মুহুর্মুহু গাড্ডায় পড়ে, গাড়িটা লাফাচ্ছিল বেজায় রকমের। সঙ্গে, গাড়িরই ফাটা সাউন্ডবক্সে তুমুল আর্তনাদ–” ডান্স ডান্স ডান্স ডান্স! আরে পাগলু ডান্স..!”
ড্রাইভাররূপী বিরাজদার যদিও তাতে ভ্রুক্ষেপ মাত্র লক্ষ্য করলাম না। সিগারেট ধরা ডান হাতের কনুইটাকে জানালার কার্নিশে কেত মেরে রেখে, বিন্দাস কাটিয়ে যাচ্ছিল একের পর এক ভয়ানক খানাখন্দ। বা বলা ভাল,কাটাবার চেষ্টা করে যাচ্ছিল প্রাণপণে। আর তারই জোরাল অভিঘাতে, ঝুলিয়ে রাখা একখানা শস্তার উইনচাইম ঝাঁকি মেরে মেরে নাগাড়ে দোল খাচ্ছিল এদিক সেদিক।
এটা, এই ধূলিধুসরিত রাস্তাটা, ন্যাশানাল হাইওয়ে নাম্বার টুয়েন্টি সেভেন। উত্তরবঙ্গের সাথে প্রধান যোগাযোগ সূত্র, বাদবাকি দুনিয়ার। ধূপগুড়ি ময়নাগুড়ি জলপাইগুড়ি হয়ে যে সড়কপথ চলে গেছে সেই শিলিগুড়ি ছাড়িয়েও আরো অনেক পশ্চিমে। পূবে যার শুরুয়াৎ শিলচর থেকে। আপাতত সেই পথ ধরেই আমরা জলপাইগুড়ি সদরের উদ্দেশে চলেছি। চলেছি লাফাতে ঝাঁপাতে। গন্তব্য সি.এম.ও.এইচ অফিস। ওখানে টাটকা একখানি ‘অর্ডার’ অপেক্ষা করছে আমাদের নিমিত্ত।
গাড়িটা আমাদের এক্কেবারেই মামুলি ‘মারুতি ওমনি’। তায় আবার গাড়িটা ভাড়ার। মালিক ভদ্রলোক, বিরাজদার পাশেই সিঁটিয়ে বসে আছেন বিস্ফারিত চোখে, আর কেবলই কাকুতি মিনতি করে যাচ্ছেন খাজনা ফেল করা কৃষকের মত–” ওহঃ! ডাক্তারবাবু গোঃ! এহ ! আস্তে গো! ইসসস! অ্যাক্সেলটা….”
বিরাজদার দেখলাম তাতেও কোনো তাপ উত্তাপ নেই। সিগারেটটা ঠোঁটে চেপে, ঘটাং করে গিয়ার পাল্টাতে পাল্টাতে খিস্তালো বিড়বিড় –” বালের রাস্তা! গর্তটা দেখেছিস? টোটাল গাড়ি শুদ্ধ কপাৎ করে কিরে গিলে নেবে..শাল্লা।” শেষোক্ত শাল্লা বলার সাথে সাথেই আরো একবার গিয়ার বদল।
পিছনের সিটে আমি আর শান্তনুদা বসে আছি নির্বিকার মুখে। প্রথমে অবশ্য, পা গুটিয়ে বাবু হয়ে বসেছিলাম। তারপর বিরাজদা পিক আপ নিলো যত, কুমড়োর মাফিক গড়াগড়ি শুরু হল তত। এখন তাই পা ঝুলিয়ে বসেছি ভদ্রলোকটি হয়ে। চোখ দুখানা, জানালা দিয়ে উদাসী নেত্রে তাকিয়ে আছে বাহিরে। খিড়কি ‘পারে শন শন করে পেরিয়ে যাচ্ছে মাঠঘাট। পেরিয়ে যাচ্ছে ঝাজাঙ্গি, টেকাটুলির মত নগন্য গ্রাম্য জনপদ। পেরিয়ে যাচ্ছে মাঠ ধোঁয়াশা। ক্রমশ, মফস্বল ময়নাগুড়ির কংক্রিট চোখে পড়ছে একটু একটু করে। আর আমি মনকেমন করতে করতে ভাবছি–” চললাম। চললাম এইবার সবকিছু ছেড়েছুড়ে…”
হে পাঠক, এবারে থামুন। তীষ্ঠ। শ্বাস ফেলুন জুৎ-টি করে। এবার, পশ্চাদপসরন শুরু হবে। কারণ, এ কাহিনীকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে, কিঞ্চিৎ ফ্ল্যাশব্যাকের বড্ডো প্রয়োজন। উইংসের লাইটটাকে প্রক্ষেপন করা প্রয়োজন আরো বেশ খানিকটা পশ্চাতে। অর্থাৎ ফেলে আসা সময়ে। অর্থাৎ, আরো বছর তিনেক পূর্বে।
২০০৮-এর কোনো এক মার্চ মাসে একদা পোস্টিং নিতে ভিড় করেছিলাম আমরা জনা বিশেক টাটকা তাজা নব্য ডাক্তারেরা কাঁচুমাচু মুখে। ভিড় করেছিলাম জলপাইগুড়ি সি এম ও এইচ ওরফে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দপ্তরে। আর সেই ভিড়ের মধ্যেই দুইখানি মুখ, আমার বন্ধু হয়ে গিছল আচমকা।
