‘শঙ্খবেলা’ সিনেমাতে সার্জারির বড় ডাক্তার রোগীকে অপারেশন না করেই ডিসচার্জ করে দেয় পদস্থ পুলিশ অফিসার তাড়াতাড়ি অপারেশনের জন্য সুপারিশ করেছিল’ বলে। বাস্তবিকক্ষেত্রেও আমাদের অনেক বসকেও দেখেছি কে কি সুপারিশ করলো সেটাকে তেমন গুরুত্ব না দিতে। ঘোর কংগ্রেসী সময়ে ডাঃ রঞ্জিত পাঁজাকে দেখেছি বিভিন্ন নেতার চিঠিকে বিশেষ পাত্তা না দিতে, যদিও তাঁর ভাই ছিলেন তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এই SSKM-এই, ডাঃ ডি. সেন মন্ত্রী রাম চ্যাটার্জী তাঁকে দেখাতে এসে চেয়ারে বসতে গেলে বলেন, ‘আপনাকে কিন্তু টুলে বসতে হবে, কারণ আপনার সরকার রোগীর জন্য চেয়ার নয় টুল বরাদ্দ করেছে’। লক্ষণীয় যে রাম চ্যাটার্জী কিন্তু ডাঃ সেনের কথা মেনেও নিয়েছিলেন।
আসলে তখন শুধু শিক্ষকডাক্তার নয়, সমাজের বিভিন্ন পেশার মানুষের মধ্যে অনেকেরই একটা আত্মসম্মান বোধ ছিল, এমনকী অনেক সরকারি পদাধিকারীদেরও। বাম আমলের প্রথম দিকে এল.ভি. সপ্তর্ষি নদীয়ার জেলাশাসক থাকার সময়ে জেলার ডাকসাইটে মন্ত্রীকে বলেছিলেন, ‘স্যার ওটা আমার চেয়ার….’। মন্ত্রী অন্য চেয়ারে বসতে বললেও দাঁড়িয়ে ছিলেন..! না, এসব এখন আশা করাই নিতান্ত বাতুলতা। তামিলনাড়ুতে তো ‘আম্মা’ র সামনে প্রায় সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করতেন অফিসাররা; সেদিক থেকে এখানে তো উনি অনেক ‘লিবারেল’!!
আসলে, এক একটা সময়ে একটা ঝোঁক বা প্রবণতা কাজ করে, প্রভাবিত করে একটা ভালো স়ংখ্যার মানুষকে। শাসকদল তো কম বেশি চাইবেই একান্ত বশ্যতা, মানুষ কীভাবে react করবে সেটাই বড় কথা। বর্তমানে সমস্যা মূলতঃ দুটো জায়গায়, ১) আত্মসম্মান বোধের ক্রমাবনতি যা প্রায় শূন্যে এসে ঠেকছে, আর ২) সম্ভাব্য অপ্রাপ্তির পরিমাণ বা হারানোর অঙ্কটা খুব ছোটখাটো নয়, অনেকটাই। এক্ষেত্রে আবার যার যত বেশি রোজগার তার ক্ষতির সম্ভাবনা অঙ্কের হিসেবেই ততটাই বেশি !!
বসের চাটুকারিতা করা বা রাজনৈতিক নেতাদের সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা তো আর নতুন জিনিস নয়। যেটা ইদানীংকালে অতি অভিনব তা হলো এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ বেপরোয়া ভাব। কোনও কিছুর তোয়াক্কা না ক’রে এই বাঙলার Premier Institution এস. এস. কে. এম. হাসপাতালকে যেভাবে চোর গুণ্ডা নেতাদের আশ্রয়স্থল বা অভয়ারণ্য ক’রে তোলা হয়েছে, সেটা শুধু বিস্ময়কর নয় রীতিমতো চ্যালেঞ্জিংও বটে!!
এটাকে ঠিক চাটুকারিতা বা খুশি করার প্রচেষ্টার একটু বাড়াবাড়ি ভাবলে কিন্তু ভুল হবে, কারণ এ কাজে যথেষ্ট ঝুঁকি আছে। এটা তো সরাসরি অপরাধীকে সাহায্য করার বা আশ্রয় দেওয়ার চেষ্ট ; cognizable offence..। যে কোনও সময়ে ED/CBI/Court ডেকে পাঠাতে পারে। কিন্তু, কী আশ্চর্য !! কেউই কিছু করছে না!! কোর্ট নানা রকম মন্তব্য করছে বটে, কিন্তু সত্যি করে বলতে গেলে ঐ মন্তব্যগুলোর আদৌ কোনও দাম নেই এবং ওগুলো রেকর্ডভুক্তও হয় না। আমরাই শুধু শুধু সারা সন্ধে এই নিয়ে চিৎকার চেঁচামেচি শুনে সময় কাটাই!!
প্রশ্নটা এখানেই যে কোন্ আশ্বাসের বলে বলীয়ান হয়ে SSKM-এর সুপার বা সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকমণ্ডলী এই ধরণের বেয়াদবি করতে সাহসী বা দুঃসাহসী হতে পারে!! চাটুকার বা বশংবদ প্রশাসক তো কম দেখিনি, তা বলে নিজের এতটা ঝুঁকি নিয়ে?? সত্যি মনে পড়ছে না!!
মূল রহস্যটাই এখানে, ঠিক কী কী কারণে এতটা dare devil / বেপরোয়া ভাব, সোজা সরল ট্রান্সফার-পোস্টিং-এর যুক্তি দিয়ে এই অঙ্ক solve করা একেবারেই অসম্ভব !!!
জীবনে পেশার ভূমিকা কিন্তু বিশাল, মা বাবার থেকে কোনও অংশে কম নয়। বেঁচে থাকা, আরাম করা, বাড়ি-গাড়ি-বেড়ানো..সবই তো পেশার কল্যাণে….! তাই, কারণ যতই গূঢ় হোক, প্রলোভন যতই আকর্ষণীয় হোক, পেশার অসম্মান করাটা কিন্তু সব দিক থেকেই চূড়ান্ত অমার্জনীয় অপরাধ আর SSKM-এর শীর্ষস্থানীয়রা সেটাই করে চলেছেন লাগাতার ভাবে, দিনের পর দিন মাসের পর মাস!!!
SSKM-এ সকলেই ভীষণরকম unethical, সকলেরই চোরেদের সঙ্গে সম্পর্ক as thick as thieves এটা মেনে নেওয়া একটু কষ্টকর। এটা তো বোধহয় সম্ভবও নয়। অনেকগুলো নাম তো এখনই মনে পড়ছে, কিন্তু তাদের ভূমিকা কি??
Whistleblower নাহয় নাই পাওয়া গেল’; কিন্তু আরে ভাই, কিছু তো মুখ খোলো, অন্ততঃ এটা তো বুঝি যে সকলেই মরে যায় নি..জীবন্ত লোক এখনও দু চারটে ঘু্রে বেড়াচ্ছে আর SSKM এরই বুকে…….!!!!