মোটামুটি আমাদের সময় থেকে, বা তার একটু আগে – অর্থাৎ যেসময় সিটি স্ক্যান মেশিন আশেপাশে দেখা যেতে শুরু করল, এবং মূলত সেকারণে রেডিওলজি ব্যাপারটা বেশ অর্থকরী ও গ্ল্যামারাস হয়ে উঠল – সেসময় থেকেই পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট মেডিকেল এন্ট্রান্স পরীক্ষায় শীর্ষ স্থানাধিকারীদের একটা বড় অংশ, স্নাতকোত্তর স্তরে পছন্দের বিষয় হিসেবে রেডিওলজি বাছতে শুরু করলেন। নইলে তার আগে অবধি, হাতে-কলমে চিকিৎসা করা যায়, মেডিসিন সার্জারি অর্থোপেডিক্স পিডিয়াট্রিক্স গাইনি ইত্যাদি, এসব বিষয়ের চাহিদাই বেশি ছিল। এই বদলে যাওয়া পছন্দের পেছনে অনেকের যুক্তি ছিল, ডাক্তারিতে উত্তরোত্তর ডায়াগনস্টিক টেস্টের সংখ্যা বাড়বে, নিত্যনতুন ডায়াগনস্টিক টেস্টও আসবে। (সকলেই জানেন, সে অনুমান অভ্রান্ত হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।) কাজেই, রেডিওলজির বাজার ক্রমশ বিকশিত হবে, হতেই থাকবে। দ্বিতীয়ত, রেডিওলজিস্টকে কাজ করতে হয় ঠান্ডা ঘরে বসে। মাঠে-ময়দানে হাটে-বাজারে দৌড়াদৌড়ির চাইতে সেটা ঢের আরামের। ঝুট-ঝামেলা থেকে মুক্তও বটে। (এই অনুমান অবশ্য অভ্রান্ত ছিল না। কেননা, বর্তমান মামলা-মোকদ্দমার বাজারে রেডিওলজিস্ট-এর হ্যাপা কিছু কম নয়।) তৃতীয়ত, প্র্যাক্টিস জমবে কিনা, এই অনিশ্চয়তা রেডিওলজিস্ট-এর নেই। সিটি স্ক্যান বা এমআরআই করাতে এমনিই রোগী আসবেন, তার জন্য রেডিওলজিস্ট-কে বাড়তি উদ্যমী হয়ে উঠতে হয় না।
চিকিৎসাজগতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উপযুক্ত প্রয়োগ ঘটতে শুরু করলে রেডিওলজিস্ট-এর কাজের পরিসরটিই সর্বপ্রথম সঙ্কুচিত হবে, এমন আশঙ্কায় রেডিওলজি-র প্রতি মোহে কিঞ্চিৎ ভাটার টান এলেও চাহিদা (বা craze) পুরোপুরি মিলিয়ে যায়নি। এখনও রেডিওলজি স্নাতকোত্তর স্তরে শীর্ষ পছন্দের বিষয়গুলোর মধ্যে একটি।
অর্থাৎ, তরুণ বা মধ্যবয়স্ক রেডিওলজিস্ট যাঁরা, ধরে নেওয়া যেতে পারে, যে, তাঁরা পিজি মেডিকেল এন্ট্রান্সে একেবারে প্রথম দিকে র্যাঙ্ক করেছিলেন। (একসময় তো রাজ্যস্তরের পরীক্ষায় প্রথম দশের মধ্যে র্যাঙ্ক না করলে রেডিওলজি-তে এমডি করার সুযোগ পাওয়াটা রীতিমতো অনিশ্চিত হয়ে পড়ত।)
আরেকরকম রেডিওলজিস্ট-ও গত দেড়-দুই দশকে বাজারে এসেছেন।
প্রথমোক্তদের যদি ধরা যায়, যে, স্নাতকোত্তর স্তরের প্রবেশিকা পরীক্ষায় চূড়ান্ত উৎকর্ষ বা দক্ষতার পরিচয় দেওয়া চিকিৎসক হিসেবে (মনে রাখা জরুরি, শীর্ষ স্থানাধিকারীদের অনেকে মেডিসিন পিডিয়াট্রিক্স অর্থোপেডিক্স সার্জারি ইত্যাদিও বাছতেন, বাছেনও – কাজেই, আমার এই পোস্টে তাঁদের কাউকে ছোট করা হচ্ছে না), তাহলে এই দ্বিতীয় দলের চিকিৎসকরাও কোনও এক জায়গায় শীর্ষে।
