্তিগত জীবন সম্বন্ধে কোনও কৌতুহল প্রকাশ করবেন না। এ দুটোই আমার কাছে কতটা স্বস্তির তা যে আমাকে চেনে না সে বুঝবে না। আমাদের দুজনের সরকারি পরিচয় পত্র সঙ্গেই ছিল, কিন্তু দেখতে চাইলেন না। টাকাটা গুনে নিলেন কেবল, আর যেমন শুনেছিলাম — আমি কে, কেন এসেছি, কোথায় থাকতাম, আত্মীয়স্বজন কে কে আছে, সাত বছরের একটা ছেলেকে নিয়ে গ্রামদেশে একা কেন — এসব কিছুই জানতে চাইলেন না। একটা ধাপ পার হলাম। এর পরের ধাপ প্রমাণসাপেক্ষ। মাতঙ্গিনী এমনই মানুষ যে তাঁর বাড়ির ভাড়াটে সম্বন্ধে গ্রামের লোকেও অনর্থক কৌতুহল প্রকাশ করে না — এইসব শোনা কথা সত্যি কিনা জানতে হবে…

বাড়িটা মন্দ নয়। ছোটো, কিন্তু দোতলা। বাগানটা বড়ো নয়, আবার এক–চিলতেও নয়। বাগানের বাইরের দিকে দুটো ঘর। শুনেছিলাম একসময় এই ঘর মাতঙ্গিনীর ছেলের বউয়ের ছিল। কী করত সে এই ঘরে? জিজ্ঞেস করিনি। জানতাম মাতঙ্গিনী বলবেন না, আর গ্রামবাসীদের এসব প্রশ্ন করা আমার পক্ষে শুধু কঠিন নয়, অসম্ভব। কেন না তাহলেই তাদের কাছে নিজের পরিচয় দিতে হবে — সে সম্ভাবনা বন্ধ করতেই তো মাতঙ্গিনীর কাছে বাড়ি ভাড়া নিতে আসা।

তাছাড়া মাতঙ্গিনীর ছেলের বউ বাগানের দুটো ঘরে ঠিক কী করত, তা তো আমি জানি।

গ্রামে যেমন হয়, বাগানের পাঁচিলের গায়ের দরজাটা বাড়ির দরজার মতোই। দরজার উপরে শিকল। শিকল তুলে ওপরের আংটাতে লাগানো, তাতে ছোটো তালা ঝুলছে। তালা খুলে ঝনাৎ করে শিকল নামিয়ে দরজা খুললাম। আড়চোখে তাকিয়ে দেখলাম পিনাক হাঁ করে শিকলটার দিকে চেয়ে আছে। দরজা বন্ধ করার এরকম ব্যবস্থা সে আগে দেখেনি। গ্রামের রাস্তা দিয়ে হেঁটে আসতে আসতে দেখেছিলাম রাস্তার দুধারে বাড়িতে বাগানের অভাব নেই এবং অনেকের বাগানেই যত্ন করে ফুলগাছ লাগানো আছে। প্রায় কারওরই বাগানের চারপাশে ইঁটের পাঁচিল নেই। দর্মা বা বাখারির বেড়া। যারা একটু বেশি সচ্ছল, তাদের বাগান ঘেরা কাঠের খুঁটির গায়ে তার পেঁচিয়ে। এই বাড়ি দুটো — অর্থাৎ যে বাড়ীটা আমি ভাড়া নিলাম, আর যে বাড়িতে মাতঙ্গিনী নিজে থাকেন, কিন্তু তেমন বেড়া দিয়ে ঘেরা নয়। দুটো বাড়ির বাগানের গায়েই কম করে দেড় মানুষ উঁচু পাঁচিল। আশ্চর্য! রাস্তার দিকে পাঁচিল তবু বুঝি, যদিও গ্রামে অন্য কেউ তেমনভাবে বাড়ি এবং বাগান আড়াল করেনি, কিন্তু এ দুটি বাড়ির আশেপাশে আর কোনও বাড়ি নেই। যতদূর শুনেছি চারপাশের সব জমিই মাতঙ্গিনীর, ফলে সেগুলি অব্যবহৃত পড়ে আছে। তবু কেন এত আব্রুর প্রয়োজন? আমি জানি।

বাইরের দরজা দিয়ে ঢুকে সামনে এবং ডান দিকে আমার ভাড়া নেওয়া বাড়ি। দরজার গায়েই বাঁদিকে বাগানের ঘর দুটো এবং বাগান। বাগানের জমিতে ঘাস নেই, কারণ তিনটে গাছ আকাশ ঢেকে রয়েছে। গেরস্ত বাড়িতে এরকম দু–তিনটে গাছ প্রায়ই দেখা যায়। একটা আম, একটা কাঁঠাল, আর একটা বেল। বাগান না বলে উঠোন বলা ভালো। দেখলাম ঝাঁট দিয়ে পরিষ্কার করা মাটি তকতক করছে।

ভেতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করতে করতে বুঝলাম রাস্তার ওপারের বাড়ির দোতলার বারান্দা থেকে সাবধানে কেউ আমাদের নজর করছে। সরাসরি তাকাইনি তাই মাতঙ্গিনী বুঝতে পারেননি এবং সাবধান হয়ে আরো বেশি লুকিয়ে পড়েননি।

পিনাককে বললাম, উঠোনটায় তোমার খেলার বেশ জায়গা হবে, তাই না? পিনাকের বড় বড় চোখ চারদিকটা গিলছিল। বলল, দিদাটা যে বলল বাগান আছে?

আমি বললাম, এটাকেই বাগান বলেছিল।

পিনাক গম্ভীর হয়ে বলল, কিন্তু এটা বাগান নয়। বাগানে ফুল থাকে।

আমি ঘাড় নেড়ে পিনাকের কথাটা মেনে নিলাম। উঠোনের শেষে কুয়োতলাটা এখান থেকেই দেখা যাচ্ছে। আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বললাম, ওখান থেকে আমাদের চানের আর খাবার জল তুলতে হবে। ওটা কিন্তু বিপজ্জনক জায়গা। ওখানে তুমি যাবে না। কেমন?

পিনাক শান্ত ছেলে। বারণ করলে কথা শোনে। বলল, তুমি বরং ওর চারপাশে একটা গণ্ডি এঁকে দিও, যার ভেতরে আমি যাব না।

আমি বললাম, এটা ভালো বুদ্ধি। তাই করব। মনে মনে ঠিক করলাম, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, কুয়োটা ঢেকে দিতে হবে।

স্নানের ঘর বাড়ি থেকে দু’পা দূরে। রাতে আর বৃষ্টি পড়লে যেতে অসুবিধে হবে। কুয়োতলাটার দিকের বাড়ির পাশের দেওয়ালে নিশ্চয়ই রান্নাঘর থেকে বেরোবার দরজা আছে, তবে আমরা সেদিকে না গিয়ে খানিকটা এগিয়ে ডানদিকে ঘুরে দাওয়ায় উঠলাম।

চওড়া খোলা দাওয়া সোজা গিয়ে বাঁ দিকে ঘুরে রান্নাঘরের সামনে আরও চওড়া হয়েছে। সুন্দর করে বানানো বাড়ি, যদিও খুব বেশিদিন কেউ এখানে থাকেনি। এটা ছিল মাতঙ্গিনীর স্বামীর আড্ডার জায়গা। জমিদার না হলেও জমিদার–সুলভ হাবভাব ছিল ভদ্রলোকের। উনি অকালে মারা যাবার পর এ বাড়ি বসতবাড়ি হয় মাত্র কয়েক বছরের জন্য। মাতঙ্গিনীর ছেলে আর ছেলের বউ এখানে থাকত। এখন আর থাকে না।

দাওয়া থেকে ভেতরে যাবার দুটো দরজা। একটা বাইরে থেকে তালা দেওয়া, অন্যটাতে কেবলমাত্র হুড়কো আঁটা। নিশ্চয়ই ভেতর থেকেও বন্ধ। তালা খোলার আগে আমি তালা–ছাড়া দরজার হুড়কোটাও খুলে দিলাম। ভেতরে ঢুকে সব ঘরের দরজা জানলা খুলে আলো হাওয়া চলতে দিতে হবে। কতদিন পরে বাড়ি ঘর খোলা হচ্ছে কে জানে!

ভিতরে ঢুকে কিন্তু একটু অবাকই হলাম। ছোটো ছোটো ঘরগুলো বেশ পরিষ্কার। নিয়মিত ঝাড়ু দেওয়া হয়। চকচকে লাল সিমেন্টের মেঝেতে তিন ইঞ্চি চওড়া কালো বর্ডার। গরাদ দেয়া ছোটো ছোটো কাঠের জানলা গাঢ় সবুজ রঙের। বন্ধ বলে ঘরে আলো বেশি নেই, তাই পিনাককে বললাম, প্রথমেই চলো, জানলা খুলি।

পিনাক বলল, ওগুলো কী মা?

