******************************************
রবিবার। ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১০।
———————————————
“বাবা, আমরাও মাংস খাব, আমরাও মাংস খাব।”
বন্ধ কাঠের দরজার ওপার থেকে দুটি কচি গলার হাহাকার, সঙ্গতে ছোট ছোট হাতে যতটা পারা যায় দুমদাম ধাক্কাধাক্কি। রুটি আর কষা মাংসের দলাটা মুখেই থমকে গেল, চোয়ালের পেশী শক্ত, মাথা নিচু করে চোখ বুজলেন ডাঃ প্রদ্যুম্ন সেন।
“আরে, তুই খা তো ভাই, তুই খা। শু%*য়া%*রের বাচ্চাগুলোকে রোজ খাওয়াই, তাও এরকম করবে। অ্যাই, হা*%রা*%মি*, তোরা থামবি? পেঁ*%দি*%য়ে বৃন্দাবন দেখিয়ে দেব”। প্রথম দুটি বাক্যে অতিথিকে আশ্বস্ত করে শেষের দুটিতে দরজার ওপারের উদ্দেশে হুমকি দিলেন গৃহস্বামী। পেঁ*%দা*%নির ভয়ে চেঁচামেচি থামল বটে, শুরু হল লোভাতুর ফোঁপানি।
কালীঘাটে গা গুলানো আদিগঙ্গার ধারে কতকালের পুরোনো পলেস্তারা খসা বাড়ির একতলায় দেড়খানা কুঠুরি। কেরোসিন স্টোভের ধোঁয়ায় কালচে দেওয়াল। নামমাত্র টিউবলাইটের আলোয় সে ঘরের প্রতি ইঞ্চিতে শ্রীহীন দারিদ্র্য আর অতল হতাশা। তেলচিটে বিছানায় শুয়ে হাতকাটা নাইটি পরনে কৃশাঙ্গী গৃহকর্ত্রী, কোটরগত দুটি চোখে বেঁচে থাকার ইচ্ছার বিন্দুমাত্র লেশ নেই। ইনিই ডাঃ সেন এর রোগিণী। ওঁরই স্বামীর আহ্বানে উত্তর কলকাতার সেই বিডন স্ট্রিট থেকে তাঁকে দেখতে এসেছেন ডাক্তারবাবু। দরজার ওপারের আধ-কাঙাল শিশুগুলি যে ওঁদেরই সন্তান, বলা নিষ্প্রয়োজন।
এ পরিস্থিতিতে সাহিত্য-সিনেমার নায়করা গৃহস্বামীর আপত্তি অগ্রাহ্য করেও, দরজা খুলে, অপরিচিত শিশুগুলিকে বার করে, গাল টিপে আদর করে, তাঁরই আপ্যায়নের জন্য স্টিলের থালায় সাজানো দুটি রুমালি রুটি, কাঁচা পেঁয়াজ আর দোকানের মাটির ভাঁড়ে পরিবেশিত কষামাংস নিজহাতে খাইয়ে দিয়ে এবং তাদের হাতে মিষ্টি খাওয়ার জন্য কিছু টাকা গুঁজে দিয়ে পরিতৃপ্ত হয়ে চলে আসেন।
প্রদ্যুম্ন পারলেন না। ইতিমধ্যেই এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতায় তিনি হতভম্ব ও চূড়ান্ত বিব্রত হয়ে আছেন, কোনওমতে বেরোতে পারলে বাঁচেন এই পরিস্থিতি থেকে, তার মাঝে রুটি-মাংস খেতে খেতে শিশুদুটির ওই বুভুক্ষু হাহাকার তাঁকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে ফেলল। বস্তুত তিনি শান্ত নির্বিবাদী গোত্রের – মনে ঝড় চলতে থাকল, কিন্তু নূতন করে, যাকে বলে সিন ক্রিয়েট করা, তাঁর পক্ষে সম্ভব হল না। সামনে সাজানো খাদ্যগুলি কোনওরকমে জল দিয়ে গলাধঃকরণ করতে করতে কল্পনা করলেন, কলকাতার কোনও আপাদমস্তক কাঁচের দেওয়ালে মোড়া ফুড জয়েন্টে বসে তিনি কোক সহযোগে পিৎজা খাচ্ছেন আর কাঁচের ওপারে নিরন্ন দুটি উলঙ্গপ্রায় শিশু, একটির কোলে আরেকটি, জুলজুল করে তাকিয়ে – এরকম তো কতই হয়!
