প্রতিবার নির্বাচন আসলেই কেমন যেন অকাল বসন্ত নেমে আসে। চারদিকে একটা ফিল গুড ফ্যাক্টর। শাসক দলগুলি ক্রমাগত দাবি করতে থাকে যে তারা আমাদের জন্য কত কি করেছে। আমরা কত সুখে আছি। আর এই সুখ দেয়ার পরিবর্তে তাদের চাহিদা কেবল একটি ভোট। সত্যি আমরা কতটা সুখে আছি সেটা বোঝার জন্য স্রেফ চার লাইনের একটা গল্প শোনাবো।
রামপুকার পন্ডিত বিহারের এক পরিযায়ী নির্মাণ শ্রমিক লকডাউনের সময় দিল্লিতে আটকে পরে। বাড়ি থেকে বউ খবর দেয় তার এগারো মাসের বাচ্ছা খুব অসুস্থ। এই শুনে রামপুকার মরিয়া হয়ে হাঁটা শুরু করে ১২০০ কিমি দূরে নিজের বাড়িতে পৌঁছানোর জন্য। নিজামুদ্দিন ব্রিজ অবধি গিয়ে ক্লান্ত ক্ষুধার্ত পন্ডিত আর যেতে পারছিল না। সেই সময়ে অতুল যাদব, প্রেস ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়ার ফটোগ্রাফার তাকে দেখতে পান ওই অবস্থায় ফোনে কেঁদে ভাসিয়ে দিচ্ছে। অতুল সামান্য সাহায্য করেন। জল-বিস্কুট এগিয়ে দেন। জলটা খেলেও রামপুকারের গলা দিয়ে বিস্কুট নামে নি। সে জানায়, আমি খালি আমার রোগে ভোগা বাছাটাকে একবার দেখার জন্য বাড়ি যেতে চাই”। আমাদের এই “ভিকাশ” আর “উন্নয়ন” ভরা দেশে তাহলে সুখ এলো কাদের জন্য ?
“সুখে আছে যারা সুখে থাক্ তারা, সুখের বসন্ত সুখে হোক সারা -”
যে গল্পটা শুরু করেছিলাম সেটা এবার শেষ করা যাক। রামপুকার সেই রাতেই জানতে পারে তার বাচ্ছাটি মারা গেছে। তার স্ত্রী বিমল দেবীর কোনো ছবি সেই সুদূর বেগুসরাইতে কেউ তোলে নি। তাই তার চোখের জল আমরা দেখতে পেলাম না।
“দুখিনী নারীর নয়নের নীর সুখীজনে যেন দেখিতে না পায়।”
শাসক দল ভালো ফল করার জন্য যে সব অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করে তার একটা হল আমাদের দুর্বল স্মৃতিশক্তি। আমরা চট করে সব ভুলে যাই। যেমন আমরা ভুলে গেছি রামপুকারকে, যাকে তার বাবা মা ভালোবেসে ওই নাম রেখেছিল যাতে নিজের শিশুকে ডাকার সঙ্গে প্রতিবার কিছু পূণ্য লাভ হয়। সেই রামপূকারকে যাতে ভুলে যেতে পারি তার জন্যই এত আয়োজন, এত প্রচার, এত খেলোয়াড়, এত চিত্র তারকা। কারণ সুধীজন যাতে ফিরে না তাকায়।
“তারা দেখেও দেখে না, তারা বুঝেও বুঝে না, তারা ফিরেও না চায়।।”
ও হ্যাঁ, বলতে ভুলে গেছিলাম, স্মৃতিশক্তি দুর্বল তো। রাম পুকার আদর করে তার সেই বাচ্চাটির নাম রেখেছিল রামপর্বেশ। সবই রামের নামে।
প্রশ্ন এখন একটাই, চটে ঘেরা ব্যালট ইউনিট এর বোতাম টেপার সেই মাহেন্দ্রক্ষণে আমরা রামপুকারকে ভুলে যাবো কিনা। ভুলে যাওয়াটা বোধহয় অপরাধ হয়ে যাবে। অকাল বসন্তে ফুল ফুটবে কি ফুটবে না সেটা এখন আমাদের হাতে।
সহি।কিন্ত গণতন্ত্রের উৎসব তো।
মেনে নিতেই হয়।
😊🫠এইবার বুঝলাম।
কিভাবে কমেন্ট প্লেস করতে হবে এখানে।
তবে যাই হোক যাইই বলো।স্বাধীন মতো লেখা যায় না চুটিয়ে।
😊🫠