ওপরে তাকিয়ে দেখি ছাদের কাছে গোল ঘুলঘুলি, তাতে সিমেন্টের জাফরি। আজকালকার বাড়িতে এসব আর থাকে না। মনে পড়ল ছোটোবেলার বাড়িতে এমন ঘুলঘুলির ভেতর দিয়ে রাতের অন্ধকারে আলো এসে উল্টোদিকের দেওয়ালে পড়ত, আর আমি আর দাদা ভয় পেতাম। বলতাম, রাক্ষসের চোখ!

দেওয়ালে ঘুলঘুলি কেন থাকে পিনাককে বুঝিয়ে দুজনে মিলে সব ঘরের দরজা জানলা খুললাম। নিচতলায় দুটো ঘর, একটা জানলাবিহীন ভাঁড়ার ঘর, আর সবশেষে রান্নাঘর। তারপরে দু’জনে ওপরতলায় গেলাম। সেখানে নিচের দুটো ঘরের ওপরেও দুটো ঘর, কিন্তু রান্নাঘর এবং ভাঁড়ার ঘরের ওপরে বড়ো একটা ঘর। পিনাককে বললাম, এই বড়ো ঘরটা কি আমাদের শোবার ঘর হবে?

পিনাক গম্ভীর ভাবে ঘাড় নেড়ে বলল, না আমরা ওই ঘরটায় ঘুমোব। বলে একেবারে বাইরের দিকের ঘরটার দিকে আঙ্গুল তুলল। ও জানে আমি সব কথাতেই কারণ জিজ্ঞেস করি, তাই না জানতে চাইতেই বলল, ও ঘরে আলো বেশি। হাওয়াও বেশি হবে।

কথাটা ঠিক। মেনে নিলাম। নিচের ঘর থেকে ব্যাগগুলো নিয়ে এলাম ওপরে। ট্রাক–ওয়ালাকে বলা হয়েছে আমরা পৌঁছে ফোন করলে তবেই রওয়ানা দেবে। ফলে আজ গাড়ি ছাড়লে আগামীকাল সকালের আগে কোনওভাবেই পৌঁছতে পারবে না। পিনাক বলল, আজ কি আমরা মাটিতে শোব?

আমি বললাম, আমরা এখন রোজই মাটিতে শোব। রোজ তোশক পেতে বিছানা করব আর সকালে উঠে তোশকটা গুটিয়ে দেয়ালের গায়ে রেখে দেব।

খাটের অভাবে পিনাক কেমন কাতর হলো না। বলল, আমি এই গ্রামের স্কুলে ভর্তি হব?

আমি বললাম, হ্যাঁ। কালই আমরা স্কুলে নিয়ে গিয়ে নাম লিখিয়ে আসব।

পিনাক আবার ঘাড় নাড়ল। মায়ের সঙ্গে নানা জায়গায়, নানা শহরে–গ্রামে ঘোরা ওর এতদিনে অভ্যেস হয়ে গেছে।

পিঠের মস্তো ব্যাগ থেকে প্রয়োজনীয় সব কিছু বের করে শোবার ঘর আর রান্নাঘর সাজিয়ে ফেললাম। বললাম, এখন আমরা খিচুড়ি আর আলুভাজা খাব। দুপুরে ভালো করে ঘুমিয়ে নিয়ে বিকেলে ওই পুকুরপাড়ের মুদির দোকান থেকে কেনাকাটা করব। কাল ট্রাক এসে যাবে, তখন ভালো করে বাড়ি সাজিয়ে ঠিক করে থাকতে শুরু করব, কিন্তু তারও আগে কাল যাব স্কুলে। কেমন?

খিচুড়ি খেয়ে আমার ঘুমোতে ইচ্ছে করছিল না। কিন্তু মা বলল এখন না ঘুমোলে বিকেলে আমি ক্লান্ত হয়ে কান্নাকাটি করবো, আর তাছাড়া আমি দুপুরে উঠোনে একা একা ঘুরতে পাব না। মা’র রং–তুলি আসেনি তাই কুয়োর চারপাশে গণ্ডি আঁকা হয়নি। কুয়ো থেকে কত দূরে আমার থাকা উচিত আমি জানি না, তাই আমাকে ঘুমোতেই হবে।

মা দুটো রবারের ম্যাট এনেছে। এদের স্লিপিং ম্যাট বলে। আজ দুপুরে আর রাতে আমাদের এতেই শুতে হবে। দোতলার ঘরে শুয়ে খোলা জানলা দিয়ে একদিকে আকাশ আর একদিকে বাগানে গাছের পাতা দেখছিলাম। একবার মা বলল আশেপাশে বাড়ি নেই বলে জানালায় পর্দা লাগাতে হবে না। তারপরে আমি আর কিছু জানি না।

একটু পরে মা আমাকে ঠেলেঠেলে ঘুম থেকে তুলে দিল। বলল, এবার উঠে পড়ো। নইলে আবার রাতে ঘুম আসবে না।

দুজনে মিলে থলে হাতে বেরোলাম। বেরোবার আগে সব ঘরের দরজা–জানলা আবার বন্ধ করলাম। নিচের তলার ঘরের হুড়কোতে মা আবার তালা দিল। বাগানের দরজার বাইরে ওই অদ্ভুত শিকল দিয়ে তালা লাগাল। ওটা এত উঁচু আমি নাগালেই পাব না। তারপরে দুজনে হেঁটে–হেঁটে–হেঁটে–হেঁটে ও—ই দূরের পুকুরপাড়ে মুদির দোকানে গেলাম। মা একটা কাগজ বের করে কী কী লাগবে বলল, আর দোকানদার একটা একটা করে সব আমাদের দিল। তারপর কাগজে লিখে লিখে যোগ করে দাম বলল। মা ব্যাগ থেকে পয়সা বের করে দিল। দোকানদার বলল, আপনি কোথায় উঠেছেন? এত মাল আপনি নিয়ে যাবেন? আমি লোক দিয়ে পাঠিয়ে দেবো।

মা বলল, আমি মাতঙ্গিনীর বাড়িতে ভাড়া আছি। তবে মাল পাঠাতে হবে না, এইটুকু আমরা নিজেরাই দিয়ে যেতে পারব। আমার মনে হলো দোকানদার ইচ্ছে করেই আর মাল নিয়ে যাবার কথা বললো না। মা আর আমি দুজনে মিলে বাজারের ব্যাগ বইলাম। মা বড় ব্যাগটা এক হাতে নিল, আর মা আর আমি অন্য ব্যাগটার একটা করে হাতল ধরলাম। মা বলল, চলো, পা চালিয়ে চলি। সন্ধে হবার আগে দিদা আসবে ঘরে ধুনো দিতে।

আমি ব্যাপারটা ভুলে গেছিলাম। মা বলায় একটু গা ছমছম করল। বললাম, তেনারা কারা, মা?

মা বললো, কেউ না। মানুষ ভয় পায়, আর নানা রকম কথা বলে। কিন্তু যেখানে থাকি সেখানকার লোকজনের বিশ্বাস নিয়ে হাসাহাসি করি না। তাই দিদা যখন বলল, তখন কথা মেনে নিলাম। বুঝলে?

আমি খুব বুঝলাম না, কিন্তু মার সঙ্গে তর্ক করলাম না। বিকেল হয়ে গেছে। সূর্য কোন দিকে ডুবেছে দেখতে পাচ্ছি না। মাকে জিজ্ঞেস করলাম, সূর্য ডুবে গেছে?

মা বলল, না। মেঘ করেছে বলে দেখা যাচ্ছে না। সূর্য ডুবতে এখনও দেরী আছে।

আমরা বাড়িতে ঢুকে বাজারের থলে দুটো রান্নাঘরে আর ভাঁড়ার ঘরে রাখলাম। তারপরে সকাল বেলা মা উঠোনের পাশে দাওয়ায় রোদ্দুরে যে চারটে রিচার্জেবল ব্যাটারি আলো রেখেছিল সেগুলোকে ঘরের ভেতরে নিয়ে গেলাম। দোকান থেকে ফিরে মা বাগানের দরজাটা বন্ধ করেনি, একটু পরে দিদাটা এল। মা’কে দেখিয়ে দিল কী করে ঘরে ধুনো দিয়ে দূর হ, বলে চেঁচাতে হয়। দিদাটা নাচছিল। আমার হাসি পাচ্ছিল, কিন্তু মা দিদার পেছন থেকে আমার দিকে চোখ পাকিয়ে তাকাল।

