সেক্স ওয়ার্কারদের ভালোমন্দ নিয়ে দুটি দৃষ্টিভঙ্গি আছে। একটি হল অবলুপ্তবাদী চিন্তাভাবনা আর আরেকটি হল ক্ষমতায়নের চিন্তাভাবনা। প্রথম ধারার মানুষজন এই পেশাটিকে খুবই ঘৃণিত শোষণযুক্ত একটি পেশা মনে করেন এবং তার অবলুপ্তি চান, অন্য পেশায় এদের পুনর্বাসন চান। সত্যিই বলতে কি “যৌনকর্মী” শব্দটার ব্যবহার নিয়েই এঁদের আপত্তি আছে। এঁরা মনে করেন এদের “প্রস্টিটিউট” বলাই ভালো। এঁরা আরো মনে করেন যে অধিকাংশ মেয়েই এই পেশায় আসেন জোর জবরদস্তির শিকার হয়ে। উল্টো দিকে ক্ষমতায়নের ধারার প্রবক্তারা মনে করেন যে অধিকাংশ স্বেচ্ছায় এই পেশায় এসেছেন, এটি মোটেই ঘৃণিত কোনো পেশা নয়, এঁরা সমাজের একটি অংশকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা দেন তাই আর পাঁচটি পেশার কর্মীর মতই এরা সমাজ ও রাষ্ট্রের সব রকম জনকল্যাণ মূলক পরিষেবা পাওয়ার অধিকারী, এদের অপরাধী বলে দাগিয়ে দিয়ে হেনস্থা করা বা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত করা চলবে না। এটা মনে রাখতে হবে যে বৈজ্ঞানিক সমীক্ষায় প্রাপ্ত তথ্য এটাই বলছে যে অধিকাংশই স্বেচ্ছায় এই পেশায় এসেছে।
পেশাটাকে ঘৃণিত ও ক্রিমিনাল কাজ হিসেবে দাগিয়ে দেওয়ার সব চেয়ে বড় বিপদ হল যে এই কর্মীরা সমাজে থেকেও খাতায় কলমে এঁরা অস্তিত্ববিহীন হয়ে পরেন। তথ্য পরিসংখ্যানে এঁদের উল্লেখ না থাকলে রাষ্ট্র এঁদের জন্য যতই কল্যাণমূলক প্রকল্প নিক না কেন, সেই সুবিধে এদের কাছে পৌঁছবে না। যাঁরা অবলুপ্তবাদী তাঁরাও যখন মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এদের পুনর্বাসন ইত্যাদির কথা বলেন তখন তাঁরা ভুলে যান যে সেটার জন্যও তথ্য পরিসংখ্যান নথিভুক্ত করা দরকার।
বামপন্থীদের একাংশ এই পেশা নিয়ে আলোচনায় প্রখ্যাত নেত্রী ও জন কমিসার কোলনতাই এর প্রসঙ্গ নিয়ে আসেন। এটি বহু পঠিত ও চর্চিত বিষয়। কোলনতাই এর যুক্তি তর্কে জোরটা মরালিটি ও এথিক্স এর ওপরে যেটা প্রায় ভিক্টোরিয়ান যুগের। সমাজতান্ত্রিক সমাজে (কোলনতাই এর ভাষায় ওয়ার্কার্স সোসাইটি) যৌনকর্মীদের অস্তিত্ব থাকবে না কারণ তাদের শ্রম অনুৎপদক বলে উনি যে যুক্তি দিয়েছেন সেটা সার্ভিস সেক্টরের ধারণার সাথে খাপ খায় না, সেই অর্থে ধরলে তো সব সার্ভিস সেক্টরই অনুৎপাদক।
যৌনচাহিদা থাকবে। সেই চাহিদা মেটানোর জন্য উপযুক্ত যৌনসঙ্গী জোগাড় করে ওঠা সবার পক্ষে সম্ভব নয়। তাঁরা অর্থের বিনিময়ে ওই সঙ্গী খুঁজে বের করার চেষ্টা করবেন। সমাজতান্ত্রিক সমাজ হলে এই চেষ্টা কমে যাবে কি না কেউ জানেন না। ওই সমাজ তৈরি হওয়ার আগে বর্তমান সমাজে কি ভাবে যৌনকর্মীদের জীবনটা আরেকটু ভালো করা যায় সে দিকে তাকিয়ে আদালতের এই রায় খুবই ইতিবাচক, গ্রহণযোগ্য ও অভিনন্দনযোগ্য। যৌনকর্মীদের হয়রানি হেনস্থা অনেকটা কমবে বলে ধারণা।
স্বেচ্ছায় এই পেশা বেছে নিয়েছেন তথ্যসূত্র দিলে ভাল হতো। আমার জ্ঞানত: বেশীর ভাগই এই পেশা তে আসতে বাধ্য হয়েছেন, হয় দারিদ্র্যের কারণে নয়ত: স্রেফ প্রেমিক বা স্বামীর অত্যাচার সহ্য করতে না পারায় বা আরকাঠি দ্বারা বিক্রি হয়ে গিয়ে। এটা ইউরোপ বা আমেরিকা নয় এমন কি দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশও নয়!!