কাল ইমার্জেন্সি অপারেশন করতে গিয়ে ইমার্জেন্সিতে পড়লাম। চশমার ডান্ডি গেলো ভেঙে। চশমা ছাড়া আমার দূরদৃষ্টির অভাব ঘটে,আজকাল আবার কাছের লোকেদের চিনতে পারি না। ইমার্জেন্সী সামলে দিল আনেস্থেটিস্ট গৌতমদা। মাইক্রপোর দিয়ে ডান্ডি আটকে। চশমার ডান্ডি ভাঙ্গা আমাদের বংশগত রোগ। দাদুরও ছিল। সেই ভাঙা ডান্ডার চশমা পরেই তিনি রোজ সকালে খবরের কাগজ পড়তেন। কিছুতেই পাল্টাবে না, বাজে খরচ। তখনকার দিনে এই বাজে খরচ আটকাবার নানা রকম পদ্ধতি ছিল।
চশমা পরেই দূরের সেই আবছা জিনিসগুলো পরিষ্কার করে দেখতে পেলাম।আমরা সাত ভাই। বড়দার জামা মেজদা পরবে, তারপর সেজদা, এই করেই চলত।জামা প্রায় ছিঁড়ে গেলে ঘরমোছা করা হতো। জামার যদি ভাগ্য ভালো হতো তাহলে সে কাজের লোকের ছেলের গায়ে উঠতো বা বাসনউলির বোঁচকায়। তখন সবার দুটো করে ‘ ভালো’ জামা থাকতো, বিয়ের বাড়ি বা ভালো জায়গায় যাবার জন্য।
প্যান্টের গল্প অন্যরকম। হাফপ্যান্ট কেনা হতো এক সাইজ বড়ো। বেল্ট নয়, একটা বাতিল হওয়া সায়ার দড়ি দিয়ে কোমরটা টাইট করে,একটা ফোল্ড করে দিত। প্যান্ট আর খুলবে বা। কিন্তু পায়ের দিকটা বড়ো থাকতো,তাই সাবধানে বসতে হতো।নাহলে..
জুতো পরতাম একদম ব্র্যান্ডেড। বাটার নটি বয়। সেটাও এক সাইজ বড়। প্রথম কিছু মাস জুতোর সামনের দিকে তুলে গোঁজা থাকতো। মোজা নন ব্রান্ডেড। মোজার ইলাস্টিক লুজ হয়ে গেলে রাবার ব্যান্ড দিয়ে আটকানো। মোজাটা উল্টো করে ব্যান্ডটা ঢেকে রাখতাম। স্কুল থেকে ফিরে পায়ে একটা দাগ থাকতো।
ছোটোবেলার আর একটা স্মৃতি হলো বাবার গেঞ্জি।সামনে পিছনে বেশ কয়েকটা ফুটো। মা না পাল্টে দিলে তিনি খেয়ালও রাখতেন না। বাজে খরচ কমাতেন।
এই ভাবে বড়ো হওয়াটা মনে ছাপ ফেলে দেয়। তাই বড়ো হোটেলে খেতে গেলে আগে ডান দিকে দাম দেখি, তারপর খাবারের নাম। টাক্সিতে উঠলে চোখ থাকে মিটারের দিকে।