লোকটা ডেকেছিল “বাবাজী” বলে।
তখন সদ্য রাউন্ড শেষ করে আউটডোর রুমে ফিরে এসেছি আমি। আমার হেলমেট, আমার স্কুটির চাবি, আমার পাৎলা উইন্ডচিটার,আর আমার বিবিধ খুচরো খাচরা দ্রব্য… এসব এই এখানেই পড়ে টড়ে থাকে। কোনো কোনোদিন জলের বোতল বা বাজারের ফাঁকা থলেও। আর সেসব বাগিয়ে গুছিয়ে বাড়ি ফেরার পথ ধরি আমি। এরকমটাই রুটিন। এরকমটাই হয়ে আসছে পৌনঃপুনিকে।
তো সেই রোজনামচা মোতাবেকই সেদিনও ফিরছিলাম হালকা বাতাসীয়া মনে। আমার ডান হাতের তর্জনীতে চাবির রিং আর আমার বাঁ হাতে আঙুলে হেলমেটের হাতল।
আউটডোর চত্বর এসব সময়ে শুনশানই থাকে বেশিরভাগ। অধিকাংশ রুমেই তালা বন্ধ। সব্বাই চলে গেছে দপ্তর গুটিয়ে পাটিয়ে। শুধু ল্যাবে আর কম্পিউটার রুমে জনা তিনেক নিরলস কাজ চালিয়ে যাচ্ছে এখনও। অনুপম, ভাস্কর… মৌসুমী। ওরা যাবে, চারটেরও পরে। তবে ওরা কাজ করে বড়ো নিশ্চুপে। সহসা এখানে এলে পরে তাই মনে হবে, বুঝি বা ঘুমন্ত নিঝুমপুরী শাপদষ্ট। ওরা যে এখনও আছে, এর প্রমাণ কেবল ওই গোটা দুয়েক বাইক। নীলচে স্প্লেন্ডর প্লাস, আর কালো অ্যাপাচে। দাঁড়িয়ে আছে আমারই স্কুটির ঠিক পাশটিতে।
সময়টা দ্বিপ্রহর। আনুমানিক তিনটে সাড়ে তিনটে হবে। সদ্য শীত পালিয়েছে। গ্রীষ্ম যদিও এসে পৌঁছায়নি এখনো। সারা বচ্ছরের মধ্যে এই সময়টাই সবচাইতে বিপজ্জনক। এ সময়ে দুপুর রোদের মায়ার খেলা চলে ইকিড়মিকিড় । যে খেলা, চকিতে খুন করে দিতে পারে মানব মানবীকে। ঘূর্ণি বয়। কুকুর ঝিমোয়। পাখি ডাকে।
সেদিনও ডাকছিল। ঝিমোচ্ছিল। বইছিল। শব্দ হচ্ছিল পাতায় পাতায়, মৃদু খড়খড়। প্রকান্ড একটা সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল দাঁড়িয়ে ছিল দৈত্যের মতো ঠিক পাশটিতে। খুপরি খুপরি জানালার কাচগুলো থেকে তার, সোনালী রোদ্দুর ঝিকোচ্ছে ঝিলমিল। সপ্তম তলার একটা জানালাতে ছোট্ট একখানা মুখ অস্পষ্ট। তাকিয়ে আছে আমার এই টিবি হাসপাতালটির দিকে আনমনে। সম্ভবত অমল। কিংবা বন্দিনী রাজকন্যে। ট্রাকের পিছনে যেমন লেখা থাকে হিন্দীতে–“ঘর কব আয়োগে?” আর ছবি থাকে ঘাগরা চুনরি পরিহিত এক অপেক্ষমানা প্রিয়ার। ঠিক সেই রকম চাউনি ওই অস্পষ্ট মুখটাতে। “ঘর কব লে যায়োগে?”
