গাছ থেকে পড়ে, খাট থেকে পড়ে, স্কুটার থেকে পড়ে নানান রকম ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে। সেগুলো অনেক সময়েই খুব সিরিয়াস হয়ে থাকে। আপাততঃ ওই প্রসঙ্গ থাক। বরং ছোট ছেলেমেয়ে বা ছাত্রছাত্রীদের ঘাড়ে ব্যথার কারণ ও প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করি।
যত দিন যাচ্ছে স্কুল কলেজে লেখাপড়ার চাপ বাড়ছে। তাছাড়া অসংখ্য প্রতিযোগিতামূলক বা বৃত্তিমূলক পরীক্ষা একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীতে দিতে হয়।
দেখা গেছে, সাধারণ জনগণের তুলনায় কলেজ পড়ুয়াদের মধ্যে ঘাড়ে ব্যথার প্রবণতা অনেক বেশী। আরো দুশ্চিন্তার বিষয় হল, কম বয়সে ঘাড়ে ব্যথা একবার শুরু হলে কর্মজীবনে বা অনেক ক্ষেত্রে সারা জীবন ঘাড়ের ব্যথা ভোগাতে পারে।
কোভিড মহামারীর পর থেকে ছাত্রছাত্রী এবং কমবয়সী কর্মীদের অনলাইন পড়াশোনা ও কাজকর্ম অনেকগুন বেড়েছে। ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি, বিশেষতঃ কম্পিউটার, ট্যাবলেট ও স্মার্টফোনের যথেচ্ছ ব্যবহার, ভুল এবং অস্বাস্থ্যকর ভঙ্গীতে বসে বা আধশোয়া হয়ে পড়াশোনা বা কাজ করার কারণে নানান অস্থিবিষয়ক রোগ বিশেষতঃ ঘাড়ে এবং কোমরে ব্যথা হতে পারে।
সারাক্ষণ ঘরে বসে কাজ করা, হাঁটাচলা বা ব্যয়ামের অভাব, ঘাড় নীচু করে অনেক ক্ষণ ধরে মোবাইল ফোন দেখা, কম্পিউটার বিশেষতঃ ল্যাপটপ সঠিক উচ্চতায় না রাখা- ঘাড়ে ব্যথার কারণ হতে পারে। ঘাড়ে চোট লাগলেও ঘাড়ে ব্যথা হয়।
এছাড়া মানসিক চাপ, অবসাদ, পরীক্ষার টেনশন, অত্যধিক ভারী ব্যাগ নিয়ে চলাফেরা, স্থূলত্ব, ধূমপান, সঠিক ঘুমের অভাব, রাত জেগে মোবাইল ফোন ব্যবহার করা ঘাড়ের ব্যথার খুব সাধারণ কারণ।
বিভিন্ন ধরণের কাজ বা লেখাপড়ার বিভিন্ন কোর্স অনুযায়ী, ছাত্রছাত্রী বা কর্মীদের চেহারা অনুযায়ী, স্কুল-কলেজে ক্লাসরুমের ব্যবস্থাপনা অনুযায়ী, অফিসে বা কাজের জায়গায় চেয়ার-টেবিল-কম্পিউটার-ফাইলের তাক-অন্যান্য যন্ত্রপাতির মান ও অবস্থান অনুযায়ী ঘাড়ে ব্যথার প্রবণতার হেরফের হয়। যেমন- কম্পিউটার সায়েন্স, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, চারুকলা ইত্যাদি বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের ঘাড়ে ব্যথা বেশী হয়। এইসব কারণের মধ্যে অনেকগুলোই রোগীর একার পক্ষে পরিবর্তন করা সম্ভব নয়।
কিন্তু পূর্বোক্ত ব্যক্তিগত বদঅভ্যাস গুলো ত্যাগ করলে, মানসিক অবসাদ ও দুশ্চিন্তা থেকে দূরে থাকতে পারলে, প্রতিদিন ব্যায়াম, হাঁটাচলা বা সাঁতার ইত্যাদি করলে কমবয়সে ঘাড়ে ব্যথা প্রতিরোধ করা সম্ভব।
অফিস বা স্কুল-কলেজ কর্তৃপক্ষ আর্গোনমিক্স (ergonomics) মেনে অফিস বা ক্লাসরুম তৈরি করলে, ছাত্রছাত্রী বা কর্মীরা বাড়িতে বসে কাজ (work from home) বা অনলাইন ক্লাস এর ক্ষেত্রে বাড়িতেই অফিস বা ক্লাসরুমের মত পরিবেশ তৈরী করে সঠিক উচ্চতার back support ও চওড়া হাতলওয়ালা চেয়ারে সোজা হয়ে বসে কাজ করলে ও এক-দুঘন্টা বাদে বাদে পাঁচ মিনিট বিশ্রাম নিয়ে সামান্য সময় ঘাড়ের ব্যায়াম এবং স্ট্রেচিং করে নিলে কমবয়সী ঘাড়ে ব্যথার রোগীর সংখ্যা না কমার কোনো কারণ নেই।
অল্পবয়সীদের ঘাড়ে ব্যথা যদি অল্প কয়েকদিন যাবৎ হয় এবং খুব তীব্র না হয় তাহলে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে সেসব খুব একটা সিরিয়াস হয় না। সেক্ষেত্রে বিশ্রাম, কাজকর্মের ধারা ও ভঙ্গীমায় সমস্যা থাকলে সেসব পাল্টানো, ঘাড়ে অর্থোপেডিক কলার পরা, ওষুধপত্র, ব্যয়াম- এসব করলেই ঠিক হয়ে যায়। কিছুক্ষেত্রে বিশেষতঃ এর সাথে অবসাদ বা অন্যান্য মানসিক সমস্যা থাকলে- ঘাড়ে ব্যাথা সহজে সারে না। সেক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি, কগনিটিভ এবং বিহেভিওরাল থেরাপি, কাউন্সেলিং বা নার্ভ রুট ইঞ্জেকশনের প্রয়োজন হতে পারে।
অল্পবয়সে ঘাড়ে ব্যথায় খুব বিরল ক্ষেত্রে- যেমন, খুব বড় স্লিপ ডিস্ক হয়ে প্রচন্ড ব্যথা এবং হাত-পা দুর্বল হয়ে গেলে, চলাফেরা করতে সমস্যা হলে – সার্জারীর প্রয়োজন হতে পারে।