মুক্ত বাজারের অর্থনীতি এবং এর হিংস্রতা ওষুধের বাজার, মুনাফা এবং এর জনগ্রাহ্যতা তৈরির সমগ্র প্রক্রিয়ার পেছনে কাজ করছে। এখানে নিতান্ত স্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়া হয় – (১) মানুষ চির-অতৃপ্তির ধারক একটি জীব এবং সে সবসময়ে অতৃপ্তিকে তৃপ্তিতে এবং সুখে রূপান্তরিত করার জন্য সবকিছু বাজি রাখতে পারে, (২) ধরে নেওয়া হয় মুক্ত বাজার হল সে স্থান যেখানে মানুষ free choice-এর সাহায্যে তার প্রয়োজনগুলো মেটাতে পারে, (৩) “unfettered competition in the market” হল সমস্ত আবিষ্কারের চালিকা শক্তি। Marshall Sahlins দেখিয়েছেন পশ্চিমী দুনিয়ার “satisfaction”-এর জন্য এই সুতীব্র আকাঙ্খা কিভাবে মানব সভ্যতা সম্পর্কে একমাত্রিক এবং একটি মাত্র ধারণাকে চরম ও পরম সত্যি বলে গ্রহণ করে ও সমগ্র পৃথিবীতে সে ধারণা প্রাধানা বিস্তার করে। তাঁর মতে – I believe, disastrous for the study of non-Western societies. (“The Sadness of Sweetness: The Native Anthropology of Western Cosmology”, Current Anthropology, 1996, 37.3, pp. 395-428.)
ওষুধের বাজারকে এই অর্থনৈতিক-সামাজিক দর্শনের সামগ্রিক প্রভাবের সাহায্যে ক্রমাগত আর পাঁচটা পণ্যসামগ্রীর মতো consumer market-এ পরিণত করা হচ্ছে। এর হাত ধরেই lifestyle product–এর বাজার ক্রমাগত বাড়তে থাকবে। এবং এ সমস্ত প্রোডাক্ট বিক্রি করার জন্য চিকিৎসকদেরও হয়তো আর আলাদা করে প্রয়োজন পড়বে না। আমেরিকাতে একজন মানুষ গড়ে জীবনের এক-তৃতীয়াংশ সময় টেলিভিশনের বিজ্ঞাপণ দেখার পেছনে ব্যয় করে। আমরা ভারত বা বাংলাদেশকে এখানে মিলিয়ে নিই! এক নতুন ধরণের সামাজিক মানসিকতার নির্মাণ হয় যা কেবল পণ্যের সন্ধান করে, এক নতুন ধরণের medical consumer তৈরি হয়, বাজার বেঁচে থাকে, ফনফনিয়ে বেড়ে ওঠে। জন্ম নেয় medical tourism. (এ বিষয়ে ভালো আলোচনা রয়েছে – Kalman Applbaum, “Pharmaceutical Marketing and the Invention of Medical Consumer”, PLoS Medicine, April 2006, 3.4, pp. 445-448.)
PLoS Medicine-এর একই সংখ্যায় আরও কতগুলো লেখা প্রকাশিত। শুধু শিরোনামগুলোই আমাদের বোঝার জন্য যথেষ্ট হবে বলে আশা করি – “Pharmaceutical Marketing and the Invention of the Medical Consumer”, “Female Sexual Dysfunction: A Case Study of Disease Mongering and Activist Resistance”, “The Fight against Disease Mongering: Generating Knowledge for Action”, “Bigger and Better: How Pfizer Redefined Erectile Dysfunction”, “The Latest Mania: Selling Bipolar Disorder”, “Medicine Goes to School: Teachers as Sickness Brokers for ADHD” ইত্যাদি।
২৯.০৩.২০২২ তারিখে বিজনেস ইন্ডিয়া-য় প্রকাশিত একটি খবরের শিরোনাম “Pharma firms aim for higher revenues as govt hikes price of lifesaving drugs”। এ সংবাদ থেকে জানা যাচ্ছে – “Pharmaceutical companies manufacturing lifesaving drugs may see good revenue growth in upcoming quarters after National Pharmaceutical Pricing Authority’s (NPPA) announcement of hike in prices of around 800 essential drugs from April 1.” আরও জানা যাচ্ছে, ভারতের প্রথমদিকের ২৫টি বৃহৎ কোম্পানি “এসেনশিয়াল ড্রাগস” বিক্রির পরিমাণ তাদের মোট বিক্রির পরিমাণের ৭-৪৪%। পরিমাণটি নেহাত কম নয়।
