ভাবা যায় দশ মিনিটের উপর রিসেপশনের সামনে দাঁড়িয়ে, কেউ নেই টিকিট করার!
মানলাম গুড ফ্রাইডে ছুটির দিন, মানলাম সন্ধ্যা টা র পর হাসপাতালে এসেছি।
মানলাম সামনেই emergency রুম, সেখানে সিস্টার আছেন, সেরকম কিছু হলে বেডে শুয়ে পড়লে ওনারাই দেখভাল করতে শুরু করে দেবেন,
মানলাম আমরাই যখন বড়ো হাসপাতালে যাই দেখাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়, মানলাম সেই ওষুধগুলোই এখানে এসে লিখিয়ে নেই, অর্থাৎ ওনারা নিজেরাও এই একই ওষুধ প্রেসক্রাইব করেন,
তবুও এই গাফিলতি মেনে নেওয়া যায় না।
দশ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে সন্ধ্যা সাত টার পর টিকিট করানোর জন্য ছুটির দিনে, ইয়ার্কি হচ্ছে এসব!!
কি হলো কিছু তো বলুন? একটা ঘটনার কথা মনে পড়ে গেল। বলতে পারি?
বলুন।
সাগরদীঘিতে তখন একা। সোমা কলকাতায়। স্বভাবতই সকালে উঠে সব সামলে হাসপাতালে পৌঁছতে একটু সময় লাগতো। সাড়ে আট বেজে যেত।
একদিন Director Project স্যারের ফোন। অত্যন্ত রাগী মানুষ ছিলেন। সবাই ভয়ে কাঁপত। অবসর নিয়েছেন এখন।সাগরদীঘিতে এসে আমাকে দেখাতেন, আমাদের ল্যাবে টেস্ট করতেন, ওষুধ যা দিতাম খেয়ে ফলো আপ জানতেন।একটা ডাক্তার রুগীর সম্পর্ক ছিল।
স্বভাবতই ফোন করে যখন বলেন দীপঙ্কর কাল সকালে প্ল্যান্টে ঢোকার আগে যাবো তোমার চেম্বারে। সাড়ে আট হলে ঠিক আছে তো?
আমি বললাম ঠিক আছে, তবে ব্লাড করতে হলে খালি পেটে আসবেন।
ঠিক আছে।
স্যার ৮.১৫ নাগাদ চলে আসেন। আসলে আমাকে দেখিয়ে, রক্ত পরীক্ষা করিয়ে, গেস্ট হাউসে খেয়ে তারপর প্ল্যান্ট। তাই একটু আগে আসা।
আমি তখনও এসে উঠতে পরে নি।
স্যার আমার চেম্বারে অপেক্ষায়।
স্যারের কিছু সঙ্গী ফোন করে পারলে আমাকে খুনই করে ফেলে। আপনি ভাবতে পারছেন সংস্থার সেকেন্ড ব্যক্তি আপনার অপেক্ষায় আপনার চেম্বারে!! আপনার কোনো আক্কেল নেই!! আজ দেখবেন কি অবস্থা করে আপনার উনি?
যথাসময়ে আসলাম। চেম্বারে ঢুকে দরজা বন্ধ করে বললাম: আপনাকে তো বললাম সাড়ে আট টায় আসতে। তার আগে এসেছেন। তাহলে আমার কি দোষ। সকাল সকাল এভাবে অপমান করার কি মানে!
উনি আকাশ থেকে পড়লেন। সবটা শুনলেন। বললেন উনি কিছুই জানেন না এসবের। উনি চেম্বারের ভিতরে ছিলেন। বাইরে কে কি করেছে ওনার জানার কথা নয়। However উনি আজ নয় কাল ব্লাড করাবেন।
বললেন ব্রেক ফাস্ট করে চা খেয়েছো?
কি করে খাবো? যা তাড়াহুড়া করলেন!
আমি নই দীপঙ্কর। শুনেছি তোমার এখানে একটা ক্যান্টিন আছে। ওখানে খাবো চলো।
ওখানে আপনি! আপনার কি মাথা খারাপ হলো স্যার? ওই কাপ, ওই ambiance!!
আরে চলো না।
দুজনে ক্যান্টিনে গেলাম। ওনার সঙ্গে আসা বাকিরা সবাই বাইরে দাঁড়িয়ে। অধিকাংশই আমার দিকে কটমট চোখে তাকিয়ে।
দুজনে ভাঙ্গা কাপে চা খেলাম। উনি ভালো ফুটবল খেলতেন, তাই নিয়ে হাসি ঠাট্টা করলেন। আসলে সকালের ঘটনায় নিজে খুব দুঃখ পেয়েছেন। নানা ভাবে চেষ্টা করে গেলেন আমার মুড ঠিক করতে।
নাতির অন্নপ্রাশন উপলক্ষে কলকাতার বড়ো ক্লাবে নিমন্ত্রণ কার্ডটা প্রথম সাগরদীঘিতে আমার বাড়িতেই আসে, আর লক্ষ্যণীয় সোমার নাম উপরে ছিল।
মানুষকে খুব ছোটো ছোটো কাজে ব্যবহারে চেনা যায়।
এটুকুই বলার ছিল ভাই।
চললাম…