An Initiative of Swasthyer Britto society

  • Home
  • About Us
  • Contact Us
Menu
  • Home
  • About Us
  • Contact Us
Swasthyer Britte Archive
Facebook Twitter Google-plus Youtube Microphone
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Menu
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Search
Close
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Menu
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Search
Close

অতিমারী- শিকারী ও শিকার

IMG_20200817_193050
Dr. Bishan Basu

Dr. Bishan Basu

Cancer specialist
My Other Posts
  • September 13, 2020
  • 4:10 am
  • 2 Comments

কোভিড অতিমারী এদেশে আক্রান্ত ও মৃত, দুই হিসেবেই বাড়ছে। লেখচিত্রে স্থিতাবস্থার ইঙ্গিত বা আভাস বলে যেটুকু আশা করা যাচ্ছিল, সে প্রায় মরীচিকা-সম বলে ইতিমধ্যে প্রমাণিত। দিনে নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় লাখের কাছাকাছি – মৃতের সংখ্যা প্রতিদিন প্রায় হাজার। সঠিক সংখ্যায় পরীক্ষানিরীক্ষা হতে পারলে আসল সংখ্যাটা তার চাইতে যে বেশ কিছুটা বেশী হবে, সে নিয়ে সংশয় নেই – বিতর্ক হতে পারে, সঠিক সংখ্যাটা ঠিক কতগুণ বেশী, সে নিয়েই।

এমতাবস্থায়, বিশেষত দেশের নড়বড়ে আর্থিক হালের পরিস্থিতি মাথায় রেখে, ঠিক কী কী করা যেতে পারে, বলা মুশকিল। ভ্যাক্সিন নিয়ে আলোচনা করা যেতেই পারে – কিন্তু, সেই পথে এখুনি সমাধান আসার সম্ভাবনা কম (ওই পথে সমাধান আদৌ আসবে কিনা, সেও আন্দাজ করা মুশকিল)। গণপরিবহন চালু হলে আক্রান্ত ও মৃত, উভয় সংখ্যাই বাড়বে – এ নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। ইশকুল-কলেজ খুললেও তা-ই। আবার আরেকদিকে, যাঁদের নিজের পয়সায় নিজের উদ্যোগে কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার ক্ষমতা আছে, বা যাঁদের কর্মস্থানটি সুবিধেমত বাড়িতে সরিয়ে আনা যায়, অথবা যাঁদের কর্মস্থল কর্মীদের আলাদা করে পরিবহনের বন্দোবস্ত করছে – তাঁরা সকলেই কাজকর্ম করছেন। এবং, তাঁদের অধিকাংশই সচরাচর মধ্যবিত্ত বা উচ্চ-মধ্যবিত্ত। ওদিকে, বিশেষত ট্রেন বন্ধ থাকায় যাঁরা বিপদে পড়েছেন, তাঁদের অধিকাংশই আর্থিক মানদণ্ডে প্রথমোক্তদের তুলনায় পিছিয়ে। অতএব, গণপরিবহন বন্ধ রেখে অতিমারী মোকাবিলায় বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তাঁরা, যাঁদের আর্থিকভাবে ক্ষতি সহ্য করার ক্ষমতা কম। লেখাপড়ার ক্ষেত্রেও তা-ই। ইশকুল-কলেজ বন্ধ থাকার কারণে যে পড়াশোনার ক্ষতি (অন্যান্য ক্ষতির কথা বলছি না, যেমন সহপাঠীদের সাথে খেলা বা হুল্লোড় বা দুষ্টুমি করার সুযোগ না পেয়ে একাকিত্ব-বোধ ইত্যাদি), সেও স্বচ্ছল পরিবার অনলাইন ক্লাস করে খানিকটা সামলে নিতে পারে – সঙ্গতিহীন পরিবারের সন্তানের পক্ষে যেটা সম্ভব নয়।

এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে সমাধান ঠিক কী, বা এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার পথ কী, এক কথায় বলা মুশকিল। পরিস্থিতি প্রায় শাঁখের করাতের পর্যায়ে।

