Wherever art of medicine is loved, there is also a love of humanity – Hippocrates
প্রাচীন এথেন্স নগরীর এক রাজপথ দিয়ে হেঁটে চলেছেন এগনোডাইস। সহসাই এক মহিলা কন্ঠের চিৎকার কানে এলো তাঁর। চিৎকার শুনেই থমকে দাঁড়ালেন এগনোডাইস। আবারও চিৎকার এলো তাঁর কানে। যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন কোনো যুবতী মনে হয়। চিৎকারের উৎস লক্ষ্য করে এবার দ্রুত পায়ে এগিয়ে চললেন তিনি। কোনো গর্ভবতী মহিলা প্রসব যন্ত্রণায় যেভাবে চিৎকার করেন ঠিক সেই ভাবেই যেন চিৎকার করছেন ওই মহিলা। সামনের বাড়িটা থেকে তখনও ভেসে আসছে গোঙানোর আওয়াজ। সেই বাড়িতে প্রবেশ করলেন এগনোডাইস। ঘরের দরজা খুলে ঢুকে দেখেন, হুমমম, যা ভেবেছিলেন ঠিক তাই। প্রসব যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন এক যুবতী। ঘরে ঢুকেই যুবতীকে প্রসব করাতে দ্রুত এগিয়ে গেলেন এগনোডাইস। অপরিচিত এক পুরুষকে এভাবে হুট করে ঘরে ঢুকে পড়তে দেখে হন্তদন্ত হয়ে বাধা দিতে আসেন উপস্থিত মহিলারা। এগনোডাইস জানান তিনি একজন চিকিৎসক। প্রসূতিতে সাহায্য করতেই এগিয়ে এসেছেন তিনি। চিকিৎসক?! আচ্ছা, সে নয় ঠিক আছে, কিন্তু আসন্ন প্রসবা এক মহিলার ঘরে এভাবে ঢুকে পড়ার সাহস হয় কি করে একজন পুরুষের? হলেই বা চিকিৎসক, প্রসবের সময় পরপুরুষ তো পরের কথা, নিজের স্বামীকেই থাকতে দেওয়া হয় না প্রসূতির সামনে। আর ইনি কোথাকার চিকিৎসক এলেন রে! তীব্র বিরোধের মুখে পড়েন এগনোডাইস। ঘর থেকে তাঁকে বের করে দেওয়ার উপক্রম। এদিকে এগনোডাইসের নজর তখন আসন্ন প্রসবা যুবতীর দিকে। প্রসবের সময় আগত প্রায়। যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন প্রসূতি। এখন অন্য কিছু ভাবার সময় নেই তাঁর। এখনই উপযুক্ত পরিচর্চা না করলে মা বা সন্তানের যে কোনো রকমের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। মুহূর্ত দেরি না করে, নিজের দেহের ঊর্ধ্বাঙ্গ থেকে সরিয়ে নিলেন বহিরাবরণ। ঘরে উপস্থিত মহিলার হতচকিত হয়ে দেখেন তাঁদের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন অপরূপা এক নারী। দ্রুত প্রসূতির দিকে এগিয়ে গেলেন এগনোডাইস। তাঁর অভিজ্ঞ হাত দিয়ে প্রসবে সাহায্য করলেন যুবতীকে। নিরাপদেই ভূমিষ্ঠ হলো সেই শিশু। মা ও তাঁর সদ্যজাত শিশু তখন নিরাপদ। নিজের কাজ সেরে উঠে দাঁড়ালেন এগনোডাইস। ঘরে উপস্থিত মহিলাদের ঘোর কাটে নি তখনও। পুরুষের বেশধারী মহিলা চিকিৎসকের কথা বাপের জন্মেও কখনও শোনেনি তাঁরা। নিজের বহিরাবরণ আবার গায়ে চাপিয়ে ঘর থেকে নীরবে বেড়িয়ে গেলেন এগনোডাইস। ঘরে নেমে আসা অপার বিস্ময়ের নীরবতা চিরে তখন ভেসে আসছে কেবল সদ্যজাতের কান্না।
