হতে পারে এটা অভিনয়
তবু এইটুকু মন্দ নয়।
চন্দ্রবিন্দুর সেই গানটা মনে পড়ে যাচ্ছে।
স্বাস্থ্য ভবনে টেবিল থেকে টেবিলে চক্কর কাটা ডাক্তার, সরকারী হাসপাতালে এক ঘর থেকে অন্য ঘর যাওয়া রুগী, ব্যাঙ্কের কাউন্টার থেকে কাউন্টার ঘোরা গ্রাহক, কোর্ট চত্বরে ঘোরা সরকারী কেরানি এদের মধ্যে মিল কিন্তু একটাই। চিত্র একটাই। যে যেই পজিশনে থাকুক। নিজের বৃত্তের বাইরে গিয়ে একটা সাধারন মানুষের লাইনে দাঁড়িয়ে কোন পরিষেবা পেতে গেলে সবাইকেই শেষ পর্যন্ত অপদস্থ হতেই হয়।
অথচ চেয়ারে বসে গেলে তখন কোথা থেকে সবার মধ্যে একটা রাজা বাদশা এসে হাজির হয়ে যায় সেটা বলা মুশকিল।
এমনি আমাদের দেশে সিরিয়াস হওয়ার ভানটা বেশী জরুরি। বেশ গুরুগম্ভীর মুখে বসে থাকলেই ভেতরের শূন্যতা ঢেকে দেওয়া যায়। ভেতরে আদতে ভুষিমাল কিন্তু বাইরে বেশ টিপটপ সেই লোকের আত্মবিশ্বাসের অভাব তাকে বদমেজাজি করে তোলে।
সারাদিন ব্যথা ব্যথা শুনতে শুনতে পাগল জুনিয়র ডাক্তার মাথা গরম করে ফেলে। কি আপদ রে বাবা। কত কত বড় বড় অসুখ পড়ে শেষে এই এক ব্যথা সারাদিন কাবু করে দিচ্ছে। স্বাভাবিক একটা সময়ের পর এই বিশ্বজোড়া ব্যথার উপশম কিসে খুঁজে না পেয়ে সে ক্ষেপে উঠছে।
একটা খোপে বসে থাকা কেরানি কাজ করতে করতে ভেবে চলেছে জীবনে আরো বড় কিছু করতে পারতাম। হল না। ভেতরে ভেতরে ক্ষেপে উঠছে। সামনে যে আসছে ধরে গালাগাল করছে বা খারাপ ব্যবহার করছে।
প্রশাসন কিছুই বুঝে উঠতে না পারা বড় অফিসার। সেই বা কি করবে হম্বিতম্বি আর জুনিয়রকে গালাগাল ছাড়া?
আসলে প্রতিটা গ্রাহক, প্রতিটা রুগী, প্রতিটা মক্কেলের সাথে অনুভূতি গত ভাবে এক হয়ে যাওয়া তো সম্ভব না। সকলের চোখের জল নিজের চোখের জল করলে সাগরে ভাসতে হয়।
কিন্তু একটা পূর্ব নির্ধারিত ভাল ব্যবহার যেটা ছকে ফেলা আদতে সেটা করা জরুরী।
একটা ছোট অভিবাদন, একটা ছোট সম্বোধন। এগুলো জরুরী।
এই পাশের কাউন্টারে যান তো!!!
আপনি প্লিজ পাশের কাউন্টারে যান ওখানেই হবে কাজ টা। সারাদিন এত সেল্ফি তে কৃত্রিম হাসি দিচ্ছেন আর গ্রাহকের সাথে ওটা করা খুব কঠিন? না।
রুগীর সাথে কুকুর ছাগলের মত ব্যবহার স্ট্রেস দিয়ে জাস্টিফাই করার জায়গা নেই। কোথাও সিনিয়র করছে আমিও করছি এটা একটা ব্যাপার। এরকম ভাবেই ব্যবহার করতে হয়। দম থাকলে কোন নেতাকে লাইনে যেদিন কোন ডাক্তার দেখতে পারবে সেদিন মেনে নেওয়া যাবে যে ভাই সে শীতল ঘোষের নতুন প্রজন্ম যে মুখ্যমন্ত্রীকেও রেয়াত করতো না। কাজেই তার গালাগাল লোকে কিছু মনে করতো না।
ডাক্তারীতেও একটা স্ক্রিপ্ট করে রাখা ব্যবহার অনেক ঝামেলার সমাধান করতে পারে। তাতে রুগীর সব দুঃখ নিজের জীবনের দুঃখ করে নিতে হবে না। কিন্তু রুগীর একটা মানসিক উপশম হবে।
প্রশাসনের উচিৎ সমস্ত পেশার মানুষকে এই পেশাগত ব্যবহার শেখানোর একটা উদ্যোগ নেওয়া। মুস্কিল হল যে রাজ্যের উচ্চতম ব্যক্তি সারাদিন ভাট বকেন সেখানে এসব ভাবাই বাহুল্য।