মেয়ের চারদিন পটি হচ্ছিল না। খেলা বন্ধ। মোবাইল ছুঁয়ে দেখছে না। শুধু শুয়ে থাকে। তার উপর আজ সকালে একটু জ্বর। মাথা খারাপ হওয়ার জন্য এটুকু যথেষ্ট।
কী করব? আমাদের দুজনের হাত পা অবশ হয়ে আসছে। হোয়াটসঅ্যাপে জগন্নাথের ছবি প্রোফাইলে রাখা মানুষটিকে (টুম্পাইদা) জানালাম। উত্তর এল– পটি না হওয়ার ফলেই জ্বর এসেছে। ঘাবড়ানোর কিছু নেই। একটু ইসবগুল জাতীয় কিছু গরম জলে খাইয়ে দেখো। বাড়িতে সফটোভ্যাক ছিল। ইসবগুল আনালাম। কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় দু’চামচ খাওয়াতে পারলাম। কিন্তু মেয়ে বারবার পটিতে যায়। বসে, আর কাঁদতে কাঁদতে উঠে আসে। এসেই বিছানায়। আমরা বুঝতে পারছি খুব কষ্ট হচ্ছে। বেরোতে পারছি না। আর মেয়েকে নিয়ে যাওয়ারও তো উপায় নেই। কোনোও ডাক্তারের কাছে যেতে হলে গোপন করতে হবে যে ওর কোভিড পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে। তা তো সম্ভব না।
গৌতমদাকে জানালাম। হেলথ-এর খবর করতে করতে আমাদের গৌতমদা প্রায় একজন ডাক্তার হয়ে গেছে। একটু পরে জানাল—-কাউকে দিয়ে দোকান থেকে ডুস আনা। পরে দেখলাম ওটার নাম ডালকোলেক্স। আল্ট্রাসনোগ্রাফির আগের রাতে ভেলোরে ডাক্তাররা ছোটনকে ওই ট্যাবলেট দিয়েছিল। যা খেলে পরের দিন সকালে পেট পুরো সাফ হয়ে যায়। কিন্তু বাচ্চাদের জন্য এটা একটা ছোট্ট ক্যাপসুলের মত। যা পিছনে পুশ করতে হয়। পাশের বাড়ির কাল্টুদাকে ফোন করে ডাকলাম। বললাম —-একটা ওষুধ লাগবে। দোকানে গিয়ে বলো ৫ বছরের বাচ্চার কয়েকদিন পটি হচ্ছে না। ডুস দিন। কাজ ফেলে ও গেল। একটু পরে এনে দিলো। কিন্তু কিভাবে এটা ব্যবহার করতে হয় আমার বা মোমোর জানা নেই। ইউটিউবে লিখলাম, ‘হাউ টু ইউস ডালকোলেক্স ফর চিলড্রেন।’ একটা পুতুলকে ডামি বানিয়ে ব্যবহারের ভিডিও পেলাম।
বিকেলের পর থেকে মেয়ে আবার পুরনো মুডে। খেলছে। দৌড়াচ্ছে। লাফাচ্ছে। মোবাইল নিয়ে কাড়াকাড়ি করছে। পোগো কত নম্বর ও জানে। যত দরকারি খবরই চলুক না কেন, একটু ফাঁক পেলেই কার্টুনে ঢুকে যাচ্ছে। সন্ধ্যায় বসের ফোন। —-মেয়ে কেমন আছে? হেসে বললাম— জ্বর নেই। সব ঠিক আছে।– দেখলে তো। বাচ্চাদের এগুলো হয়। ভয় পেতে নেই। গৌতমদাও খবর নিল। ওর পরামর্শে যে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছি জানালাম। মাঝে কাকিমা (শ্রীষিতার মা), অদিতি, শাল্মলি, সোমনাথদা ফোন করেছিল। উচ্চমাধ্যমিকের ফল বেরিয়েছে আজ। কপি লিখছিলাম। সবাইকেই বললাম ঠিক আছি। কোনও অসুবিধে নেই। কয়েকটা ফোন নিতে পারিনি।
রাতে লালটুর দেওয়া আম খাচ্ছিলাম। ও আমার অনেকদিনের বন্ধু। আগে এই বারানসি ঘোষ স্ট্রিটেই থাকত। এখন বিরাটির দিকে থাকে। অনেকদিন যোগাযোগ নেই। কিন্তু ফেসবুক তো আছে। ও দেখেছে আমরা গৃহবন্দি। ওখান থেকে স্কুটারের ডিকিতে ভরে আম, মুসম্বি আর স্যানিটাইজার এনেছে। মেয়ের হাতে ধরিয়ে দিয়েছে একটা ছোট্ট প্যাকেট। বলেছে —-তোমার নামে পুজো দিয়েছি। এটা মায়ের প্রসাদ। মাথায় ঠেকিয়ে খেও।
যে ছবিটা পোস্ট করেছি, এটা সব ঠিক হয়ে যাওয়ার পরে বিকেলে। আমি আর অর্পণ যেদিন প্যারামাউন্টে কোল্ড কফি খেলাম সেদিন কলেজ স্কোয়ার বাঁদিকে রেখে সোজা হাঁটছিলাম। একটু দাঁড়ালাম। পেন কিনলাম। মেয়ের জন্য রং তুলি নিলাম। আর এই বোর্ডটা কিনেছিলাম। হেঁটে মহাত্মা গান্ধী রোড ধরে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ ক্রসিং। একটা বাস পেলাম। ডানলপ যাচ্ছিল। দুজনে উঠলাম। জোড়াসাঁকোয় নেমে কয়েক পা হেঁটে বাড়ি। সেই আমার এ পর্যায়ের শেষ বেরোনো। অফিসের কাজ কিন্তু করেছি এবং করছি। বাড়ি থেকে। মোবাইলে কপি লিখি। এইতো সেদিন মাধ্যমিকের ফল বেরোল। সাতখানা লিখলাম। বুঝুন। মোবাইলে ৭টা কপি কিন্তু খুব সহজ নয়। একটা একটা যদি ৩০০ শব্দ হয়, ২১০০ শব্দ টাইপ করেছি মোবাইলে!!!