প্রদ্যুম্ন খেতে থাকুন মাথা নীচু করে, এই অবসরে তাঁর পরিচয় করিয়ে দেওয়া যাক। ডাঃ প্রদ্যুম্ন সেন, এমবিবিএস (ক্যাল)। যাকে আজকাল অনেকে বলেন পাতি এমবিবিএস বা আরেকটু পালিশ লাগিয়ে প্লেন এমবিবিএস। উনিশশো উননব্বই সালে পাশ করেছেন। দিকপাল জেনেরাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, ডাঃ রামকৃষ্ণ দত্তরায়ের কাছে হাউসস্টাফশিপ করে উত্তর কলকাতার বিডন স্ট্রিটে তিন পুরুষের চেম্বারে প্র্যাকটিস শুরু। সেযুগে তখনও স্পেশালাইজেশনের এত চাহিদা ছিলনা, সুপার-স্পেশালাইজড চিকিৎসক ত গোটা কলকাতাতেই গোনাগুনতি। রোগীদের কাছে ভালো ডাক্তারবাবু তো বটেই, পরিচিত চিকিৎসক মহলেও অনেকেই জানেন কিংবদন্তী শিক্ষাগুরুর অন্তর্ভেদী ক্লিনিক্যাল দৃষ্টির সুযোগ্য উত্তরাধিকারী ডাঃ প্রদ্যুম্ন সেন।
কোনওক্রমে খাওয়া শেষ করে, উপায়ান্তর না থাকায় ভাঁড়ে জল ঢেলে আঙুল ধুয়ে উঠে দাঁড়ালেন প্রদ্যুম্ন। এবারে উঠতে হবে। দরজার ওপাশের কান্নাকাটি প্রায় থেমে এসেছে- কাঙ্ক্ষিত বস্তুটি পাওয়ার আর কোনও আশা নেই বুঝেই হয়ত। সাথে বেরিয়ে এলেন রোগিণীর স্বামী এবং গৃহকর্তা ডাক্তার শুভজিৎ বোস, এমবিবিএস – যেমনভাবে বাড়িতে আগত চিকিৎসককে গাড়ি অবধি পৌঁছে দেন আর পাঁচজন রুগীর নিকটজন। প্রদ্যুম্নর পিঠে হাত দিয়ে স্বাভাবিক উৎকণ্ঠায় জিজ্ঞাসা করলেন, “কি বুঝলি ভাই? সুমিতা চলে গেলে ছেলেমেয়ে দুটোকে নিয়ে অথৈ সাগরে পড়ব রে। বাঁচবে টাচবে তো?”
– “ক্লিনিক্যালি মারাত্মক কিছু নয় বলেই তো মনে হল। একটু হাইপারটেনশন আর সিভিয়ার ম্যালনিউট্রিশন গো।”
– “বলিস কি?”
– “হ্যাঁ, দাদা। হিমোগ্লোবিন সাত আটের বেশি হবে না। প্রোটিন, ক্যালরি, ভিটামিন, আয়রন সবই ডেফিশিয়েন্ট। সাথে ডিপ্রেশনও আছে। ওষুধ টুকটাক দিলাম, একটু খাওয়াদাওয়া করাও..… আর টেস্ট বলতে একটু হিমোগ্লোবিন আর ক্রিয়াটিনিন লিখেছি। পাড়ার কোনও ল্যাব থেকে করে নিও, আর কিছু এখন করতে হবে না।” হতাশা আর বিরক্তি লুকিয়ে যতটা সম্ভব সহানুভূতির সাথে রোগনির্ণয় জানালেন ডাঃ সেন।
কয়েক সেকেন্ড মাথা নীচু করে থেকে, হঠাৎই যেন অস্বাভাবিক আশ্বাসী ভঙ্গিতে তড়বড় করে বলতে থাকলেন শুভজিৎ – “বাঁচালি ভাই। তুই চিন্তা করিস না, আমি পরশুই সব ওষুধ এনে খাওয়াতে শুরু করে দেব। কাল একটা ক্যাম্প আছে, কিছু মালকড়ি হাতে আসবে তো। তুই চিন্তা করিস না। বাচ্চাদুটোকেও বচ্চন ধাবায় রুটি আর মাটন খাইয়ে আনব। ওদের খাওয়াই কিন্তু রেগুলার, জানিস, তাও সো*%য়া*%ই*%ন গুলো এমন করে। আয়, তুই আয় ভাই। অনেকদূর যাবি। থ্যাঙ্কস জানিয়ে ছোট করব না রে।”
ততক্ষণে গলি পেরিয়ে ডাঃ সেনের গাড়ির সামনে দুজনে। সংসারের পরিবেশ দেখে প্রদ্যুম্ন আন্দাজ করেছিলেন ঘটা করা আশ্বাসবাণীর কি পরিণতি হবে। তাই মৃদুস্বরে বললেন – “কিছু যদি মনে না করো, কাল ক্যাম্প শেষ করে একবার আমার চেম্বারে আসতে পারবে দাদা? ফিজিশিয়ান স্যাম্পল তো পাই অনেক, দিন পনেরর ওষুধ অন্ততঃ দিয়ে দিতে পারব। আমার তো সাউথে একদম আসা হয়না।”