কিন্তু, আজ এসব নিয়ে বলতে বসিনি। আজ অতিমারীর শিকার নিয়ে কথা বলব। না, কোভিডে যাঁরা আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন, তাঁদের কথা নয় – কিম্বা, কোভিড নিয়ন্ত্রণের বিবিধ পরিকল্পনা-হীন বা উটকো অবিবেচনা-প্রসূত সিদ্ধান্তে যাঁরা মারা গেলেন, তাঁদের কথাও নয় – সেসব নিয়ে আগে অনেক বলেছি। আজ বলব, আরেক পর্যায়ের শিকারদের কথা। সেইসব শিকারদের কথা, যাঁদের অনেকেই শিকারী ভেবে বসেছেন।

হ্যাঁ, চিকিৎসকদের কথা বলছি।

চিকিৎসক বা চিকিৎসক বাদে বাকি স্বাস্থ্যকর্মীদেরও যে কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশী, সে নিয়ে আলাদা করে বলার কিছু নেই। আক্রান্ত হলে স্বাস্থ্যকর্মীদের, বিশেষ করে চিকিৎসকদের, মারা যাওয়ার সম্ভাবনা যে বাকিদের তুলনায় বেশ কিছুটা বেশী – সে বিষয়েও তথ্য কিছু কম নেই। কিন্তু, আজ কথাটা সে দিক থেকে বলছি না। মানুষের চিকিৎসা করতে গিয়ে নিজেরা আক্রান্ত হয়ে বিপদে পড়ছেন, পরিবারকে বিপদের মুখে ফেলছেন – এদিকে অসুস্থ হলে পাশে দাঁড়ানো তো দূর, পাড়া-প্রতিবেশী সবাই মিলে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিতে চাইছেন – বিশ্বাস করুন, কথাটা সেদিক থেকেও নয় – এমনকি, এই দ্বিমুখী অনিশ্চয়তার মুখে দাঁড়িয়ে অনেক ডাক্তারবাবুরা চেম্বার বন্ধ রেখেছেন বলে যাঁদের বাপ-ঠাকুদ্দার শ্রাদ্ধের দায়িত্বটি জনসাধারণ নিজ কাঁধে তুলে নিয়েছেন, কথাটা তাঁদের নিয়েও নয়। হ্যাঁ, এই প্রতিটা ক্ষেত্রেই, প্রতিটা পরিস্থিতিতেই চিকিৎসক শিকার – কিন্তু, আজকে একটি বিশেষ প্রেক্ষিতে শিকার হওয়ার কথা বলব।

কোভিড খুব ভয়ানক মারণ রোগ, এমন তো নয়। আক্রান্ত-পিছু মৃতের হার হিসেব করলে আরো অনেক অনেক সংক্রামক ব্যাধিই কোভিডের চাইতে বিপজ্জনক। কোভিডের বিপদ তার সংক্রমণ-ক্ষমতা – এবং দ্রুত আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি, অতএব মৃত্যুর হার যেমনই হোক, মৃতের সংখ্যাবৃদ্ধিও অনিবার্য। এর সঙ্গে যোগ করা দরকার আমাদের নড়বড়ে স্বাস্থ্যব্যবস্থার বিষয়টিকে – যেটি সাধারণ অবস্থাতেই ধুঁকে ধুঁকে চলে – তার ক্ষমতাই নেই আচমকা এসে পড়া এই এত্তো বাড়তি সংখ্যার রোগীকে সামলানোর।

অতিমারীর ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের আতঙ্কের কারণ কিন্তু এটাই। চিকিৎসা না পাওয়া। অসুস্থ হলে ঠিক কেমন চিকিৎসা চলছে, পরিজনের পক্ষে সেটুকু খবর সবক্ষেত্রে যথাযথ না পাওয়া। এবং, যে রোগের নাকি নির্দিষ্ট কিছু চিকিৎসাই নেই, এমনকি তার চিকিৎসাতেও সর্বস্বান্ত হওয়া। প্রথম ও তৃতীয় আশঙ্কাটি পরস্পর সম্পৃক্ত। আর এর সাথে এক চূড়ান্ত অসম্মান ও হীনতার মৃত্যুর আশঙ্কার দিকটা তো আছেই।