এথেন্সের প্রায় সব মহিলাদের মুখে তখন এগনোডাইসের কথা। ফিসফাস, গুনগুন করে এই বিস্ময়কর চিকিৎসকের কথা আলোচনা হয়েই চলেছে। তবে সবথেকে বিস্ময়ের কথা হলো এই, সমস্ত মহিলারা কেবলমাত্র মহিলাদেরই এগনোডাইসের কথা বলছেন। পুরুষ তো দূরের কথা, নিজেদের স্বামীর কাছে পর্যন্ত ফাঁস করছেন না এগনোডাইসের কথা। এথেন্সের প্রায় সমস্ত মহিলাদের ভরসার পাত্র, থুরি, পাত্রী তখন এগনোডাইস। মহিলাদের যে কোনো ছোটোখাট শারীরিক সমস্যা হলেই ডাক পড়তো এগনোডাইসের। আর গর্ভবতী মহিলারা তো এগনোডাইস ছাড়া অন্য কারও কাছেই যান না। ফলে এগনোডাইসের পসার তখন ঊর্ধ্বমুখী। বিষয়টা সহজেই নজরে পড়ল অন্যান্য চিকিৎসকদের। তাঁরা লক্ষ্য করছেন কোনো অবস্থাতেই কোনো রোগীনি আর তাঁদের কাছে আসছেন না। আর যত রোগীনির ভিড় ওই এগনোডাইসের চেম্বারে। কেন? সব রোগীনি ওই লোকটার কাছে যাবে কেন? সবচেয়ে বড় কথা প্রসবের ব্যাথা উঠলেই ডাক পড়ে এগনোডাইসের। কেন? একজন পুরুষ কেন যাবেন মহিলার প্রসব করাতে? দেশে কি দাই-মার অভাব পড়েছে? নিশ্চয় কিছু গড়বড় আছে ব্যাপারটার মধ্যে। রোগীনিদের সাথে নিশ্চয় কিছু লটঘট চলছে ওই ডাক্তারটার। আর রোগীনিদেরও বলি হারি! কিছু একটা অসুখ হলেই অমনই এগনোডাইসের কাছে ছুটে যাওয়ার কি আছে? ‘অসুখ না ছাই’, মনে মনে ফুঁসে উঠছেন কিছু ডাক্তার, ‘অসুখের ভান করে এগনোডাইসের সাথে দেখা করতে যাওয়ার বাহানা’।
এদিকে যত দিন যায় এগনোডাইসের পসার তত বাড়তে থাকে। পুরুষ নারী নির্বিশেষই চিকিৎসা করাতে আসেন তাঁর কাছে। তবে পুরুষদের থেকে মহিলা রোগীর সংখ্যাটাই বেশি। ব্যাপারটা ক্রমেই সহ্য সীমার বাইরে চলে গেল এলাকার অন্যান্য চিকিৎসকদের। একটা কিছু হেস্তনেস্ত করেই ছাড়বেন তাঁরা এবার। চিকিৎসার নাম করে মেয়ে বউদের সাথে ফষ্টিনষ্টি করার মজা দেখ এবার। এগনোডাইসের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ আনলেন তাঁরা। দিলেন মামলা ঠুকে কাউন্সিল অব এরিয়োফেগাসে। কাউন্সিল অব এরিয়োফেগাস ছিল তৎকালীন এথেন্স নগরের সর্বোচ্চ ন্যায়ালয়। সেই কাউন্সিলে গিয়ে আবেদন করে বসলেন চিকিৎসকরা। এই দুশ্চরিত্র ডাক্তারের জন্য তাঁদের পেশার সম্মান আজ ভূলুণ্ঠিত। কলঙ্কিত এই ডাক্তারের বিরুদ্ধে কিছু একটা ব্যবস্থা নিক কাউন্সিল। চিকিৎসকদের আর্জি শুনে তলব করা হলো এগনোডাইসকে। নির্ধারিত দিনে কাউন্সিলের সামনে হাজির হলেন এগনোডাইস। মহিলাদের প্রসব করানো ও অন্যান্য রোগের চিকিৎসার ঘটনা সত্য বলে স্বীকার করেন এগনোডাইস। এগনোডাইসের স্বীকারোক্তিতে বিচার কক্ষ গুঞ্জনে সরগম হয়ে উঠল। বলে কি লোকটা! মহিলাদের প্রসব করাতে যায়? প্রকাশ্যেই নিজের দোষ স্বীকার করায়, তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা হলো। নিশ্চিত সাজার মুখে দাঁড়িয়ে তখন এগনোডাইস। অগত্যাই নিজের স্বরূপ উন্মোচনে বাধ্য হলেন তিনি। ভরা বিচার কক্ষের মাঝে নিজের দেহের ঊর্ধ্বাবরণ সরিয়ে নিলেন তিনি। অবাক বিস্ময়ে সবাই দেখলেন এজলাসে দাঁড়িয়ে এক রূপবতী রমণী। সে কি! পুরুষের বেশ ধরে ঘুরছেন এক মহিলা? এতোদিন তাঁরা যাকে চিনতেন, সেই এগনোডাইস কোনো পুরুষ নন! এগনোডাইস একজন মহিলা! তাজ্জব ব্যাপার।