ওষুধের দাম বাড়ার ফলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে যারা ফিক্সড-ড্রাগ কম্বিনেশন (যেমন জ্বরের ওষুধ প্যারাসিটামলের সাথে কোন হাবিজাবি ব্যথার ওষুধ জুড়ে দেওয়া কিংবা একগাদা অ্যান্টি-ডায়াবেটিক ওষুধ নিয়ে একটি ট্যাবলেট বানানো) বিক্রি করে বেশি – “Among leading domestic pharmaceutical companies, the largest beneficiaries of the price hike would be products containing fixed dose combinations (FDCs), along with pharma firms like Zydus Life Sciences and JB Chemicals, which have the highest NLEM exposure at 33-44 per cent of domestic sales. In comparison, Alkem, Cipla and Ipca have 21-26 per cent of their domestic sales coming from NLEM (National List of Essential Medicines) drugs and will also be key beneficiaries, Kotak Securities’ report has indicated.” মনে রাখতে হবে, ভারতে ওষুধের খুচরো বিক্রির বাজার প্রায় ১.৫ লক্ষ কোটি টাকার।
৩০.০৩.২২ তারিখের ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস সংবাদপত্রের একটি সংবাদের শিরোনাম “Why the prices of some drugs could see the steepest increase in years”। সংবাদটিতে জানানো হচ্ছে যে “The announcement of the national drug pricing body could impact the prices of paracetamol, azithromycin, ORS, contraceptives like IUDs and condoms, insulin shots, and multivitamins.”
এ ব্যাপারে একটি সরকারি বিজ্ঞপ্তিও জারি করা হয়েছে। টাইমস অফ ইন্ডিয়া এই পরিবর্তনের একটি চেহারা তুলে ধরেছে।
(টাইমস অফ ইন্ডিয়ার খবর থেকে বোঝা যাচ্ছে ওষুধ কোম্পানিগুলোর কাছে ৬০-৭০% দাম বাড়া বড়ো স্বস্তির ব্যাপার)
প্রায় ২ বছর ধরে চলা কোভিড অতিমারির পরেও আন্তর্জাতিক জগতে দানবীয় বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর মুনাফায় ঘাটতি পড়েনি। আমি কয়েকটি কোম্পানির হিসেব দিচ্ছি –
Johnson & Johnson 2020 revenue: $82.6 billion 2019 revenue: $82.1 billion,
Novartis 2020 revenue: $48.66 billion 2019 revenue: $47.45 billion,
Merck 2020 revenue: $48.00 billion 2019 revenue: $46.84 billion,
AbbVie 2020 revenue: $45.80 billion 2019 revenue: $33.27 billion,
GlaxoSmithKline 2020 revenue: £34.10 billion ($43.77 billion) 2019 revenue: £33.75 billion ($43.32 billion),
Bristol Myers Squibb 2019 revenue: $26.15 billion 2020 revenue: $42.52 billion,
AstraZeneca 2020 revenue: $26.62 billion 2019 revenue: $24.38 billion,
Amgen 2020 revenue: $25.42 billion 2019 revenue: $23.36 billion,
Eli Lilly 2020 revenue: $24.54 billion 2019 revenue: $22.32 billion
