আমাদের যাওয়ার কথা ছিল। বাক্সপ্যাঁটরা গুছিয়ে চলে যাওয়ার কথা ছিল। পাকাপাকি অথবা দিনকয়েকের জন্য, আগে থেকে সবকিছু কি ঠিক করা যায়? যাওয়া হয়নি।
মেঘলা সকাল, ঝিরিঝিরি বৃষ্টি, ঈষৎ শীতের হাওয়া মনে করিয়ে দেয়, কই, গেলে না তো! যাব যাব করেও বেরোনো হলো না কেন!
এসব দিনে শালগাছে টিয়াপাখি এসে বসে। হয়ত বসে ভাবে, উড়ে গেলে হয় না! দূর থেকে বয়ে আসা ভেজা বাতাসে তার সবুজ পালক এলোমেলো হয়ে যায়। তার পর আলস্য জড়িয়ে যায় তার ডানায়।
এমনকি রেলিঙে বসে থাকা কাক, সেও উড়তে ভুলে যায়, দিন এমনই।
দিন এমনই, তেলচিটে শহর ভাবতে থাকে, একবার নাতিশীতোষ্ণ হয়ে দেখলে কেমন হয়!
বৃষ্টি পড়ে। ঝিরিঝিরি। টিপটিপ।
হলুদ শাড়ি পরে রবীনা ট্যান্ডন অপেক্ষা করতে থাকেন, কখন কেউ ক্যামেরা, লাইটস, অ্যাকশন বলবেন! ভুল হয়ে যায়। সময়টা যে চলে গিয়েছে। আনমনে চড়িয়ে নেন মেক-আপ, আয়নার সামনে ফাইনালি দেখে নেন নিজেকে। কিন্তু চারপাশ সুনসান।
এমন দিনে সকলেই অন্যমনস্ক। এমন সকাল, বারান্দার রেলিঙে মেলে রাখা স্যান্ডো গেঞ্জিখানাও তুলে নিতে ভুল হয়ে যায় আমাদের। কিংবা একান্ত নিজস্ব হাফপ্যান্ট।
উৎসব শুরু হলো। অন্তর্বাস ততখানি প্রয়োজন নয়, যতখানি জরুরি জমকালো সাজ। ভিড় বেড়ে চলে উৎসব-প্রাঙ্গনে। নাচাগানা খানাপিনা হইহুল্লোড় এইসব।
উচ্ছ্বাস থেকে অনতিদূরে, একাকী নিঃসঙ্গ দড়িতে ভিজে যেতে থাকে গেঞ্জি, রেলিঙের কাক, ছ্যাতলাপড়া দেওয়াল…
লেট-করা ট্রেন দেরি করতে থাকে। আরও আরও দেরি। বলেছিলামই তো, যাব। কেউ হয়ত অপেক্ষা করে নেই, তবু যাব যখন বলেছি, যাওয়া তো উচিত।
উড়ে আসে ঘোলাটে বাতাস। ভিজে যেতে থাকে শুকোতে দেওয়া জামা, উড়ে যেতে চাওয়া কাক। হারিয়ে গিয়েছে আমার মোজা। ছাতা। ব্যাকপ্যাক। আস্তে আস্তে হারিয়ে যেতে থাকে অব্যবহৃত সবই।
সেকেন্ডের কাঁটা না থাকা হাতঘড়ি যে কখন উল্টোদিকে চলতে শুরু করেছে, ধরতে পারিনি। কবে যে মরচে ধরে গেল আমার আদরের রেলিঙে, বুঝতেও পারিনি।
ছবি : মৈনাক চক্রবর্তী