তিন সপ্তাহ কেটেছে। গুছিয়ে বসেছি। পিনাক স্কুলে যেতে শুরু করেছে। ওদের হেডমাস্টার প্রথমে পিনাকের বাবার নাম জানতে চেয়েছিলেন। আমি বলে দিয়েছি ওর বাবা সৈন্যদলে চাকরি করত। তারপরে সবার মতোই — কেন আমি একা একা ছেলেকে নিয়ে থাকি, কেন এখান থেকে ওখানে ঘুরছি, কেন একই জায়গায় বাড়ি করি না এসব জানতে চাইছিলেন। এত কথা বলা যায় না। আমিও বলিনি। কিছুক্ষণ একদৃষ্টে হেডমাস্টারের দিকে তাকিয়ে থেকেছিলাম। উনি ভুলে গেছিলেন কী জিজ্ঞেস করেছিলেন। তখন বলেছিলেন, রোজ স্কুলে আসবে তো? এখনও তো লকডাউনের মতোই ছাত্ররা আসছে না। গ্রামদেশে এমনিতেই পড়াশোনার কোনও চাপ নেই। তার ওপরে এতদিনের অভ্যাস — স্কুলে না–আসা।

পিনাক বলেছিল, আমার স্কুলে আসতে ভালো লাগে।

হেডস্যার হেসে বলেছিলেন, তাই? কাল থেকে তাহলে স্কুলে এসো।

সকালে পিনাক স্কুলে চলে গেলে আমার কাজ শুরু হয়। বাড়িটা নিয়ে বেশি কিছু করার নেই, জানি। তবু ভালো করে সাজাই গোছাই। পিনাক আর আমি ঠিক করেছি আর কিছুদিন পরে, বর্ষাকালটা শেষ হলে বাগানের বাইরের চুনকাম করা দেওয়ালটা সুন্দর করে রং করব।

বাড়িটা আমার ভালো লেগেছে। এখানের কাজ শেষ হয়ে গেলে কিছুদিন কোথাও যাব না ভাবছি। এখানেই থাকব। পিনাকের জন্মের পর থেকে আমাকে অনেক ঘুরতে হয়েছে। এখন এই কাজটা শেষ করে নিজেকে একটু ছুটি দেব। ঘুরে ঘুরে গ্রামে গ্রামে সবার বিপদ দূর করে করে আমি এখন ক্লান্ত। আর মাতঙ্গিনীর এই বাড়ির সমস্যা বেশ কঠিন। আমাকে ভাবতে হচ্ছে। সহজে এখান থেকে বিপদ দূর করা যাবে না।

এতদিন আমি বাড়ির ভেতরে মাতঙ্গিনীর ছেলের বউয়ের কোনও ছোঁয়া আছে কি না খুঁজছিলাম। ওর ছোঁয়ার প্রভাব খোঁজা সহজ, কিন্তু সময় লাগে। প্রথম পাঁচ দিন গেল বুঝতে, যে ছেলের বউ ঘরের মধ্যে, বা বাড়িতে তার ছোঁয়া রেখে যায়নি। পড়ে আছে বাগানের ঘরদুটো। আজ পিনাক স্কুলে চলে গেলে আমার কাজ শুরু হবে বাগানের ঘরে। পিনাকের জানা উচিত না আমি এই বাড়িতে কী করছি। মা এই ঘরে ঢুকছে জানলে ওর–ও ইচ্ছে করবে ঘরটায় যেতে। অথচ মাতঙ্গিনী বলে দিয়েছিলেন, ও ঘরে যাওয়া বারণ। আরও একটা কারণ আছে। দেখতে পাই, যখনই সময় পান, পাশের বাড়ির এখান থেকে ওখান থেকে মাতঙ্গিনী নজর রাখেন আমার দিকে। আমার সেটা ভালো লাগে না। কিন্তু পিনাকের স্কুলের সময়টা খেয়াল করেছি, ও বাড়ি থেকে কেউ আমাকে নজর করে না। বোধহয় তখনই মাতঙ্গিনীর চান–খাওয়া–পুজো করার সময়। ভালোই হলো। পিনাকও নেই, মাতঙ্গিনীও ব্যস্ত। আমি নিশ্চিন্তে কাজ করতে পারব।

শুরু থেকে আমিও বাগানের ঘরটা নিয়ে কিছু বলিনি, উনিও কিছু বলেননি। শুধু প্রথম দিনই বলে দিয়েছিলেন, ও ঘর ভাড়া দেবেন না। আমাকে যে চাবি দিয়েছেন, তাতে বাগানের ঘরের দরজার চাবি ছিল না। তাতে অবশ্য আমার অসুবিধে হলো না, কারণ আমার কাছে অজস্র চাবির যে মোটা গোছাটা আছে, তার একটা একটা করে লাগাতে লাগাতে পুরোনো তালাটা খুলে গেল সহজেই। তারপরে কাজ শুরু। এই ঘরে মাতঙ্গিনীর ছেলের বউ একসময় যা করত, তার ছায়া এখনও রয়েছে। সেই ছায়া আমাকে ধরতে হবে। এবং সেটাই এই গ্রামে আমার কাজ।

বাগানের ঘর দুটোতে ঢোকার পথ একটাই। একটা ঘরের দরজা আছে, সেটা তালাবন্ধ। অন্য ঘরটাতে নিশ্চয়ই ভেতর থেকেই ঢুকতে হয়। দূর থেকে দেখলেও বোঝা যায়, এ ঘরের দেখাশোনা নেই। দোতলা বাড়িটা যেমন রং করা হয়েছে, সময়ে সময়ে সারানো হয়েছে, বাইরের এই ঘরদুটোতে তার কোনও লক্ষণ নেই। বাইরের দেওয়ালটা কোনও রকমে চুনকাম করে রাখা আছে। ছাদের টালি সরানো হয়েছে বটে, কিন্তু যত্ন করে নয়।

তালাটা সহজে খুললেও দরজাটা খোলা সহজ হলো না। বর্ষাকালে কাঠ ফুলে উঠে দরজার পাল্লা দুটো আটকে গেছে। জোরে ঠেলতেও সাহস পাচ্ছি না। যদি খুব শব্দ করে খোলে তাহলে ওদিকে মাতঙ্গিনীর বাড়িতে শোনা গেলে সমস্যা হবে। আস্তে আস্তে জোর বাড়িয়ে পাল্লাগুলো খুললাম। তেমন শব্দ হলো না। কিন্তু তারপরেই দরজার মরচে পড়া কবজাগুলো এত জোরে ক্যাঁচ ক্যাঁচ করে উঠল যে আমি চমকে থমকে গেলাম।

কিছুক্ষণ চুপ করে ওদিকের বাড়িটার দিকে তাকিয়ে থেকে বুঝলাম, না, মাতঙ্গিনীর বাড়িতে কোনও নড়াচড়া সাড়াশব্দ কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। কেউ বোধহয় শুনতে পায়নি। খোলা দরজা দিয়ে ঘরের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ঘরগুলো খালি। নোংরা। বহুদিনের মধ্যে কেউ পরিষ্কার করেনি। ঝাড়ু দেওয়া, ঘর মোছা, কোনওটাই হয়নি। আর বুঝতে পারলাম অযত্নে পড়ে থাকা এই ঘরের মধ্যেই মাতঙ্গিনীর ছেলের বউয়ের সব খারাপ শক্তি বন্দি রয়েছে। অবাক হয়ে ভাবলাম, বন্দি করে রেখেছে কে?

একটু ভেবেই বুঝলাম, মাতঙ্গিনীর ছেলের বউয়ের শক্তি এ ঘরে ধরে রেখেছেন মাতঙ্গিনীই। আরও অবাক হলাম। মাতঙ্গিনীর এত ক্ষমতা? কই, এতদিন তো বুঝিনি? কেন?

ঘরের মধ্যে পা রাখলাম। মাতঙ্গিনীর ছেলের বউ আমার উপস্থিতিতে শিউরে উঠে সরে গেল। আমি বুঝতে পারলাম তার সমস্ত খারাপ শক্তি ঘরের মধ্যে তোলপাড় করছে। ঢেউয়ের মতো আছড়ে পড়ার চেষ্টা করছে আমার উপরে। সেই সঙ্গে বুঝলাম আমার এখানে আসা ওর মোটেই পছন্দ হয়নি। এতদিন তবু ওর একটা আশা ছিল যে একদিন মাতঙ্গিনী বুড়ো হয়ে যাবে, তখন ও মাতঙ্গিনীর বন্ধন ছিঁড়ে বেরিয়ে আসবে, কিন্তু এখন বুঝতে পারছে আমার শক্তির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পারবে না। ওর আক্রোশ নিষ্ফল কিন্তু ভয়াবহ। বুঝলাম আমাকে এ ঘরে ঢুকতে হবে খুব শিগগিরই এবং ওর পাকাপাকি ব্যবস্থা করে তবেই বেরোতে হবে।