কোভিড অতিমারীতে আয় কমেছে প্রায় সকলেরই। কিন্তু, কোভিড থেকে বাঁচার জন্যে সুরক্ষাসামগ্রীর দাম বেড়েছে বহুগুণ। N95 মাস্কের দাম কোভিড পরিস্থিতির আগে যা ছিল, কিছু ক্ষেত্রে দাম বেড়েছে অন্তত তার দশগুণ – পরবর্তীতে দামে কিছুটা লাগাম টানা গেলেও, কোভিড-পূর্ব দামে পৌঁছানো যায় নি। পিপিই কিট বা হেড শিল্ড সবকিছুর ক্ষেত্রেই তা-ই। এর সাথে বাড়তি বিপদ, নিম্নমানের সামগ্রীকেও চড়াদামে বেচে দেওয়া। সরকারি কমিটি, যাদের দায়িত্ব গুণমান যাচাই করা, তাঁরা প্রবল উদ্যোগে এবিষয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন – এমন অপবাদ কেউই দিতে পারবে না। যাঁরা এইধরণের সুরক্ষাসামগ্রী তৈরী করেন, যাঁদের এবিষয়ে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা রয়েছে – বিশ্বজুড়ে কোভিড মাথাচাড়া দেওয়ার সময়েই তাঁরা সরকারের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, ঠিক কী পরিমাণ বাড়তি সামগ্রী প্রস্তুত করে রাখা প্রয়োজন – অভিযোগ, সরকার তাঁদের একাধিক চিঠির উত্তরটুকুও দেননি। এই ঘটনা জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের। অতএব, এই মুহূর্তে বাজারে যে বিপুল পরিমাণ মাস্ক ঘুরে বেড়াচ্ছে, সেগুলোর অধিকাংশই যাঁদের তৈরী, সেইসব কোম্পানি এই কোভিডকালের পূর্বে কখনোই মাস্ক তৈরী করেনি – এই তথ্যের তাৎপর্য নিয়ে আর কথা না বাড়ানোই ভালো।

দ্বিতীয়ত, এদেশের চিকিৎসাব্যবস্থাটিকেও বীমাভিত্তিক করে ফেলার আয়োজন অনেকদূর এগিয়ে গিয়েছে। কর্পোরেট হাসপাতালের গেট ঠেলে ঢুকলে আপনার অসুবিধে কী জানতে চাওয়ার আগেই কর্তৃপক্ষ জানতে চান আপনার চিকিৎসাবীমা রয়েছে কিনা। সরকারও, রাজ্য ও কেন্দ্র উভয়ই, ক্রমশ বীমানির্ভর ভবিষ্যতের দিকে এগোচ্ছেন।

এই পরিস্থিতিতে বহু মানুষ, বছর বছর মোটা টাকা চিকিৎসা-বীমার প্রিমিয়ম ভরা সত্ত্বেও কোভিড আক্রান্ত হলে বীমার টাকা পাননি। বলা হয়েছে, এই অসুখ বীমাদ্বারা সুরক্ষিত নয়। অর্থাৎ, বীমার সাথে যে লম্বা ফর্দ দেওয়া থাকে, তার শর্তের মধ্যে কোভিড পড়ে না। সে ফর্দ কেউই পড়েন না অবশ্য – কিন্তু, এক্ষেত্রে সে প্রশ্ন অবান্তর – যে অসুখ বাজারে এসেছে এই ক’মাস হল, সেই অসুখের নামসহ বীমা করার মতো ভবিষ্যৎদ্রষ্টা হওয়া একেবারেই অসম্ভব।

মাথায় রাখা যাক, এই কোভিড-পরিস্থিতিতে বাকি অসুখবিসুখের চিকিৎসা হয়েছে নামমাত্র। আবার দেখা যাচ্ছে, কোভিডের চিকিৎসার ক্ষেত্রেও বীমা-কোম্পানি টাকা দিতে চাননি। অতএব, বীমাকোম্পানির লাভের অঙ্কটি সহজেই অনুমেয়।

সাধারণ মানুষ বীমার টাকা যথাসময়ে জমা দিয়ে গিয়েছেন। না দিলে পলিসি ডিসকন্টিনিউড। এই বছর বাদ রেখে পরের বছর করতে গেলে নতুন পলিসি হিসেবে দেখা হবে – এবং অনেক সুবিধেই পাওয়া যাবে না। তাহলে? মানুষ কি ঠকলেন না??

