“পতাকার কত দাম?” আমি জিজ্ঞেস করলাম। স্বাধীনতা দিবসে স্কুল পরিসর পতাকা দিয়ে সাজানো হবে। তাই পতাকার দাম জানা থাকলে দোকান থেকে কিনতে সুবিধে হবে।
আলোচনা চলাকালীন পাশ দিয়ে হেড মিস্ট্রেস যাচ্ছিলেন। “পতাকার দাম সেই দেশের স্বাধীনতা। আমাদের গর্ব, আমাদের চেতনা আর আমাদের সংকল্পের প্রতীক হচ্ছে আমাদের রাষ্ট্রীয় ধ্বজা। লক্ষ লক্ষ বীর আর বীরাঙ্গনার আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছিলাম। টাকা দিয়ে কি কোনো দেশের পতাকার মূল্য নির্ধারণ করা যায়?” উত্তরের অপেক্ষা উনি করেননি। উত্তর ছিলো না আমাদের কাছে।
হে স্বাধীন দেশের প্রতিনিধি! কখনো কি ভেবেছো যাদের আত্মত্যাগ আমাদের স্বাধীনতা এনে দিলো তাদের কল্পনার ভারত কেমন ছিল? ওনাদের স্বপ্নের ভারত আর আজকের ২০২০-র ভারত কি একই?
আত্মত্যাগ তো অলীক স্বপ্ন, আমরা তো মূল্যবোধটাই হারিয়ে ফেলেছি। মূল্যবোধ ঠিক থাকলে কি আমরা প্রতিবাদের নামে ট্রেন বাস জ্বালিয়ে দিতে পারি? মূল্যবোধ কতটা তলানিতে ঠেকলে চিকিৎসক আর শিক্ষককে প্রহার করা যায়? পরিষেবার মান কতটা পরে গেলে খবরের শিরোনামে দেখা যায় সাধারণ নাগরিক ১০টা হাসপাতাল ঘুরেও বেড পায় না, অ্যাম্বুলেন্স পায় না,…রাস্তায় পড়ে ছটপট করে নিথর হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু কোনো সেলেব্রিটির জন্য হসপিটালে বেডের অভাব কেন হয় না?
আমরা কি করবো? রাতারাতি তো আমরা কেউ সেলিব্রিটি হতে পারবো না। কিন্তু রাস্তায় পড়ে মৃত্যু তো আমাদের ভবিতব্য হতে পারে না। চরম সংকটের মধ্যে আমাদের দৈনন্দিন জীবন থমকে গেছে কিন্তু রোগ ব্যাধি তো থেমে যায়নি। করোনা ছাড়াও লোকে অন্য রোগের চিকিৎসা পাচ্ছেন না। দুরারোগ্য ব্যাধি আগেও ছিল এখনো আছে কিন্তু পরিষেবা কম হয়ে গেছে।
এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েও অনেকে আগামী দিনের উৎসব পালনের পরিকল্পনা করছেন। উৎসব নিঃসন্দেহে আনন্দের প্রতীক কিন্তু হাজার হাজার মৃতদেহের মাঝে দাঁড়িয়ে কি উৎসব পালনের আনন্দ উপভোগ করা যাবে? পরিজন ছাড়া কি বর্ষবরণ আনন্দ দেবে? একটাই উৎসব এখন সমস্ত দেশবাসী পালন করতে পারবে– সব ধর্মাবলম্বীদের ‘মানবিকতা উৎসব’ পালন করতে হবে।
প্রতিটা পাড়ায় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পুজো পার্বণ, স্পোর্টস, ইত্যাদি পরিচালনা করার জন্য পাড়ার সদস্যদের নিয়ে ক্লাব সংগঠন থাকে। চাঁদা তুলে এবার অন্য উৎসব পালন না করে আসুন না আমরা কিছু জরুরি উপকরণ কিনে রাখি। পালস অক্সিমিটার, অক্সিজেন সিলিন্ডার, অ্যাম্বুলেন্স ছাড়াও চিকিৎসদের পরামর্শ নিয়ে দরকারি কিছু সরঞ্জাম মজুত করে রাখি। প্রয়োজনে একাধিক ক্লাব নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে এই জরুরি সরঞ্জামের ব্যবস্থা করে রাখতে পারেন। নিজেদের দ্বন্দ্ব, পারস্পরিক প্রতিযোগিতা সাইড লাইনের বাইরে রেখে একযোগে আপৎকালীন ব্যবস্থা করে রাখতে হবে। ক্লাব ঘর কোনোদিন হাসপাতাল হতে পারবে না আর রাতারাতি কেউ ডাক্তার হতে পারবে না, কিন্তু আমরা চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী নিজেদের পাড়াতে জরুরি সরঞ্জাম রেখে এই আপৎকালীন পরিস্থিতির মুকাবিলা করতে পারি তাহলে অন্তত বেঘোরে প্রাণগুলো রাস্তায় পড়ে ছটপট করে শেষ হবে না।
বেঁচে থাকলে আমরা আগামী বছর আবার উৎসব পালন করবো। সবাইকে নিয়ে আনন্দ করতে পারবো। আসুন সবাই এগিয়ে আসি। United we stand, divided we fall.