ডা. ঘোষ প্রেসক্রিপশনে গোটা গোটা করে লিখলেন, “নো মেডিসিন নিডেড। টেক প্লেনটি অফ ফ্রুটস অ্যান্ড ভেজিটেবলস্। রুটিন কেয়ার।”
মিস্টার মিত্রের মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো তিনি ঠিক খুশি নন।
– কিন্তু ডক্টর, ও তো বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছে। অন্তত ইমিউনিটি বাড়ানোর কিছু ওষুধ দিন।
– আপনার কেন মনে হচ্ছে ওর ইমিউনিটি কমে গেছে?
– এই মাসখানেক আগেই হাঁচি-কাশি হচ্ছিলো। এ মাসে আবার.. ওর নিশ্চয়ই ইমিউনিটি দুর্বল হয়ে পড়েছে। আপনি তো আবার *রলিক্স-*মপ্ল্যান দিতেও বারণ করেন। এভাবে চললে তো..
– বেশ। তাহলে আপনাকে ইমিউনিটির গল্পটা ছোট্ট করে বলি। তারপর, আপনার কথা আমি মেনে নেবো।
আমরাও সবাই কান খাড়া করে ফেললাম। স্যারের এই গল্পগুলোর জন্য আমরাও মুখিয়ে থাকি। অল্প চিনি আর আদা দেওয়া লিকার চায়ে চুমুক দিয়ে স্যার বলতে শুরু করলেন- মোদ্দা কথাটা হ’ল প্রতিরোধ। যখনই শরীর বাইরের কোনও ক্ষতিকর জিনিসের খোঁজ পায় তখনই ইমিউন সিস্টেম বা অনাক্রম্যতা সক্রিয় হয়ে ওঠে আর ক্ষতিকর জিনিসটাকে ধ্বংস করে ফেলতে চায়। আবার মাঝে মাঝে ক্ষতিকর জিনিস চিনতে ভুলও হয়ে যায়। তখন নিজের শরীরের সাথে ‘ছায়াযুদ্ধ’ শুরু করে অনাক্রম্য তন্ত্র। সে আরেক কান্ড!! তখন আবার জোর করে ইমিউনিটির কান টেনে ধরতে হয়। ইমিউনিটির পুরো ব্যাপারটা বড্ড গোলমেলে। বড্ড জটিল আর কঠিন।
– সব তো মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। আরেকটু সোজা করে বলুন।
– তাহলে উদাহরণ দিয়ে বোঝাই। এই যেমন ধরুন চামড়ার আবরণ। এটা বাইরের জীবাণুকে শরীরের ভেতরেই আসা আটকায়। আবার ধরুন, পাকস্থলীর অ্যাসিড। সেও কিন্তু, পেটের জীবাণুদের মেরে ফেলে। ঠিক সেজন্যই গ্যাসের ওষুধের নাম করে প্রেসক্রিপশন ছাড়াই অসংখ্য অ্যাসিড কমানোর ওষুধ খেয়ে গেলে আপনার ইমিউনিটির বারোটা বাজতে পারে। তাহলে, কী বুঝলেন? অ্যাসিড মানেই আঁতকে ওঠার কিছু নেই। খাদ্য হজম করা থেকে রোগ প্রতিরোধে এর অনেক ভূমিকা আছে। অবশ্য, যে কোনও কিছুরই বাড়াবাড়ি হলে মুশকিল।
– ও, তাই নাকি? তাহলে চোঁয়া ঢেকুর উঠলে *নট্যাক খাবো না বলছেন?
– খাবেন। নিশ্চয়ই খাবেন। তবে খাওয়ার দরকার আছে কিনা সেটা ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাবেন। যাক গে, যে কথা বলছিলাম.. রক্তরসের বিভিন্ন প্রোটিন, অ্যান্টিবডি, রক্তকোষ এসব বিভিন্ন জিনিস ইমিউনিটি গড়ে তুলতে কাজে লাগে। বেশ কিছু ইমিউনিটি আমরা মায়ের শরীর থেকে জন্মসূত্রে পাই। আবার রোগের পর কিংবা টিকাকরণের মাধ্যমে বেশ কিছু ইমিউনিটি শরীরে আসে। বেশ কিছু ইমিউনিটির ‘স্মৃতিশক্তি’ খুব প্রখর। তারা ঠিক জীবাণুদের মনে রেখে দেয়। ভবিষ্যতে কখনও সেই জীবাণু ইমিউনিটির দুর্গের কাছাকাছি এলেই পুরো এক কোপে ঘ্যাচাং ফু!!
– না, মানে ডক্টর.. তাহলে ইমিউনিটি কমে যাওয়ার ব্যাপারটা কী?
