ফেসবুকে মাঝে মধ্যে ভিডিও আসে। আমি এসবে বিশেষ মনোনিবেশ কোনও দিন করিনা। তবে পশুদের ভিডিও এলে দেখি। সেদিন সারাদিন নানা কাজের শেষে বাড়ী ফেরার সময়, মেট্রোতে বসে এমনিই ফেসবুক স্ক্রল করছিলাম। চোখ আটকে গেল, একটা ভিডিওতে, সেখানে একটা ছোট্ট পাহাড়ী ছেলে সামনের ছোট একটা আগুনের উনুন থেকে নিজের হাতটাকে গরম করে, ওর কোলের ভেড়াশাবকের গায়ে গরম তাপ ছড়িয়ে দিচ্ছে। দেখে চোখ জুড়িয়ে গেল।
একটা কথাই বার বার মনে হল, একেই কী আমরা মায়ের বা পরিবারের শিক্ষা বলতে পারি?? না কী, আমরা যে বলি শিশু যখন জন্মগ্ৰহণ করে, সে পশু থাকে, তাকে মানুষ করে তুলতে হয়, এই কথাটাই আপাদমস্তক ভুল।
কেন আজ এই প্রসঙ্গ নিয়ে বসলাম, তার পেছনে দুটো কারণ আছে। দেখুন, চারিদিকে যেভাবে হিংস্র মনোভাবাপন্ন ব্যক্তির সংখ্যা বাড়ছে, তাতে মনে হওয়া খুব স্বাভাবিক যে, এটাই কী বাড়ীর শিক্ষা?? কখনও সম্ভব!! বাড়ীর লোক মানেই তো সমাজের যেটা ভাল চোখে দেখা হয়, সেই শিক্ষা দেবে।
আসলে সমস্যাটা কী জানেন??? আমরা শিশুদের যা বলি, বা যা জ্ঞান, সজ্ঞানে পরিবেশন করি। তার থেকে বেশী পরিমাণ শিক্ষা বা ডু এন্ড ডোন্টস, শিশুরা আমাদের প্রাত্যহিক কথাবার্তা আচার আচরণ থেকে কুড়িয়ে নেয়।
এখানে দুটো উদাহরণ দিয়ে বিষয়টাকে বলা যাক। যেমন ধরুন আমাদের সমাজে একটা পুরুষ শিশুকে যখন আমরা দেখি, সে তার দয়া, মায়া ইত্যাদি প্রকাশ করছে, তখন বেশিরভাগ বাড়ীর লোকজন ধমক দিয়ে বলি, তুই মেয়ে নাকি?? মেয়েদের মত করছিস?? ওই পুরুষ শিশুটার কাছে বার্তা গেল, পুরুষ হিংস্র হতে হয়। তাদের নরম মন বলে কিছু থাকতে নেই। তারা দুঃখ পেতে পারে না। অমানবিক হওয়াটাই তার একমাত্র ধর্ম।
আবার দেখা যায়, কোনও শিশু তার সহপাঠীকে সাহায্য করতে চাইলে, মা শিখিয়ে দেন,” একদম দাতা কর্ণ হবি না। আমরা টাকা দিয়ে ব ই কিনে দেব। মাস্টারমশাই রাখব। আর উনি তা বিলি করবেন। “ শিশুটি স্বার্থপর, আর আত্মকেন্দ্রিক হওয়ার পাঠ পেল, মায়ের অজান্তে। আবার সেই শিশুটি বড় হয়ে যখন এইসব শিক্ষা কাজে প্রতিফলিত করবে। তখন বাড়ীর লোকজন বলবেন, এরকম শিক্ষা কোনওদিন দেইনি। কোথা থেকে এসব শিখেছে, ভগবান জানেন। “
এটাই একটা বড় সমস্যা। আমরা ভুলে যাই, যেমন ধান বুইবে, তেমনি রুইবে। তাই আমরা শুধু আশা করতে পারি একদিন ভাল মা ও বাবারা এগিয়ে আসবেন। সমাজকে সুন্দর করে তোলার লক্ষ্যে।
লেখাটা পড়লাম, সত্যিই খুব ভালো বলেছেন!
ধন্যবাদ 😊 প্রাণিত হলাম।