সাধারণভাবে বীমার উদ্দেশ্য, অসময়ের সুরক্ষাকবচ। অসুবিধেহীন সময়ে টাকা দিতে হয়, যাতে অসুবিধের দিনগুলোতে আর্থিক দুশ্চিন্তায় না পড়তে হয়। চিকিৎসাবীমার ক্ষেত্রে কোভিডের মুহূর্তে সেই নিরাপত্তা পাওয়া গেল কি? এই প্রসঙ্গ নিয়ে কতটুকু আলোচনা হলো??

যে সমস্ত বিরল সৌভাগ্যবান মানুষ কোভিড-চিকিৎসার ক্ষেত্রেও বীমাকোম্পানি থেকে টাকা পেয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও সুরক্ষাসামগ্রীর খরচ দেওয়া হয়নি, কেননা সেগুলো নাকি তথাকথিত কনজিউমেবলস, যা বীমার আওতার বাইরে। বেসরকারি হাসপাতালের প্রায় সর্বত্রই এই সুরক্ষাসামগ্রীর খাতে (মাস্ক-পিপিই ইত্যাদি) বিপুল অঙ্কের বিল করা হয়েছে – অনেকসময়ই পিপিই-র দাম হিসেবে বাজারদরের চেয়ে বেশী টাকা হিসেবে ধরা হয়েছে – এবং সেই টাকা রোগী-পরিজন পকেট থেকে দিতে বাধ্য হয়েছেন। মনে করিয়ে দিই, কোভিড চিকিৎসার যে মূল বিল বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পরিজনের হাতে ধরাচ্ছেন, তার মধ্যে বেশ অনেকটাই এই সুরক্ষাসামগ্রীর বিল – বীমার ভাষায়, কনজিউমেবলস – এবং হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ এই বাবদে মোটা অঙ্কের ফায়দা করেছেন – পরিজন, আবারও বলি, সেই বিল নিজের পকেট থেকে ভরেছেন।

বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড চিকিৎসার খরচ প্রায় আকাশছোঁয়া। যাঁরা ভর্তি না হয়ে বাড়িতে সাবধানে থাকলেই সুস্থ হতে পারতেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও বিল দাঁড়াচ্ছে হপ্তা দেড়-দুয়েকে আট-দশ লক্ষ। না, তাঁদেরকে হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ জোরাজুরি করে বা বিভ্রান্ত করে ভর্তি করছেন, এমন নয় – অনেকসময়ই প্যানিকগ্রস্ত পরিজনই উল্টে জোরাজুরি করে ভর্তি করতে চেয়েছেন। কিন্তু, হাসপাতাল-বাসের শেষে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার সময়ে বিলের পরিমাণ দেখে পরিজনের চোখ কপালে উঠছে। আর, যাঁরা সত্যিই গুরুতর অসুস্থ হচ্ছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে হাসপাতালের বিল নিয়ে কথা না বাড়ানোই ভালো – বিশ-পঁচিশ লাখ তো বটেই, অনেকক্ষেত্রে তার চাইতেও অনেকখানি বেশী। এই রাজ্যে কর্পোরেট হাসপাতাল এখনও সেই উচ্চতায় পৌঁছায়নি, কিন্তু খবর পেলাম, ব্যাঙ্গালোরের একটি বেসরকারি হাসপাতাল দিনদশেকের চিকিৎসার শেষে পরিজনের হাতে বিল ধরিয়েছেন তিরানব্বই লক্ষের (স্বীকার করে নেওয়া যাক, বিল যাচাই করে দেখিনি)।

আরেকদিকে, গত প্রায় মাসছয়েক চিকিৎসা বন্ধ রেখে ক্রনিক অসুখের রোগীদের পরিস্থিতি জটিলতর হয়েছে – এবং বেশ কিছু ক্ষেত্রে আশু চিকিৎসা জরুরী। সেক্ষেত্রেও চিকিৎসার ব্যয় কোভিড-পূর্ব খরচের তুলনায় বেশ কিছুটা বেড়েছে – অনেকক্ষেত্রে অজুহাত সেই সুরক্ষাসামগ্রী, অর্থাৎ কনজিউমেবলস। অতএব, বাড়তি খরচের অনেকটাই, বীমা থাকলেও, পরিজনকে পকেট থেকে খরচা করতে হচ্ছে। আর যাঁদের বীমা নেই, তাঁদের দুরবস্থার কথা না বলা-ই ভালো।

