ফিসফিস করে শ্যামল বললো, জানিস তো বিজয় বাবু (নাম পরিবর্তিত)-কে সিনেমা হলে দেখা গেছে।
— বলিস কি রে। আমি তো হতবাক।
বিবেকানন্দ স্কুলে আমরা তখন সুধাংশুবাবু, হিমাংশু বাবু (দুজনেই অকৃতদার) আর বামনদেববাবুতে আচ্ছন্ন। সেখানে শিক্ষকের জীবন মনে হতো ঋষির জীবন।
তাই অবাক আমি বাড়িতে বলেই ফেললাম, জানো মা, বিজয় স্যার সিনেমা দেখতে গেছেন।
মা হেসে ফেলেছে, তা তুই বড় হয়ে টীচার হলে সিনেমা দেখবি না?
তাই তো, কিন্তু তবুও কোথায় যেন খটকা।
এই সময়েই স্কুলে এলেন একঝাঁক নতুন টীচার। না, সেকালে এস এস সি ছিল না। ছিল হেডস্যারের কষ্টিপাথরে ঘষা। অলকবাবু, প্রভাতবাবু, দিলীপবাবু আর রণেনবাবু।
অলকবাবু আমাদের নিয়ে সাহিত্য-সভা ও পত্রিকা প্রকাশনায় ব্যস্ত হয়ে পড়লেন, প্রভাতবাবুর নির্দেশনায় বিড়লা মিউজিয়ামে বিজ্ঞান ভিত্তিক মডেল প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ। আমাদের মডেল ‘অটো কফি সেলার’ পুরস্কার ছিনিয়ে আনল।
দিলীপবাবু বললেন, রবিবার কি করবি চলে আয়!
দিলীপবাবু স্কুলেরই কাছে নবনীদের (আইচ) বাড়ি ভাড়া থাকেন।একা, তখনও বিয়ে করেন নি। আমাদের সাথেই একবাটি মুড়ি খেতে খেতে ইংরেজি শিক্ষা।
আশ্চর্য রকম ভাবে আমরা কখন যেন স্যারেদের বন্ধু হয়ে উঠছি।
দিলীপবাবুই হঠাৎ একদিন বললেন চল গ্লোবে ‘সাউন্ড অব মিউজিক’ এসেছে, দেখে আসি।
সেই স্যার, সিনেমা, আমি। তখন তো ঘেরাটোপ থেকে বেরোন আমি। শিক্ষক তখন বন্ধু।
রবিবার যথাসময়ে আমার বাড়িতে দিলীপবাবু।আর ক্লাস নাইনের আমিও সাজুগুজু করে রেডি।
ক্লাস ছুটির পর দেখি রণেনবাবু একপাশে দাঁড়িয়ে। শোন, তোরা কি ফুটবল খেলবি?
–হ্যাঁ।
–আমিও আজ খেলব, খুব ইচ্ছে করছে। বলতে বলতে দেখি, স্যার ফুলপ্যান্ট খুলে ফেলেছেন, ভেতরে খেলার প্যান্ট পরেই এসেছেন। মুহূর্তের মধ্যে বল পা’এ মাঠে। মিশে গেলেন আমাদের মাঝে।
মাঠের কথায় মনে পড়লো পঞ্চাননবাবুর কথা। কোন সাবজেক্টের স্যার আমার মনে নেই কিন্তু ক্রিকেট মাঠে হাজির। কি এক অস্বাভাবিক দায় নিয়ে আমাকে সোজা ব্যাটে ব্যাট করাবেনই।
–অভিজিৎ, মাথা সোজা, বলের ওপর থেকে চোখ সরবে না, পা বাড়িয়ে সোজা ব্যাটে খেলতে হবে।
ক্রশ-ব্যাটে রান পেলেও বেড়ার ধার থেকে ছুটে আসছেন পঞ্চাননবাবু, হয় নি হয় নি। আরে রান পাওয়াটাই আসল নয়। খেলাটা ঠিকমতো খেলতে হবে।
স্যার, সারাজীবন সোজা ব্যাটে খেলা খুব শক্ত কাজ। চেষ্টা করেছি স্যার, কিন্তু মাঝে মাঝে ক্রশ ব্যাটও চালিয়ে ফেলেছি। জীবনের অনেকটা পথ এসে মনে হয়, আপনার কথাই ঠিক স্যার,– “রান করাটাই সব নয়।”
***কয়েকদিন আগে হঠাৎ ফোন এলো, –বিবেকানন্দ স্কুলের হেডস্যার শতদল বাবু বলছি।
এখনও হেডস্যার শুনলেই বুকটা ছ্যাঁৎ করে ওঠে।
৫ই সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবসে আসুন। স্কুলের শতবর্ষে পুরনো শিক্ষকদের স্মরণ ও সম্মাননা অনুষ্ঠানে আপনি আসুন, পুরনো দিনের স্যারেদের কথা শুনব। এ কথা শুনে কিছু স্যারের কথা মনে এলো কারণ পঞ্চুবাবু ছাড়া এঁরা সকলেই এঁদের খুব স্বল্পকালীন শিক্ষক জীবনে আমাদের মন ছুঁয়ে গিয়েছিলেন।
এরই মাঝে ইন্দ্র পতন। আমাদের ব্রজবাবু পরবর্তী কালে হেডস্যার, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ব্রজমোহন মজুমদার ইহলোক ত্যাগ করলেন। খবরটা শুনে প্রথম মনে হলো “বাপ্পাদিত্য” অনাথ হলো।কারণ ব্রজবাবুর যে ছবিটা চোখের সামনে ভেসে উঠলো, তাঁর সেই ভরাট গলায় বাপ্পাদিত্যের ছত্রে ছত্রে চরিত্র বিশ্লেষণ করে চলেছেন আর গোটা ক্লাস মন্ত্র মুগ্ধের মত শুনছে।🙏🙏
Dear Dr Abhijit — I am a casual reader of ‘Doctor’s Dialog’ blogging portal — originally initiated by Dr.Jayanta Bhattacharya..It is certainly different from many others — those more common and popular amongst browsers.Pen picture of your formative school days.– the types of teachers –accosted in your times — speaks volume of a class of basic educationalists — who are a disappearing brand now..Me too had been a teacher in Medicine all through — truly ” non practicing” in character — unlike the milieu in my own place of origin.Realy got impressed — knowing about their involvement with their wards in the school.My sincere appreciation to your style of presentation — which speaks volumes about the integrity and involvements of the past mentors.— nirmalya da ; Pondicherry..