– “তাই? দিবি, দিবি, তুই দিবি? ওকে বস্, কাল আমার বেলঘরিয়ার দিকে যাওয়া আছে। ফেরার পথে চলে যাব বিডন স্ট্রিট। একদম স্যাঙ্গুইন, সিওর।” রোগিণীর দরিদ্র স্বামীর স্বাভাবিক উচ্ছ্বাস শুভজিৎ এর চোখেমুখে।
– “চলি দাদা, গুডনাইট।” সাদা হোন্ডা সিটি স্টার্ট হল।
কালীঘাট থেকে বিডন স্ট্রিট অনেকটা রাস্তা। অ্যাক্সিলারেটর-ব্রেক-অ্যাক্সিলারেটর করতে করতে অতীতে ডুবে গেলেন ডাঃ সেন।
প্রদ্যুম্ন তখন কলেজে মাত্র চার মাস। ডিসেম্বর ১৯৮৪। শীতের সকালে কলেজ মাঠে পঁচিশ ওভারের ইন্টার ক্লাস লীগ, ফোর্থ ইয়ার বনাম ফাইনাল ইয়ার। পঁচিশ ওভারে ফাইনাল ইয়ার করেছে মাত্র সাতানব্বই। পাঁচ রানে ফোর্থ ইয়ারের দু উইকেট পড়ার পরে ভিভ রিচার্ডসের মতো ব্যাট ঘোরাতে ঘোরাতে এক দাদা নামা মাত্র মাঠে গুঞ্জন, শিস, হল্লা – ‘চালাও গুরু’, ‘শুউভো-শুউভো’। ওঁদের ইয়ারের দিক থেকে এক দিদি চেঁচাল – “কাম অন শুভ, একেবারে উইনিং শট নিয়ে বেরো”। পাশে বসা সেকেন্ড ইয়ারের সদালাপী মধূসুদনদা নবাগত প্রদ্যুম্নকে বলল, “শুভজিৎ বোস – দিল্লি আন্ডার-নাইনটিন খেলে আসা ছেলে। মুডে থাকলে আধঘন্টায় খেলা নামিয়ে দেবে।”
– “তাই?” ঈর্ষণীয় সুঠাম চেহারার শুভজিৎদাকে দেখতে দেখতে মুগ্ধ হয়ে বলল প্রদ্যুম্ন। পুরুষও কখনো কখনো পুরুষকে দেখে মুগ্ধ হয় বৈকী। অল্পবয়সের রোগাপাতলা বিনোদ খান্না, শুধু চুলটা একটু ঝাঁকড়া টাইপ।
– “চিফ মিনিস্টার কোটা। আইএসআই তে বি ষ্ট্যাট পড়তে ঢুকেছিল। আইএএস বাবা ছাড়িয়ে এনে জ্যোতিবাবুকে ধরে ডাক্তারি পড়াতে ঢুকিয়েছে।”
– “কি বলছ, দাদা? আইএসআই!” মুগ্ধতার উপরে মুগ্ধতা প্রদ্যুম্নর। এ তো সিনেমার গল্পের হিরো – ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিকাল ইনস্টিটিউট, মাচো হ্যান্ডসাম, ক্রিকেটের ওস্তাদ…
– “ইয়েস ব্রাদার, তবে এখন পড়াশোনা মায়ের ভোগে। সাপ্লি খেয়েছে, তারপরে তিন মাস পরে কোনওরকমে বেরিয়েছে। আফটার অল, ব্রিলিয়ান্ট তো। সারাদিন খিস্তিখাস্তা, পানু, মদ, গাঁজা। এদিকে ডিবেট, এক্সটেম্পোর এ আনপ্যারালাল, অবশ্য যদি মাল খেয়ে হোস্টেলে উল্টে পড়ে না থাকে। ক্লাসের মেয়েরা আউট ওর জন্য, এ পাবলিক বিন্দাস।” – এক নিশ্বাসে শুভজিৎ বোস সম্বন্ধে যাবতীয় তথ্যভাণ্ডার উপুড় করে থামে মধুদা। ওদিকে মাঠে ততক্ষণে স্ট্রোকের তুবড়ি, ফাইনাল ইয়ারের ছেলেমেয়েরাও তালি দিচ্ছে। ম্যাচ ফোর্থ ইয়ারের হাতের মুঠোয়।
ডি এল খান রোড থেকে বেরিয়ে রেসকোর্সের পাশ দিয়ে হসপিটাল রোড, ক্যাসুরিনা এভেন্যু দিয়ে যাচ্ছেন প্রদ্যুম্ন। এদিকটা ফাঁকা। ড্রাইভ করে শান্তি। গাড়ির চাকার সাথে তাল রেখে চলছে স্মৃতির আবর্তন।
