NEET UG ভারতে ডাক্তারিতে প্রবেশ করারা অন্যতম বড় পরীক্ষা।এবছর প্রায় ২৪ লাখ ছাত্র ৫৫ হাজার সিটের জন্যে পরীক্ষা দিয়েছে! অতএব প্রতিযোগতা অনান্য সমস্ত পরীক্ষার মতই অনেকবেশি! বাচ্চাদের এবং তার পরিবারের কাছে এই পরীক্ষার গুরুত্ব অপরিশিম!কিন্তু এইবারের পরীক্ষাতে অর্থাৎ NEET UG 2024 পরীক্ষায় ঠিক কত রকমের যে স্ক্যাম অথবা গণ্ডগোল চোখে পড়ছে তা ভাবলে অবাক হয়ে যেতে হয়। গোটা দেশ এই নিয়ে তোলপাড়। জায়গায় জায়গায় ছাত্রছাত্রীরা প্রতিবাদ করছেন রাস্তায় নেমে। সোশ্যাল মিডিয়া জুড়েও চলছে প্রচার। ভারতের অন্যতম বড় পরীক্ষায় এত অস্বচ্ছতা কেন?? কী কী বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে?
*১)* পরীক্ষার রেজাল্ট বেরোনোর জন্যে যে দিন ঘোষিত ছিল, তার ১০ দিন আগে আচমকাই লোকসভা ভোটের রেজাল্টর দিনই কেন NEET UG 2024 রেজাল্ট আউট হল????
*২)* এ বছর প্রায় ৬৭ জন টপ করেছে।অর্থাৎ ৭২০ তে ৭২০ পেয়েছে। এর আগের NEET UG পরীক্ষার ইতিহাসে যা বিরল! ২০২৩ সালের পরীক্ষায় মাত্র ২ জন একসঙ্গে টপ করেছিল।২০২২ সালে করেছিল ৪ জন। এইবার একলাফে এত জন টপ হয়ে গেল কী করে?? শুধু তাই নয় একধাক্কায় প্রায় ১০ গুণ বেড়ে ৭০০ নাম্বার পেয়েছে ২২৫০ জন। ৬০৫ নাম্বার পেয়েছে ৭৬০০০ জন! একবছরের মধ্যেই এত সংখ্যা বেড়ে যাওয়া প্রশ্নের সৃষ্টি করে।
*৩)* সর্বভারতীয় পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র পরীক্ষার আগে বেড়িয়ে যাওয়া নতুন কোনও ঘটনা নয়, এর আগেও অনেকবার হয়েছে। এইবার পাটনায় ২০ জন ছাত্রছাত্রীর কাছে প্রশ্নপত্র চলে আসে, যে কারণে ১৩ জন লোককে পাটনা পুলিশ গ্রেফতারও করে। আশ্চর্যজনকভাবে পরীক্ষার এক মাস আগে একটি ভিডিও ভাইরাল হয় যেখানে একটি লোক দাবি জানায় পরীক্ষার একদিন আগে প্রশ্ন ফাঁস হয়ে যাবে। এবং তা করবে সেই বিখ্যাত লোক যিনি এর আগে অনেকবার প্রশ্নপত্র ফাঁস করারা অভিযোগে ইতিমধ্যেই জেলে রয়েছেন-তিনি হলেন ভিসাল চৌরাসিয়া। টাইমস অফ ইন্ডিয়া এই ভাইরাল ভিডিও নিয়ে একটি রিপোর্ট করে, কিন্তু তবুও NEET UG পরীক্ষা নেওয়ার সংস্থা National Test Agency (NTA) কোনও জোরালো পদক্ষেপ নেয় না। NTA কোনও প্রমাণ বা খবরকেই গ্রাহ্য করে না। এবং পরীক্ষা হতে দেয়। এতগুলো প্রমাণ যদি কম হয় তাহলে টেলিগ্রাম গ্রুপের যে স্ক্রিনশট গুলো ভাইরাল হয়েছে তাও দেখার মতো- যেখানে পরিষ্কার ভাবে বলা হচ্ছে পরীক্ষার ২৪ ঘণ্টা আগে টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন পাওয়া যাবে।
*৪)* NEET UG পরীক্ষায় ৭২০ মোট নাম্বারের মধ্যে দুজন পেয়েছে ৭১৮ এবং ৭১৯। যা গানিতিক ভাবে NEET UG পরীক্ষার প্রশ্নের মানের সঙ্গে মিলিয়ে কোনও দিনই সম্ভব নয়। এই এত বড় ভুলকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্যে NTA একটা কথা বলতে শুরু করে যে তারা Grace Marks দিয়েছে। কিছু কিছু সেন্টারে প্রশ্নপত্র দেরিতে দেওয়া হয়েছিল তাই ১০ মিনিট দেরির জন্যে ওই সেন্টারের সবাই ৪০ নাম্বার করে অতিরিক্ত দেওয়া হয়েছে! তাই তা ৭১৯,৭১৮ হয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে অনেক সেন্টারেই ২০ মিনিট দেরি হয়েছে সেখানে কি সরাসরি ৮০ নাম্বার অতিরিক্ত দেওয়া হয়েছে, কিছু সেন্টারে ১ ঘণ্টা দেরি হয়েছে সেখানে কি সরাসরি ২৪০ নাম্বার দেওয়া হবে?? প্রশ্ন আসছে তাহলে কি সত্যিই ইচ্ছে করে দেরি হয়েছিল? বা কীভাবে আদৌই এই Grace মারক্স দেওয়া হয়েছে?