এসব আমার দেখতে পাওয়ার কথা নয় যদিও। এক ফার্লং দূরত্ব থেকে, সত্তর ফুট উঁচু খিড়কির মুখের অভিব্যক্তিকেই বা দেখতে পায়! তবুও আমি দেখি। আর আবছা মুখে বসিয়ে নিই নিজেরই কল্পকথা। তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে স্টার্ট দিই স্কুটিতে।
সেদিনও এসব করতে করতেই এগোচ্ছিলাম। স্কুটিটা রয়েছে দু ধাপ নিচের জমিনে। অর্থাৎ, হাসপাতালটি, দু ধাপ মাটি ছেড়ে বানানো। সবেমাত্র প্রথম ধাপটা নেমেছি, দেখি এক প্রৌঢ়, পরনে যাঁর ধুতি শার্ট, কাঁধে যাঁর শস্তা মুগার চাদর, চুল যাঁর সাদা কালো কোঁকড়ানো, আর মুখে যাঁর ঝুলে যাওয়া ভালোমানুষের ত্বক… ঘুরে বেড়াচ্ছেন ইতস্তত ভাবে। স্কুটি স্ট্যান্ড পেরিয়েও এগিয়ে যাচ্ছেন আরো ওইপাশের দিকে। যেদিকটাতে কিচ্ছুটি নেই। ভাঙাচোরা পরিত্যক্ত স্টাফ কোয়ার্টার আর পাম্পরুম ছাড়া। আর মোটা শিকড়ের একটা অশ্বথ্থ গাছ। এমন একটা দিকে কারো কীই বা প্রয়োজন থাকতে পারে!আমি অবশ্য যাইটাই মাঝেমধ্যেই। পাম্প চালানোর কেউ না থাকলে। অথবা, কুকুর খুঁজতে। কালো আর পাটকিলে দুটো কুকুর। স্বামী স্ত্রী। বিস্কুট খায় আমার হাতে লেজ নেড়ে নেড়ে। যেদিন যেদিন ওরা আসে না, সেদিন সেদিন ওইদিকে গিয়ে ডাকি। কথা বলি। ওইখানেই ওদের ঘরকন্না চলে নিভৃতে। গাছের বাকল নিয়ে টানাটানি। আমি বলি–“এলি না তো? তোদের ন্না.. খুব বাড় বেড়েছে! কাল থেকে আমিও আসবো না দেখিস। তখন মরিস খুঁজে খুঁজে। আয় না রে ভাই, আঃ আঃ আঃ।” আর ওমনি ওরা বাকল ফেলে ছুটে আসে গিড়গিড়িয়ে। ল্যাজ নাড়ে। ফোঁচ ফোঁচ করে হাঁচে। আর লুটোপাটি খায়। সে খাক গিয়ে। মোটমাট কথা, ওদিকে কিচ্ছুটি নেই তেমন একটা। তো তাহলে লোকটা ওদিকে যায় কেন? গুটিগুটি পায়ে? মালটা তারমানে পাক্কা পেশেন্ট। গ্রামদেশ থেকে জলপাইগুড়ি শহরে এসেছে বড় ডাক্তার দেখাবে বলে। এরকম আসে। লোকজন। হয়তো রোগ কিছুই নেই তেমন শরীরে। স্রেফ গ্রামে দেখিয়ে মনের শান্তি হয় না, তাই শহর এয়েছে। আর নয়ত আছে। রোগ সত্যিই। বড়োসড়ো। তাই এসেছে। তারপর কপালের ফেরে টোটোতে চেপে দুঃখের কাহিনী শুনিয়েছে টোটোওয়ালাকে। আর সে ব্যাটা নিয়ে হাজির করেছে টিবি হাসপাতালে।
এরকম হয়। বহুবার দেখেছি। আমার অতি তুচ্ছ ডাক্তারি জীবনে একমাত্র গর্বের কথা। দুনিয়ার যত গরীব গুর্বো, আর টোটোওয়ালা কিম্বা রিকশাচালক, এরা সব আমার পেশেন্ট। আউটডোরের। এ হাসপাতাল টিবির হলেও, সাধারণ পেশেন্ট আমি চুটিয়ে দেখি বহির্বিভাগে। বস্তুত, আউটডোরটা এখন প্রায় ‘জেনারেল’ই বলা চলে। পঁচানব্বই ভাগ রোগীর যক্ষ্মা নেই। জ্বর, ডায়াবেটিস, সুগার, খোস পাঁচড়া। এককালে দেখাতে আসতো গরীবগুর্বোরা। এখন তারাই বড়লোকদের ধরে ধরে আনে।
আমার এখনো মনে পড়ে একটা দিনের কথা। সেদিনও এরকমই আউটডোর আর রাউন্ড শেষে দু ধাপ সিঁড়ি নামছিলাম আমি। এক টোটোওয়ালা একটি মাতা ও কন্যাকে নিয়ে এসেছিল সঙ্গে করে। ভদ্রমহিলা বলছিলেন সেদিন কাঁধে আঁচল টানতে টানতে -“টিকিট কাটতে যাচ্ছিলাম। এ বললো, এইখানে একবার ট্রাই ন্যান। তারপর সাউথে যাবেন।…. একটু দেখে দিন ডাক্তারবাবু। সামনে মাধ্যমিক। সামলে দিন। তারপর দেবী শেঠিকে দেখাতে নিয়ে যাবো।”
সেদিন বাড়ি ফিরে এক টুকরো করে রুটি ছিঁড়ে ছিঁড়ে মুখে পুরেছিলাম আমি, আর আয়নার সামনে নেচেছিলাম জাঙ্গিয়া পরে।–“কোথায় স্বর্গের দ্বার, আর কোথায় গুহ্যের দ্বার। দেবী শেঠির পরিবর্তে আমায় দেখাতে নিয়ে এসেছে… ডিম্পকডি! ডিম্পকডি!”
