ইদানিং চিকিৎসা সংক্রান্ত ব্যাপারে একটা প্রবণতা বেড়েছে কিছু মানুষের। বিশেষ করে শিশু চিকিৎসার ক্ষেত্রে।
শিশুর কোনও রকম শারীরিক সমস্যা হলে তার অভিভাবকেরা প্রথমবার চিকিৎসকের কাছে এসে তাঁর পরামর্শ মতো শিশুকে ওষুধ খাওয়ালেও, পরবর্তীতে, সেটা নিকট বা দূর ভবিষ্যত যে কোনোটাই হতে পারে, আপাতদৃষ্টিতে শিশুর একই রকম উপসর্গ হলে অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা আর চিকিৎসকের পরামর্শ নিচ্ছেন না। পুরনো প্রেসক্রিপশন নিয়ে সোজা চলে যাচ্ছেন ফার্মেসি। আবার ওষুধ কিনছেন, একই ওষুধ রিপিট করছেন দ্বিতীয়বার।
‘অনেক ক্ষেত্রে’ এবং ‘আপাতদৃষ্টিতে’ এই শব্দ দুটোর উপর নজর রাখুন।
অনেক ক্ষেত্রে, কারণ সব অভিভাবক যাচ্ছেন না, আর আপাত দৃষ্টিতে, কারণ, অভিভাবকেরা ভাবছেন, তাঁরা যেভাবে রোগ নিরূপন করছেন সেটাই ঠিক।
তাঁদের যদি চিকিৎসক জিজ্ঞাসা করেন এ ব্যাপারে, তাঁরা বলেন, ডাক্তারবাবু, আপনারই ওষুধ। ভাবখানা এমন, ডাক্তারবাবু বলে দিয়েছেন আগামী যতদিন ইচ্ছা আপনি এই প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওষুধ কিনে আপনার শিশুকে খাওয়াবেন।
এ ব্যাপার যাঁরা করছেন, তাঁদের চিকিৎসক হিসেবে তিনটে কথা স্মরণ করিয়ে দিই।
প্রথমটা হলো, ক্লিনিক্যাল আই। অর্থাৎ চিকিৎসক কি দেখছেন। আপনাদের মনে হতেই পারে যে আপনাদেরও চোখ, আর তাঁদেরও চোখ। দেখায় পার্থক্য হবে কি করে? উত্তরে বলি আপনাদের সঙ্গে সৌরভের ক্রিকেট খেলার মানে যেভাবে পার্থক্য হয় সেভাবে। সব পেশাগত বিষয়ের ঔৎকর্ষ সাধনা ও অভ্যাসে অর্জিত হয়। চিকিৎসকের চোখও মাঝে মাঝে ভুল করে, সুতরাং, আপনার আনাড়ি চোখে দেখাতে ভুলের সম্ভাবনা আরও বেশি।
দ্বিতীয়টা, আমি ধরেই নিলাম আপনি ঠিক দেখেছেন, ঠিক বুঝেছেন। কিন্তু অতীতে যে ওষুধটা কাজ করছিল, এখন হয়তো সে ওষুধটা তত ভালো অথবা আদৌ কাজ করবে না। এটার ব্যাপারে চিকিৎসক সমাজ অহরহ নিজেদের ব্যাপার যোগাযোগ রাখেন। আপনাদের পক্ষে যা সম্ভব না।
তৃতীয় বিষয়টা আরও সাংঘাতিক। আপনার আনাড়িপনার কারণে ওষুধে রেজিস্ট্যান্স। ব্যাপারটা কেমন? ধরুন আপনি ফার্মেসিতে গেলেন, জীবনদায়ী ওষুধ কিনলেন, সে ওষুধ নির্বাচন সঠিক হলো, উপসর্গের খানিক উপশম হলো। তখন আপনি ভাবলেন, ব্যাস! ভালো হয়ে গেছে অসুখ, সুতরাং ওষুধ খাওয়ানো বন্ধ। কারণ নির্বোধ প্রচার বলে অ্যালোপ্যাথ ওষুধ ভয়ানক সব পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া।
এ ব্যাপারে একটা গল্প শুনে যান। একটা মাঠ জুড়ে তুষ পড়েছিল। তাতে আগুন লেগেছে। আপনি বুঝতে পেরে জল ঢেলে তা নিভিয়ে দিয়েছেন বলে মনে করছেন, কারণ আর ধোঁয়া উঠছে না। কিন্তু আসল ব্যাপারটা অন্য। তুষের ভিতর ভিতর আগুন রয়েই গেছে, আপনি টের পাননি। টের পেলেন সকালে ঘুম থেকে উঠে, যখন দেখলেন আগুনে সব ছাই হয়ে গেছে। দরকার ছিল হাজার বালতি জল। আপনি দিয়েছেন একশো বালতি।
এখানে মাঠটা হলো মানুষের শরীর, তুষটা হলো রোগ, আগুনটা হলো জীবাণু, ধোঁয়াটা তার উপসর্গ, জলটা হলো জীবনদায়ী ওষুধ। আপনি কম জল দিয়ে মাঠের সব তুষ পুড়িয়ে ফেলেছেন।
কিছু বুঝলেন? যদি না বোঝেন তাহলে এ কথাটা মুখস্ত করে নিন। **((আপনাদের নিজেদের কারণেও একদিন মানুষের কল্যাণে ব্যবহৃত সব ওষুধ নির্বিষ হয়ে যাবে জীবাণুদের কাছে। তখন আঙুল কামড়ানো ছাড়া কোনও উপায় থাকবে না।))****************************
হতে পারে আপনার চিকিৎসক দেখানোর পয়সা নেই। সেক্ষেত্রে তাঁকে সেটা বলুন। অসুবিধা থাকলে হাসপাতালে যান, কিন্তু চিকিৎসার দায়িত্ব নিজের হাতে নেবেন না। অনুরোধ। ওষুধ কারবারে নিয়োজিতরা, যাঁরা এমনটা করেন, তাঁদেরও অনুরোধ, নতুন প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ দেওয়াও বন্ধ করুন। ধন্যবাদ।
২০.০৩.২০২৪