কল্প(?)গল্প
– লক্ষ করেছ কি, ব্যাপারটা একটা প্যাটার্ন ফলো করছে?
– ঠিক বলেছেন। প্রত্যেকটা অপরাধের পর আততায়ী আপাতভাবে খুব অপরাধ বোধে ভুগেছে এই রকমের ভাব দেখিয়েছে। আর কেন করলাম এই মনোবেদনা নিয়ে অকুস্থল ছেড়েছে।
– যেন সাধ্য থাকলে ক্ষতিটুকু সে ফিরিয়ে দিত। একই রকমের কাব্যিক নোট প্রত্যেক বারেই প্লেস অফ অকারেন্স থেকে আবিষ্কার করেছি আমরা। তাই না চাকলাদার?
– হ্যাঁ স্যার, নোট একই রকমের বললে কম বলা হয়, একদম একই, কপি পেস্ট। যেন ধরা পড়লে ও বলত আজ লিখিনি। আগে লেখা। এ’টার কারণ কী হতে পারে স্যার?
– কারণ নানা রকম হতে পারে। এক হতে পারে এই কাব্যিক ইয়ে নোট মানে যাকে সম্পর্কের হোমিসাইডাল নোট বলো তুমি, সেই জিনিস নতুন করে লেখার ক্ষমতা চলে গেছে ওর। অথবা এমনও হতে পারে, আগে থেকে লিখে রাখা তো! ধরা পড়লেই আগের এভিডেন্স অনলাইনে দেখিয়ে এ’টা যে নতুন নয়, এই কথা বলার রাস্তা খোলা রাখত।
– কিন্তু স্যার, ও যে সিরিয়াল কিলার, সেই দোষ কি খারিজ হত তা’তে?
– না তা তো নয়ই। বরং ওর নতুন নতুন খুনের ইচ্ছেটাই এস্টাব্লিশড হয়, পুরোনো একই হোমিসাইডাল নোট বারবার ব্যবহার করার মধ্যে।
– আচ্ছা স্যার, এমন কি হতে পারে যে আদতে ও কোনও মানুষই নয়?
– হতেই পারে তেমন। সত্যি বলতে কী, এই যে একঘেয়ে বিরক্তিকর রিপিটেশন, কল্পনা শক্তির লেশমাত্র নেই ওর করা অপরাধগুলোর মধ্যে, এতে ওই সম্ভাবনাটাই মনে হচ্ছে বেশি বেশি করে। ও ইমপ্ল্যান্টেড বায়োবট হবার সম্ভাবনা খুব। কিন্তু ধরতে না পারলে কিছুই করা যাবে না।
– সে ক্ষেত্রে ও যদি আদৌ মানুষই না হয় তবে পেনাল কোডের ধারাগুলো দিয়ে ওকে ধরা যাবে? মানে আইন কী বলে এ’ব্যাপারে?
– দেখো, আমাদের টিমের সাইকো-ফরেনসিক এক্সপার্টরা, উকিল আর ডাক্তারেরা, ওর প্রতিটি কাজ, মানে অপরাধগুলো ঘটবার পরপরই মাইক্রোস্কোপের তলায় ফেলে তন্নতন্ন করে দেখছে। কঠিন সারভাইলেন্স। নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে প্রায় সাফল্যের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে তারা। একবার, মাত্র একবার হাতে নাতে ধরা পড়লেই মানে ও যে মানুষ নয়, রোবটই… প্রমাণ করতে পারলেই পেনাল কোড ওকে আর ছুঁতে পারবে না।
– সে কী স্যার! পেনাল কোড ওকে ছুঁতে পারবে না, মানে ও ছাড়া পেয়ে যাবে? যে কিনা দিনের পর দিন অমূল্য ভালোবাসাকে খুন করেছে! এত জঘন্য কাজ করেও কোনও শাস্তি পাবে না?
– চাকলাদার, পেনাল কোড তো মানুষের জন্য। সেই পেনাল কোড ছুঁতে পারে কোনও মেশিনকে? তাই বলে ও ছাড়া পেয়ে যাবে তা’ তো একবারও বলিনি! বলেছি কি?
– তবে?
– তুমি কি বলো তো! সব ভুলে গেলে? তিনটে আইন আছে না?
প্রথম ল
একটা রোবট কিছুতেই মানুষের ক্ষতি করবে না তো বটেই, ক্ষতি হবার উপক্রম হলে চুপ করে থেকে মানুষের ক্ষতি হতেও দেবে না।
দ্বিতীয় ল
রোবট মানুষের সমস্ত আদেশ মানবে যদি না সেটা প্রথম ল ভাঙে।
তৃতীয় ল
প্রথম আর দ্বিতীয় ল না ভেঙে রোবট নিজেকে রক্ষা করবে।
– এ তো স্যার সেই ১৯৪২এই আসিমভ…
– হ্যাঁ, সেই আইনই। একবার যদি প্রমাণ করতে পারি ও রোবট, তা’হলে প্রথম আইনটাই ও ভেঙেছে। ও জীবিত মানুষের ভালোবাসাকে, সম্মানকে আর বিশ্বাসকে খুন করেছে। একবার নয় বারবার। আর প্রত্যেকবার হোমিসাইডাল নোট লিখে স্বীকারও করেছে।
– তা ঠিক। কিন্তু রোবটদেরও নাকি কী সব এথিক্যাল রাইট টাইট…
– তুমি আজও আমাকে চিনলে না চাকলাদার। ওই সব রোবটদের পাতি এথিক্যাল রাইটসের প্রশ্নই উঠতে দেব না। ধরা মাত্রই মেমোরি এক্সট্রাক্ট করে ডেমলিশরে ঢুকিয়ে দেব সরাসরি , একবার শুধু হাতেনাতে ধরি!