অতএব, এই ঘোলাজলে সুরক্ষাসামগ্রী প্রস্তুতকারকদের লাভ বেড়েছে। বেসরকারি হাসপাতালের লাভ মোটের উপর বেড়েছে কিনা বলা মুশকিল হলেও, রোগী-পিছু উপার্জন যে বেড়েছে, সে নিয়ে সন্দেহ না রাখা-ই ভালো।

এর মধ্যে যাঁর আয় কমেছে, তিনি চিকিৎসক। হ্যাঁ, বিশ্বাস করুন, কথাটা নির্ভেজাল সত্যি।

শল্য-চিকিৎসার ক্ষেত্র বাদ দিলে, বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার যে বিল, তার খুব বেশী হলে সাত-আট শতাংশ চিকিৎসকের ফীজ। এই কোভিড-পরিস্থিতিতে সেটি এসে দাঁড়িয়েছে পাঁচ শতাংশের আশেপাশে। না, মনগড়া কথা বলছি না। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়ানো একটি কর্পোরেট হাসপাতালের দেওয়া চিকিৎসাব্যয়ের আনুমানিক পূর্বাভাসে চিকিৎসকের কারণে খরচ সাড়ে চার শতাংশ – মাথায় রাখা যাক, পরিস্থিতি-অনুসারে খরচ অনুমান ছাপিয়ে গেলেও চিকিৎসক-খাতে ব্যয়টি অপরিবর্তিতই থাকে, অর্থাৎ মোট ব্যয়ের শতাংশ হিসেবে দেখলে চিকিৎসকের ফীজ নেমে আসে দুই-তিন শতাংশে। এটিও মনগড়া তথ্য নয়। কেননা, সোশ্যাল মিডিয়াতেই একটি কর্পোরেট হাসপাতালে দুদিনে দুই লক্ষ টাকা (ভেন্টিলেটর ইত্যাদির প্রয়োজন ছাড়াই) বিল দাঁড়ানোয় বিস্তর হইচইয়ের পর বিলটি খতিয়ে দেখতে গিয়ে চোখে পড়ল, দুই লক্ষের মধ্যে চিকিৎসকের ফীজ মাত্র আটাশশো টাকা। এর সাথে মনে করিয়ে দেওয়া যাক, অতিমারীর শুরুর দিকেই কর্পোরেট হাসপাতালে সব শ্রেণীর কর্মীদেরই মাইনে কমানো হয়েছিল – এবং সবশ্রেণীর কর্মীদের মধ্যে চিকিৎসকদের মাইনে কমেছিল সবচেয়ে বেশী। অতিমারীর শুরুর দিকে হাসপাতালের আয় যেভাবে কমে এসেছিল (আয় যখন ফুলেফেঁপে ওঠে, তখন কর্মীরা সেই বাড়তি আয়ের ভাগ পান, এমন কিন্তু নয়), এখন আর সেই অবস্থা নেই – কিন্তু, কর্মীদের মাইনে এখনও আগের জায়গায় পৌঁছোয়নি।

এমনিতে এ নিয়ে বিশেষ কিছুই বলার থাকত না। কর্মস্থলে কর্মী কেমন মাইনে পাবেন, সেটি শ্রম-আন্দোলনের ভাবনাচিন্তার বিষয় হতে পারে, কিন্তু বৃহত্তর সমাজ সাধারণত সেসব নিয়ে বিচলিত হয় না। আর, ডাক্তারবাবুদের নিজেকে শোষিত শ্রমিক ভাবতেও ভারি লজ্জাবোধ হয়। কাজেই, মালিকপক্ষের পাঁঠা তাঁরা কীভাবে কাটবেন, সে কর্তৃপক্ষের দায় এবং প্রথমে ন্যাজ নাকি মুড়ো কী বাড়িয়ে দেবেন, সে নিয়ে, বোধকরি পাঁঠাদের আলাদা করে কথা বলার জায়গা নেই।

তবু, কথা বলা জরুরী।

কেননা, এই যে বিপুল মুনাফার কারবার চলছে, তার পুরোটাই চালানো যাচ্ছে ডাক্তারবাবুকে সামনে রেখে। চিকিৎসকের মানবিক মুখটি সামনে সাজানো না থাকলে এই কারবার একটি দিনও চলতে পারত না।