দেখা যাচ্ছে প্রায় সবকটি অতিবৃহৎ বহুজাতিকের মুনাফা ১ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি বা বেশি। এদের ভারতীয় শাখাগুলোও এ সুবিধে ভোগ করার অবারিত দ্বার পাচ্ছে। কারণ ভারতের অর্থনীতি পূর্ণত মুক্ত বাজারের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। মুক্ত বাজারের হাটে কেনাবেচা চলছে। গুণাগার দেবে আমজনতা, যারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই সময়কালে। এবং সবক্ষেত্রে বাজারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েই চলেছে। যদিও মানসিক জগতে একে সইয়ে নেবার এক বিপজ্জনক ঐতিহাসিক অবস্থা জন্ম নিয়েছে। একধরনের সামগ্রিক সামাজিক চৈতন্যের বিবশতা (numbing of our collective consciousness) সর্বব্যাপী চেহারা নিয়েছে। আমাদের সামাজিক মানসিকতাকে (social psyche) গড়েপিটে নিচ্ছে। আমরা ক্রমবর্ধমান পথে রাষ্ট্রানুগত্যকে আমাদের আইডেনটিটির মধ্যে প্রবেশ করতে অনুঘটক হিসেবে নিজেরাই ভূমিকা পালন করছি। কোভিড পরবর্তী সময়ে এটা আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে।
করোনা অতিমারি-অতিক্রান্ত সময় সম্ভবত আমাদের দেশের এবং বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্যব্যবস্থার গোড়া ধরে কিছু মৌলিক পরিবর্তন আনতে চলছে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার ধারণা সম্ভবত একটি emblem বা স্মারক ছাড়া আর কিছু থাকবেনা। এ মারাত্মক সময়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা মানুষের দৃষ্টিপথ (visibility), শ্রুতি (discernibility) এবং ভাবনার ক্ষেত্রপথের একেবারে বাইরে চলে যাচ্ছে। অতি উচ্চ মুল্যের আইসিইউ পরিষেবা, উচ্চচাপের অক্সিজেনের ব্যবস্থা, ECMO ইত্যাদি জন মানসিকতায় ক্রমশ গ্রাহ্য হয়ে উঠছে, মান্যতা পাচ্ছে। সমগ্র বিষয়টি নিতান্ত হাই-টেক এবং কর্পোরেট পুঁজি নির্ভর হতে যাচ্ছে। আক্রান্ত, নিরুপায় এবং বিভ্রান্ত মানুষের কাছে দামী হাসপাতালের কয়েক লক্ষ টাকার বিল এবং একইসাথে ভেন্টিলেটর ECMO ICU এগুলো খুব গ্রহণযোগ্য শব্দ হয়ে গেছে। মজার ব্যাপার, ক্ষোভ থাকা সত্ত্বেও নামী হাসপাতাল এবং দামী টেকনোলজি ভালো চিকিৎসার সমার্থক হয়ে উঠছে। এবং লক্ষ্যণীয় হল কর্পোরেট পুঁজি শাসিত ও নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্র এটাই চায়। অতিরাষ্ট্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা মানুষের নতুন চাহিদা এবং স্মৃতি প্রতিনিয়ত নির্মাণ করে চলে – সে রামমন্দির নিয়েই হোক বা হাই-টেক পাঁচতারা কর্পোরেট চিকিৎসাই হোক।
জার্নাল অফ আমেরিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন-এ (৩ মার্চ, ২০২০) একটি পেপার প্রকাশিত হয়েছিল “Profitability of Large Pharmaceutical Companies Compared With Other Large Public Companies”। এ পেপারে বিভিন্ন পরিসংখ্যানগত তথ্য বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত হিসেবে জানানো হয়েছিল – “২০০০ থেকে ২০১৮-র মধ্যে ফার্মাসিউটিকাল কোম্পানিগুলোর লাভ অন্যান্য বৃহৎ, পাবলিক কোম্পানির চেয়ে লক্ষ্যণীয়ভাবে বেশি ছিল”। আমেরিকা থেকে প্রকাশিত GoodRx Health ম্যাগাজিনে আমেরিকার কথা বলা হয়েছে (জানুয়ারি ৬, ২০২২) – “Every year, manufacturers tend to raise the prices of their medications in January and July. Last January, 832 drugs increased in price by an average of 4.6%.”