একজন, ওই ড্রাইভার কাম বিরাজদা। অপরটি, সহযাত্রী তথা শান্তনুদা। আমরা তিনজনেই ভিড়ের ঠেলায়-” ধ্যাত্তেরি নিকুচি করেছে” ভেবে নিয়ে, গুটিগুটি বেরিয়ে এসেছিলাম সামনের ফুটপাতে। তারপর দোকানীকে–” একটা চ্চা…, আর আগুনটা দিন তো” বলতে বলতেই আবিষ্কার করেছিলাম, আমরা তিনজনই হলাম বেজায় রকমের বিদঘুটে। দুনিয়ার দিকদারি, যাদের পোষায় না মোটেও। বন্ধুও হয়ে গিছলাম তাই চটপট। হাসপাতালের দেওয়ালের মাথায় চায়ের কাপ রেখে, আড্ডা জুড়েছিলাম তুমুল। সিগারেটে টান দিতে দিতে বিনিময় করেছিলাম বাপ ঠাকুদ্দা আর দেশের বাড়ির খবরাখবর। এবং মোবাইল দাবিয়ে নাম্বার সেভ করে রেখেছিলাম একে অপরের। ‘ নিউ জয়েনিং বিরাজদা’, ‘ নিউ জয়েনিং শান্তনুদা ‘।
তারপর তো জয়েনিং অর্ডার। বিরাজদা চলে গেল ডাহুকমারা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। শান্তনুদা দূরাভাঙ্গা । আর আমি ঝাপ্টিবাড়ি। একে অপরের থেকে না হোক চল্লিশ কিলোমিটারের দূরত্ব। দেখা হতো কালেভদ্রে এবং মাসে দশ মাসে।
ঝাপ্টিবাড়ির প্রাথমিক দিন সম্পর্কে আগেও বলেছি নিরীহাসুর সিরিজে। তাই সেসব কচকচির মধ্যে আর গেলাম না।সরাসরি বরং চলে আসি প্রাইভেট প্র্যাক্টিসের ঘটনায়।
তো, আমার পসার বাড়ছিল খুব। এ পসারের সাথে যদিও পয়সার সম্পর্ক নেই কোনো রূপ। কারণ, পসারটি বাড়ছিল সরকারি আউটডোরে। এর আগে এখানে কেউ রাত্রিবাস করেন নি। অর্থাৎ এর পূর্বে কোনো চিকিৎসকই সরকারি কোয়ার্টারে থাকতেন না। আউটডোর খতম করেই পাড়ি জমিতেন ময়নাগুড়ি মফস্বলে। সে নিয়ম ভাঙলাম প্রথম আমিই। চাপ ছিল না যদিও কোনো। ইনফ্যাক্ট জলপাইগুড়ি সদর থেকে বলেই দেওয়া হয়েছিল ঠারেঠুরে– “আউটডোরটা করলেই হলো।”
তবুও….আমার মাথায় কীড়া আছে। বা বলা ভাল পোকা। সরকারি নিয়মে যখন বলছে যে কোয়ার্টারটি ‘ইয়ারমার্কড’, তখন সেখানে দিনযাপন করাটাই সঠিক দস্তুর হওয়া উচিত। আর তাই থাকতে শুরু করলাম ওই ধ্যাদধ্যাড়ে ঝাপ্টিমারিতেই। এবং কি আশ্চর্য। দুনিয়ার দিকদারি সামলাতে পারে না আর যারা, অর্থাৎ ওই যে ওই বিরাজদা আর শান্তনুদা, ওরাও নিজ নিজ কোয়ার্টারে থানা গেড়ে বসে পড়ল।
যাক সে কথা। তিনজনেরই যে প্রত্যন্ত গ্রামে পোস্টিং, এ কথা অলরেডি বলেছি। তবে, এ কথার অভিঘাতখানা, স্রেফ এই একটা মাত্র লাইনে বুঝিয়ে বলবার মত নহে। সদ্য পাশ করা শহুরে ডাক্তারের জন্য এরকম চব্বিশ ঘন্টার গ্রাম্য নিয়োগ যে ঠিক কী প্রকার ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে, সে কথা সম্ভবত স্রেফ সরকারি চিকিৎসকরাই জানেন। কারেন্ট থাকত না নাগাড়ে চার পাঁচ দিন। জল ভরে আনতে হত টিউকল থেকে। সন্ধ্যে সাতটা বাজল কি বাজল না চরাচর জনশূন্য। ডাক ছেড়ে কাঁদলে অথবা গলা ফাটিয়ে খিস্তি করলেও সাড়া দেবার মত আর দ্বিতীয় জনপ্রাণীটি নেই। সঙ্গী বলতে কেবল গোটা চারেক টিকটিকি, হাজার খানেক জোনাকি আর তিনখানা হৃষ্টপুষ্ট ভাম। কাঁঠাল গাছের ডালপালাতে যে ভামগুলো ঝাঁপাঝাঁপি করত মনের সুখে। জোছনা রাতে তাইতে ভূত-ভূত ভ্রমের আমেজ।
