একজন প্রবীণ নেতা হাসপাতালে।
প্রতি মুহূর্তে চ্যানেলে চ্যানেলে চলছে প্রতিযোগিতা কে কত বেশি আপডেট দিতে পারে! সেখানে অসুস্থ মানুষটির ব্যক্তি-স্বাধীনতা, গোপনীয়তার অধিকার সব কিছু সেকেন্ডারি! মোবাইলে মোবাইলে ভাইরাল হচ্ছে এক্সরে প্লেট, ব্লাড গ্যাসের মাত্রা! ভেন্টিলেশন, ট্র্যাকিওস্টমির বিস্তারিত বর্ণনা!
কিছুদিন আগে এক বিখ্যাত ক্রিকেটার হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর ঠিক তাই হয়েছিল! তাঁর এনজিওপ্লাস্টির লাইভ ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল!
অতীত দিনের রূপালী পর্দার মহানায়িকা হাসপাতালে লড়ছেন মৃত্যুর সঙ্গে। সকলের চোখে ধুলো দিয়ে ঢুকে পড়লেন একনম্বর চ্যানেলের একনম্বর সাংবাদিক! লাইভ অ্যান্ড এক্সক্লুসিভ সম্প্রচার শুরু হলো হাসপাতালের ঘর থেকে!
স্কুপ !!!
যেন অসুস্থতা, দুর্ঘটনা এগুলি দুঃসংবাদ নয়!
আইসক্রিম!
কে আগে খেতে পারে! খাওয়াতে পারে!
এটাই কি প্রাপ্য!
বিখ্যাত বা অখ্যাত কোনো মানুষেরই?
কার দায়?
প্রতিযোগিতার চাপে এর পর কি অসুস্থ মানুষটির শারীরিক বর্জ্যের আউটপুট চার্ট পাচার এবং প্রচার শুরু হবে!!!
হয়ত এসব তাঁদের করতে হয়, নইলে পিছিয়ে পড়তে হয়!
যাঁরা করছেন, তাঁদের নিজেদের আত্মজনের অসহায়, অসুস্থ অবস্থায় এই শারীরিক, ব্যক্তিগত তথ্যগুলি নিয়ে এই ভাবে আন্তর্জালে হরির লুঠ তাঁরা নিজেরা সমর্থন করতেন তো?
মনে হয় না যে একটা কোথাও সীমা টানা উচিৎ!
রোগীর প্রাইভেসি নিয়ে ছেলেখেলা করার অধিকার কারো আছে কি?
দায়টা কার?
চিকিৎসকের? যিনি এনজিওপ্লাস্টির বা ভেন্টিলেশনের সময় সেই ঘরে ছিলেন? যিনি এক্স রে প্লেটের ছবি তুলেছিলেন? যিনি প্রতিমুহূর্তের আপডেট পৌঁছে দিচ্ছেন বাইরে?
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের?
ব্যক্তি সংবাদিকের? এডিটরের ?মিডিয়া মালিকের?
না কি আমার আপনার মত কোটি কোটি মানুষের যাঁরা আঙুলে ছোঁয়ায় চ্যানেল থেকে চ্যানেলে ভেসে বেড়াতে বেড়াতে রবিবারের সকালের লুচি আলুর দম চালান করছেন মুখে আর গ্ৰুপে গ্ৰুপে শেয়ার করছেন মুখরোচক আপডেট!
শুধু সাংবাদিককুল তো নন পিছিয়ে না পড়ার প্রতিযোগিতায় আমরা সবাই!
তাই না?
যে কোনো সভ্য সমাজে এটা কিন্তু শাস্তিযোগ্য অপরাধ !
একটা চলচ্ছবি মনে পড়লো!
প্রায় দু’দশক আগে কিংবদন্তী পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়া আমাদের এক অতিবিখ্যাত শিক্ষক মারা গিয়েছেন। হাসপাতালে বুম হাতে মিডিয়াবাহিনী তাড়া করেছে তাঁর সদ্যপিতৃহারা সন্তানকে!
স্তম্ভিত হয়ে শুনলাম, সমবেত প্রশ্ন আছড়ে পড়ছে বিধ্বস্ত ছেলেটির ওপর,-আপনার রিয়্যাকশনটা!
একটা কমেন্ট!
ও দাদা! শুনছেন!