ও বাতাসের রূপ নেই| চুলে, গায়ে, গায়ের লোমে খেললে তবে তাকে বুঝি| গাছের পাতার চলনে বুঝি বাতাস| জলাশয়ের তরঙ্গে বুঝি বাতাস| গাছের ডাল ভাঙলে বুঝি, বাতাস এবার রসাতলে দেবে তরুশাখা —শাখালতা| সবই|
অতিমারী শুরু হয়নি তখন| বা হয়ে গিয়েছিল মানুষের খালি ন্যাতা পেটে|
আসছিলাম সবুজ মাঠের পাশ দিয়ে| সরেস সবুজ! কত রকম shades! টিয়া সবুজ, পুকুরপাড়ের শ্যাওলা সবুজ| হাসপাতালের পর্দার সবুজও ছিল সে মাঠে|
মন লাগছিল না আমার| কেননা গাছগুলো থমকে ছিল| বাতাস মোটে ছিল না| সন্ধের আঁধারে বৃক্ষের অচল পত্র আমায় স্থবির করেছিল| ভালো লাগছিল না| একদম ভালো লাগছিল না| সবুজগুলো কালো ঝুপড়ি হয়ে যাচ্ছিল| আর সে ঝুপড়িতে দীন দুখী মানুষ|
খানিক পরে হাওয়া দিল| জোর জোর হাওয়া| গাছ দুলল| গাছের পাতা নাচল| পাতায় বসা পাখি হাসল| পাতার নড়াচড়ার ফাঁকে মৃদু হাসল আকাশ| সেরফ পাতা দুলিয়ে দুলিয়ে আকাশে কত যে ফিগার বানাল বাতাস| দুই পাতা এঁকেবেঁকে এমন করতে লাগল –! ফাঁকের আকাশটুকুকে মনে হল গল্পবলা বুড়িদাদি| কখনো গাছের দু শাখা ঝটপটানিতে আকাশটাই পাখি হয়ে গেল|
সেদিন শেষ বিন্দু পর্যন্ত দেখে যাচ্ছিলাম পবনে খেপা সবুজকে| আশা হচ্ছিল –মাঠের ঝুপসী কক্ষের মানুষগুলোও সুখী চেহারা নেবে| নেয়নি| নিল না| মরা তো মানুষগুলো| মানুষ ,মানুষের গর্ভজাত –সব মরা| খিদের ইতিহাস নেই| ভবিতব্য নেই| ফলে বারবার পবন হেরে ভূত|
শেষটা অন্যরকম বানাই? মহামারী এলো| উম উম fun এল| গাছ মরল| মানুষ মরল| টিভিবাক্সে মানুষের সাথে কোনো জন্মে যোগ না রাখা আমলা বসল– অস্পষ্ট বাংলায় কী সব বললও| অভিনেতা চেঁচাল| কেন বোঝা গেল না| বোধহয় নিজের পছন্দমত অপছন্দের সরকারের বিরুদ্ধে বলবে বলেই বলল সবকটা| সমবেতভাবে| বটানির প্রফেসর বকল গাছ কী প্রসেসে —? না না কীভাবে বাঁচবে তা নিয়ে নয়, মরার প্রসেস নিয়ে বকল| উল্টোদিকের প্রশ্নগুলোই ছিল এমন!