তো, এসব আমি দেখেছি।
দ্বিতীয় ধাপ পেরিয়ে জমিতে নামতে নামতে হাঁক মারলাম তাই রগুড়ে কণ্ঠে—“কী খুঁজতেছ? কাকা? ওইপাকে কিছুই তো নাই গ!”
ভদ্রলোক এগিয়ে এলেন জড়োসড়ো পায়ে। হাসলেন। দাঁতের ফাঁকে ফাঁকে পান অথবা গুড়াকুর নির্যাস। কপালে, চন্দনের তিলক।
“বাবাজী.. ডাক্তর খুঁজিনু..”
আমি পাপীতাপি মানুষ। বাবাজী শুনলেই আমার মনে পড়ে যায় আখড়ার কথা। আর আলোচাল ভাত, সামান্য গব্যঘৃত, নরম বেগুন কিংবা কুমড়ো সিদ্ধ। অল্প একটুকু ঝাঁঝাঁলো সরিষার তৈল ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তদুপরে। দাওয়াটি এ স্থানে মাটির। গোবর নিকানো। টগর ফুলের একটি স্নিগ্ধ গাছ ছেঁড়া ছেঁড়া ছায়া আঁকিতেছে সন্নিকটে। দুপুরটি তখন ঝাঁঝালোও বটে, ঘুমন্তও। দাওয়ায় ভুরভুরে অন্নের সুবাস, চন্দনের গন্ধ আর খড়ের চালের মায়া। একতারা, গুপিযন্ত্র, কালো সুতোর শ্লেট রঙা শাল আর গোটা তিনেক মাধুকরীর ঝুলি পড়ে আছে পাশেতে। এবং চলছে, দ্বিপ্রাহরিক সেবা।
এ ছবি আমি কেমনে এঁকেছি জানিনে। ‘রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত’ নাকি ঝিনি ঝঙ্কৃত ‘দেখি নাই ফিরে’, মনে নেই। তবে এঁকেছি। “বাবাজী” ডাক শুনলেই মনে পড়ে যায় ফট্ করে। খুব একটা শুনি না যদিও। এক শুনেছিলাম এক স্বাস্থ্যবতী বোষ্টুমীর মুখে। বলেছিলাম– যাবো। তোমাদের আখড়াতে। আর সে বলেছিল– এসো গোঁসাই। তোমারে খাওয়াবো পরাণ ভইরে।
আর বলে বিপিনদা। বিপিনদা আমারই হাসপাতালের গ্রুপ ডি। পেটানো চেহারা, পাৎলা চুল, রোদে তামাটে অতি সাধারণ মুখ চোখ। ওই আর পাঁচটা মানুষের মতোই আর কি! শীত গ্রীষ্ম একখান ছাই রঙা প্যান্ট আর সাদাটে ফুল হাতা জামা পরে আসে। চড়া শীতে, ওরই ওপর মাফলার, মাঙ্কিটুপি, পুলওভার, মোজা। আর আছে গলায় জড়ানো দুই ফেরতা কণ্ঠি। কণ্ঠের মালা। কাঠের। হয়ত চন্দন। কিম্বা বিল্ব। অথবা অন্য কোনো পবিত্র বৃক্ষ কাষ্ঠরচিত। কারণ, দীক্ষা নিয়েছে বিপিনদা। কোচবিহার নিবাসী গুরুদেবের নিকটে। তাতে অবশ্য আহামরি উপকার হয়নি কোনো। বিপিনদা কথায় কথায় গালাগালি করে চুটিয়ে। বলে-“চোদনা”। সব্বাইকে। আমাকেও। মাথাটা কিঞ্চিৎ খারাপ আছে বিপিনদার। প্রথম প্রথম এসব অবশ্য বুঝিনি। একদিন আউটডোরের মাঝেই কি একটা নিয়ে খটামটি লেগেছে তুমুল। সোজা এগিয়ে এসে