January 2022 Drug Price Increases: Breakdown
Table with 2 columns and 3 rows. Currently displaying rows 1 to 3. | |
Brand | 791 brand drugs have increased by an average of 4.9% |
Generic | 19 generic drugs have increased by an average of 12.6% |
Total | 810 drugs in total have increased by an average of 5.1% |
ভারতের সঙ্গে অদ্ভুত মিল পাচ্ছি আমেরিকার মূল্যবৃদ্ধি এবং ওষুধের সংখ্যার সাথে।
১৯৮০ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে রোনাল্ড রেগানের নির্বাচন বোধ করি “big pharma”-দের উত্থানের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। এসময়ে কেবলমাত্র রাষ্ট্রনীতিতে নয়, সামাজিক ক্ষেত্রেও প্রবলভাবে pro-business shift হল। ১৯৮০-তেই রচিত হল বি/কু-খ্যাত Bayh-Dole Act (Pub. L. 96-517, December 12, 1980)। ইন্ডিয়ানার ডেমোক্র্যাট সেনেটর বার্চ বে এবং কানসাসের রিপাব্লিকান সেনেটর রবার্ট ডোলের যৌথ উদ্যোগে জন্ম নিল এ আইন। পুঁজির অবাধ বিচরণের জন্য যা ডেমোক্র্যাট তাই রিপাবলিকান – আমে দুধে মিশে যায় অভ্রান্তভাবে। টেকনোলজি ট্রান্সফারের নামে – “Bayh-Dole enabled universities and small businesses to patent discoveries emanating from research sponsored by the National Institutes of Health (NIH), the major distributor of tax dollars for medical research, and then to grant exclusive licenses to drug companies.” (Marcia Angell, The Truth about the Drug Companies: How They Deceive Us and What to Do about It, 2004, p. 7)
PLoS-এ ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে প্রকাশিত সম্পাদকীয় “নিউক্লিয়ার ওয়েপনস অ্যান্ড নেগলেক্টেড ডিজিজেসঃ দ্য টেন থাউস্যান্ড-টু-ওয়ান গ্যাপ”-এ বলা হয়েছিল – “১১টি পারমাণবিক শক্তিধর দেশের পারমাণবিক অস্ত্র রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যা খরচ হয় তার ১/১০,০০০ ভাগেরও কম খরচে অবহেলিত রোগগুলোকে নির্মূল করা ও বিশ্বের উত্তেজনা কমিয়ে শান্তি রক্ষা করা সম্ভব।”
আজ থেকে প্রায় ৪৫ বছর আগে, ১৯৭৮ সালে অতিবৃহৎ বহুজাতিক কোম্পানি Merck-এর তদানীন্তন প্রধান কর্মকর্তা Henry Gadsden বিখ্যাত Fortune পত্রিকার প্রতিনিধি W. Robertson-কে জানিয়েছিলেন (Forune, March, 1976) – “I want us to be like Wrigley’s and sell to everyone.”
তুলনাটি বড়ো কৌতুকপ্রদ। Wrigley কোম্পানি, আমাদের অনেকেরই জানা, আমেরিকার একটি বিখ্যাত বাবল গাম প্রস্তুতকারক কোম্পানি। Gadsden-এর আক্ষেপ হল যে বাবল গাম-এর মতো ওষুধকেও সবার কাছে বিক্রী করতে পারলেন না! অতঃ কিম্? এরপরে শুরু হল সুকৌশলী এবং প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করে রোগ বা অসুখ বিক্রী করার নিরন্তর, ধারাবাহিক ও হিংস্র একটি উপাখ্যান লেখার ইতিহাস। সে ইতিহাসের সানুপুঙ্খ বিবরণ ধরা আছে Ray Moynihan এবং Alan Cassels-এর লেখা Selling Sickness: How Drug Companies Are Turning Us All Into Patients (Allen Unwin, 2008) পুস্তকে। আগ্রহী পাঠকেরা নিশ্চয়ই বইটি দেখবেন।
অধুনা একটি অতি জনপ্রিয় চালু বিষয় হল “whole body check-up”। যে বিশাল সংখ্যক রোগী প্রধানত দক্ষিণ ভারতে পাড়ি জমান চিকিৎসার জন্য তাদের জন্য অ্যাপোলো হাসপাতাল বোধহয় প্রথম বাণিজ্যিকভাবে অত্যন্ত লাভজনক এরকম একটি প্যাকেজ চালু করে। রোগীদের চিন্তায়, মননে এবং বোধে ধীরে ধীরে সংক্রামিত হতে থাকে একবার whole body check-up করে ফেলতে পারলে রোগ নিয়ে আর দুর্ভাবনার বিশেষ কিছু থাকে না। একটু নজর করলে বুঝবো মানুষের স্বাভাবিক সুস্থতার মাঝে একটি “পরিহার্য বিপন্নতা” বোধের জন্ম হচ্ছে, মানুষ নির্ভর করতে শুরু করছে আরো বেশী বেশী পরিমানে মেডিসিনের জগতের ওপরে, যাকে আমরা বলছি medicalization of life। এ প্রসঙ্গে British Medical Journal-এ (9 June 2014) প্রকাশিত একটি সম্পাদকীয় এবং আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা পত্রের উল্লেখ করা যেতে পারে। সম্পাদকীয়-র শিরোনাম – “General health checks don’t work: It’s time to let them go”। এতে বলা হয়েছিল – “People who accept an invitation to a health check tend to have higher socioeconomic status, lower cardiovascular risks, less cardiovascular morbidity, and lower mortality than others.” অর্থাৎ সচরাচর যারা এ ধরণের চেক-আপ করাতে যান তারা অর্থনৈ্তিকভাবে সুস্থিত অবস্থায় থাকার ফলে বিশেষ কিছু শারীরিক সমস্যার সম্ভাবনা সাধারণভাবে কম। Danish Inter99 Trial-এর একটি বড়ো রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালের এক-ই সংখ্যায়। ১৯৯৯-২০০৪ পর্যন্ত ৩০-৬০ বছর বয়সী ৫৯,৬১৬ জন মানুষের ওপরে এ সমীক্ষা করা হয়েছিলো। সমীক্ষার সিদ্ধান্ত – “A community based, individually tailored intervention programme with screening for risk of ischaemic heart disease and repeated lifestyle intervention over five years had no effect on ischaemic heart disease, stroke, or mortality at the population level after 10 years.”