দুরদেশে থাকা দেশের অর্থবিদ বার্তা দিল –সবাইকে বাজারের গেটের কাছে রাখা সানিটাইজার নিতে হবে| প্রতিটি বাজারের সামনে গামলা গামলা থাকবে সানিটাইজার| কে রাখবে ভগা জানে| বুঝি! দোষ নেই এদের| মাঝে মাঝে দেশে এসে আদরযত্নে থাকে| ইলিশটা চিতলের বড় পেটিটা খায়| তাই হয়ত চাল না পাওয়া স্বদেশে সানিটাইজারকে বেশি সস্তা ভেবে ফেলে ভুল করে| বোঝে না –এ বাজারে “বাজারে” ঢোকার ক্ষমতাই হারাবে শ শ মানুষ|
বাচ্চা বাচ্চা সাংবাদিক ঝড় বৃষ্টি করোনা কিছুটি না ভেবে দিকবিদিক ছুটল| ছোট সাংবাদিকদের মাথায় বসা বড়গুলো কী আক্ষেপ করল! মাঝে মাঝে বৃষ্টিতে ভিজতে লাগা সংবাদ সংগ্ৰহদাতাদের শান্ত বাণী দিল — “ভালো করে —ভালো করে –আরে — গাছটা যেখানটা ভাঙছে মটমট করে সেটা দেখাও| আহা ভিজ ভিজ না।” কোথাও বাজ পড়ল| সানিটাইজড স্টুডিও চেঁচাল –সাবধানে থেকো|
আজ শহরে সাতজন অবসাদে মরল| আজ হয়ত আসবে ফাঁস বিশেষজ্ঞ বা খোদ ফাঁসুড়ে| কিংবা কুয়ো —-কিংবা পুকুর বিশেষজ্ঞ| কুয়োয় ঝাঁপ মেরেছে না একটা দুটো! মোট কথা মরার প্রসেস অনুযায়ী আসবে বিশ্লেষক| মৃতের পরিবারের কতজন থাকবে ‘লাইভে’ বলা মুশকিল| ধুর শালা! আমিও যেমন! মুরুক্ষুর মুরুব্বি! Lifeই নেই যাঁদের তাঁদের “live”? বাড়বে TRP ?? মাসের প্যাকেট স্যালারি?
ফার্নিচারে সাজানো ঘরে বসে প্রথম প্রশ্নটা কী হবে? —-“সাংবাদিকতায় work from home possible?” —মহাপ্রলয়ে বাচ্চাগুলোকে সমুদ্দুর পাড়ে, বহুতলের ছাদে —পারলে ভূতলে ছেড়ে দিয়ে ঘরে বসে জিম করতে করতে সাংবাদিকতা করতে বললটা কে? শরীরগত ভাবে মেয়েপুলিশ আর মেয়ে সাংবাদিকের মধ্যে ফিটনেসের ফারাক থাকে –সেটাও ভুলেছে মিডিয়া| দেখেছি —গাছ ভাঙছে কসবার কাছে –ভিজে কাকের মত কাঁপতে কাঁপতে গাড়ির অংবংচং রুট দেখাচ্ছেন এক junior মহিলা সাংবাদিক|
Yes .My গুবলু সোনা, Yes .— Everything is possible In Our হামটিডামটি Demo Bureaucracy .
১ মানুষকে পছন্দমত শ্রমিক বানানো possible .
২ শ্রমিককে পছন্দমত আন্দোলন করানো বা না করানোর ধারাবাহিক চক্রাকার plan possible .
৩ শ্রমিক মারা বা মরতে বিপুল উৎসাহিত করা
possible .
৪ মরার পর কেন মরল, কেন এভাবে মরল –সেভাবে মরল না এসব নিয়ে ভাট বকা possible. ৫ শ্রমিক মরা নিয়ে একমাস বাদে গবেষণাপত্র লেখাও possible.
শেষত –দাবার ঘোড়া নৌকার মত মিডিয়াতেও elite intellectual ইমলিঝিমলি বিশ্লেষক ও শ্রমনির্ভর সাংবাদিকদের মধ্যে লক্ষণগণ্ডীটাও possible. আমন্ত্রিত অতিথি ও real victim এর মধ্যে চিরকালের দুরত্বটা? ও তো very much Possible ,
আয় —জাপটে চুমু খাই| তোদের বখাটে জিভে দাঁতের ফাঁকে জিভ ঘষে ঘষে খাই| এটাও কি চাই তোদের পছন্দমত? নাকি রে –বল!
আমফন করোনার বিষপবন! তাও হেরে যায় ঝোড়ো বিভাজনে!
এক অসাধারণ লেখা। একটা সময়ের দলিল। কিন্তু তাতে ভালোবাসা আছে স্বপ্ন আছে। প্রকৃতির অনবদ্য রূপ ধরা পড়েছে। ময়ূরীদেবীর লেখা খুব ভালো লাগলো।