কিন্তু তাতেও দমার পাত্র নন এথেন্সের চিকিৎসকরা। মহিলা চিকিৎসক! তা কি করে সম্ভব? ক্রীতদাস আর মহিলাদের চিকিৎসা বিজ্ঞান অধ্যয়ন করার কোনো অধিকারই তো নেই। কোনো অধিকারে রোগীর চিকিৎসা করেন এগনোডাইস? এটা ধাপ্পাবাজি। আইনের চোখে এটা অপরাধ। রোগীনির শ্লীলতাহানির অভিযোগের বদলে তখন নতুন অভিযোগ আনা হয় এগনোডাইসের বিরুদ্ধে। একজন নারী হয়ে চিকিৎসাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে আইন ভঙ্গ করেছেন এগনোডাইস। এই অপরাধে সাজা হোক তাঁর। নিষিদ্ধ করা হোক তাঁর চিকিৎসা করার অধিকার।
একথা সত্যি, ক্রীতদাস আর মহিলাদের চিকিৎসা বিজ্ঞান অধ্যয়ন করার কোনো অধিকার ছিল না সেই সময়ের এথেন্সে। ফলে চিকিৎসাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করার কোনো সুযোগই ছিল না সেই সময়ের মহিলাদের। সেই পেশা আইন স্বীকৃতও ছিল না। ফলে রোগীদের চিকিৎসা করে এক প্রকার আইন ভঙ্গই করেছেন এগনোডাইস। এথেন্সের চিকিৎসদের আনা নতুন এই অভিযোগের ভিত্তিতে, ফের কঠিন এক শাস্তির মুখে দাঁড়িয়ে তখন এগনোডাইস। ঠিক এই সময়েই এগনোডাইসের পাশে এসে দাঁড়ালেন তাঁর অগণিত রোগীনিকুল। সমবেত ভাবে তাঁরা জানালেন এগনোডাইসের চিকিৎসায় তাঁরা উপকৃত। এগনোডাইসের কাছেই তাঁরা চিকিৎসা করাতে চান। এগনোডাইস কে প্র্যাকটিস করার সুযোগ দেওয়া হোক। কিন্তু দাবি করলেই তো আর হবে না। মহিলাদের জন্য এই পেশা তো আইন স্বীকৃত নয়। সেই সুযোগ তো তাঁকে দেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু বিচক্ষণ ছিলেন বটে কাউন্সিলের জুরিরা। সবাইকে বিস্মিত করে এরিয়োফেগাসের কাউন্সিল রায় দান করলো এগনোডাইসের অনুকূলেই। ন্যায়ালয় জানালেন, এতোদিন পর্যন্ত চিকিৎসা করার কোনো অধিকার ছিল না মহিলাদের। তার মানে এই নয় যে চিকিৎসা পেশার অনুপযুক্ত তাঁরা। এগনোডাইস প্রমাণ করে দিয়েছেন চিকিৎসক হিসেবে পুরুষদের থেকে কোনো অংশেই অযোগ্য নন মহিলারা। তাই আজ থেকে মহিলাদের চিকিৎসা করার অধিকার স্বীকৃত হলো। মহিলাদের এই পেশাকে বৈধ বলে ঘোষণা করছে কাউন্সিল।
এথেন্সের কাউন্সিল অব এরিয়োফেগাস থেকে সেদিন উচ্চারিত হয়েছিল ঐতিহাসিক এক রায়। অবদমিত নারী শক্তির এক অভুতপূর্ব স্ফুরণ ঘটেছিল সেই দিন। জয় হয়েছিল মানবতার। সামাজিক ভেদ ভাবনাকে পিছনে ফেলে এই জয় এসেছিল এগনোডাইসের হাত ধরে। খৃস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে এথেন্সেই জন্মে ছিলেন এগনোডাইস। তাঁর জীবনের সঠিক কোনো তথ্যপঞ্জি জানা যায় নি আজ পর্যন্ত। ছোটোবেলা থেকেই নারীদেহ নিয়ে সমাজের অবহেলা উপলব্ধি করেছেন তিনি। উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত নারীসমাজ, উচ্চতর চিকিৎসা পরিষেবা থেকেও বঞ্চিত। সমস্ত শিক্ষা, সমস্ত জ্ঞান শুধুমাত্র পুরুষদের কুক্ষিগত। ক্ষোভ বুঝি পুঞ্জীভূত হয়েছিল সেই কিশোরী কালেই। কি