বলেছিল আমায়–“অ্যাই যে, সোদ্না! সুপারিটেন কে এখানে? আমি না আফনি?” উত্তরও দিয়ে দিয়েছিল নিজেই সাথে সাথে–“হামি সুপার। মনে রাইখেন।” আর একদিন বলেছিল উপ স্বাস্থ্য আধিকারিককে। ভদ্রলোক এসেছিলেন ‘ সারপ্রাইজ ভিজিট’-এ। আর এসে কি এসেই স্বভাবসুলভ গাম্ভীর্য্যে জিজ্ঞাসা করেছিলেন বিপিনদাকে–“এই যে… ভাই…, কাজ করেন তো? ঠিকঠাক? নাকি না..?” বিপিনদা তখন হাতব্যাগে মাফলার ঢোকাচ্ছিল গুঁজে গুঁজে। একপাক ঘুরে সপাটে বলেছিল মুখোমুখি–“হাম্কে দরোজা বন্ধ করতে বলে। করি। বেলাড আনতে কয়। আনি দি। আবার কিসের কাজ রে সোদনা?” আধিকারিক তৎক্ষণাৎ জিপগাড়ি চেপে পালিয়েছিলেন। ভিজিট ক্যানসেল। সেদিন বিপিনদা আমাদের হিরো। চা বিস্কুট খাইয়েছিলাম চাঁদা তুলে।
আর একবার তো আরো মারাত্মক। এক বেচারি ফেজটুপি পেশেন্টকে বলেছিল পিঠে চাপড় মেরে –“তুমরা বাইঞ্চোৎরা গঅরু খাও সোদনা”। আমি চেয়ার ছেড়ে উঠে বসেছিলাম হইহই করে। মারামারি লাগলো বুঝি! কোথায় কী! কিচ্ছুটি হলো না। পেশেন্টটি মেঠো মানুষ। রাগটাগ কিচ্ছুটি না করে দাঁত বের করে হেসেছিল–“আইর তুমরা যে শুয়ার…।” ভাব হয়ে গিছলো দুজনের। মুহুর্মুহু শুনতে পাচ্ছিলাম ‘সোদনা’। বিড়ি টেনেছিল মাঠের কোণাতে গিয়ে ফুকফুক।
তবে এই বিপিনদাও বাবাজী বলে। আমি শুনেছি। দেখেওছি। বলে, রুগ্ন পেশেন্ট হলে। চলৎশক্তি রহিত রোগী। তার নাম ইসমাইল হোক কিম্বা রামচন্দর, বগলের নিচে হাত ঢুকিয়ে ওয়ার্ডে নিয়ে যেতে যেতে বলে– কষ্ট হইতেসে? বাবাজী?
থাক সেসব কথা। বিপিনদা আর ওই বোষ্টুমি বাদ দিলে, এই প্রথম বাবাজী শুনলাম কারো মুখে।
–“বাবাজী, ডাক্তর খুঁজিনু..”
আমি সিঁড়ির শেষ ধাপটা নেমে, এগিয়ে এলাম খানিকটা।
— আউটডোর তো বন্ধ হয়ে গেছে গ কাকা! কালি আইসো! এলায় ডাক্তার দেখাইতে হইল্যে এমারজেঞ্ছি যাবার নাগিবে ..। কিছু হইছে? এখনই দেখাবার নাগিবে?”
লোকটা হাসলো। হেসেই, দুই পা এগোলো ইতস্তত ভাবে। সম্মানজনক দূরত্ব বজায় রাখলো কিছুটা। তারপর হাত কচলে বললো–“হামার না হয়। অই উনার হইছে। প্যাটে বিষ। লোকাল ডাক্তরে লাভ হয় নাই। তাই হামারে বলিলো– সঙ্গে যাবা? তো…তাই আসিনু। সঙ্গে। একটু দেইখ্যে দাও বাবাজী। ফেরত যায়া হামার কীর্ত্তন আসে টাকিমারির মাঠে। দেইখ্যে দাও বাবাজী।.. কঅই রে, কিষ্ণ… এঠে আয় কনে..”