আবার বেরিয়ে দরজা বন্ধ করতে গিয়ে বুঝলাম আমার চাবির মোচড়ে মাতঙ্গিনীর পুরোনো তালার ভেতরের কলকব্জা বিগড়েছে। ওটা আর বন্ধ করা যাবে না। দরজা খোলা থাকলে বন্ধন থাকবে না। বন্ধ করে দেব, কিন্তু তালা থাকা জরুরি, তা না হলে যে কেউ ঘরটায় ঢুকে পড়তে পারবে। শুধু তাই নয়। মাতঙ্গিনীর ছেলের বউয়ের শক্তি ভেতর থেকে তালা ছাড়া দরজার হুড়কো খুলতে পারবে কি না আমি জানি না। তাই ভাঙা তালাটা হুড়কোর আংটায় ঝুলিয়ে উঠোন থেকে একটা সরু গাছের ডাল কুড়িয়ে নিয়ে কিছুক্ষণ চোখ বুজে হাতের মুঠোয় সেটা ধরে দাঁড়িয়ে রইলাম। তারপর সাবধানে তালার সঙ্গে হুড়কোর আংটায় লাগিয়ে রাখলাম। বুঝলাম ভেতরের অস্থির শক্তি এতটাই রাগ করল, যে আমার পায়ের নিচের মাটিও অল্প দুলে উঠল তার ধাক্কায়। কাঠিতে আমার শক্তি আমি দিয়ে রেখেছি। এই শক্তির নাম নেই। মানুষরা জানলে হয়ত বলবে মন্ত্রপূত কাঠি। কিন্তু মন্ত্র নয়। আমাদের শক্তি অন্যরকম, এর জন্য মন্ত্র লাগে না। আমি জানি দরজায় এই কাঠি যতক্ষণ থাকবে, মাতঙ্গিনীর ছেলের বউয়ের ক্ষমতা নেই ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। কিন্তু ভাঙা তালা আর আলগোছে লাগানো কাঠি দিয়ে তো কাউকে চিরদিন বন্দি রাখা যায় না। জোরে হাওয়া দিলেই কাঠি খসে পড়বে। আর পিনাক যদি বাগানের ঘরের দরজা খোলা পায়, তাহলে এক মুহূর্ত দেরি করবে না। এর মধ্যেই বারবার আমাকে জিজ্ঞেস করেছে, ঘরটা ওর খেলার–ঘর হতে পারে কি না। পিনাক শান্ত ছেলে, পিনাক আমার কথা শোনে, কিন্তু পিনাক ছোটো বাচ্চা এবং বড়োদের সব কথা সব সময় শুনতে না–ও পারে। সেটা আমাকে মনে রাখতে হবে। আমি পিনাককে বলে রেখেছি এই ঘরে কেউ ঢুকবে না। আজ যদি ও জানতে পারে এ ঘরে আমি নিজেই ঢুকেছি, তাহলে পিনাকের কাছে মিথ্যেবাদী হয়ে যাব।

পিনাককে স্কুল থেকে আনতে যাবার পথেই তালাটা কিনতে হবে।

মাতঙ্গিনী আর ওর ছেলের বউয়ের মতো অনেক অশুভ শক্তি পৃথিবীতে ঘুরছে। তাদের অনেককেই মানুষের মতো দেখতে, ভালো করে দেখলেও অনেক সময় বোঝা যায় না যে ওরা মানুষ নয়। ওরা পৃথিবীতে সবরকম খারাপ ঘটনার জন্য দায়ী। ওদের জন্য মানুষ মানুষকে হিংসা করে, ওদের প্রভাবে যুদ্ধ হয়, ওরা নানারকম অসুখ ছড়ায়। বহুদিন পরে পরে ওদের মধ্যে এমন কেউ আসে যার অনেক ক্ষমতা — তারা ইচ্ছেমতো এমন অসুখ ছড়াতে পারে বা এমন যুদ্ধ লাগাতে পারে, যার ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা যায়। এদের কথা মানুষ জানে না। তাই মানুষের ভাষায় এদের নাম নেই। আমাদের ভাষায়ও নেই। আমরা এইরকম অশুভ শক্তির খোঁজ করে বেড়াই। আমরা ওদের ধ্বংস করে দিই, ধ্বংস না করতে পারলে বন্দি করে রাখি চিরদিনের জন্য। আমরাও মানুষ নই, কিন্তু দেখতে মানুষেরই মতো। আমাদের কথাও মানুষ জানে না, তাই আমাদেরও নাম দেয়নি ওরা।

মাতঙ্গিনীর ছেলের বউ এমনই এক ভয়ানক অশুভ শক্তি। অনেক দিন ধরে আমি ওকে খুঁজছি। ভাবতাম খুব গোপন জায়গায় কোথাও লুকিয়ে আছে। আমি তাই হদিস পাচ্ছি না। কিন্তু আজ বুঝলাম, লুকিয়ে নেই। ওকে মাতঙ্গিনী বন্দি করে রেখেছে। ও কোথায় আছে না জানলেও চলবে। ওর সব খারাপ শক্তি রয়েছে ওই ঘরে। সে শক্তিকে চিরকালের মতো বন্ধ করে রাখতে পারলেই মাতঙ্গিনীর ছেলের বউয়ের সব ক্ষমতা চলে যাবে।

স্কুল থেকে ফিরেই মা কেমন তাড়াহুড়ো করে আমাকে চান করিয়ে খেতে বসিয়ে দিল। তখনই মনে হচ্ছিল অদ্ভুত কিছু একটা হবে, তাই খাওয়া শেষ করে হাত–মুখ ধুতে না ধুতেই মা যখন বলল, বাবু ওপরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো — তখন আমি মনে মনে বুঝতে পারলাম মা আমাকে সামনে থেকে সরাতে চাইছে। চুপচাপ দোতলায় গিয়ে তোষক পেতে বিছানায় শুয়ে পড়লাম, কিন্তু ঘুমোলাম না। গাছের ডাল দিয়ে বানানো কাটুম কুটুম রাম রাবণের পুতুল নিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতে লাগলাম। একটু পরে শুনতে পেলাম, সিঁড়ি দিয়ে মা উঠে আসছে। তাড়াতাড়ি পুতুল দুটো বিছানার পাশে রেখে চোখ বন্ধ করে খুব ঘুমের ভান করলাম। মা ঘরে ঢুকে একটু এদিক–ওদিক কী করল দেখতে পেলাম না, কিন্তু বুঝতে পারলাম একটু পরেই আবার বেরিয়ে গেল। বোধহয় দেখতে এসেছিল আমি সত্যি সত্যি ঘুমিয়েছি কি না। সাবধানে এক চোখ খুলে দেখলাম ঘরে কেউ নেই। তারপরে হামাগুড়ি দিয়ে বারান্দায় গিয়ে লোহার গ্রিলের ফাঁক দিয়ে দেখি মা বাগানের ঘরের দরজায় কী করছে। ওপর থেকে ভালো বুঝতে পারছিলাম না, কিন্তু একটু পরেই মা ফিরে বাড়ির দিকে আসতে শুরু করল। আমি তাড়াতাড়ি বিছানায় গিয়ে আবার চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলাম। মা আবার ঘরে ঢুকল। আমি এক চোখ খুলে দেখলাম দেওয়ালের তাকে কী যেন রাখল, তারপর আস্তে আস্তে আমার পাশে শুল। কিছুক্ষণ পরে মনে হল ঘুমিয়ে পড়েছে। চোখ মেলে দেখলাম ঠিক তাই। আস্তে আস্তে বিছানা ছেড়ে তাক বেয়ে উঠে দেখলাম একটা নতুন চকচকে চাবি। মা কেন বাগানের ঘরের দরজায় নতুন তালা লাগিয়ে চাবি দিল? আমি চাবিটা নিয়ে পা টিপে টিপে ঘর থেকে বেরিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে নিচে গিয়ে দেখলাম উঠোনের ওপারে বাগানের ঘরের দরজায় একটা নতুন তালা। রংটা আগেরটার মতই নীল, কিন্তু আগেরটা পুরোনো হয়ে কালো হয়ে গেছিল। এটা একেবারে নতুন, চকচকে। কাছে গিয়ে দেখলাম মা নতুন তালা লাগিয়েছে, কিন্তু পুরোনো তালাটাও ঝুলছে। ওটা খোলা। যেই টেনেছি, আমার হাতে চলে এল। সঙ্গে একটা কাঠিও গোঁজা ছিল, সেটা খসে পড়ে গেল। কাঠিটা পা দিয়ে সরিয়ে দিতে যাচ্ছিলাম, কিন্তু তখন হঠাৎ মনে হলো মা হয়ত ইচ্ছে করেই কাঠিটা ওখানে রেখেছে, তাই খোলা পুরোনো তালাটা আর কাঠিটা সাবধানে রাখলাম। তারপরে নতুন তালাটা খোলার চেষ্টা করলাম। আমি এর আগে কোনও দিন তালা খুলিনি, কিন্তু দেখেছি মা কী ভাবে খোলে। তালার ফুটোয় চাবি ঢুকিয়ে ঘোরালাম আর কট্‌ করে একটা শব্দ হয়ে তালাটা খুলে গেল। আমি এই তালাটাও পুরোনো তালা আর কাঠির পাশে দরজার চৌকাঠে রেখে হুড়কোটা খুলে দরজাটা ঠেললাম। খুব শক্ত। প্রথমে ভেবেছিলাম খুলতে পারব না, কিন্তু গায়ের জোরে ঠেলছিলাম বলে দরজাটা হঠাৎ খুলে গেল, আর আমি হুড়মুড়িয়ে গিয়ে ভেতরে পড়লাম।