*৫)* দেখা যাচ্ছে প্রথম ৬৭ জনের মধ্যে ৬ জন একই সেন্টার থেকে পরীক্ষা দিয়েছেন! কী অদ্ভুত তাই না! একই সেন্টার বা কাছাকাছি সেন্টার থেকে পরীক্ষা দিয়ে ৬ জন টপ করছে এই সম্ভাবনা ভারতের মত দেশে খুবই কম!
*৬)* সেন্টার হাইজ্যকিং একটা বড় ঘটনা। অর্থাৎ আপনি টাকা দিয়ে একটা সেন্টার কিনে নিলেন তারপর নিজের পরীক্ষার্থী সেখানে পরীক্ষা দিতে এলে তাকে ভেতরে লোক পাঠিয়ে সাহায্য করলেন। NEET UG 2024 এও তাই হয়েছে। গুজরাটের গোধরায় জয় জলরাম স্কুলের মালিকসহ আরও দুজনকে হাইকোর্ট ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছে এই অভিযোগে যে তারা সেন্টার হাইজ্যাক করেছিল। এই সেন্টারে ১৬ টি বিভিন্ন রাজ্যের পরীক্ষার্থীরা নিজেদের পছন্দের তালিকায় একেবারে প্রথমে দিয়েছিল। যেমন ওড়িশা, মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ড, মধ্যপ্রদেশ, কর্ণাটকের রাজ্যের পরীক্ষার্থীরা এই জয় জলরাম স্কুলে পরীক্ষা দিতে এসছিলেন। কেন? সবাই চায় নিজের রাজ্যেই কাছাকাছি জায়গায় পরীক্ষা দিতে। কিন্তু এরা কেন এখানে ভিন রাজ্যে এসেছিল?
আবার একটি অডিও রেকর্ডিং ভাইরাল হয়েছে যেখানে দাবি করা হচ্ছে আপনি শুধু ক্যামেরার সামনে তিন ঘণ্টা বসে যা খুশি রাফ প্যাপারে লিখতে থাকবেন যাতে কারও সন্দেহ না হয়, সিসিটিভি ক্যামেরায় আপনার রেকর্ডিং থাকলেই হবে, পরে আমাদের লোক গিয়ে আপনার উত্তরপত্র ভর্তি করে দেবে।
*৭)* বলা হচ্ছে, সব কিছুর শুরু হয়েছিল আরও আগে যখন পরীক্ষার জন্যে রেজিস্ট্রেশান আরম্ভ হয় ৯ ই ফেব্রুয়ারি ২০২৪। আর বন্ধ হয় হওয়ার কথা ছিল ৯ই মার্চ ২০২৪। কিন্তু তা পরে বাড়িয়ে ১৬ই মার্চ করা হয়। এরপর ১৬ তারিখ রেজিস্ট্রেশান বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু আবার ২৪ দিন পর ৯ ই এপ্রিল দুদিনের জন্যে NTA পুনরায় রেজিস্ট্রেশান চালু করে। রেজিস্ট্রেশান বন্ধ হওয়ার তারিখ প্রতিবছরই বাড়ানো হয়, তা নতুন কোনও ঘটনা নয় কিন্তু দ্বিতীয়বার বন্ধ হয়ে যাবার পর, ২৪ দিন টানা বন্ধ থাকার পর আবার রেজিস্ট্রেশান চালু করা হল দুদিনের জন্যে,কেন?? তখন থেকেই শুরু হয় ধোঁয়াশা।
যে পরীক্ষায় একটি দেশের ভবিষ্যৎ তৈরি হয়, যে পরীক্ষায় সুযোগ না পেয়ে প্রতিবছর বেশ কিছু ছাত্র-ছাত্রীরা সুইসাইড করে, বাবা-মায়েরা গুচ্ছ গুচ্ছ টাকা খরচ করে কোচিং সেন্টারে সন্তানদের পড়ান তার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে তো ভাবতেই হয়। শুধু একটি মাত্র ঘটনা নয় বিভিন্নভাবে বিভিন্ন জায়গায় গণ্ডগোল চোখে পড়ছে। NAT থেকে বারবার বিভিন্ন ভাবে ব্যাখ্যা দেওয়া সত্ত্বেও এতগুলো অসামঞ্জস্য ঢাকা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। NAT কে হয় আবার পরীক্ষা নিতে হবে অথবা সবকিছুর স্বচ্ছ জবাব দিয়ে পরীক্ষার্থীদের প্রতি সুবিচার করতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সব জায়গায় এই খবর ছড়িয়ে দিন। পরীক্ষার্থীসহ অভিভাবকরা আজ সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার পথে! এই পরীক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ান, তাদের আজ, আপনাকে বড় প্রয়োজন।