অর্থাৎ, অর্থবলে।
গত দেড়-দুই দশক ধরেই, প্রাইভেট মেডিকেল কলেজে, এমডি রেডিওলজি-র বাজারদর ক্রমশ চড়ছে। এবং মোটামুটিভাবে, বাকি সব বিষয়ের তুলনায় রেডিওলজি-র মূল্য, সর্বাধিক হয়েই থেকেছে।
এসব তথ্য সুনির্দিষ্টভাবে জানতে পারা মুশকিল, কিন্তু বাজারের খবর অনুযায়ী, গত দু’বছর যাবৎ এমডি রেডিওলজি সিটের দাম ছয়-সাত-আট কোটি রেঞ্জে ঘোরাফেরা করছে।
এবারে জানতে পারলাম – মানে, ওই একইভাবে, ভাসাভাসা খবর পেলাম – রাজস্থানের উদয়পুরের একটি কলেজে এমডি রেডিওলজি-র আসন বিক্রি হলো এগারো – হ্যাঁ, এএগাআআরোওও – কোটি টাকায়।
তো স্পষ্টতই, রেডিওলজি-র চাহিদা, দুই সেক্টরেই, তুঙ্গে। এবং রেডিওলজি-তে এমডি করে যাঁরা আসছেন, তাঁরা কোনও না কোনও ভাবে শীর্ষে – পিজি এন্ট্রান্স পরীক্ষার জন্য জরুরি যে দক্ষতা, তাতে – অথবা অর্থবলে।
আট-দশ কোটি (বা এগারো কোটি) টাকা খরচা করে যিনি এমডি করতে ঢুকছেন, তিনি উপার্জিত ডিগ্রিটিকে জ্ঞানার্জনের পাথেয় হিসেবে দেখবেন, এমনটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু, হতেও তো পারে, যে, তিনি ডিগ্রি পেয়ে যাওয়াটাকেই চূড়ান্ত হিসেবে দেখলেন – অর্থাৎ, টাকা দিয়েছি, ডিগ্রি পেয়েছি, ল্যাঠা চুকে গেল, এরকম ভাবতে শুরু করলেন!! সেক্ষেত্রে…
অর্থাৎ, আপনার ডাক্তারবাবু যখন সিটি স্ক্যান বা এমআরআই করিয়ে আপনার শরীরে অসুখ রয়েছে কি নেই বা অসুখের গতিপ্রকৃতি জানতে বুঝতে চাইছেন – তিনিও জানেন না, রিপোর্টের নিচে স্বাক্ষরকারী ঠিক কোন দলভুক্ত রেডিওলজিস্ট। তিনিও বুঝতে পারছেন না, তাঁর সন্দেহের ডায়াগনোসিস-এর বিপ্রতীপ রেডিওলজি রিপোর্ট এলে – বা অনির্দিষ্ট ভাসাভাসা রিপোর্ট এলে – তিনি ঠিক কীসের ভরসায় এগোবেন।
পরিস্থিতিটা ইন্টারেস্টিং না??
(এবিষয়ে আরও কিছু ইন্টারেস্টিং ব্যাপার আছে। যেমন, এই রাজ্যের মেডিকেল কলেজগুলোতে সিটি স্ক্যান বা এমআরআই মেশিনগুলো – এমনকি ডিজিটাল এক্সরে মেশিনও – পাব্লিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ বা পিপিপি মডেলে চলে। হাসপাতালের ডাক্তাররা সেখানে যুক্ত নন, মানে, মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক-চিকিৎসকরা সেখানে রিপোর্টিং করেন না। অর্থাৎ, রাজ্যের মেডিকেল কলেজগুলোয় যাঁরা রেডিওলজি-তে এমডি করছেন, ছাত্রাবস্থায় তাঁরা হাতেকলমে সিটি স্ক্যান বা এমআরআই করার বিশেষ সুযোগ পাচ্ছেন না। সেক্ষেত্রে… কিন্তু সেসব নিয়ে কথা বাড়ানোটা নিরাপদ নয়, অতএব… )