‘গ্রুপ ডি’ ইন্দ্রদার কোয়ার্টারটা হোক না হোক পাঁচশ মিটার দূরে। মাঠের সেই এক্কেবারে শেষ প্রান্তে। সে ভদ্রলোকও রাত আটটাতেই খানাপিনা খতম করে তেড়ে ঘুম লাগাতেন মদিরা ধুনকি নিয়ে। তারপর বাঘ পড়ুক কি ডাইনোসোর, শয্যা ত্যাগ করতেন না সূচ্যগ্র পরিমাণ।
এবং তারই মাঝে রাত বিরেতে পেশেন্ট আসত মাঠ জঙ্গল পেরিয়ে। ঘড়িতে তখন হয়ত একটা কিম্বা দুটো। দরজা খুলে আধো ঘুমঘোরে দেখতে পেতাম, হ্যাজাকের আলোতে চকচক করছে কিছু আবছায়া ঘর্মাক্ত শরীর। হাতে ওদের প্রত্যেকের, পাঁচ সেলের টর্চ আর লম্বা বাঁশের লাঠি। পিছনে, হ্যাজাক ঝোলানো ভ্যান রিক্সার পাটাতনে কাঁথা মুড়ি দেওয়া একটা ভূতুড়ে দেহ শুয়ে আছে।
প্রথম প্রথম ভয় লাগত ভীষণ। মনে হত, রোগীর কিছুটি মাত্র অবনতি ঘটলে, হয়ত লাশ ফেলে দেবে লাঠির এক ঘায়ে। ফেলে, পুঁতে রেখে দেবে বেমালুম।
দেয় নি। রোগীর পরিস্থিতির অবনতি ঘটলেও, চোখের জল মুছে, চকচকে রোমশ বুকে হাত বোলাতে বোলাতে বলেছে–” আল্লা মালিক! আফোনে চ্যাষ্টা টুক্ তো করলেন! হামার-ই নসিবে নাই…।” আর তার পরদিন, ঠিক ওইরকমই একটা অদ্ভুতুড়ে সময়ে, ঠিক ওইরকমই চকচকে বুক আর পেল্লাই টর্চ হাতে নিয়ে, দরজা ধাক্কিয়ে দিয়ে গেছে হাফ বালতি কাঁকড়া। –” ক্ষ্যাতে পাইলম!”
আমি শশব্যস্তে পিছিয়ে গেছি। আমি বলেছি–” অ্যাতো কাঁকড়া খাবেই বা কে? আর ভাঙবই বা কী দিয়ে?”
উত্তরে, ওরা সাঁড়াশি চেয়েছে একটা। তাই দিয়ে প্রস্তুত করে দিয়েছে মেঠো-কর্কট। থালায় রেখে, জল দিয়ে ভাল করে ধুয়ে, হাতে তুলে দিতে দিতে বলেছে-” নুন হলুদ মাখায় ফিরিজে রাইখ্যে দ্যান।”
তারপর চলে গেছে ” আসি গ” বলে।
একলাটে বারান্দায় বারমুডা পরা আমি, তখন অবাক হয়ে ভেবেছি–” কাল বোন মারা গেল! আর আজকেও এদের ক্ষেতে যেতে হয়েছে বীজ বুনতে?” নতুন ভোরের প্রস্তুতি চলছে তখন চারিপাশে চুপিসারে।
আর এইসব মিলিয়ে জুলিয়েই আমার প্রথম চাকরি জীবন শুরু হল। চলছিলও বেশ। পসার-বৃদ্ধি, নাম-ডাক, রাত-কাঁকড়া, হ্যাজাক-রোগী। গোলমালটা বাঁধল মাসখানিকের মাথাতে। স্থানীয় ‘ আর.এস.পি’ নেতার অবৈধ মেডিক্যাল সার্টিফিকেট দিতে অসম্মত হয়েছিলাম আমি। ভদ্রলোক গনগনে মুখে পান চিবোতে চিবোতে চলে গিছলেন। ফিরে এসেছিলেন ঘন্টাখানিক বাদেই। সঙ্গে, জনা ত্রিশেক মারকুটে লোকজন। ঝ্যাড়াক করে একটা কাগজ সামনে ফেলে দিয়ে বলেছিলেন–” রিসিভ করেন। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের খারাপ পরিষেবার বিরুদ্ধে গণ-ডেপুটেশন দিতেসি। ”
তারুণ্যের একটা মারাত্মক রকমের জোরালো দিক আছে। সেই জোরের পরিমাণটা ঠিক কতখানি অবাস্তব, সেইটে সঠিক ভাবে মালুম হয় , তারুণ্য পেরিয়ে যাওয়ারও বেশ কিছুটা পরে। আজ এতদিন বাদে লিখতে বসে এই ভেবেই অবাক লাগছে যে, সেইদিন… সেইসময় … আমি বরফ শীতল মুখে সটান চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়েছিলাম। আলমারি থেকে তালাচাবি বের করে এনে, আউটডোরে তালা লাগিয়ে দিয়েছিলাম পাল্লা টেনে। আর তারপর ঝনাৎ ঝনাৎ করে চাবি নাচাতে নাচাতে হতভম্ব ভীড় ঠেলে, ড্যাঙড্যাঙিয়ে ঢুকে পড়েছিলাম উল্টো পাশের পঞ্চায়েত অফিসে।