– এটা মূলত দু’রকম। একটা জন্মগত অনাক্রম্যতার অভাব। আরেকটা জন্মের পর বিভিন্ন কারণে হয়। পরেরটাই বেশি হয়। এইচ.আই.ভি সংক্রমণ, মারাত্মক হাম বা ক্যান্সারসহ অন্যান্য খারাপ রোগ, অপুষ্টি, পেচ্ছাব দিয়ে প্রোটিন বেরিয়ে যাওয়ার রোগ, বাজে ভাবে পুড়ে যাওয়া, স্টেরয়েড জাতীয় বিভিন্ন ওষুধ ইত্যাদি শরীরের ইমিউনিটি কমিয়ে দিতে পারে।
– তাহলে কীভাবে বুঝবো ইমিউনিটি কমে যাচ্ছে?
– বছরে চার বারের বেশি নতুন ইনফেকশন, দুবারের বেশি সাইনাসের ইনফেকশন বা নিউমোনিয়া, দু’মাস অ্যান্টিবায়োটিক খেয়েও সংক্রমণ না কমা, বারবার চামড়ার গভীরে, অভ্যন্তরীণ অঙ্গের মধ্যে ইনফেকশন, এক বছরের বেশি বয়সে মুখে ছত্রাকঘটিত ঘা, বারবার শিরায় ইঞ্জেকশন দেওয়ার প্রয়োজন হওয়া, মাথার ইনফেকশন, বাড়িতে রক্ত সম্পর্কের কারো ইমিউনিটির রোগ থাকা, সঠিক পুষ্টি ও বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়া ইত্যাদি, দেখলে সতর্ক হতে হবে। অবশ্য পুষ্টি ও বৃদ্ধি ঠিক হচ্ছে কিনা সেটা চিকিৎসকই ঠিক করবেন। নইলে পৃথিবীতে ৯৯% বাবা-মায়েরই মনে হয়, ‘বাচ্চার ওজন বাড়ছে না, বাচ্চা কিচ্ছু খাচ্ছে না!!’
– ও আচ্ছা। না, আমাদের তিয়াসের এরকম কোনও সমস্যা নেই।
– সেজন্যই তো বলছি, সামান্য হাঁচি-কাশির জন্য তিয়াসের ইমিউনিটি কমে গেছে বলে ভাবার কোনও কারণ নেই। আর যদি কারও ইমিউনিটি কমে গেছে বলে আমরা সন্দেহ করি তখন রক্তের অ্যান্টিবডি, বিশেষ উৎসেচক সহ বেশ কিছু পরীক্ষা, চামড়ার পরীক্ষা, এইচ.আই.ভি. সেরোলজি, বুকের ছবি, ইত্যাদি পরীক্ষা করতে হতে পারে।
– যাক বাবা, আপনি যখন বলছেন ইমিউনিটির সমস্যা নেই, আমরা নিশ্চিন্ত। আচ্ছা, একটা কথা বলবো স্যার?
– তাহলে যে ইমিউনিটি বাড়ানোর এত ওষুধ, জড়িবুটি, পুরিয়া বিক্রি হয় সেগুলোর কোনও দাম নেই?
– না। এভাবে ইমিউনিটি বাড়ে বলে কোনও প্রমাণ নেই। বাজারে এরকম অনেক অবৈজ্ঞানিক ওষুধ পাওয়া যায় যাদের সাথে গুড়জলের কোনও তফাত নেই। যাদের সত্যিই ইমিউনিটির রোগ আছে তাদের শিরার মধ্যে অ্যান্টিবডি দেওয়া, স্টেম সেল ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন, প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক বা ছত্রাকনাশক ওষুধ প্রয়োগ ইত্যাদির মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। এছাড়া বিশেষ কোনও রোগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট রোগটির জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা লাগবে।
– আসলে স্যার, আমার কলিগদের বাচ্চারা সবাই রোজ ইমিউনিটি বাড়ানোর ওষুধ খায়। তাই আমিও ভাবলাম..
– রোজ সুষম আহার, ঘুম, পরিমিত ব্যায়াম, পরিচ্ছন্নতা, সম্পূর্ণ টিকাকরণ.. এই ব্যাপারগুলোর দিকে নজর রাখুন। ইমিউনিটি এমনিতেই বজায় থাকবে।
– আপনার কাছে না এলে জানতেই পারতাম না। শুধু শুধু ইমিউনিটি বাড়ানোর ওষুধ খাইয়ে যেতাম..
ডা. ঘোষ চুপ করে সিলিংয়ের দিকে অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন…
Darun!
বাজার করার সময় কী কী কেনা দরকার তার একটা তালিকা দিন । আজকাল মাছের বদলে ব্রয়লার মুরগির আদর ঘরে ঘরে । ছেলে-মেয়েরা শাকপাতা , লাউ-কুমড়ো , মূলো , গাজর , পেঁপে , শিম, সজনে-ডাঁটা ইত্যাদি খেতেই চায়না ……। অত: কিম !
আমার অভিমত বাচ্ছা দের খাবার Platable হতে হবে, না হলে ওরা খেতে চায় না, মেনুতে সব্জি রাখতে হবে না হলে, ছোট থেকে অভ্যাস হবে না.