ভাবে কে জানে, একদিন মনে মনে চিকিৎসক হবার জেদ ধরে বসেন এগনোডাইস। তিনি ভালোই জানেন, এই পেশায় কোনো স্থান নেই তাঁর। তাঁর জন্য এই পেশা বেআইনি। কেউ শিক্ষা দান করবেন না তাঁকে। কিন্তু এগনোডাইসও সহজে হাল ছাড়া পাত্রী নন। ছোটো ছোটো করে কেটে ফেললেন তাঁর চুল। পড়লেন পুরুষের পোষাক। এথেন্স নয়, চিকিৎসা বিজ্ঞান অধ্যয়ন করতে এগনোডাইস গেলেন মিশরের আলেক্সান্দ্রিয়া শহরে। তৎকালীন পৃথিবীর অন্যতম নামজাদা এই চিকিৎসা বিজ্ঞান বিদ্যালয়ে সেই সময়ে অধ্যাপনা করতেন বিখ্যাত চিকিৎসক হিরোফিলাস (খৃঃপূ ৩৩৫-২৮০)। হিরোফিলাস ছিলেন আলেক্সান্দ্রিয়ার এই বিখ্যাত বিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতাও। এহেন দিকপাল এক চিকিৎসকের অধীনে চিকিৎসা বিজ্ঞান অধ্যয়ন করেন এগনোডাইস, পুরুষের ছদ্মবেশেই। পাঠান্তে এথেন্সে প্রত্যাবর্তন করেন তিনি, পুরুষের বেশেই। তার কিছুদিন পরেই ঘটে তাঁর বিখ্যাত সেই বিচার পর্ব।
এগনোডাইসের এই কাহিনী লিপিবদ্ধ করে গেছেন গ্রিক লেখক গেয়াস জুলিয়াস হাইজেনাস (খৃঃপূঃ৬৪-১৭ খৃঃ)। হাইজেনাস তাঁর ‘ফেবুলেই’ গ্রন্থে এগনোডাইসের কাহিনী লিখে গেছেন। ফেবুলেই গ্রন্থে প্রায় ৩০০টার মতো গল্প লিপিবদ্ধ করা আছে। মূলত গ্রিক দেবতা ও পৌরাণিক চরিত্রদের নিয়ে লেখা হয়েছে এই কাহিনীগুলো। গ্রিক দেবতাদের বংশপরিচয় ও পৌরাণিক চরিত্রদের সাথে তাঁদের সম্পর্ক নির্দ্ধারণ করা হয়েছে এই গ্রন্থে। তবে বইটা মোটেও সুলিখিত নয়। অসম্পূর্ণ বাক্য, ভুল বানান, দুর্বোধ্য ও অবিন্যস্ত ভাবে লেখা বইটা চোখের আড়ালেই পড়ে ছিল সেই কারণেই বোধহয়। হাইজেনাসের লেখার মর্ম উদ্ধার করতে গিয়ে নাজেহাল হন বৃটিশ গবেষক হার্বার্ট জেনিংস রোজ (১৮৮৩-১৯৬১)। ফেবুলেই পড়ে হাইজেনাসের উপর তো মহাক্ষিপ্ত হন রোজ। হাইজেনাসকে ‘অর্ধশিক্ষিত নির্বোধ’, ‘অজ্ঞ যুবক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন রোজ। এহেন এক ‘অজ্ঞ যুবক’এর লেখা কতটা গ্রহণযোগ্য তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অন্যান্য গবেষকরা। এগনোডাইসের অতিসংক্ষিপ্ত জীবনী কতটা নির্ভরযোগ্য সেই প্রশ্নও উঠে আসছে, বিশেষত ফেবুলেইতে যখন দেবদেবী আর পৌরাণিক চরিত্রদের ছড়াছড়ি। আদৌ এগনোডাইস নামে রক্ত মাংসের কোনো মানুষ ছিলেন কিনা প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও। ফলে এগনোডাইস ঘিরে নানান সন্দেহ আজও বর্তমান।
এগনোডাইস কোনো চিকিৎসকের নাম নয়। এগনোডাইস এক ভালোবাসার নাম। তিনি রক্তমাংসেরই হোন বা কল্পনার, ন্যায় প্রতিষ্ঠার প্রতিমূর্তি তিনি। তাই ঐতিহাসিক কোনো বিতর্কের মধ্যে তাঁকে খুঁজি না আমরা, নিজের বুকের মধ্যে তাঁকে খুঁজি।
মূলসূত্র : Apollodorus’ library and Hyginus’ Fabulae. Translated by R. Scott Smith and Stephen M. Trzaskoma.
ফিচারড ইমেজঃ নিজের ঊর্ধ্বাবরণ উন্মোচন করছেন এগনোডাইস। (শিল্পীর কল্পনায়)