সে পঞ্চায়েতও তখন ‘আর.এস.পি’-র। আর তার জোটসঙ্গী ‘সি পি আই এম’।
ঠকাস করে প্রধানের কাচের টেবিলে চাবিটা রেখে বলেছিলাম–” চললাম। হাসপাতাল আপনার দায়িত্বে রইল। সামলে রাখবেন। আমি…চাকরি ছেড়ে দিচ্ছি।”
এতেই কাজ হওয়া উচিত ছিল মন্ত্রের মত। হয় নি। ব্যাপারটা এগোলো আরো খানিকটা। লাল রঙের চেয়ার ঠেলে মারকুটে ভাবে ছুটে এল একটি চোয়াড়ে ক্যাডার। বললো–” মাজাকি পাইছেন? বস্তা বস্তা ট্যাকা দিতেসে সরকার আপনারে…। আর আপনি…?”
আমি স্থানুবৎ দাঁড়িয়ে ভুরু নাচিয়ে বলেছিলাম–” কী? আমি … কী? পরিষেবা দিই না? তাই কীঈ?”
ততক্ষণে পঞ্চায়েত অফিসে ভীড় জমে গেছে সাধারণ মানুষের। একটা দুটো গলা উঠতে শুরু করেছে আমার স্বপক্ষে। এবং তাইতে, ক্যাডার বাবুর মেজাজ বিগড়েছে আরো। চেঁচিয়ে বলে উঠেছেন–” আফনাদের ন্না …মাটিতে ফালায়া মার দিবার লাগে!”
এসব ঘটনা ঘটছে যখন, তখনও আমি ঝাপ্টিবাড়িতে ছদ্ম ব্যাচেলার। শুভ্রা তখনও কোলকাতার চাকরিতে স্বেচ্ছা-ইস্তফা দিয়ে চলে আসেনি মোটবহর নিয়ে। এলে, কী হত জানি না। হয়ত…হয়ত..অন্য কিছু হত। কিন্তু হয় নি। আমার কাঠিন্য টসকায়নি একবিন্দুও। অল্প হেসে বলেছিলাম একটুখানি এগিয়ে গিয়ে–” গুড! আমিও তাই চাই! মারুন। তাহলে চাকরিটা অন্তত ছাড়তে হবে না। ট্রান্সফার পেয়ে যাব ইজিলি। আর চেষ্টা করবো আপনাদের কথা উপর মহলে জানিয়ে দিতে। আপনার এই ঝাপ্টিবাড়িতে জিন্দেগিতে তারপর কোনো ডাক্তার আর পোস্টিং নেবে না।”
এসব কথা বলতে যে একবিন্দুও ভয় হয় নি, একথা বললে মিথ্যা ভাষন হবে। আমার পিঠ, আমার কপাল, আমার শীর্ণ গন্ডদেশ অসম্ভব রকমের তিরতির করে কেঁপে যাচ্ছিল এক নাগাড়ে। এই বুঝি থাপ্পড় পড়ল। এই বুঝি ঘুষি খেলাম দমাস। এই বুঝি ধাক্কা দিয়ে সত্যি সত্যিই মাটিতে ফেলে দিল আমাকে।
সেসব যে হয় নি, সেকথা বলাই বাহুল্য। ততক্ষণে ওই ভীড় করে দাঁড়িয়ে থাকা সাধারণ গ্রামবাসীরা গলা তুলতে শুরু করেছিল সোচ্চারে। ততক্ষণে শুনতে পাচ্ছিল চারদেওয়ালের পঞ্চায়েত অফিস জনগণের মন
–” ঠিক হইতেসে না “, ” ডাগতোর ভালো মান্ষি”, ” এনি তো আতিবেলায়ও সার্ভিছ দিতেছেন…”
উদ্ধত চব্বিশের এক যুবা, নাম যার ওই মুহূর্তে স্রেফ এবং স্রেফ ডঃ উপাধিসহ সব্যসাচী সেনগুপ্ত, বুক চিতিয়ে চাবি ফেরত নিয়ে ফিরসে খুলে দিয়েছিল আউটডোরের রুদ্ধদ্বার। ভীড় জমেছিল তৎক্ষণাৎ সেখানে আবারও সুসংবদ্ধ। আর স্বভাবতই সেদিন আউটডোর চলেছিল অন্যদিনের চাইতেও অনেক অনেক লম্বা। সেসব শেষ করে বিকেল চারটেয় ভাত মুখে তুলতে তুলতে নিজেই নিজেকে বলেছিলাম–” ইয়েস! ইয়েস! ইয়েস! ইউ হ্যাভ ওন দ্য টাফেস্ট ব্যাটল আ ডক্টর মে ফেস ”