থার্ড ইয়ারে উঠে শুভজিৎদার সাথে আলাপ হয়েছিল ক্যান্টিনে হঠাৎ মুখোমুখি বসে পড়ে। নিজেই ডেকে আলাপ করেছিল দাদা – “অ্যাই, তুই প্রদ্যুম্ন? বায়োকেম আর ফিজিওলজিতে গোল্ড মেডাল শুনলাম। গুড, গুড।”
– “তুমি তো আইএসআইতে পেয়েছিলে শুনেছি।” অল্পবয়সের অল্পবুদ্ধিতে নরম জায়গায় ঘা দিয়ে বসে প্রদ্যুম্ন।
– “ড্যামিট, ইউ স্টুপিড বয়। অল দ্যাট স্টেল ফা**খিং পাস্ট। এন্ট্রান্সে থার্ড হয়ে ছিলাম, জানিস। নিজের ক্যালিতে, এই খোপরির জোরে।”- বলে নিজের মাথায় আঙুল দিয়ে টোকা দেয় শুভজিৎ। তারপরে হঠাৎই গলা নেমে আসে – “সেখান থেকে আজ এখানে সি এমের দয়ার মাল। তাছাড়া আমার ভালো লাগে না স্টাডিং হিউম্যান বডি। আমি সাবজেক্টটা খারাপ বলছি না, ডোন্ট মাইন্ড, বাট আই কান্ট এনজয়। কি করব।” এবারে গলায় স্নেহ আর অনুতাপ ধরা পড়ে – “তুই কিছু মনে করিস না রে ভাই, সরি। অ্যাই, তোর চা টোষ্টের আজ আমি স্পনসর, ওকে? অ্যাই, মোগলাই খাবি? আরে, লজ্জা করিস না। চল, চল, দুজনে খাই।” প্রদ্যুম্নর মনে পড়ল – আশেপাশে অনুপ, মান্নান, রজতরা জুলজুল করে দেখছিল ‘বিনোদ খন্না’ আর সে একসাথে বসে মোগলাই খেতে খেতে খোশগল্প করছে।
এসপ্ল্যানেড কেসি দাশকে বাঁদিকে রেখে সেন্ট্রাল অ্যাভেন্যু ধরলেন ডাঃ সেন। বাড়ি আর মিনিট দশেকের রাস্তা৷
সেকেন্ড আর থার্ড এমবিবিএস, দুটোতেই রি-সাপ্লি পেয়ে দু-বছর নষ্ট করে ডাক্তারি পাশ করেছিল শুভজিৎ দা। সে যখন ইন্টার্ন, প্রদ্যুম্ন ফাইনাল ইয়ার। পরীক্ষা এগিয়ে আসছে। তখনই কয়েকমাস ধরে হাওয়ায় ভাসতে থাকা খবরটা একদিন বোমার মত ফেটে পড়ল। বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে পেথিডিন ইঞ্জেকশন চুরি করত ইন্টার্ন শুভজিৎ বোস, আজ একেবারে হাতেনাতে ধরা পড়েছে। সিস্টার ইনচার্জ ফাঁদ তৈরী করে রেখেছিলেন, নেশারু শুভজিৎ তাতে পা দিয়েছে নেশার তাড়নায়। ঝকঝকে চেহারাটা গুটিয়ে গেল আস্তে আস্তে, এককালের ধোপদুরস্ত্ জামাকাপড়ে অযত্নের ছাপ। লোকজনের গালি খেতে খেতে হোস্টেলের একতলায় এককোণের স্যাঁতসেতে ঘরে গিয়ে আস্তানা গাড়ল সে। সবার করুণার পাত্র হয়ে ইন্টার্নশিপ শেষ হল কোনওমতে। তারপরে, মাস তিনেক রেডিওলজিতে হাউসস্টাফশিপ করে একদিন কাউকে না বলে হোস্টেল থেকে উধাও হয়ে গেল ডাঃ শুভজিৎ, ততদিনে কলকাতার ডাক্তারী জগতে তার নূতন নামকরণ হয়ে গেছে – পেথিডিন বোস।
এসব কতকাল আগের কথা। পুরো কুড়ি বছর। উনিনশো নব্বই থেকে দুহাজার দশ। কালের অনিবার্য নিয়মে সবাই ভুলে গেছে ড্রাগ, অ্যালকোহল এডিক্ট ডাক্তার শুভজিৎ বোসকে। কখনও হয়ত রি ইউনিয়নে কথা প্রসঙ্গে নাম উঠেছে – কেউ সহানুভূতি দেখিয়ে চুক চুক করেছে, কেউ হাসাহাসি করেছে। সফল মানুষদের সমাবেশ হেরে যাওয়া মানুষকে নিয়ে কে সময় নষ্ট করে!