এই মুখটি সামনে সাজিয়ে রেখে একদিকে যেমন ফুলেফেঁপে উঠছে কারবারির ব্যাঙ্ক ব্যালান্স, আরেকদিকে সেই মুখ দেখে ভুলে ঘটিবাটি বেচার পরিস্থিতিতে পড়ছেন আমজনতা – এবং সেই বিপদের জন্যে সাধারণ মানুষ দায়ী করছেন চিকিৎসককে। আশেপাশে কান পাতলেই শুনতে পাবেন, এই অসম্ভব অমানবিক বিল-এর কারণ হিসেবে অধিকাংশ মানুষ একবাক্যে দায়ী করছেন, আর কাউকে নয়, একমাত্র চিকিৎসককেই। আর আগেই বলেছি, সেই বিল থেকে চিকিৎসকের আয় খুবই সামান্য – প্রায় স্ট্যাটিস্টিকালি ইনসিগনিফিক্যান্ট – কিন্তু, ওই যে বললাম, চিকিৎসা এবং অতএব চিকিৎসার খরচ, মুখটি ডাক্তারবাবুরই।

কর্পোরেট হাসপাতালের মালিককে চোখে দেখা তো দূর, তাঁর নামটুকুও জানেন না অধিকাংশ রোগী-পরিজন। এই যে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন এতজন চিকিৎসক – বেশ কয়েকজনের বয়স তো বেশ কম – বলুন তো, কর্পোরেট হাসপাতালের একজন মালিকও আক্রান্ত বা গুরুতর অসুস্থ অব্দি হয়েছেন?

ঝুঁকি চিকিৎসকের। বিপদ চিকিৎসকের। এবং খুব যুক্তিযুক্ত কারণে (কেননা, চিকিৎসার খরচ মেটাতে গিয়ে পরিজন দিশেহারা) অন্যায়ভাবে (কেননা, সেই বিপুল ব্যয়ে চিকিৎসকের ভাগ নামমাত্র) ঘৃণার শিকারও সেই চিকিৎসকই!!

আর নিরাপদ দূরত্বে বসে লাভের কড়ি গুণে নিচ্ছেন যিনি, তিনি রয়ে যাবেন অন্তরালেই?

তাহলে?

ডাক্তারবাবুরা একটু ভেবে দেখবেন? এই পরিস্থিতিই চলতে দেবেন??

না, কর্পোরেট হাসপাতালের ঝাঁচকচকে পরিকাঠামো ছেড়ে চলে আসতে বলছি না। কিন্তু, আপনি আর এই কর্পোরেট স্বাস্থ্যব্যবস্থা যে এক নয়, আপনি যে এই বৃহৎ সিস্টেমের একজন বেতনভুক নিরুপায় কর্মচারী মাত্র, সেই কথাটুকু বলতে শুরু করুন – বলতে শুরু করুন আপনার সামনে বসে থাকা রোগীকে, পরিজনকে। এতে আপনার মহিমা-গরিমা আপাতদৃষ্টিতে কিছু কমতে পারে – কিন্তু, ব্যবস্থাটি যদি অন্যায় বলে বিশ্বাস করেন, তাহলে ব্যবস্থাটায় বদল আনার জন্যে এ একেবারে প্রাথমিক ধাপ।

নাকি, চিকিৎসার মুখ হিসেবে সামনে থাকতে থাকতে শুধুই মুনাফার উদ্দেশে নির্মিত একটি অমানবিক ব্যবস্থার মুখ হিসেবে আপনি নিজেকে ব্যবহৃত হতে দেবেন? এখনও? এর পরেও??

এই রচনার একটি ঈষত অন্য রূপ গুরুচন্ডালী ওয়েব ম্যাগাজিনে প্রকাশিত।

PrevPreviousকরোনার দিনগুলি ৬২ স্মৃতি
Nextদিনলিপি দাগNext

2 Responses

  1. Aniruddha Kar says:
    September 13, 2020 at 2:21 pm

    Absolutely and if doctors unite and fight against it the truth will come out.