বুঝিনি, এ লড়াইয়ের এই তো সবে শুরু। বুঝিনি …. এই ঝঞ্ঝাটের এইটাই স্রেফ শুরুয়াৎ। এরপর আমাকে সবচাইতে বড় লড়াইটা লড়তে হবে ওই স্বপক্ষের মানুষগুলোর বিরুদ্ধেই। এবং সেই লড়াইয়ে আমার লজ্জাজনক পরাজয় ঘটবে ধূলিসাৎ। এমন পরাজয়, যা আমার চিকিৎসক জীবনের সবচাইতে কলঙ্কজনক অধ্যায়। এমন পরাজয়, যা প্রমাণ করে এ দেশের সত্যিকারের শোচনীয়তার কথা। এমন পরাজয়, যেটা সত্যি সত্যিই আমাকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল একখানি প্রশ্নের।
স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বেহাল হওয়ার দায়ের শিকড় ঠিক কতদূর বিস্তৃত?
লেখাটা বড় হচ্ছে জানি। পাঠক পড়বার আগ্রহ হারাবেন, তাও জানি। এবং সেসব জেনেবুঝেও এইখানে একটা ছোট্ট ডি-ট্যুর করব। তাতে, যেক’জন পাঠক কমবে কমুক। কিন্তু যাঁরা জুড়ে থাকবেন, তাঁদের অন্তত বুঝতে সুবিধা হবে গোটা ব্যাপারটা ; “আমরা ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে আছি”
ঠিক এক হপ্তা আগে বেড়াতে গিছলাম খার্শং ( বৃটিশীয় কার্সিয়ং )। পথে, পুলিশ ধরল গাড়ি। গাড়িটা যে ভাড়ার তা বলাই বাহুল্য। নিজের গাড়ি হামার নেই। তো , ড্রাইভার মিনিট কুড়ি কাগজ-মাগজ দেখিয়ে, গজগজ করতে করতে ফিরে এসে, ফিরসে চাবি ঘুরিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিল।
–” পল্যুশন সার্টিফিকেট ফেল আছে খ্যালই করি নাই। শালা, পনেরো শ টাকা ফাইন!… আবার যদি সামনে ধরে…”
শুনে তো আমি অবাক। গলা বাড়িয়ে বললাম–” আবার ধরবে মানে? একই ভুলের জন্য ক’বার ফাইন দিতে হয়? দাদা? রসিদ দ্যাখাবেন তেমন হলে! ”
দাদা, বাঁকের মুখে গিয়ার বদলাতে বদলাতে খিস্তালেন বিড়বিড়িয়ে–” আরেহঃ! শালার পুলিশ! পুলিশদের চিনেন না? ঘুষ খেলো! ঘু-ষ। পনেরো শ র জাগায় পাঁচশ খেলো। রসিদ .. থোড়াই দিবে?”
আমার মনটা তেতো হয়ে গেল এক ঝটকাতে। পুলিশের এই ঘুষখোর অপবাদ আর জিন্দেগিকে ঘুচল না। অথচ..অথচ..বেশিরভাগ পুলিশই যে সৎ এবং কর্তব্যপরায়ণ, এ কথা আমি চাকরি জীবনে বিস্তর বার দেখেছি। বহু রাত্তিরে বহু না-ঘুমানো টকটকে চোখের পুলিশকে আমি দেখেছি, যাঁরা পরম যতনে কাঁধে করে নিয়ে আসেন রক্তাক্ত দুর্ঘটনাগ্রস্ত রোগী। এম্বুলেন্সের ভাড়া মেটান নিজের পকেট থেকে। পরিবারকে ফোন করেন ব্যক্তিগত মোবাইল দাবিয়ে। তারপর অপেক্ষা করেন সত্যিসত্যিই শোকার্ত পরিজনদের কাঁধে ভরসার হাত রাখবেন বলে। এ দেশের পুলিশ মাত্রই যদি ঘুষখোর হত, তাহলে বিশ্বাস করুন, এ দেশে কোনো মানুষের নিশ্ছিদ্র রাতঘুম আর ঘটতো না।
অথচ.. তবুও.. পুলিশ মানেই ঘুষখোর। অথচ .. তবুও … র্যান্ডাম স্যাম্পলিংয়ে খুঁজে পাওয়া তিনখানা পচা আলু, “আলুর বস্তাটাই পচা” দাগ দেগে দিতে পারে ক্রেতার সম্মুখে। এ বড় বিচিত্র একখানি ধাঁধা। এ বড়, জটিল এক চিত্র।
পরমুহূর্তেই অবশ্য দ্বিতীয় চিন্তার উদয় হল মাথাতে। আর এই যে শালা ড্রাইভার! যে হারামজাদা নিজেই টাকা বাঁচাতে ঘুষ দিল। সে ব্যাটা কোন আক্কেলে পুলিশকে খিস্তাচ্ছে? দোষটা কী স্রেফ এক তরফা? এ জগতের প্রতিটা মানুষ যদি পরিষেবা পাওয়ার জন্য ঘুষ দেওয়া কিংবা রোয়াব খাটানো বন্ধ করে দেয়, তবে কারো সাধ্য থাকবে কি যে দুর্নীতি ঘটানোর?
