গত একমাস যাবৎ প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে কোটা বিরোধী তথা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলেছে শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে। এই আন্দোলন মূলত তৎকালীন কোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে শুরু হলেও, শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী ও ক্ষমতালোলুপ পদক্ষেপ ও মনোভাব আন্দোলন কে স্ফুলিঙ্গ থেকে দাবানলে রূপান্তরিত করে। এই আন্দোলনে প্রথম থেকে শেষ অবধি নেতৃত্ব প্রদান করে এসেছেন সেখানকার সাহসী ছাত্রছাত্রীবৃন্দ। তাদের এই আন্দোলনকে শাসক তাদের দমন পীড়ন নীতি ও গুলি বর্ষণের মাধ্যমে প্রতিহত করতে চাইলেও আন্দোলনে তারা দাঁতে দাঁত চেপে অধিকারের দাবিতে অনড় থেকেছে। অবশেষে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে তারা জিতে গেলেও ,ছাত্রছাত্রীরা আবার রাস্তায় নামে তাদের সহযোদ্ধাদের হত্যার বিচারের দাবিতে। অবশেষে ছাত্রদের ক্রমাগত আন্দোলনের চাপে, শেখ হাসিনা নিজের প্রধানমন্ত্রীত্ব থেকে ইস্তফা দেন।
শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী দমন পীড়ন শুধুমাত্র ছাত্র দের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, সাধারণ জনগন ও ছিল তিতিবিরক্ত। বিগত দেড়দশক ধরে শেখ হাসিনা ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার রাজনৈতিক অভিসন্ধিতে কখনও হেফাজতে ইসলামের মতো মৌলবাদী দলের সঙ্গে জোট করে সরকার গড়েছে আবার একই সাথে বাংলাদেশের ইতিহাসে হিন্দুদের থেকে সর্বোচ্চ পরিমাণ জমি অধিগ্রহণ করেছে। এই সবকিছুই বাংলাদেশের আপাত সহনশীল ধর্মীয় বাতাবরণে বিভেদের বীজ বুনতে শুরু করেছে বহুদিন ধরেই এবং দুর্ভাগ্যবশত এই সুস্থ মস্তিষ্কের জনতার স্বৈরাচারী শাসকের প্রতি বিরূপ মনোভাবের সুযোগের অসৎ ব্যবহার করেছে কিছু মৌলবাদী গোষ্ঠী, তারা ছাত্রছাত্রী-জনতার গণঅভ্যুথানের পিছনে থেকে নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার অপেক্ষায় ছিল এবং হাসিনা সরকার এর পতনের পরে সেনা ও পুলিশবাহিনীর নো একশন পলিসির সুযোগ নিয়ে শকুনস্বরূপ এই গোষ্ঠী বাংলাদেশ এর দিকে দিকে ধর্মীয় দাঙ্গা, অশান্তি এবং সর্বোপরি বাংলাদেশ এর সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষকে খুন, অত্যাচার, পাশবিক নির্যাতনের সমস্ত মাত্রা, সীমা অতিক্রম করেছে। তবে এর ফলে সেখানকার ছাত্রছাত্রীদের সংগঠিত আন্দোলন কে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। কিন্তু ছাত্রসমাজ আন্দোলনের পরেও, যেভাবে সংখ্যালঘু হিন্দু ভাইদের পাশে দাঁড়িয়েছে, যেভাবে মন্দির, গির্জা দাঙ্গাবাজ দের হাত থেকে রক্ষা করতে পাহারা দিচ্ছে, সেটা থেকে এটা স্পষ্ট যে ওই দাঙ্গার মধ্যে এই ছাত্র সমাজ কোনোভাবেই লিপ্ত না , এবং তাদের আন্দোলনের উদ্দেশ্য সব সময় সার্বভৌমত্বে, শাসক এর অপশাসনের বিরুদ্ধে ছিল আছে থাকবে।
মেডিক্যাল কলেজ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংগঠন (Medical College Democratic Student Association,MCDSA) ছাত্রসমাজ কর্তৃক এই শাসক বিরোধী আন্দোলনকে সহমত এবং দাঙ্গাবাজ দের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিরোধ, সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের জীবন ও ধর্ম রক্ষার্থে সবরকম সাহায্যের হাত বাড়িয়ে যে দৃষ্টি স্থাপন করেছেন তাকে কুর্নিশ জানাই। আর আমরা তীব্র ধিক্কার জানাই ওই মধ্যযুগীয় চিন্তায় চিন্তিত মৌল ও দাঙাবাদীদের, যারা সংখ্যা গরিষ্ঠতার সুবাদে, তাদের কার্যকলাপে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর নক্কারজনক ,পিশাচ সুলভ ও নারকীয় তান্ডব ও হত্যালীলা চালাচ্ছে।
তারা এই ক্ষণিকের সময়ে ছাত্র আন্দোলন কে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করলেও, কালের যাত্রায় ও ইতিহাসের পাতায় ছাত্র আন্দোলন শুদ্ধ থাকবে।
সর্বশেষে শ্রদ্ধাঞ্জলি রইলো ওই বীর শহীদদের যারা যারা নিজের নিজের রক্ত দিয়ে সুদিনের আশার আলোকে প্রদীপ্ত রেখেছিলেন।