হঠাৎ ঘুমটা ভেঙে গেল। মনে হচ্ছিল একটা ভয়ঙ্কর কিছু হচ্ছে, তাই ঘুম ভেঙে একমুহূর্ত কিছু বুঝতে পারিনি। তারপরেই খেয়াল হলো পিনাক পাশে নেই। ধড়ফড়িয়ে বিছানায় উঠে বসে ডাকলাম, পিনাক, পিনাক! সাড়া পেলাম না। উঠে দাঁড়িয়ে ঘরের দরজায় পৌঁছনোমাত্রই বারান্দার রেলিঙের ওপর দিয়ে দেখতে পেলাম নিচে বাগানের ঘরের দরজাটা খোলা। তখনই বুঝেছিলাম কী হয়েছে, কিন্তু তবু একবার গিয়ে দেখলাম তাকে চাবিটা নেই। পিনাক, বলে চিৎকার করে দুড়দাড়িয়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে বাগানের ঘরের দরজার সামনে পৌঁছলাম। দরজাটা খোলা। যতটা দেখা যাচ্ছে, ভেতরে কেউ নেই। ভেতরে ঢুকলাম। ফাঁকা। পাশের ঘরে যাবার দরজা বন্ধ, তবু বন্ধ দরজায় আঙুলের টোকা দিয়ে ডাকলাম। সাড়া নেই। আমি একটুক্ষণ চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থেকে বুঝতে পারলাম পিনাক এ ঘরেই রয়েছে, কিন্তু নেই–ও। মাতঙ্গিনীর ছেলের বউ ওকে ধরে নিয়ে গেছে নিজের কাছে। তাই আমার চোখের আড়াল হয়ে গেছে। আর দেখতে পাচ্ছি না। এখনই ওকে উদ্ধার করতে হবে, কিন্তু তার জন্য আমাকে আবার যেতে হবে দোতলায় আমার শোবার ঘরে। সেখানে রয়েছে আমার ঝুলি। ঝুলি থেকে কিছু কাজের জিনিস লাগবে পিনাককে উদ্ধার করে, মাতঙ্গিনীর ছেলের বউকে চিরদিনের মতো বন্দি করতে।

মাটিতে পড়ে গিয়ে আমি কিছুক্ষণ বুঝতে পারলাম না কোথায় আছি। তারপরে উঠে দাঁড়িয়ে চারিদিকে চেয়ে দেখি চারপাশে শুধু মেঘ, আর সেই মেঘে অনেক রং। কোনও মেঘ লাল, কোনওটা সবুজ, কোনওটা বেগুনি, আবার কোনওটা গোলাপি। মেঘগুলো পাকিয়ে পাকিয়ে ঘুরে ঘুরে একটার সঙ্গে আরেকটা মিশে কেমন রঙিন আলপনা আর নতুন নতুন রং তৈরি করছে — তার মধ্যে অনেকগুলো রংয়ের নামই আমি জানি না আর অনেকগুলো রং তো আমি জীবনে কোনও দিন দেখিইনি। আর সেই সঙ্গে একটা খুব সুন্দর বাজনা শুনতে পাচ্ছিলাম। সুরটা চেনা চেনা। একটু মন দিয়ে শুনে বুঝলাম ওটা ওই গানটার সুর যেটা মা আমাকে ছোটোবেলায় বানিয়ে বানিয়ে গেয়ে ঘুম পাড়াত। আস্তে আস্তে বাজনাটা বদলে গেল মায়ের গলায়। আমি অবাক হয়ে ভাবলাম, এইমাত্র মা উপরে ঘুমোচ্ছিল, এখন এখানে এসে আমাকে ঘুমপাড়ানি গান কী করে শোনাচ্ছে?

আস্তে আস্তে ডাকলাম, মা, মা?

গানটা থেমে গেল। মা বলল, এদিকে আয়, দেখ, এই জায়গাটা কি সুন্দর।

আমি বললাম, কোথায়? কোথায় তুমি, আমি দেখতে পাচ্ছি না।

গলা পেলাম, এই তো এখানে। তাড়াতাড়ি আয়, দেখবি আমরা কী মজা করব।

আমি থমকে গেলাম। মনে হল, মাকে না দেখতে পেলে আমার যাওয়া উচিত নয়। বললাম, তুমি কোথায়? আমাকে নিয়ে যাও।

এবারে গলাটা একটু বিরক্ত। বলল, আরে আমি ডাকছি তোকে তুই শুনছিস না কেন? এই তো আমি এখানে। এগিয়ে আয় দু’পা। এগোলেই আমাকে দেখতে পাবি।

আমি বললাম, কিন্তু তুমি তো আমার মা নও। কে তুমি?

গলাটা বোঝানোর সুরে বলল, এই দেখ! নিজের মাকে চিনতে পারছিস না? এদিকে এলেই দেখতে পাবি। আয়।

আমি বললাম, তুমি কক্‌খনও আমার মা নও। মা কোনও দিন আমাকে তুই বলে না। সবসময় তুমি বলে। তুমি কে? কেন তুমি আমার মা’র মতো করে কথা বলতে চেষ্টা করছ? কেন তুমি আমার সামনে আসছ না?

বলতে বলতে আমি পায়ে পায়ে বাইরের দিকে যাবার চেষ্টা করতে লাগলাম, কিন্তু যতোই চলি দরজাটা আর পাই না। মনে হলো ঘরটাতেই আর আমি নেই। অন্য কোথাও চলে এসেছি। ভয়ে ভয়ে ডাকলাম, মা?

সঙ্গে সঙ্গে গলাটা বলল, এই তো বললাম আমি এখানেই আছি। আয়।

আমি চুপ করে রইলাম, কিন্তু মায়ের গলাটা আবার পেলাম। বলল, কই পিনাক, আসবি না মায়ের কাছে?

আমি বললাম, না। তুমি তো মা নও।

গলাটা খিল খিল করে হাসল। আমার একটু ভয় করল। মনে পড়ল পাশের বাড়ির বুড়ি দিদাটা বলেছিল যে বাড়িতে তেনারা আছেন। মনে হলো এ বোধহয় ওদেরই মতন কেউ, কিন্তু মনে সাহস নিয়ে বললাম, তুমি আমার মা নও। মা এরকম করে হাসে না।

উত্তরে গলাটা একটু কঠিন হলো। বলল, তাই বুঝি? মা কী রকম করে হাসে? আমাকে একটু দেখিয়ে দেবে?

আমি বললাম, একজনের হাসি আর একজন কী করে দেখিয়ে দিতে পারে?

গলাটা আবার হাসল। এবার একটু অন্য রকম। বলল, কী করলে তুই বিশ্বাস করবি আমি যে মা?

আমি খেয়াল করলাম যে গলাটা যখন মা হয়ে কথা বলছে তখন তুই বলছে, কিন্তু যখন অন্য লোক হয়ে কথা বলছে তখন তুমি বলছে। কী উত্তর দেব ভেবে পাচ্ছিলাম না। এমন সময় সে আবার বলল, আমি যদি তোর সামনে আসি তুই বিশ্বাস করবি আমি যে তোর মা?

আমি বললাম, তুমি মা হলে সামনে আসছ না কেন?

গলাটা বলল, আমি আসছিলাম না কারণ তাহলে তুই এত সুন্দর সুন্দর রং দেখতেই পেতি না। কথাটা বলতে বলতে আমার চোখের সামনে খানিকটা রং মেঘের মতো গোল পাকাতে শুরু করল আর তারপর জমাট বেঁধে হয়ে গেল আমার মা। আমার মায়ের মতন দেখতে, মা’র মুখ, মা’র চুল… ওইরকম শাড়ি পরা। কিন্তু যখন আমার দিকে চেয়ে হাসল, তখন হাসিটা আমার মা’র নয়। আমার দিকে যেভাবে তাকাল সেই তাকানোটাও মা’র মতো নয়। আমার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল, কিন্তু তবু যেন কত দূর থেকে হেঁটে কাছে এসে হাঁটু গেড়ে আমার সামনে বসে বলল, আয়, আমার কোলে আয়।

আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। সে আবার বলল, আয়, মা’র কাছে আয়।

এবারে আমি জোরে মাথা নাড়লাম। বললাম, তুমি আমার মা নও। তুমি কেবল দেখতেই মায়ের মতন, আসলে তুমি আলাদা।

বলামাত্র ওর চোখ দুটো যেমন রং বদলে ফেলল। কালো চোখ প্রথমে নীল আর তারপরে লাল হয়ে গেল। গলার স্বরটাও আর মায়ের মত রইল না। একটু ফিসফিস শব্দ করে বলল, বটে, আমি তোমার মা নই? তুমি যদি এখনই আমার কাছে না আসো আমি তোমাকে হিঁচড়ে টেনে নিয়ে যাব।