তাকিয়ে দেখি, পেটে হাত দুমড়ে এক মক্কেল আসছেন ওইপাশের অশ্বথ্থের আড়াল থেকে। সেদিন, নিয়ম ভেঙে নিজেই তালা খুলে প্রেসক্রিপশন করেছিলাম আমি। ওষুধ দিয়েছিলাম ফার্মেসী ঘর খুলে। আর আবিষ্কার করেছিলাম একখানি আশ্চর্য তথ্য।
— নাম কী? কৃষ্ণ তো জানি। তো …তারপর কী?
— না ডাক্তরসাব। হামার নাম করিমুল।
— এ যে বললো কৃষ্ণ!
— ও হামায় কিষ্ণ বইলেই ডাকে…
হেঁ হেঁ করে হেসেছিল শস্তা মুগার চাদরওয়ালা সেই প্রথমের লোকটা–“বাবাজী, অই একই হইলো। কিষ্ণ বলো আর করিমুল। আগ কইরো না বাবাজী। আমও যা, অহিমও তাই.. আগ কইরো না বাবাজী হামার।”
ওষুধ টষুধ নিয়ে দুজনে চলে গেল তারপর। ‘চলে গেল’ বললে ভুল হবে। ওরা… ওই পিছনের দিকটাতেই মিলিয়ে গেল। মৌসুমী এদিকে চলে এসেছে ততক্ষণে। ওর কাজ শেষ। বাড়ি যাবে। তাই ভ্যানিটি ব্যাগ গোছাচ্ছে। আমাকে বলেছিল চোখ গোলগোল করে–“ওরা ওদিকে কোথায় যাচ্ছে স্যার? ওদিকে? লোকগুলো?”
আর আমি বলেছিলাম অন্যমনস্ক স্বরে–“গ্রাম থেকে শহর দেখতে এসেছে মৌসুমী। একটু ভালো করে দেখে যাবে না? কতবড় বিল্ডিং! কতবড়ো ক্যাম্পাস! সব দেখবে টেখবে নাঃ? ফিরে গিয়ে নয়তো গল্প করবে কী করে…. সেই হসপিটাল বানাইছে! সেই ব্যবস্থা!”
মৌসুমী বলেছিল হাসতে হাসতে–“এখনও এরকম গ্রাম আছে! বলুন স্যার!”
********
সেদিন বাড়ি ফিরতে ফিরতে আমার কেবলই মনে পড়ছিল বিকাশবাবুর কথা। মগনলাল মেঘরাজকে যিনি বলেছিলেন বড় অনুনয়ের সঙ্গে। ।
বলেছিলেন পটুয়া শশীবাবু সম্পর্কে–“উনি খুব ভালো মানুষ। … মানে .. ঠান্ডা মানুষ … ভালো মানুষ…”
সহসা আমার বাড়ি ফেরার পথটুকু আলোকিত হয়ে উঠেছিল আশ্চর্যরকম। চারিপাশে আমি শুধু নাগাড়ে দেখতে পাচ্ছিলাম–‘ভালো মানুষ’। ‘ঠান্ডা মানুষ’।
*********
সেদিন দিল্লিতে সাতজন মারা গিছলেন দাঙ্গাতে।
আপনাদের পাতায় আসি যতখানি জানার জন্য, তারচেয়ে বেশী গল্পের লোভে । এতো সুন্দর, মরমিয়া লেখা আপনাদের ডাক্তারবাবু । নমস্কার নেবেন ।
যে বাস্তব যে কোনো ছোট গল্পকে বলতে পারে: সোদনা। অনবদ্য। পারলে শেয়ার করে লোকজনেরে যদি পড়াতে পারতুম!
যে বাস্তব যে কোনো ছোট গল্পকে বলতে পারে: সোদনা। অনবদ্য। পারলে শেয়ার করে লোকজনেরে যদি পড়াতে পারতুম!
গতবার ইমেইল দেওয়া হয়নি। তাই আবার….
নিরীহাসুর বাবাজী, ভালো থেকো ভাই। আমাদের সমৃদ্ধ আরো কোরো।