যাক গে! ডি-ট্যুর শেষ। এবার বরং কাহিনীতে ফেরত আসি। যে কাহিনী, হেরে যাওয়ার। যে কাহিনী পরাজয়ের। যে কাহিনী, অপমান-গ্লানি-ক্ষতের।
ঝাপ্টিবাড়িতে এরপর বছর দেড়েক সবকিছু শান্তই ছিল মোটামুটি। ‘আর এস পি’ র প্রধান, ‘সি পি আই এম’ এর উপপ্রধান, তৃণমূলের ভিডিও হল-মালিক, কংগ্রেসের ইস্কুল মাস্টার, ডাকতদলের এইয়া সা-জোয়ান নেতা, সব্বাই তখন আমার পেশেন্ট। ঝগড়াঝাটির কোনো প্রশ্নই নেই। সব্বাই ততদিনে বুঝে নিয়েছিল– এ ডাক্তার, ডাক্তারি করতেই এসেছে। সব্বাই তাই আপাত দুশমনি ভুলে গিয়ে, দোস্তই হয়ে গিছল জবরদস্ত। বখেড়াটা হল অন্যত্র।
তদ্দিনে শুভ্রাও চলে এসেছে এখানে। তদ্দিনে গেরস্থালীও গুছিয়ে নিয়েছি গ্রাম্য। এবং সেইরকম একটা সময়েই দ্বিতীয় ডেপুটেশনটা জমা পড়ল। ডেপুটেশন– অরাজনৈতিক। ডেপুটেশন– সাধারণ মানুষের জোটবদ্ধ। ডেপুটেশন– শস্তার কাগজে ত্যাঁড়াবেঁকা অক্ষরে।
” প্রাইভেট প্র্যাক্টিস করতে হবে ”
আমি প্রায় ঘন্টাখানিক ধরে ওদের বোঝালাম। বললাম–” গ্রামীণ চিকিৎসাকেন্দ্রে পোস্টেড কোনো চিকিৎসকই, চাইলেও প্রাইভেট প্র্যাক্টিস করতে পারে না। নন প্র্যাক্টিসিং অ্যালাউয়েন্স ছেড়ে দিয়ে প্র্যাক্টিস করার সুযোগই নেই তাঁদের।”
বোঝানোটা বৃথা গেল। লোকজন চোখে আঙুল দিয়ে নয় নয় করে হলেও বিশ ত্রিশটা উদাহরণ দেখিয়ে দিল, যেখানে গ্রামীণ হাসপাতালেও ডাক্তাররা ফাটিয়ে প্র্যাক্টিস করে চলেছেন রমরমিয়ে।
অগত্যা, দ্বিতীয় রাস্তা নিলাম। বললাম–” পেপারে খবর হলে, আমার চাকরি চলে যাবে।”
উত্তরে, পরদিন সক্কালেই আমার হাসপাতালের মাঠে এক বিপুল জনসমাবেশ ঘটল মাইক সহযোগে।
” বন্ধুগণ, হাম্রা, সাধারণ মান্ষিরা … পার্টি কুনো নাই এতে …. হাম্রা কালি থেইক্যা রাস্তার মোড়ে মোড়ে পাহারা দিমু। ক-অ-নো রিপোটারের ব্যাটা য্যান ঢুকতে না পারে এঠে!”
শুনে, আমি ঘাবড়ে গিয়ে সেদিনই পরিচিত বন্ধুবান্ধবদের শরণাপন্ন হলাম। এবং কি ভয়ঙ্কর রকমের আশ্চর্য্যম! তাঁরা সক্কলে একবাক্যে বললে—” এ তুই কী বলছিস সব্য? লোকে প্র্যাক্টিস করার জন্য হেদিয়ে মরে…। আর তাছাড়া, নিয়মটাই তো ভুল! কেন গ্রামীণ পোস্টিংয়ে প্র্যাক্টিসের সুযোগ থাকবে না? এটাতো অন্যায়! কর! কর! প্র্যাকটিস কর … নাটক মারাস না ”
আমি প্রতিবাদ করলাম ফোনের এ প্রান্তে নাকের পাটা ফুলিয়ে–” এসব কথা তো জয়েনিংয়ের সময়েই লেখা ছিল ভাই! না পোষালে, সরকারি চাকরি না করলেই হত!”