আজ থেকে ২১ বছর আগে নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর ২৪শে জুন, ২০০১ সংখ্যায় মার্গারেট ট্যালবট একটি প্রবন্ধ লেখেন – “The Shyness Syndrome”। এ প্রবন্ধে তিনি দেখান ডেভিড বেকহ্যাম, স্পাইস গার্ল বা রিকি উইলিয়ামস-এর মতো সেলিব্রিটিরা ওষুধ কোম্পানির টাকায় মিডিয়ার সামনে কেমন করে নতুন ধরণের social phobia-র শিকার হচ্ছেন বলে জানাচ্ছেন। একটি নতুন anti-depressant ওষুধ তৈরি হচ্ছে social phobia-র জন্য।
যে বিশেষ বৈশিষ্ট্য মানুষের ভিন্নতার জন্ম দেয়, সেরকম একটি বৈশিষ্ট্য স্বল্পবাক বা লাজুক চরিত্র যদি medicalized হয়ে যায় তাহলে মানুষের এসমস্ত স্বাভাবিক ও বিশেষ বৈশিষ্ট্যও ওষুধের এবং চিকিৎসার আওতার মধ্যে চলে আসবে। এদের জন্য নতুন ওষুধ তৈরি হবে। এমনকি কখনো কখনো আগে ওষুধ তৈরি হয়, পরে লাগসই রোগের নামকরণ হয়। এরকম একটি ওষুধের উদাহরণ হচ্ছে praxil (paroxetin)। গার্ডিয়ান পত্রিকায় (৩০ জুলাই, ২০০২) প্রকাশিত এই রিপোর্টিংয়ে (“First, you market the disease… then you push the pills to treat it”) বলা হয়েছিল – “The modus operandi of GlaxoSmithKline – marketing a disease rather than selling a drug – is typical of the post-Prozac era … The strategy has enabled the pharmaceutical industry to squeeze millions in additional revenue from the blockbuster drugs known as selective serotonin reuptake inhibitors (SSRIs), a family of pharmaceuticals that includes Paxil, Prozac, Zoloft, Celexa, and Luvox. Originally approved solely as antidepressants, the SSRIs are now prescribed for a wide array of previously obscure afflictions – Gad, social anxiety disorder, premenstrual dysphoric disorder, and so on.”
পরিণতিতে, কয়েক মিলিয়ন বা বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা হবে। ক্রিস্টোফার লেন মন্তব্য করছেন – Treat someone for shyness, and the insurance companies will laugh at you. Treat someone with social phobia, with its DSM seal of approval as disorder 300-23, and the bill will be paid. (Christopher Lane, Shyness: How Normal Behavior Became a Sickness, Yale University Press, 2008)
ট্যালবট আশঙ্কা বোধ করেন এমন কোন দিন হয়তো আসবে যখন পৃথিবীতে মৃদুভাষী, স্বল্পবাক বা স্বভাব ভীরু বলে কিছু থাকবে না – “Maybe in another generation or so, we’ll find ourselves sorely missing the meek and the mild, the stoic and the taciturn among us. Is somebody out there inventing the drug to treat excessive perkiness?” এ আশঙ্কার বাস্তব ভিত্তিতে আছে অর্থনৈতিক মুনাফা। আমেরিকাতে ওষুধ কোম্পনিগুলো বছরে (এ হিসেব ২০০৪ সালের এবং এখন বহুল পরিমাণে বেড়েছে) ১১ বিলিয়ন ডলারের বেশি ব্যয় করে “on promoting their products.” (Lancet, “Dealing in drugs”, November 6, 2004, pp. 1655-56) অন্য আরেকটি প্রসঙ্গে গবেষকেরা দেখিয়েছেন, কিভাবে মহিলাদের কিছু স্বাভাবিক স্বভাবকে একটি বিশেষ রোগের নামে নামাঙ্কিত করে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করা হয়। (Ray Moynihan and Barbara Mintzes, Sex, Lies, and Pharmaceuticals: How Drug Companies Plan to Profit from Female Sexual Dysfunction, Allen & Unwin, 2010).