আমি ভয়ে দু’পা পিছিয়ে গেলাম। কিন্তু দেখলাম ওর থেকে দূরে যেতে পারিনি। যেখানে ছিলাম সেখানেই দাঁড়িয়ে রয়েছি।

মা’র–মতো–দেখতে–কিন্তু–মা–নয় মেয়েটা আবার উঠে দাঁড়াল। বলল, বেশ আসবে না যখন, তখন থাকো একা। ভয় পেয়ে কাঁদলে কিন্তু তখন আমি আসব না।

একটা দমকা হাওয়া দিল যাতে প্রথমে মেয়েটা এবং তারপরে সব রংগুলো যেন হু–হু করে উড়ে কোথায় চলে গেল। পড়ে রইল জমাট অন্ধকার, সেখানে কোনও শব্দ নেই। প্রথমে ভয় করছিল, তার পরে মনে হলো আমাকে কাছে আনতে না পেরে সব অন্ধকার করে দিয়ে ভয় দেখাচ্ছে। মনে হলো আমি তো বাড়ি থেকে বেশি দূরে যাইনি। বাগানের ঘরের মধ্যেই রয়েছি। যেই ভাবলাম এই একটু দূরেই আমার বাড়ি, সেখানে মা রয়েছে, আর ওমনি মনে হলো অন্ধকারটা যেন একটু হালকা হলো। অনেক দূর থেকে যেন একটা মা–মা গন্ধ পেলাম। আমার মায়ের গন্ধ। আমার আসল মা।

পিনাক এখানেই রয়েছে, কিন্তু ওকে দেখতে পাচ্ছি না। মাতঙ্গিনীর ছেলের বউ এখন ঘরময় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তার প্রচন্ড শক্তির নিঃশব্দ ওঠাপড়া ঢেউয়ের মতো আমার চারপাশের ঝড় তুলেছে। আমাকে বলতে চাইছে, পিনাক এখন আমার কাছে। ভালো চাও তো আমাকে মুক্তি দাও।

মনে হলো পিনাক এ ঘরে ঢোকার পর থেকে দরজাটা তো খোলাই রয়েছে। তবে মাতঙ্গিনীর ছেলের বউ এখনও বেরোয়নি কেন? দরজার দিকে তাকিয়ে বুঝলাম তার জন্য পিনাকই দায়ী। ঘরে ঢোকার আগে দুটো তালা আর আমার লাগিয়ে যাওয়া গাছের সরু ডালটা চৌকাঠের ওপরে সাজিয়ে রেখেছে। ডাল পার করে সে ঘর থেকে বেরোতে পারেনি, কিন্তু এই ডালের শক্তি বেশিক্ষণ থাকবে না। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। তার মধ্যে ওকে পুরো বন্দি করে ঘরটা উদ্ধার করতে হবে। কিন্তু তার জন্য এখান থেকে বেরিয়ে আমাকে বাড়িতে ফিরতে হবে, কিন্তু ততক্ষণ তো পিনাক তার কাছে পড়ে থাকবে একাই। যতক্ষণ পিনাক ওর কাছে একা থাকবে, ততই ও পিনাকের মনে অন্য এক জগত তৈরি করবে। এখন পিনাক কী দেখছে, কী বুঝছে, জানি না, কিন্তু যত বেশি সময় থাকবে, পিনাকের চারপাশে ঘর, বাড়ি, পাড়া, মন্দির, মসজিদ, দালান, শহর তৈরি হবে। পিনাকের মনে হবে ও যেন আসলে একটা কোথাও আছে। সে জায়গাটার নাম তৈরি হয়ে যাবে পিনাকের মনে। চারপাশে মানুষ–জন, বন্ধুবান্ধব তৈরি হবে। দেখতে পাবে মা–বাবা, হয়ত দেখতে পাবে ভাই–বোনকেও… তারা আসলে কেউ থাকবে না, কিন্তু পিনাকের মনে হবে সব সত্যি। তখন ও আর ফিরতে চাইবে না। ভাববে ওখানটাই আসল। আর মাতঙ্গিনীর ছেলের বউ পিনাকের জীবনীশক্তি টেনে নিজে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। সময় নেই। যা–ই করি এখনই করতে হবে। ঘর থেকে বেরিয়ে বাড়ির দিকে যাব, উঠোনের বন্ধ দরজা ঠেলে ঢুকলেন মাতঙ্গিনী। বললেন, এসব কী করছ মেয়ে? তোমাকে কয়েছি না এই ঘর আমি ভাড়া দেইনি? কার হুকুমে এঘরের দরজা খুলেছ?

মাতঙ্গিনীকে আমি ভয় পাই না। বললাম, আপনারা দুজনেই খারাপ। এক সময় আপনিও অনেক ক্ষতি করেছেন। যেখানেই থেকেছেন, সেখানেই কত লোকের সর্বনাশ হয়েছে আপনার জন্য। কিন্তু ছেলের বউ করে যাকে এনেছিলেন সে যে আপনার চেয়েও অনেক বেশি ক্ষমতা রাখে আপনি প্রথমে বোঝেননি। যখন বুঝেছেন সে সহজেই আপনাদের হারিয়ে দিতে পারে, তার ক্ষমতা শুধু আপনার মতো গ্রামের মধ্যে সীমিত নয়, সারা পৃথিবীতেই ছড়াতে পারে, তখন অতিকষ্টে তাকে ঠকিয়ে এ ঘরে বন্দি করে রেখেছেন। কিন্তু আজ আপনি বুড়ো হয়ে গেছেন। ওকে শান্ত রাখার ক্ষমতা আপনার ফুরিয়ে গেছে। আমি যদি না আসতাম আর কিছুদিনের মধ্যেই সে ছাড়া পেয়ে আবার দৌরাত্ম্য শুরু করত। আজ আপনি দুর্বল। এবার আপনার চেয়ে শক্তিশালী কাউকে যে লাগবে।

মাতঙ্গিনী আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন, আর সে শক্তিশালী কে? তুমি?

আমি বললাম, আমি আপনার চেয়ে ঢের বেশি শক্তিশালী। আর এখন আপনি এতই দুর্বল যে আপনার সামনে বসেও আমি আপনার শক্তি অনুভব করিনি। বহুদিন মানুষ সেজে থেকে, আর মাতঙ্গিনী মতো শুভ নাম ব্যবহার করে আপনারও সব খারাপ ক্ষমতা শেষ হয়ে গেছে। আপনিও বোঝেননি আমি কত শক্তিমান। কিন্তু এখন এই তর্কের সময় নয়। আমার ছোট্ট একটা ভুলের জন্য পিনাক এখন ওর কবলে। পিনাককে ছাড়িয়ে আনতে হবে। আমি আমার সরঞ্জাম নিয়ে আসছি। আমি ঘরে ঢোকার পর আমি যেভাবে বলব দরজার খোলা মুখটা বন্ধ করে দেবেন। আমি যতক্ষণ না ফিরে আসি ততক্ষণ আপনি এখানে থাকলে ও বেরিয়ে আসতে পারবে না।

মাতঙ্গিনীর ছোটো ছোটো চোখ দুটো আমাকে সূচের মতো বিঁধতে থাকল। বললেন, কী করবা তুমি?

আমি এক লহমা ভাবলাম। আমি দোতলার ঘরে গিয়ে ফিরে আসার মধ্যে মাতঙ্গিনীকে ধরাশায়ী করে ও বেরিয়ে আসতে পারে? আমি বুঝতে পারছিলাম পিনাককে পেয়ে ওর সাহস আর শক্তি দুই–ই বেড়েছে। সামনে আমি রয়েছি বলে প্রকাশ করছে না, কিন্তু ভেতরে ভেতরে ফুঁসছে সমানে। আমি ঘরের চৌকাঠের উপরে দুই হাত এবং দুই পা রেখে বসলাম। চোখ বন্ধ করে কী করলাম মাতঙ্গিনী বুঝতে পারলেন না, কিন্তু ঘরের ভেতরে অন্ধকার আরো গাঢ় হয়ে গেল। মাতঙ্গিনীকে কি করতে হবে শিখিয়ে দিয়ে বললাম, আপনি এখানে থাকুন। আমি এই গেলাম আর এলাম।

চারিদিকে ঘন অন্ধকার। আমি কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। কিন্তু হঠাৎ মনে হলো সেই অন্ধকারের মধ্যেই মা আমার কাছে এসেছে। আমার মা। ওই মেয়েটা নয়, যে ইচ্ছেমতো কখনও মার রূপ নিতে পারে, কখনও হয়তো অন্য কারও। একটু আগেও মনে হচ্ছিল আমি যদি একটু বসি বা শুই তাহলে আরাম হবে, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আমার আসল মা চাইছে আমি দাঁড়িয়ে থাকি। হয় দাঁড়াতে হবে, নয়তো চলতে হবে। কোন দিকে চলব বুঝতে না পেরে আমি দাঁড়িয়েই রইলাম। আমার চারপাশে কারা যেন ঘুরছে। তারা ভালো নয়। তারা বাঘ–সিংহ–নেকড়ে নয়, কিন্তু ইচ্ছে করলেই আমাকে ছিঁড়ে খেয়ে ফেলতে পারে। আমার ভয় করছে। আমার বুকের ভেতরটা কাঁদছে। আমার হাত–পা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। আমার মুখের ভেতরটা শুকনো, কিন্তু তার মধ্যেও আমার মনে হচ্ছে ওরা আমার কিছু করতে পারবে না। মা আমাকে চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছে।

আবার সেই গলাটা শুনতে পেলাম। এটা সেই গলাটাই, কিন্তু এখন আমার মা’র মতো নয়। বলল, এখনও সময় আছে। এসো আমার কাছে। আমার কাছে আসলে তোমাকে খুব আরামে রাখব। ভালো ভালো খেতে দেব। কত খেলনা দেব। তোমার মা তোমাকে খেলনা দেয়?

