ভর সন্ধ্যে। হোয়াইট হাউসের সামনের চত্বরে একটা কাঠের বেঞ্চে এক মধ্যবয়সী শ্বেতাঙ্গ মহিলা টিভি-র বুম হাতে বসে আছে। অল্প আলো। হোয়াইট হাউস বা তার সংলগ্ন অ্যাপার্টমেন্টগুলোতে খুব কম আলো জ্বলছে। অল্প আলোতেও বোঝা যায়, বিগতযৌবনা হলেও মহিলা সুন্দরী এবং মাথার চুল আশ্চর্য্য কালো।
সামনের রাস্তা দিয়ে করোনা ভাইরাস নিঃশব্দে হেঁটে যাচ্ছিল। সে অন্ধকারে একা মহিলাকে বসে থাকতে দেখে থমকে দাঁড়ালো।
‘আরে আপনি এখানে বসে কি করছেন? চলে যান, নইলে সিকিউরিটি এক্ষুণি তুলে নিয়ে যাবে।’
‘আমাকে কিছু করবে না। আমি সাংবাদিক।’
‘ও হো, স্যরি। টিভি-র ডান্ডাটা দেখেই আমার বোঝা উচিৎ ছিল। তা আপনার নাম কি? এখানে বসে কি করছেন? কিছু ঘটতে চলেছে নাকি?’
‘আমার নাম মণিকা। মণিকা লিউইনস্কি।’
‘উরিব্বাস। আপনার নাম শুনেছি বটে! আমার জন্মের অনেক আগে আপনি এখানে ইন্টার্ন ছিলেন না? ক্লিন্টনের সময়ে?’
‘হ্যাঁ, কিন্তু এখন সাংবাদিকতা করি, ক্যালিফোর্নিয়ায়। এখানে বসে আছি হোপ হিকস-এর একটা ইন্টারভিউ নেব বলে।’
‘ক্যালিফোর্নিয়া থেকে নিজে এসেছেন হোপ হিকস-এর ইন্টারভিউ নিতে? কিন্তু কেন?’
‘জিজ্ঞাসা করব, হোপের থেকে কোন রুটে করোনা ভাইরাস ট্রাম্পের কাছে গেল?’
‘যা-ই বলুন ম্যাডাম, হোপ হিকস একটা বিষয় বটে। শুধু ট্রাম্প কেন, আপনার বিল-এরও মাথা ঘুরে যেত!’
‘তুমি তো আচ্ছা বেয়াদপ, একজন সুন্দরী মহিলার সামনে আর একজন সুন্দরী মহিলার প্রশংসা করছ!’
‘শুনুন ম্যাডাম, আমি ভাইরাস, করোনা ভাইরাস। পুরুষ মানুষ নই। কোদালকে কোদাল বলতে ভয় পাই না।’
‘ও, তাহলে তো তুমিই বলতে পারবে। বলে ফেলো, তুমি ট্রাম্পে কি করে সেঁধোলে?’
‘ওটা বলা যাবে না ম্যাডাম, ট্রেড সিক্রেট। তবে আপনার কেসের মত স্কার্টে ঝুলে যাই নি।’
‘তাহলে?’
‘ছিলাম ভালো সুন্দরী মহিলার ফিনফিনে গলায়, হৃদয়ের পাশে। কি কুক্ষণে যে ওই হোসপাইপে ঢুকতে গেলাম!’
‘ট্রাম্পের গলা?’
‘না তো কি? গলায় একটা ছোটখাটো টারবাইন বসালে গোটা হোয়াইট হাউসের আলো জ্বালানো যেত। কি ডেসিবেল!’
‘বিল কিন্তু এরকম ছিল না।’
‘সে তো বটেই, ইনি একেবারে অপ্রতিদ্বন্দ্বী। ইউনিক। আমি ঢোকার পরেই তো নর্তন-কুর্দন শুরু হল। মাস্ক পরবে না। ছিঁড়ে ফেলে দেবে। ঘরে থাকবে না। গাড়ি নিয়ে ভোটের প্রচার করে বেড়াবে- কত কি! ডিবেট-এর সময় তো জো বিডেনকে আরেকটু হলেই ভাইরাসের ঝর্ণায় ভাসিয়ে দিয়েছিল! নেহাৎ টিভি ষ্টুডিওতে অনেক দূরে দূরে বসিয়েছিল – তাই কিছু হয় নি।’
‘তারপর?’
‘তারপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, ডাক্তার, নার্স, সিকিউরিটি, এদের যে কি দুরবস্থা- বলে বোঝানো যাবে না! একরকম বাধ্য হয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে ওরা।’
‘হোয়াইট হাউসেও তো ঘরবন্দী থাকছে না শুনেছি।’
‘হ্যাঁ, দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। আমিও তো টিঁকতে পারলাম না। দমবন্ধ হয়ে আসছিল ট্রাম্পের গলার ভেতর। তাই লুকিয়ে-লুকিয়ে পালাচ্ছি। বাকী ষ্টাফরাও বেশীরভাগ-ই হয় পালিয়ে গেছে, নয়তো দরজা বন্ধ করে লুকিয়ে আছে। ট্রাম্পের সাথে একদিন থাকার চেয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে থাকা ঢের সহজ।’
‘ও। তাই বেশীরভাগ ঘরগুলো অন্ধকার দেখাচ্ছে!’
‘হ্যাঁ। আর বেশীক্ষণ এখানে থাকবেন না, মাথা খারাপ হয়ে যাবে আপনার। আশপাশের লোককে কামড়েও দিতে পারেন। তার চেয়ে পা চালিয়ে চলুন।’
‘হ্যাঁ, তাই চলো।’