এরকম একটি চিন্তা, মত ও ভাবনা উৎপাদনের সামাজিক পরিবেশ, ডিজিটাল দুনিয়া, সংবাদমাধ্যম এবং পারস্পরিক আলাপচারিতার মধ্য দিয়ে আমাদের সময় অতিবাহিত হচ্ছে। ফলে ওষুধের মূল্যবৃদ্ধিও আমাদের কতটা নাড়া দেবে সেটা চিন্তাসাপেক্ষ।
এখানে কোথাও একটা আমাদের অবস্থান গ্রহণ করা নিতান্ত আবশ্যক, গ্রহণ করতে হবে। স্বাস্থ্যকে সুখ কেনার প্রধান উপায় হিসেবে ব্যবহার করার প্রক্রিয়াটিকে আমাদের এবার থামানো দরকার – বিশেষ করে আমরা যারা চিকিৎসক। সমগ্র পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তকে সমসত্ব medical consumer করে তোলার মুখোমুখি হয়ে অসমসত্ব অঞ্চল (heterogeneous space) গড়ে তোলার লড়াই তো চালিয়ে যেতেই হবে।
(এ লেখাটির একটি সংক্ষেপিত এবং স্বল্প ভিন্ন ভার্সন গুরুচণ্ডালী ওয়েবজিনে প্রকাশিত হবে)
Nisobde medicine er dam bere Jabar Karon
Khub nhalo bhabe lekha hoyechhe .
Prochur share hoke..
ধন্যবাদ!
একটা সময় মানুষ মুল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব নিয়ে চিন্তিত ছিল কিন্তু বর্তমানে মানুষ ধর্ম,জাতপাত নিয়েই বেশি চিন্তিত মনে হচ্ছে।
ওষুধের মূল্য বৃদ্ধি করে গরীব এবং দুস্থ মানুষের কাছ থেকে বেঁচে থাকার অধিকারটাও কেড়ে নিতে চাইছে সরকার। আশা করব এই মূল্যবৃদ্ধি প্রতিবাদ সবাই মিলে সমবেত হয়ে একসাথে করা উচিত।
আমাদের বাঁচা বা মরা মূল্যহীন। ওষুধ বিক্রী হোক, প্রয়োজন থাকুক বা না থাকুক। পুণেকার নিউজে পড়লাম আদর পুণাওয়ালা নাকি বলেছেন ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার নাকি আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ভ্রমণকারীদের জন্য বুষ্টার ডোজ আবশ্যিক করে দেবেন। খবরটি সত্যি হলে ভয়ঙ্কর, কারণ রাষ্ট্রনীতি আগেই ওষুধ কোম্পানী ঘোষণা করার সাহস দেখাচ্ছে।
ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্য ওষুধ বিক্রির কুৎসিত দিকটি খোলামেলা আলোচনা করেছেন। ধন্যবাদ ওনাকে।
nice written sir
অতি জরুরী বিষয় খুব সুন্দভাবে আলোচিত হয়েছে, সবার জানা উচিত, প্রচুর শেআর হোক
চরম সত্যি কথা বড় খোলাখুলি লিখেছেন লেখক ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্য।
দুটো জিনিষ আমার কাছে পরিষ্কার।
১) আমরা ওষুধ কিনি না, ওষুধ আমাদের কেনে।
২) অধিকাংশ ওষুধ যা আমরা খাই রোগ প্রতিরোধে তাদের কোন প্রয়োজনীয়তা নেই।
আমেরিকার সাথে আমাদের একটা তফাৎ। ওখানে ওষুধ কিনতে হলে আগে ডাক্তারকে সম্মান করতে হবে। আমাদের দেশে, আমার ব্যক্তিগত ধারণা, বিক্রীত ওষুধের অন্ততঃ এক-তৃতীয়াংশ ডাক্তারের উপদেশ ছাড়াই কেনা হয়। অর্থাৎ ওষুধ কোম্পানীগুলোর সাথে জনতার সম্পর্ক একদম সোজাসুজি।