আমি বললাম, মা আমাকে কাটুম কুটুম দেয়। আমি কাটুম কুটুম নিয়ে খেলি।

এবারের খিলখিল হাসিটা শুনে আমি প্রায় কেঁদে ফেলেছিলাম। এটা আমার মায়ের হাসি তো নয়ই, এটা আমার চেনা কোনও হাসির শব্দ নয়। এই হাসিতে কোনও আনন্দ নেই। এই হাসিতে আছে ভয়। হাসি থামিয়ে বলল, ওসব গরিবের খেলনা নিয়ে খেলে কি হবে? আমি তোমাকে কত দামি খেলনা দেব। তারা নিজে নিজে চলে, নিজে নিজে ওড়ে। তাদের কত আলো, কত বাজনা, দেখে শুনে তোমার কত আনন্দ হবে। এসো, চলো আমার সঙ্গে।

আমি বললাম, আমি চাই না খেলনা। আমার কাটুম কুটুম ভালো। আমাকে মা দেয়, আমি সে নিয়েই খেলতে চাই।

সেই হিসহিসে গলাটা আবার বলল, তবে তোমাকে আমি আর রক্ষা করতে পারবো না।

আমার চারপাশে যারা অন্ধকারে পাক খাচ্ছিল তারা গর্জন করে উঠল। তাদের ধারালো দাঁত–নখ অন্ধকারে ঝলসে উঠল। গলাটা বলল, ওদের ছেড়ে দিলে ওরা তোমাকে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলবে।

মনে হলো এদের হাত থেকে বাঁচতে ছুটে চলে যাই ওর কাছেই, কিন্তু পরক্ষণেই ওর কালো, নীল, লাল চোখ দুটো মনে পড়ল। বললাম, আমি শুধু আমার মার কাছে যাব। আর কারও কাছে নয়।

দপ করে আগুন জ্বলে উঠল আমার প্রায় মুখের কাছে। আগুনের গরম হলকা লাগল আমার মুখে। শুনলাম, পুড়িয়ে ফেলব। পুড়িয়ে ঝলসে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাব। বলছি বাঁচতে চাও তো এখনো এসো।

কিন্তু আমি তো জানি ও আমাকে বাঁচাবে না, তাই গলা ছেড়ে ডাকলাম, মা, মা! কোথায় মা? তুমি এসো।

কারো সাড়া পেলাম না, কিন্তু আগুনটা নিভে গেল। গর্জন করা, নখওয়ালা যারা ঘুরছিল তারা যেন পিছিয়ে গেল দু’পা, আর মনে হলো অন্ধকারটা যেন একটু হালকা হলো।

আমি আবার ডেকে বললাম, মা এসেছ?

ঝুলি নিয়ে ফিরে এলাম। মাতঙ্গিনী তখনও দরজার সামনে দরজার কাঠামোর দু’দিকে দু’হাত রেখে চৌকাঠের উপর পা দিয়ে দাঁড়িয়ে। আমাকে বললেন, কী করবা এখন?

আমি বললাম, সম্পূর্ণ বন্ধন দেব। বন্ধন ছেড়ে তার পক্ষে বেরোনো আমার জীবদ্দশায় সম্ভব হবে না। আপনি নিশ্চিন্ত হতে পারেন।

মাতঙ্গিনী বললেন, কিন্তু বন্দি করবা কই? এ ঘর তো বেশিদিন থাইকবে না। পুরান হই গেসে। ভাঙি পড়লি কী হবে?

আমি বললাম, ওকে পৃথিবীর গভীরে পাঠিয়ে দেব।

মাতঙ্গিনী চমকে বললেন, কেমনে?

আমি বললাম, কেন? আপনি তো নিজের পালাবার রাস্তা তৈরি করে রেখেছিলেন। এখন না হয় ভেবেছেন এখানেই বাকি জীবনটা কাটাবেন, কিন্তু রাস্তাটা তো খোলা আছে এখনও। ওই কুয়ো দিয়েই ওকে মাটির অনেক নিচে পাঠিয়ে দেব, আর তারপরে বন্ধ করে দেবো চিরদিনের মতো।

মাতঙ্গিনী গলাটা কেঁপে গেল। বললেন, কেউ আমারে মারতি আসলে ওহান দিয়াই পালাবো ভাবছিলাম।

আমি বললাম, কিন্তু আপনি আর অন্ধকারের রাজ্যে ফিরে যেতে চান না ঠিক?

মাতঙ্গিনী মাথা নাড়লেন। বললেন, সত্যিই আমার দিন শেষ হইছে। আর আন্ধারে যাব না।

বললাম, আমি তা বুঝেছি বলেই আপনাকে বন্দি করব না, কিন্তু মনে রাখবেন আমি যদি কখনও বুঝতে পারি আপনি আবার অনিষ্ট করছেন, তাহলে ফিরে আসব।

আর কথা না বাড়িয়ে বাগানের ঘরে ঢুকলাম। ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে ঝুলি নামিয়ে বাবু হয়ে বসলাম। তা থেকে এক এক করে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম বের করে রাখলাম আমার কোলে। এগুলোও দেখে বোঝা যায় না তার মধ্যে কী সাঙ্ঘাতিক শক্তি লুকিয়ে আছে। একটুকরো পাথর, একটা গাছের পাতা, আর একটা গাছের বাকলের এক টুকরো, একটা ছোটো শিশিতে নদীর জল, একটা কাগজের টুকরো, তাতে পিনাকের ছোটোবেলার হিজিবিজি আঁকা — ফেলে দিয়েছিল, আমি কুড়িয়ে রেখেছিলাম আর বিছানার পাশে পড়ে থাকা পিনাকের দু’টো কাটুম কুটুম পুতুল। তারপর চোখ বন্ধ করে ডাকলাম আমার ভেতরের শক্তিকে। যে শক্তি দিয়ে আমরা আদি–অনন্তকাল ধরে সব খারাপ, সব অন্যায়ের প্রতিরোধ তৈরি করেছি।

আমাকে এখন ওর জগতে ঢুকতে হবে। পিনাককে ছাড়িয়ে না এনে ওকে তাড়ানো যাবে না। তাহলে পিনাকও চলে যাবে ওর সঙ্গে। আমি আর কোনও দিন পিনাককে ফেরত আনতে পারব না।

অন্ধকারে কিছু দেখা যায় না। আমার চারদিকে মাতঙ্গিনীর ছেলের বউয়ের অশুভ শক্তি আঘাত করার জন্য তৈরি হয়ে রয়েছে। আমি জানি আমাকে তারা ছুঁতে পারবে না, কিন্তু সাবধানে এগোতে হবে। এক লহমার জন্যও অসাবধান হলে চলবে না।

অন্ধকার মেঘের মতো কালো ধোঁয়া আমার নাকে মুখে ঢুকে দম বন্ধ করার চেষ্টা করছে। আমি ভ্রূক্ষেপ করছি না। এগিয়ে চলছি যত, ধোঁয়া আর অন্ধকার গাঢ় হচ্ছে তত। বুঝতে পারছি ঠিক পথে চলেছি। একবার দুবার ধোঁয়া আর অন্ধকার হালকা হওয়া মাত্র বুঝেছি ওই দিকে পিনাক নেই।

এবার মৃদু গর্জন শুনতে পাচ্ছি। পিনাককে ও ভয় দেখাচ্ছে। ভয় পেয়েও পিনাক যদি ওর আশ্রয় চায় তাহলে আমি আর পিনাককে কোনও দিন পাব না, বরং এমনও হতে পারে যে ও আমাকেই কবজা করে ফেলবে। মনে মনে পিনাককে বললাম, আমি এসে গেছি। দূর থেকে শুনতে পেলাম, মা তুমি কোথায়? আমি দেখতে পাচ্ছি না।