উত্তরে, ওরা ” মাথা ঠান্ডা কর গান্ডু” বলতে বলতে ফোন রেখে দিল।
আমি, মুষড়ে পড়লাম। আমি ফোন লাগালাম বাবাকে। বাবা আমার বেজায় সৎ। কর্মনিষ্ঠ। অকুতোভয়। ছেলেবেলায় যতটুকু যা শিক্ষা পেয়েছি, সবই বাবার আঙুল ধরে।
তিনটে রিঙের মাথাতেই ফোন ধরলেন পিতৃদেব। শুনলেন সবটা মন দিয়ে। তারপর বললেন আশ্চর্য ঘেঁটে দেওয়া কিছু বক্তব্য।
— তুমি প্র্যাকটিস করলে, গ্রামের মানুষই উপকৃত হবেন। তুমি তো আর আউটডোরে ফাঁকি মেরে চেম্বার করছো না! দুপুরে বা সন্ধ্যায় করো। তুমি তো জনগণের দাবি মেনেই কাজ করছ। স্বেচ্ছায় তো আর বাজার ধরতে শুরু করো নি! শরীরের খেয়াল রেখো কিন্তু। সময় মতো খাওয়া…”
আমি ফোন কেটে দিয়ে মাথায় হাত রেখে বসে পড়েছিলাম। কান ঝিঁ ঝিঁ করছিল। বাবাকে মনে হচ্ছিল বাসুদেব। নিজেকে মনে হচ্ছিল অর্জুন। আহ্বান দিচ্ছেন ধর্মযুদ্ধের। যার আরেক নাম, ধর্ম সঙ্কটও বটে।
শেষমেশ আমি ওই ডেপুটেশন কমিটির সাথে মুখোমুখি বসলাম। আউটডোরের পরে। সামনা সামনি। চা আনানো হল। ওরাই নিয়ে এল মোটা মোটা কাচের গেলাসে। তাইতে চুমুক দিতে দিতে শুরু করলাম মরিয়া কথোপকথন।
— প্রাইভেট প্র্যাক্টিস চাইছেন কেন?
— পেরাইভেটে ভাল কইরা রগী দ্যাখা হয়
— আমি কি আউটডোরে ভাল করে দেখি না? রাতবিরেতে কোয়ার্টারে … এইতো .. আইজার.. তুমিই বলো..তোমার মেয়েকে কালকে রাতেই দেখি নি? আমি?
— হ। দেখসেন বা!
— তাহলে?
— পেরাইভেটে ভাল ওষুধ দ্যায়। ভিটামিন ফাইল, গ্যাসের ফাইল…
— ওসব বাজে জিনিষ। তোমাদের আমার ওষুধে কাজ হয় কিনা বলো…
— মিথ্যা বলব না..হয়! কিন্তুক পেরাইভেটের ডাগতোরের মতো ফাইল দ্যান না…
কথোপকথন, ঠিক এইখানেই থেমে যায়। যন্ত্রণা ক্লিষ্ট মুখে কোয়ার্টারে ফিরে আসি আমি। সারারাত সিগারেট খাই। জেগে থাকি। বুঝে উঠতে পারি না, দোষটা ঠিক কার? যে রোগী রঙচঙে ভিটামিন ফাইল খোঁজে? নাকি যে চিকিৎসকেরা ভিটামিন ফাইলের ট্রেন্ড সেট করেন অসহায় মূর্খ মানুষের মনে? নাকি যে মানুষরা ক্রমাগত চাপ দিয়ে যায়– পয়সা ফেললেই পরিষেবা ভালো মিলবে …. তারা?
অপরাধী ঠিক কে? অপরাধী ঠিক কারা? অপরাধী কি আমিও আর তুমিও নয়?