গাড়ি গ্যারাজ করে স্নান সেরে একটু টিভি চালিয়ে বসলেন প্রদ্যুম্ন। অন্যদিনের মতই। ডিনারের আগে মিনিট কুড়ি তিরিশ। টিভি চলতে লাগল। ওঁর মনে কেবল শুভজিৎ দা আর তাঁর পরিবার।
শুক্রবার, গত পরশু ছিল শিবরাত্রির সন্ধ্যা। চেম্বার একেবারে হাল্কা। জার্নাল ওল্টাচ্ছিলেন ডাঃ সেন। সহকারীরা বাইরে মৃদু আড্ডা দিচ্ছে। এমন সময় পলাশ এসে বলল, “স্যর, একজন লোক এসেছে, বলছে উনিও ডক্টর, দেখা করতে চায়। চেহারা দেখে ডাক্তার বলে মনে হচ্ছে না কিন্তু।”
স্বাভাবিক সৌজন্যে প্রদ্যুম্ন বললেন – “পাঠাও না, দেখি।”
ডাঃ শুভজিৎ বোসকে দেখে চিনতে পারেননি প্রদ্যুম্ন, চেনার কথাও নয়। জীর্ণ, শীর্ণ – অভাব, অবহেলার ছাপ পা থেকে মাথা অবধি। কাঁধ ঝুলে পড়েছে, তোবড়ানো গাল, কুঁচকানো চামড়া, ফ্যাসফেসে সিন্থেটিকের একটা মলিন হলুদ হাফশার্ট। চুল পাতলা হয়ে এলেও বাবরিটা আছে – গালে খোঁচাখোঁচা সাদা দাড়ি দেখে বোঝা গেল চুলটা কলপ করা। পরিচয় পেয়ে লাফিয়ে উঠলেন ডাঃ সেন – “শুভজিৎ দা, তুমি! বসো, আগে চা আনাই। নাকি, কফি খাও আগের মত?”
লাজুক গলায় আবদার করলেন শুভজিৎ – “কফি? খাওয়া। ডাক্তারের চেম্বারে এসে ফিস না দিয়ে উল্টে খেয়ে যাব। ঝাক্কাস হবে ব্যপারটা।”
অভিজ্ঞ চোখদুটি কি যেন সংকেত পাঠালো প্রদ্যুম্নর মস্তিষ্কে। পলাশকে ডেকে বললেন – “দু কাপ কফি বানাতে বলো সীমাকে, আর মধুরিমা কেবিন থেকে ফিশফ্রাই দুটো – দাদার জন্য। আমার কলেজের সিনিয়র দাদা, কুড়ি বছর পরে দেখা। যাও, তাড়াতাড়ি আনো। আজ বিক্রিবাট্টা কম, বন্ধ করে দিতে পারে।” খেয়াল করলেন, অতিথির স্বাভাবিক সৌজন্যের বারণটুকুও করল না শুভজিৎ দা৷
সাবধানে কথা চালাচ্ছিলেন প্রদ্যুম্ন, বুঝতেই পারছেন মানুষটি ভালো নেই, আবার কোথায় কি আঘাত দিয়ে বসেন। একথা সেকথার পরে নিজেই ঝাঁপি খুললেন শুভজিৎ – “তোর খবর কোথা থেকে পেলাম জানিস? পেটের ধান্দায় ক্যাম্প ট্যাম্প করি তো – রক্তদান শিবির, এনজিওতে হেল্থ চেক আপ। আমার পড়াশুনার দৌড় ত তুই জানিস ভাই। একটু প্রেশার মাপলাম, জ্বর মাথাব্যথার ওষুধ দিলাম, ব্লাড ডোনেশন ফর্মে সই করলাম, এইসব। তাও সবসময় যেতে পারিনা। বুড়ো বয়সে একটা বিয়ে করে ফেলেছি। কালীঘাটের কাছে একটা ঠেকের মালকিনের মেয়ে, বুঝলি? প্রচুর দেনা হয়েছিল, এদিকে ঠেকও উঠে গেল। বলল আমার মেয়েটাকে উদ্ধার করো, সব দেনা শোধ। দুটো বাচ্চা হয়ে গেল – সালা ল্যাজেগোবরে অবস্থা।”
কেন পড়াশোনা সব ভুলে গেছেন, কেন সময়মত ক্যাম্পে যেতে পারেন না, তা ভর সন্ধ্যাবেলায় শুভজিৎদার মুখ থেকে বেরোনো ‘বাংলা’র গন্ধ, মার্কামারা অ্যালকোহলিকের চেহারা আর ঝিমুনি ভাব দেখেই আন্দাজ করলেন ডাঃ সেন। এ লোক নিয়ম করে কোনও কাজে যাবে বা কেউ ওঁকে দায়িত্বপূর্ণ কাজ দেবে, এ কল্পনা করাও দুষ্কর। আশির দশকে আইএসআইতে থার্ড হওয়া ছেলেকে জোর করে ডাক্তারি পড়তে পাঠানোর কি পরিণতি!