বললাম, পিনাক, আমি এসে গেছি। আরেকটু হলেই আমি পৌঁছে যাব। তুমি যেখানে আছ, সেখানেই থাকো। কোথাও যেও না।

সঙ্গে সঙ্গে একটা গলা শুনতে পেলাম, পিনাক বলছে, মা তুমি শিগগিরি এসো। আমি এখানে দাঁড়িয়ে রয়েছি।

আমি হেসে বললাম, শয়তানী, তুমি গলা নকল করে আমাকে ঠকাতে পারবে না। আমি পিনাককে ঠিক খুঁজে নেব, তুমি কষ্ট কোরো না।

এবার পিনাককে দেখতে পাচ্ছি। ঘোর অন্ধকারে মনের চোখে পিনাককে দেখতে পেয়ে কোল থেকে দু’হাতে দুটো কাটুম কুটুম তুলে নিলাম। এ–দুটো নিয়েই পিনাক দুপুরে খেলছিল। পিনাকের হিজিবিজি লেখা কাগজটা আর কাটুম কুটুম দুটো ঘরের মেঝেতে নামিয়ে রেখে দরজা খুললাম। বাইরে দরজা আটকে মাতঙ্গিনী দাঁড়িয়ে তখনও। আমাকে দেখে পথ ছেড়ে দিলেন। আমি উঠোন পেরিয়ে হাতে বাকি যা কিছু ছিল সব ফেলে দিলাম কুয়োর মধ্যে। এক মুহূর্তের জন্য ঘরের ভেতরের সব অন্ধকার বাইরের পৃথিবীকে গ্রাস করল। এক লহমায় সারা আকাশ ছেয়ে গেল কালো মেঘে। চড়চড় করে আকাশজোড়া বিদ্যুৎ নেমে এল মাতঙ্গিনীর ভাড়া বাড়ির কুয়োতলায়। তারপরে আবার ঝকঝকে আকাশ, সূর্যের আলো। আমরা ঘুরে দেখলাম বাগানের ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে পিনাক, ওর দু’হাতে দুটো কাটুম কুটুম।

মাকে বললাম, পুতুলদুটো তুমি এখানে নিয়ে এসেছিলে?

মা আমার মাথার চুলে হাত দিয়ে এলোমেলো করে দিয়ে বলল, এখন থেকে তুমি এই ঘরে খেলতে পারো।

পাশের বাড়ির দিদা বলল, সে তো বুইঝলাম, কিন্তু এ বাড়িত থাকতি হলি তোমায় একটা কুয়ো খুঁড়তি হবে যে।

মা বলল, আর এই বাগানের ঘর দুটোও সারাতে হবে ভালো করে।

পরে, অনেক রাতে, যখন আমরা শুতে গেছি, মা–কে বললাম, ওই মেয়েটা যে তোমার মতো করে কথা বলছিল, ও কে, মা?

মা বলল, সে অনেক কথা। অত ভাবতে হবে না। এখন ও আর আসতে পারবে না। আমাদের আর চিন্তা নেই।

আমি বললাম, ওকে কুয়োর মধ্যে ফেলে দিয়েছ?

মা একটু ভাবল। তারপরে বলল, একরকম তা–ই বটে। তাই দিদা আমাদের জন্য একটা নতুন কুয়ো বানিয়ে দেবে। ততদিন আমরা দিদার বাড়ির কুয়ো থেকে জল আনব। কেমন?

আমি বললাম, আচ্ছা।

তারপরে একটু ভেবে বললাম, তাহলে এখান থেকে আমরা চলে যাব, মা?

মা আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল, তুমি কি এখান থেকে চলে যেতে চাও, সোনা?

আমি মাথা নেড়ে বললাম, না। এখানে ভালো। স্কুলটাও ভালো। বন্ধুরাও…

মা বলল, তাহলে আমরা যাব না। এখানেই থাকব। কিছুদিন তো থাকি, তারপরে দেখা যাবে।

আমি বললাম, কী করবে তুমি এখন?

মা বলল, আমি এখানে একটা মিষ্টির দোকান দেব। তুমি বলো আমি খুব ভালো মিষ্টি বানাই। সেই সব মিষ্টি বানাব, আর আমরা খাব, আর যেটা বেশি থাকবে, সেটা বিক্রি করব। কেমন?

আমি নিশ্চিন্তে মাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লাম।

PrevPreviousশহরের মুখ
Nextগল্পবীজNext
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত পোস্ট

দীপ জ্বেলে যাও ২

March 22, 2023 No Comments

আত্মারাম ও তার সঙ্গীরা রওনা দিল দানীটোলার উদ্দেশ্যে। দল্লিরাজহরা থেকে দানীটোলা বাইশ কিলোমিটার হবে। বিশ না বাইশ, ওরা অত গ্রাহ্য করে না। ওরা জানে এই

ভাইরাস সংক্রমণ শুধুই বায়োলজিকাল? – উত্তর ভাসে বাতাসে

March 21, 2023 1 Comment

পশ্চিমবাংলা এই মুহূর্তে অ্যাডেনভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে বিপর্যস্ত। আইসিএমআর-নাইসেড-এর সম্প্রতি প্রকাশিত যৌথ সমীক্ষা  জানাচ্ছে, ভারতের ৩৮% অ্যাডেনোভাইরাস রোগী পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে। এমনকি সুপরিচিত ব্রিটিশ সংবাদপত্র গার্ডিয়ান-এ একটি

দল্লী রাজহরার ডায়েরী পর্ব-১৬

March 20, 2023 No Comments

৪/৩/১৯৯০ শৈবাল–আমাকে প্রথমে নির্বাচনের খবর। আমরা একটাও জিততে পারিনি। জনকও হেরেছে। ভেড়িয়া ৭০০০ ভোটে জিতেছে। আমরা গ্রামে ১২ হাজার ভোট পেয়েছি। বি. জে. পি. ২১

গ্রামের বাড়ি

March 19, 2023 No Comments

১৪ দিন দশেক পরে দেবাঙ্কন এসে হাজির। বলল, “তোদের কফি ধ্বংস করতে এলাম। বাপরে বাপ, যা গেল! যাক, চার্জশিট হয়ে গেছে। সাংঘাতিক কনস্পিরেসি। সোমেশ্বর নাথ

মহিলাদের জন্য মহিলা টেকনিশিয়ান!

March 18, 2023 No Comments

খবরের কাগজে কত খবরই তো আসে। বড় একটা অবাক হই না। কিন্তু একখানা খবর পড়ে একেবারে চমকে গেলাম। কলকাতার একটি নামকরা কর্পোরেট হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়ে

সাম্প্রতিক পোস্ট

দীপ জ্বেলে যাও ২

Rumjhum Bhattacharya March 22, 2023

ভাইরাস সংক্রমণ শুধুই বায়োলজিকাল? – উত্তর ভাসে বাতাসে

Dr. Jayanta Bhattacharya March 21, 2023

দল্লী রাজহরার ডায়েরী পর্ব-১৬

Dr. Asish Kumar Kundu March 20, 2023

গ্রামের বাড়ি

Dr. Aniruddha Deb March 19, 2023

মহিলাদের জন্য মহিলা টেকনিশিয়ান!

Dr. Bishan Basu March 18, 2023

An Initiative of Swasthyer Britto society

আমাদের লক্ষ্য সবার জন্য স্বাস্থ্য আর সবার জন্য চিকিৎসা পরিষেবা। আমাদের আশা, এই লক্ষ্যে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, রোগী ও আপামর মানুষ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমস্ত স্টেক হোল্ডারদের আলোচনা ও কর্মকাণ্ডের একটি মঞ্চ হয়ে উঠবে ডক্টরস ডায়ালগ।

Contact Us

Editorial Committee:
Dr. Punyabrata Gun
Dr. Jayanta Das
Dr. Chinmay Nath
Dr. Indranil Saha
Dr. Aindril Bhowmik
Executive Editor: Piyali Dey Biswas

Address: 

Shramajibi Swasthya Udyog
HA 44, Salt Lake, Sector-3, Kolkata-700097

Leave an audio message

নীচে Justori র মাধ্যমে আমাদের সদস্য হন  – নিজে বলুন আপনার প্রশ্ন, মতামত – সরাসরি উত্তর পান ডাক্তারের কাছ থেকে

Total Visitor

428552
Share on facebook
Share on google
Share on twitter
Share on linkedin

Copyright © 2019 by Doctors’ Dialogue

wpDiscuz

আমাদের লক্ষ্য সবার জন্য স্বাস্থ্য আর সবার জন্য চিকিৎসা পরিষেবা। আমাদের আশা, এই লক্ষ্যে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, রোগী ও আপামর মানুষ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমস্ত স্টেক হোল্ডারদের আলোচনা ও কর্মকাণ্ডের একটি মঞ্চ হয়ে উঠবে ডক্টরস ডায়ালগ।

[wppb-register]