গত মাস দুয়েকের মধ্যে অনেকেই মত প্রকাশ করেছেন যে আর জি কর কাণ্ডের প্রেক্ষিতে হওয়া আন্দোলনে শুধুমাত্র ওই ঘটনার বিচারের দাবিতেই স্লোগান তোলা উচিত। অন্যান্য দাবি যুক্ত করা উচিত নয়। যাঁরা অন্য দাবি যোগ করাকে সমর্থন করেন, তাঁদেরও একটা অংশ মনে করেন যে সমস্যা শুধুমাত্র একটি সরকারকে নিয়ে এবং সেই সরকারের মাথাকে সরিয়ে অন্য কাউকে (হয়ত বর্তমান দলেরই কোনো সুদর্শন যুবককে) সিংহাসনে বসাতে পারলেই সমস্যার সমাধান হবে।
অভয়া হত্যাকাণ্ডের পিছনে বৃহত্তর ষড়যন্ত্র রয়েছে এবং তা সরাসরি কয়েক বছর ধরে চলতে থাকা প্রশাসনিক দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত, এ’কথা আমতা অনেকেই মনে করি। কিন্তু তার ফলে যাঁরা ভাবছেন শুধুমাত্র আর্থিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করলেই ভবিষ্যতের অভয়াদের রক্ষা করা যাবে এবং তার জন্য পৃথক, ডেডিকেটেড লিঙ্গ-রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রয়োজন নেই, তাঁদের সঙ্গে একমত নই।
অভয়ার মৃত্যুর পরেও প্রায় প্রতিদিন ঘটে চলেছে ভয়াবহ যৌন নির্যা তনের ঘটনা। গত সপ্তাহেই মুর্শদাবাদের বড়ঞায় যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে এক পাঁচ বছরের শিশু, যে কোনো রাজনীতি বা প্রতিবাদে যুক্ত ছিল না। অভিযুক্তকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে স্থানীয় মানুষ তাকে ধরে গণধোলাই দেবার পর, তার আগে নয়।
একই সপ্তাহে সন্দেশখালির ন্যাজাটে পুকুরে ভেসে উঠেছে নাবালিকার মৃতদেহ। তার হাত-পা ছিল বাঁধা। সেখানে পুলি শের ভূমিকা অবিকল কুলতলির মতো। মেয়েটি হারিয়ে যাবার পর তার পায়ের চটি পড়ে থাকতে দেখে বাবা-মা নিশ্চিত ছিলেন যে কেউ তাকে ধরে নিয়ে গেছে। তা সত্ত্বেও পু লিশ বাড়ি থেকে পালিয়ে যাবার মামলা রুজু করে। ফলে কদিন পরে তার অত্যাচারিত দেহ পাওয়া যায় বাড়ির পাশের পুকুরে। হাত-পা বাঁধা অবস্থায় সে পালিয়ে যাচ্ছিল? বাবা-মার আর্জি সত্ত্বেও দেহটি সংরক্ষণ করা হয়নি (দাহ করে ফেলা হয়েছে) এবং ক্রাইম সিনকে ভালোভাবে ঘিরে রাখা হয়নি বলে শোনা যাচ্ছে, যা আর জি করের কথা মনে করায়৷ এই ঘটনায় কোনো স্থানীয় ক্ষমতাধর দাদা যুক্ত থাকলে আশ্চর্য হব না। পাচারচক্রও জড়িত থাকতে পারে।
নারীপাচার চক্র জড়িত থাকলে তো পুলিশকে চুপ থাকতেই হবে। কে না জানে এইসব চক্রের ক্ষতি হলে কোটি কোটি টাকার লোকসান। সমাজের কসাইখানায় আজও সবচেয়ে বেশি দামে বিকোয় নারীমাংস।
সুতরাং সক্রিয় এবং ক্রমাগত লিঙ্গ-রাজনৈতিক আন্দোলন প্রয়োজন। হার না মানা আন্দোলন প্রয়োজন।
আপনি যদি নারী-ট্রান্স-কুয়ার হন, অথবা যদি পুরুষ হন এবং আপনার পরিচিতদের মধ্যে যদি একজনও মেয়ে থাকেন, আপনি যদি আরজিকর, কুলতলি, পটাশপুর, কৃষ্ণনগর, বড়ঞা, সন্দেশখালি পরপর দেখতে দেখতে ভয় পান বা ক্রোধ অনুভব করেন, তাহলে ১৪-ই ডিসেম্বর দুপুর দুটো থেকে আকাদেমির সামনে রাণুছায়া মঞ্চে আপনার সঙ্গে দেখা হবে।