গোল চাকতি, ফিতে দিয়ে যখন গলায় ঝোলানো হয়, নিজের দেশের পতাকা আস্তে আস্তে ওপরে ওঠে। চোখ দিয়ে জল গড়ায়, গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায়।
অলিম্পিকের মেডেল। মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব এবং প্রচেষ্টার চূড়া বলা যেতে পারে, কোটি কোটি লোকের মধ্যে মাত্র কয়েকজন সেই তারাদের কাছে পৌঁছতে পারে। কাজেই তা অমূল্য। আর যখন কেউ তা ক্যানসারের মতো অসুখের সঙ্গে লড়াই করে অর্জন করে আর অন্য কারও চিকিৎসার জন্য তা নিলামে তুলে দেন তখন তা সবার কাছে নিদর্শন স্থাপন করে। এমনই মহান কাজ করেছেন পোল্যান্ডের মারিয়া ম্যাগডালেনা আন্দ্রেজাইক ।
ম্যাগডালেনা ২০১৬ সালের রিও অলিম্পিকে চতুর্থ হয়েছিলেন। ২০১৮ সালে মাত্র ২৩ বছর বয়সে তাঁর হাড়ের ক্যান্সার, অস্টিওসারকোমা ধরা পড়ে। ক্যানসারের চিকিৎসার পাশাপাশি টোকিও অলিম্পিকের জন্য ফের প্রশিক্ষণ শুরু করেন। টোকিও অলিম্পিকে রূপার পদক জিতেছেন মারিয়া। কিন্তু পদক জয়ের কয়েকদিন পরেই তিনি তা নিলামে তুলে দেন। আট মাসের একটি ছেলে মিলোজেসেক মালিসার হার্টের জটিল অপারেশনের খরচ জোগানোর জন্য।
পোল্যান্ডেরই জাবকা নামে এক সংস্থা সেই পদকের বিনিময়ে ছেলেটির চিকিৎসার জন্য ১২৫০০০ ডলার মারিয়াকে দেন। মারিয়া অত্যন্ত খুশি হয়ে লেখেন, এই পদক হল অনেক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও লড়াই, বিশ্বাস ও স্বপ্ন দেখার প্রতীক। আরও বলেন, এখন এই পদকই একজনের জীবনের আশা জাগাল।
যদিও অত টাকা দিয়ে কেনার পরেও জাবকা নামে সেই সংস্থা মারিয়াকে তাঁর পদক ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিল। কারণ অলিম্পিক পদকও বাজারে পাওয়া অন্যান্য পদকের মতোই। বিশেষ ধাতু দিয়ে তৈরি। কিন্তু তা যখন চ্যাম্পিয়ানের হৃদয়ের কাছে থাকে তখন তা হয় অলিম্পিক পদক।
আমাদের এই সমাজই তো অলিম্পিকের ‘ভিলেজ’।আমরা সবাই অলিম্পিকের বলয়ের মতো একে অপরকে জড়িয়ে থাকি। প্রতিযোগিতা চলুক, কিন্তু তা পরিশ্রম, ত্যাগ, সততার। আমরা সবাই প্রতিযোগী, মানবতার পতাকা আমাদের সবার হাতে।
দারুন।