মনের কথা মনেই রেখে প্রদ্যুম্ন হেসে বললেন – “কিন্তু আমার খবর কোথায় জানলে সেটা তো বললে না।”
– “আরে, একটা ক্যাম্পে নীলুর সাথে দেখা, তোদের নীলাদ্রী রে। ওর অবশ্য আমার মত কেস নয়। ও ই বলল, তোর দারুণ ক্লিনিকাল আই, তেমনি অ্যাটিচিউড, হেব্বি জিপি প্র্যাকটিস করিস। তোর এই চেম্বারের কাছাকাছি ল্যান্ডমার্কটাও বলে দিল। একদিন যাবি ভাই আমার বাড়িতে, তোর বৌদিকে একটু দেখে আসবি? আনতে পারব না রে ট্যাক্সিভাড়া করে।”
জিপি প্র্যাকটিস করলে হোম ভিজিট করতেই হয়, তাই বলে দক্ষিণ কলকাতায় কখনো যেতেন না প্রদ্যুম্ন। এক্ষেত্রে বারণ করা গেল না। এককালের ভালোবাসার গুণী মানুষটি অথান্তরে পড়েছেন। দুদিন পরে রবিবার ভিজিট ধার্য হল, সন্ধ্যা সাতটায় শুভজিৎদা মিত্র ইন্সটিটিউশনের সামনে অপেক্ষা করবেন। স্মার্টফোন আর গুগল ম্যাপ তখনও কয়েক বছর ভবিষ্যতের গর্ভে।
প্রিয় পাঠক, কুড়ি বছর আগের সেই রবিবারের সন্ধ্যা দিয়েই এই কাহিনী শুরু হয়েছিল। এবারে চলুন, একেবারে চলে আসি দু সপ্তাহ আগের প্রেক্ষাপটে।
রবিবার। জুন ২, ২০২৪।
———————————–
দুহাজার দশের রবিবারের সেই তিক্ত-করুণ সন্ধ্যার পরে চৌদ্দ বছর অতিক্রান্ত। নিহত আদিগঙ্গার মজা খাতেও জল বয়ে গেছে ঢের। শুভজিৎ বোসও যাননি বৌয়ের জন্য ওষুধ আনতে, ব্যস্ত প্র্যাকটিস আর ভরা সংসার ফেলে প্রদ্যুম্নরও সম্ভব হয়নি বাগবাজার স্ট্রিট থেকে কালীঘাটে উজিয়ে গিয়ে ফিজিশিয়ান’স স্যাম্পল দিয়ে আসতে। কলেজ ছাড়ার পরে যেমন, এবারেও দ্রুতই বিস্মৃতিতে তলিয়ে গিয়েছিলেন শুভজিৎ আর তাঁর রুগ্ন, ক্ষুধাক্লিষ্ট পরিবার।
এদিনও এক রবিবারের সকাল। চেম্বার আজ বন্ধ, প্রদ্যুম্নর প্র্যাকটিস এখন অনেক মাপাজোখা। ওঁর নিজেরও মনে হয় এবার একটু বিশ্রামের সময় এসেছে, তাছাড়া বাঙালীরাও এখন পাঁচটা কাশি কিংবা দুটো চোঁয়া ঢেকুরেই সুপার-স্পেশালিস্ট খোঁজে। অতএব তাগিদ দু তরফেই কমেছে। খবরের কাগজ পড়ছিলেন অভ্যাসমত, হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ পিং করল। ক্লাসমেট ডাঃ সুজিত মাইতি। ‘বিজি? এক্সাইটিং নিউজ। ফোন করিস।’ সুজিত শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে সিনিয়র ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল অফিসার। কল ব্যাক করলেন ডাঃ সেন – “কি হল রে? কামচাটকায় বোমা, না আলাস্কায় লু?”
– “দূর, ফাজলামি ছাড়। পেথিডিন বোসকে মনে আছে? তিন বছরের সিনিয়র। আরে, তোর বিনোদ খন্না রে।”
স্মৃতিকোষ ঝলসে ওঠে মুহূর্তে, দু সেকেন্ডে চল্লিশ বছরের ফ্ল্যাশব্যাক হয়ে যায় পরপর। কুণ্ঠামিশ্রিত উদ্বেগ নিয়ে জিজ্ঞাসা করেন প্রদ্যুম্ন – “হ্যাঁ, মনে থাকবে না কেন? কি হয়েছে?”