    Reply
  2. Partha Das says:
    September 13, 2020 at 3:46 pm

    দারুন লেখা। শুধুই আবেদন নয়, এই আবেদনের অন্য মাত্রা আছে। সবার ই বোঝা প্রয়োজন বৃত্ত ক্রমশঃ ছোট হচ্ছে।

    Reply

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সম্পর্কিত পোস্ট

রাজনৈতিক খুন

April 16, 2021 No Comments

রাজনৈতিক খুন গানটি একটা নিরপেক্ষ জায়গা থেকে লেখা। সারাক্ষণ কোন না কোন দলের রাজনৈতিক কর্মী খুন হচ্ছেন। তারা সবাই প্রান্তিক মানুষ। রাজনৈতিক নেতারা ক্ষমতা ভোগ

জানালা

April 16, 2021 No Comments

কতো ছোট ছিলাম? এখন দাদাদের কাউকে জিজ্ঞেস করলে সঠিক উত্তর কেউ দিতে পারবে না নিশ্চয়ই। আমার বয়স তখন বছর চারেকের বেশী ছিল না সম্ভবত। আমাদের

বিভাজন

April 16, 2021 No Comments

। বিভাজন। রাস্তায় বাধা এলে মানুষ বা গাছ হোক, কাটা প্রয়োজন। বলি ছাড়া ক্ষমতার হয়না বোধন, আহুতি দিতেই হবে কিছু নাগরিক, গণতান্ত্রিক দেশে লাশ ছাড়া

লকডাউন হবে কিনা?

April 15, 2021 No Comments

লকডাউন হবে নাকি দাদা? প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিলো যে লোকটা স্বরে ভয় মেখে, তার মুখে মাস্ক ছিলো না। কালো বাদুরের মতো ঝুলছিলো একটা কান থেকে, কাকতাড়ুয়ার

দিনলিপিঃ নববর্ষ

April 15, 2021 No Comments

সময়টা সত্যিই খুব খারাপ। পশ্চিমবঙ্গে কোভিডের দু নম্বর ঢেউ আছড়ে পড়ার সাথে সাথে তাল মিলিয়ে বাড়ছে গ্রীষ্মের তাপমাত্রা। আর দফায় দফায় বাড়ছে ভোটের হিংসা। কাকে

সাম্প্রতিক পোস্ট

রাজনৈতিক খুন

Doctors' Dialogue April 16, 2021

জানালা

Dr. Dayalbandhu Majumdar April 16, 2021

বিভাজন

Arya Tirtha April 16, 2021

লকডাউন হবে কিনা?

Arya Tirtha April 15, 2021

দিনলিপিঃ নববর্ষ

Dr. Parthapratim Gupta April 15, 2021

An Initiative of Swasthyer Britto society

আমাদের লক্ষ্য সবার জন্য স্বাস্থ্য আর সবার জন্য চিকিৎসা পরিষেবা। আমাদের আশা, এই লক্ষ্যে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, রোগী ও আপামর মানুষ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমস্ত স্টেক হোল্ডারদের আলোচনা ও কর্মকাণ্ডের একটি মঞ্চ হয়ে উঠবে ডক্টরস ডায়ালগ।

Contact Us

Editorial Committee:
Dr. Punyabrata Gun
Dr. Jayanta Das
Dr. Chinmay Nath
Dr. Indranil Saha
Dr. Aindril Bhowmik
Executive Editor: Piyali Dey Biswas

Address: 

Shramajibi Swasthya Udyog
HA 44, Salt Lake, Sector-3, Kolkata-700097

Leave an audio message

নীচে Justori র মাধ্যমে আমাদের সদস্য হন  – নিজে বলুন আপনার প্রশ্ন, মতামত – সরাসরি উত্তর পান ডাক্তারের কাছ থেকে

Total Visitor

311485
Share on facebook
Share on google
Share on twitter
Share on linkedin

Copyright © 2019 by Doctors’ Dialogue

আমাদের লক্ষ্য সবার জন্য স্বাস্থ্য আর সবার জন্য চিকিৎসা পরিষেবা। আমাদের আশা, এই লক্ষ্যে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, রোগী ও আপামর মানুষ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমস্ত স্টেক হোল্ডারদের আলোচনা ও কর্মকাণ্ডের একটি মঞ্চ হয়ে উঠবে ডক্টরস ডায়ালগ।