আলোচনাটা কিঞ্চিৎ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি মেনে হোক এই আশায় কিছু তথ্য হাজির করা যাক। একেবারে খালি হাতে প্রশিক্ষিত কোনো চিকিৎসক যদি ক্লিনিক্যাল মেথড অনুসরণ করে একটি পেটে বেয়াথার কেস গলব্লাডারে পাথরের জন্য কিনা বুঝতে চান তাহলে তাকে মারফি সাইন দেখতে হবে পেট টিপে। এই টেস্ট এর sensitivity হল মাত্র ০.৬৩ অর্থাৎ বাকি ৩৭% ক্ষেত্রে ওই ডাক্তার ধরতেই পারবেন না পেটে কেন ব্যথা হল। এর বদলে তিনি যদি আল্ট্রাসাউন্ড এর সাহায্য নেন তাহলে ওই sensitivity বেড়ে দাঁড়ায় .০.৯৭ এক্সরে বা ওরাল কোলেসিসটোগ্রাম এর sensitivity এর চেয়ে কম। আর রেডিও নিউক্লিয়টেইড স্ক্যান এর ক্ষেত্রে ওটা বেড়ে যায়। সব দিক বিচার করে আল্ট্রাসাউন্ড হল investigation of choice এই গলব্লাডারে পাথরের অসুখ এর জন্য। এইবার এই তথ্য সামনে রেখে কোনো চিকিৎসক যদি পেটের ওপরের দিকে ডানদিকে যন্ত্রণা নিয়ে আসা কোনো রুগীকে আল্ট্রাসোনো করার পরামর্শ দেন তিনি বৈজ্ঞানিক দিক থেকে ১০০% সঠিক কাজ করবেন। কিন্তু জগৎ সংসার তো আর শুধু বিজ্ঞান দিয়ে হবে না। সমাজের একটা বড় অংশ ওই চিকিৎসককে লোভী, অর্থপিশাচ, এমন কি ডাক্তারি টা ভালো শেখেনি এইসব বদনাম দেবে। এই বদনাম দেওয়ার একাধিক কারণ। প্রধান কারণ সরকারি ব্যবস্থায় ওই আল্ট্রাসনো বিনামূল্যে হলেও সহজলভ্য নয়, লম্বা লাইন হয়রানি ইত্যাদি আর তার পাশাপাশি বেসরকারি জায়গায় করালে ভালো অর্থ ব্যয়। এর সাথে যুক্ত করুন ত্রিশ চল্লিশ, পঞ্চাশ দশকের কিছু প্রবাদপ্রতিম চিকিৎসকের হাত যশ নিয়ে প্রচলিত গল্পকথা, মিথ ইত্যাদি। এদের মাথায় এই তথ্যটা থাকে না যে অল্ট্রাসোনো নামের হাতিয়ার টি পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে ইউরোপ আমেরিকায় জনপ্রিয় হয় তার আগে নয়। আর আমাদের উপমহাদেশে এসেছে তারও পরে। তাই চল্লিশ দশকের বাঙালি চিকিৎসকের হাতে ওই হাতিয়ারটি ছিল ই না। আর ছিল না বলেই ওই ৩৭% ক্ষেত্রে তিনি ভুল রোগ নির্ণয় করেছিলেন বা আদৌ করতে পারেন নি। বিজ্ঞান প্রযুক্তির অগ্রগতির সুফল প্রত্যেক মানুষ কেন এখনো পান না সেই প্রশ্নের উত্তর এই লেখায় পাবেন না। কারণ সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ। বিজ্ঞান প্রযুক্তি যদি মানুষের হাতে মানুষকে বাঁচানোর অব্যর্থ হাতিয়ার তুলে দেয় তাহলে মারফি সাহেবের সাইন নিয়ে কান্নাকাটি করাটা অর্থহীন।
আর শিশুমৃত্যুর (পড়ুন নবজাতক) হার কমানো নিয়েও দু একটা কথা বলা দরকার। এই বিষয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃত দুই চিকিৎসকের দুই উপায়ের কথা। ডাঃ অভয় বাং এর মহারাষ্ট্রের গরচিরোলির গ্রামে বসে নিওনেটাল সেপসিস ঠেকানোর জন্য গ্রামীন স্বাস্থ্যকর্মীদের দিয়ে জেনটামাইসিন ইনজেকশন এর যে মডেল এবং ডাঃ অরুণ সিংহ এর পুরুলিয়া জেলা হাসপাতালের নিওনেটাল কেয়ার ইউনিটের মডেল। প্রথম মডেলটা কিঞ্চিৎ কম পয়সার আর দ্বিতীয়ত টা কিছুটা ব্যয় বহুল।।ওয়াকিবহাল লোকজন মাত্রেই জানেন যে এই দুটি মডেলের যে কোনো একটি দিয়ে শিশু মৃত্যু এর হার কমানো যাবে না। দুটোই লাগবে এবং লাগছে। তাই প্রায় বিনে পয়সায় কোনো উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার ছাড়াই শিশুমৃত্যুর হার কমানো সম্ভব বলে যিনি বা যারা দাবি করছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রাখতে পারলাম না বলে দুঃখিত।
সহমত। 👍😔
শিশু মৃত্যুর পরিসংখ্যান বড়ো স্পর্শ কাতর।
কোনোকিছু দিয়েই তার জাজমেন্ট সুরক্ষিত নয়।
শিশু বড়ো নাজুক।তার সঙ্গে উন্নত প্রযুক্তির ধার তো লাগবেই।শিশু চিকিৎসা প্রায় অন্ধকারে হাতড়ে চিকিৎসা করার মতোই।খুব ক্রিটিকাল খুব কঠিন ও জটিল। তেমনি বড়ো হৃদয়বিদারক।