– “ব্রট ডেড। আধঘন্টা আগে ইআর এ। আমার নাইট শেষ হওয়ার জাস্ট আগে। এলগিন রোডের ফুটপাথে বসে বসে মরে পড়ে ছিল। হোল বডি রাইগর। পুলিশ তুলে নিয়ে এসেছে।”
– “চিনলি কি করে!” আমজনতার মত ডিনায়াল কাজ করে প্রদ্যুম্নর মনে। যদি খবরটা ভুল হয়, তাহলে একবার চান্স পাওয়া যাবে চোদ্দ বছর আগের উদাসীনতা শোধরানোর।
– “চেনার কি কোনও উপায় ছিল! পুরো ইম্যাশিয়েটেড। গাল ভর্তি দাড়ি। ওয়ালেটে লাইফ লাইট ব্লাড ব্যাঙ্কের একটা আদ্যিকালের আইডি কার্ড রাখা ছিল ইয়ং এজ এর ছবি দিয়ে- সেই দিয়ে তো চিনলাম। বডি পিএম এ ডেসপ্যাচ করে উবারে বাড়ি ফিরছি। তোকে জানালাম – তুই একবার ওর বাড়ি গিয়েছিলি না বহুকাল আগে?” নিরুত্তাপ কণ্ঠে বললেন ডাঃ মাইতি।
আজকাল খুব সহজেই চোখ ভিজে আসে প্রদ্যুম্নর। বয়স হচ্ছে – আবেগ চেপে রাখার ক্ষমতা কমছে বোধহয়। মনের গহনে কোন অতলে তলিয়ে ছিলেন তিনি, কতক্ষণ কে জানে। স্ত্রী বন্দনা স্নান সেরে এসে ঘোর ভাঙিয়ে বললেন – “কি হল গো? চা খাওনি, বিস্কুট নেতিয়ে গেল, কাগজ বারান্দায় উড়ছে… শরীর ঠিক আছে তো?” আস্তে আস্তে সম্বিত ফেরে ডাঃ সেনের, কিছু টের পেতে দেন না স্ত্রীকে। মনের ভিতরে তোলপাড় চলতে থাকে সপ্তাহভর। শাপগ্রস্ত এক মেধাবী ডাক্তারের নিদারুণ মৃত্যু, তাঁর স্ত্রীর অপুষ্টিতে ক্ষয়ে যাওয়া চেহারা আর বঞ্চিত দুটি শিশু সন্তানের হাহাকার যেন ডিজে ব্যান্ডের মত দুরমুশ পেটাতে থাকে তাঁর বুকে। কিচ্ছু কি করা যেত না? সত্যিই কি এত ব্যস্ত ছিলেন! কত ওষুধ চেম্বারে পড়ে পড়ে নষ্ট হত, কত তেল পুড়ে যেত উইক এন্ডের লং রাইডে। শুভজিৎ দা তো তাঁকে, যত অশিষ্ট ভাবেই হোক না কেন, সাধ্যমত আপ্যায়ন করেছিল। তিনি তো শিশুগুলির জন্য দুটো চকোলেটও নিয়ে যাননি। এত নির্মোহ পেশাদার ত তিনি নন – তাহলে এত বছর পরেও পুরোনো রোগীরা বিজয়াতে মিষ্টি নিয়ে দেখা করতে আসত না। রাতে বিছানায় ছটফট করেন, বারবার উঠে বসেন। চোখের সামনে ভাসে ফুটপাথে কাঠ হয়ে বসে থাকা শুভজিৎদার মৃতদেহ। অনিদ্রায় ভোগা বন্দনা অবাক হয়ে ভাবেন, তাহলে কি স্বামীকেও এবারে রোগে ধরল।
পরের রবিবার সকাল সকাল ওয়াগন-আর নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন তিনি। স্ত্রীকে বললেন ক্যালকাটা ক্লাবে কয়েকজনকে ব্রেকফাস্টে ডেকেছেন বিখ্যাত কার্ডিওলজিস্ট বন্ধু।
কালীঘাটের বড় রাস্তাগুলি খুপরি অ্যাপার্টমেন্টে ছেয়ে গেলেও আদিগঙ্গার পাড়ের সেই আড়াই ফুট গলিতে সময় যেন আজও থমকে। পরিবর্তন বলতে কেবলের জঙ্গল আর গলি আটকে বাইক। সদ্য শেষ হওয়া ভোটের চিহ্ন – সর্বত্র ফ্লেক্সের জঞ্জাল। ডাঃ শুভজিৎ বোসের সুলুকসন্ধান পেতে কোনও অসুবিধা হল না। গলিরই চার পাঁচজন উৎসাহী হয়ে এগিয়ে এলেন খবরের ঢেউ নিয়ে।
‘মাতাল ডাক্তারবাবু তো গত রবিবারই মারা গেলেন। লাস্ট এক দুবছর কিছুই করতে পারতেন না। মদ আর ইঞ্জেকশন’।
‘বউটাতো মরে গেছে, হ্যাঁ, তা দশ এগারো বছর হবে’।
‘ছোট ছেলেটাও চলে গেল দু বছর পরে, কিডনির রোগে – নেফ্রাটিশ না কি যেন নাম’।
‘এখন মেয়েটাই বেঁচে রইল একমাত্র’।
এরপরেই এল আসল চমক। শুভজিৎদার মেয়ে দীপশিখা। নিঃসীম তমিস্রার মাঝে সত্যিই এক ঝলক চোখ ধাঁধানো আলো।
‘মেয়েটা গত বছর উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছিল স্যর, ভবানীপুরে হরিমতী গার্লস স্কুল থেকে। চার বছর ধরে টিউশনি করে, সপ্তাহে দুদিন সিকুরিটির কাজ করে পড়াশুনার খরচ, সংসার খরচ, বাবার নেশার খরচ অবধি যোগান দিয়েছে’।
