মোড়ের মাথায় গণতন্ত্রের সাথে দেখা।
সৌভাগ্যবশত প্রতীক পতাকাহীন , একেবারে একা,
দৃষ্টি ঈষৎ ঘোলাটে, যেমনটা চেয়ে থাকে দিকভ্রষ্ট লোকে,
আমায় অনেকক্ষণ উল্টেপাল্টে দেখে অবশেষে রায় দিলো,
‘কোথায় দেখেছি যেন তোকে!’
আমি বললাম, ‘আমরা কিন্তু তোমায় চিনি সেই আঠেরো বছর থেকে,
তীর্থের মতো পাঁচ বছর অন্তর তোমায় প্রদক্ষিণ করে আসি প্রত্যেকে,
কি ঘটা করে তোমার উৎসব হয়, মান্যদের ধুলো পড়ে কুঁড়ে ও ফুটপাতে,
তুমিও গুটি গুটি দাঁড়াও তখন জোড়হাতে ওনাদের সাথে।’
গণতন্ত্র বললো, ‘আমরা মানে? তোর দলের পরিচয় দে,
কাদের ভালোবাসিস আর কাদের দেখলে ফেটে পড়িস ক্রোধে,
ডানঘেঁষা না বাঁয়ে বেঁকা, ভিবজিওরের কোন রঙটায় পতাকা চোবানো,
সবিস্তার বল দেখি। নাম মনে নেই তবু লাগে চেনা কেন!’
আমি আঁতকে বললাম, ‘ধুর, নাম বললেই যেন তুমি বুঝবে!
তাছাড়া, শুনলেই বোধহয় প্রদেশ, ধর্ম জাত এসব খুঁজবে ,
যা সব কঠিন কঠিন কথা জিজ্ঞেস করলে, মাথা গেলো ঘুরে!
ওসব রঙের ঠিকাদারদের থেকে আমার নিবাস বহুদূরে,
সেখানে ভাতের দানায় ঘামের গন্ধ, ঘুম ছাড়া স্বপ্ন দেখা মানা,
ভোটের নথি ছাড়া আর কারো মনে থাকে না সেসব ঠিকানা।
গণতন্ত্র হো হো করে হেসে বলে, ‘তাই বল! এইবারে চিনেছি ঠিক,
আমারই মতন তুই ফালতুর দলে, এদেশের কোনো এক
আমনাগরিক।
আমি ধুপ করে বসে পড়লাম গণতন্ত্রের পাশে। বললাম ফিসফিস করে
‘তোমার কাছে সব মানুষ সমান, তেমনই লিখেছিলাম পরীক্ষায় উত্তরে,
আর আজ তুমি জাত ধর্ম ভালোবাসা ঘৃণা সব জানতে চাইছো কেন হে?’
গণতন্ত্র তার ময়লা পোশাক সামলে তাকালো তীব্র সন্দেহে,
‘তুই সাংবাদিক নাকি? এসব প্রশ্ন করছিস শুনলে তোর নির্ঘাত হবে হাজতবাস,
আমাকেও বেশ কুকথা শুনতে হবে, প্যাঁদানিও জুটতে পারে। সেটাই কি চাস?’
আমি বললাম ‘এখন কেউ নেই। কানে কানেই বলো নাহয়, এতদিন কি জানতাম ভুল?’
‘বিলকুল!’ চেঁচালো গণতন্ত্র।’ধনী গরিবের থেকে বড়,গুরু লঘুর থেকে। যা কিছু শেখাক তোর স্কুল,
শাসকের সমর্থক আর বিরোধীর সমান চোখে বিচার হয়না কোনোখানে,
কাকে কেস দেবে আর কে জামিন পাবেনা, দেশের প্রহরীরা সেটা ভালো করে জানে।’
নাছোড় আমিও বলি ‘প্রহরী বলতে? নেতা মন্ত্রী জজ না পুলিশ?’
‘আহ!’মহা ধমকে ওঠে গণতন্ত্র। ‘চারদিক দেখেও আবার ওসব কথা তুলিস?’
আমি বললাম ‘বুঝেছি। মানে দাঁড়ালো গিয়ে’.. মুখ চেপে ধরে কাতরে বলে গণতন্ত্র,
‘ওরে পাগল, চুপ! মেনে নে ব্যাটা, এই খেলায় তুই আর আমি,
দুজনেই আব্বুলিশ।