এর পরদিনেই ট্রান্সফারের প্রেয়ার দিই আমি। ততদিনে আমার তিন বচ্ছর হয়ে গেছে গ্রামে। এখন আমি আইনত ট্রান্সফারের হকদার। আর সেই ট্রান্সফার অর্ডারই নাকি বেরিয়েছে সদ্য আজকেই। আমার। বিরাজদার। আর শান্তনুদার। একই সাথে। ওরাও, প্রেয়ার দিয়েছিল। তবে, ভিন্ন ভিন্ন কারণে।
লজ্ঝড়ে মারুতি ওম্নিতে চেপে, সেই অর্ডারই হাতে হাতে নিতে চলেছি আমরা। উইনচাইম দুলছে ” কৃষ্ণওওও করলে লীলা, আম্রা করলে বিলা”-র তালে তালে।
******
মাস খানিক পরের ঘটনা। আমার রিলিজ অর্ডার হাতে পেয়েছি কালকেই। এতদিন সবটা চেপেই রেখেছিলাম ঝাপ্টিবাড়ির সকলের কাছে।
আজ…. টেম্পো ডেকে মাল পত্তর তুলছি। দলে দলে লোক জড়ো হচ্ছে সামনের মাঠটাতে। যেখানে এদ্দিন মাঝরাত্তিরে জোনাক ঘুরতো ঝাঁকে ঝাঁকে। সেখানেই ওরা দাঁড়িয়ে আছে সর্বহারার মতো।
ক্রমে, টেম্পো চলে গেল। আমি আর শুভ্রাও চড়ে বসলাম ভাড়া করা মারুতি অল্টোতে। স্টিল রঙের সেই গাড়ি স্টার্ট নিলো ভীড় ঠেলে। পিচ সড়কে উঠল। স্পিড নিল। এবং থামল। এবং আবার স্পিড নিল। এবং পুনর্বার থামল। এই থামা আর চলার সিলসিলা জারি রইল সাতাশ নম্বর জাতীয় সড়ক তক্। রাস্তার পাশে পাশে কয়েক হাত দূরে দূরেই যে দাঁড়িয়ে আছে ঝাপ্টিবাড়ির দীনহীন মানুষের দল। খালি গায়ে, লুঙি পরে। শাড়ি গায়ে, ঘোমটা টেনে। ফ্রক গায়ে, খালি পদে। হাতে কারো ব্রিটানিয়া মারি র প্যাকেট, কারো মিষ্টি, কারো বা কলার ছড়া। আর চোখে মুখে –” এবার? কী হবে? হ্যাঁ? হামাদের? ” ভয়।
গাড়িতে তখন গান বাজছে আমারই পেনড্রাইভ থেকে।
পাগলু ডান্স নয়।
ইয়ে যো দেশ হ্যায় তেরা..স্বদেশ হ্যায় তেরা…
আমি সেদিন হু হু করে কেঁদে ফেলেছিলাম অসহায়তা আর গ্লানি আর পরাজয়ের দংশন মেখে……
( একটাই অনুরোধ, এ লেখার কমেন্টে দয়া করে ” আপনি খুব ভালো ডাক্তার” অথবা ” আমার পিসিকে একবার এক চশমখোর ডাক্তার মেরে ফেলেছিল ” মার্কা বালখিল্য এবং বাল-তুল্য কমেন্ট করবেন না। ভাববেন না, এ লেখা চিকিৎসক-বিরুদ্ধ।
এ লেখা আদতে যন্ত্রণার। এ লেখা কষ্টের। এ লেখা .. উত্তর খুঁজতে মরিয়া একজন সাধারণ মানুষের, যে ভাগ্যের চক্করে একজন চিকিৎসকও বটে )
একটু বেশি সময় নিলেন কিন্তু শহর বা শহরতলীর বাইরে আমাদের দেশের আসল নগ্ন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা টা দেখিয়ে দিলেন।
দিনের শেষে শিক্ষা টা খুব দরকার
প্রথমে পুঁথিগত
তারপর পারিবারিক
ও শেষে সামাজিক।
আমার মতামত সহমত নাও হতে পারেন।।
This is the relationship in between Doctors and patients which gradually being deteriorated.
??????????নমস্কার নিও দাদাভাই।
আপানার লেখা তে একটা চিত্র খুব সুন্দর ভাবে ফুটে উঠেছে আর সেটা হল দিগন্ত বিস্তৃত বঞ্চনার, উত্তরবঙ্গ আজ ও নিদারুণ বঞ্চনার, পরিকাঠামো উন্নয়নের দিক দিয়ে. অথচ GST বা Tax সব কিছু তারা সেই মতোই দেয় যা শহরতলি র লোক দিয়ে থাকে. আর একটা দিক হলো পরিকল্পনা র অভাব, এর জন্য সম্পূর্ণ ভাবে দায়ী যথাযথ সচেতনতার অভাব, তবে আপনার বা আমার বোধদয় হয়ে কোনো লাভ নেই, সমাজ ব্যবস্থা যাদের হাতে তারা যদি মূর্খ হয় তাহলে কি আর করা যাবে.
পড়তে পড়তে কান্না এলো ….
এমনভাবে আরো কেউ কেউ হেরে যায় তাদের কাজের জগতে
সব্যসাচীবাবু – কুশল কামনা করে লিখছি । একবারই রোহিত রায় নামের একজন রোগী সম্বন্ধে কথা বলেছিলাম । বয়োঃবৃদ্ধ হিসেবে একটা কথা আমি ভিটামিন বড়িটাও লিখি না – আমি গর্বিত । অবশ্যই প্রয়োজন ছাড়া । প্রতিদিন যেসব রোগী পাই তাদের নিয়েই গল্প বানাই । আমি সাহস পেলাম ।