‘গত বছর নিট পরীক্ষায় ভালো করতে পারেনি, সারা বছর পড়ে এবার আবার পরীক্ষায় বসেছিল ডাক্তারি পড়বে বলে’।
‘পাঁচদিন আগেই সেই পরীক্ষার রেজাল্ট বেরিয়েছে দাদা।’
‘আমরা তো অত বুঝিনা কাকু, ও বলল এবারে যা র্যাঙ্ক করেছে তাতে নাকি কলকাতার কোনও ডাক্তারি কলেজেই হয়ে যেতে পারে’।
‘একটু অপেক্ষা করুন দাদা, ও জেরক্সের দোকানে গেছে, এখনই আসবে।’
‘গোবরে পদ্মফুল স্যর, আমরা সবাই বুক দিয়ে আগলে রাখব, কিন্তু খরচাপাতির কি হবে জানিনা।’ © পার্থ ভট্টাচার্য্য।
শেষের সমাচারগুলি শুনে বিস্ময়ে, আবেগে বিহ্বল হয়ে পড়েন ডাঃ প্রদ্যুম্ন সেন। এ বছর নিট পরীক্ষায় কদর্য দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে দেশ জুড়ে, তার মধ্যে একটি মেয়ে আধা-সরকারী বাংলা মাধ্যম স্কুলে পড়ে, এই পরিস্থিতিতে, একার চেষ্টায় এত ভালো স্কোর করেছে যে কলকাতার কোনও মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হতে পারবে। মিডিয়াতে এরকম ঘটনা স্টোরি হয় বটে, সামনাসামনি এই প্রথম দেখলেন তিনি।
কথাবার্তার মাঝেই ফিরে এল দীপশিখা। দুই চোখের দ্যুতিতে তার বাবার অসামান্য মেধার জিনগুলির উপস্থিতি।
মনস্থির করে ফেললেন ডাঃ প্রদ্যুম্ন সেন। একমাত্র ছেলে স্টেটসে সেটলড্ হওয়ার পথে। সব দায়িত্ব সামলে তিনি ও তাঁর স্ত্রী এখন ঝাড়া হাত পা। এই অনন্যার স্বপ্ন ও সংগ্রাম বৃথা হতে দেওয়া যাবে না।
কাছে ডেকে নিলেন দীপশিখাকে।
“তুই আমাকে চিনবি না মা। আমি ডাঃ প্রদ্যুম্ন সেন। তোর বাবার কলেজের জুনিয়র। একবার এসেছিলাম এ বাড়িতে, তখন তুই এত্তোটুকুন। থাক সেসব কথা।” একটু থামলেন নিজেকে প্রস্তুত করতে। তারপরে বললেন – “তোর সব পড়াশুনা, হোস্টেল, হাতখরচের দায়িত্ব আমার। আমি জানি তোর ভরসা হবে না অচেনা লোকের কথায়। তাছাড়া কি জানিস মা, আমি নিজে খুব ইনকনজিসটেন্ট। বয়সও হচ্ছে। তাই, পাঁচ বছরের মোটামুটি এস্টিমেট করে তোর একটা ব্যাঙ্ক একাউন্ট খুলে আমি পুরো টাকাটা ডিপোজিট করে দেব। যত তাড়াতাড়ি পারি। তুই কাউন্সেলিং এর জন্য রেডি হ মা।” আবার একটু থামলেন। দেখলেন আশপাশের ছোট্ট ভিড়টা কেমন সশ্রদ্ধ দৃষ্টিতে এগিয়ে আসছে তাঁর দিকে।
একজন অল্পবয়সী ছোকরাকে ডেকে দুটি পাঁচশ টাকার নোট দিয়ে বললেন, “ঘরের মেয়ে এমন কামাল করল, সবাই মিলে মিষ্টিমুখ করতে হবে তো। যাও সবার জন্য রসগোল্লা কিনে আন। আমি বরং দীপা মা’র ঘরে একটু বসি। আমায় কেউ একটু চা খাওয়ান তো ভাই।”
*******************************************
কৈফিয়ৎ।।
যেকোন গল্পের মতই এ কাহিনীও কাল্পনিক। যদিও রুঢ় বাস্তবের বীজ নেই, এরকম বলা যাবে না।
দুজন বাস্তব চরিত্রের কথা এই গল্পে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথমজন, তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী শ্রী জ্যোতি বসু, যাঁর পরিচয় নিষ্প্রয়োজন। সেযুগে ডাক্তারিতে ‘মুখ্যমন্ত্রীর কোটা’ নামে একটি ব্যবস্থা ছিল, সেই প্রসঙ্গে তাঁর নাম উল্লেখ। দ্বিতীয়জন, প্রয়াত প্রফেসর ডাঃ রামকৃষ্ণ দত্তরায়। প্রবাদপ্রতিম ক্লিনিক্যাল মেডিসিন এর মহীরূহ – শিক্ষকদের শিক্ষক, চিকিৎসকদের চিকিৎসক। পরীক্ষক হিসাবে এবং আমার চিকিৎসক হিসাবে আমি তাঁকে পেয়েছি। এই নগণ্য লেখায় সামান্য সুযোগে তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে আশাকরি তাঁর প্রতি অসম্মান করিনি।
*******************************************