Skip to content
Facebook Twitter Google-plus Youtube Microphone
  • Home
  • About Us
  • Contact Us
Menu
  • Home
  • About Us
  • Contact Us
Swasthyer Britte Archive
Search
Generic filters
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Menu
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Menu
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Search
Generic filters

ঊর্মিমুখর: পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ

Oplus_16908288
Dr. Sukanya Bandopadhyay

Dr. Sukanya Bandopadhyay

Medical Officer, Immuno-Hematology and Blood Bank, MCH
My Other Posts
  • June 13, 2025
  • 11:09 pm
  • No Comments
দীপান্বিতা প্রত্যহ প্রত্যুষে শয্যাত্যাগ করিয়া সূর্যবন্দনা সমাপনান্তে রাজপ্রাসাদের প্রাকারের বাহিরে ঈশান নদীর তীরস্থ ঘাটে স্নান করিতে যাইত।
স্নানাদি সম্পন্ন হইলে সে অবরোধে নিজ প্রকোষ্ঠটিতে ফিরিয়া সামান্য ফলাহার ও জলপানপূর্বক দেবী রাজ্যশ্রীর সমীপে উপস্থিত হইত। বিভিন্ন বৌদ্ধ সূত্তের উদ্ধৃতি এবং জাতক কাহিনীর পাঠ ও ধর্মালোচনায় বেলা বহিয়া যাইত।
একদিন এই নিত্যকর্মে ব্যত্যয় ঘটিল — সদ্য সুপ্তোত্থিতা দীপান্বিতা সূর্যবন্দনার উদ্দেশ্যে প্রকোষ্ঠের বাহির হইবামাত্র দাসী দেবকীর্তির সম্মুখীন হইল। দেবকীর্তি নাটকীয় মুখভঙ্গিমা সহযোগে অক্ষিগোলক ঘূর্ণিত করিয়া কহিল — “দেবী রাজ্যশ্রী তোমাকে স্মরণ করিয়াছেন। সত্বর তাঁহার নিকটে গমন করো। না জানি কি অনর্থ ঘটিয়াছে।”
দীপান্বিতা ভীত হইয়া কহিল — “দেবী কি অসুস্থ বোধ করিতেছেন? তাহা হইলে তো রাজাকে সংবাদ দেওয়া আবশ্যক!”
উত্তরে দেবকীর্তি কূট হাসিল। তাহার পরে রহস্য করিয়া কহিল –“হাঁ, তোমার তো আবার রাজা নহিলে চলিবে না — চিন্তা করিও না, দেবী সে বিষয়ে সম্যক অবগত আছেন। প্রয়োজন পড়িলে রাজা, মন্ত্রী, সান্ত্রী সকলেই আসিবেন অখন” –এবম্বিধ অপ্রত্যাশিত বাক্যবাণে তাহাকে জর্জরিত করিয়া দাসী তাহার পরিধেয় বস্ত্রের অঞ্চল ঘুরাইয়া অকুস্থল পরিত্যাগ করিল।
দীপান্বিতার মস্তিষ্কে বিপদসঙ্কেত ধ্বনিত হইয়া উঠিল।
কিয়ৎকাল পরে সে যখন দেবী রাজ্যশ্রীর কক্ষের সম্মুখে উপস্থিত হইল, তখন রাণী দুর্গাবতী জ্যা-মুক্ত শরের ন্যায় কক্ষ হইতে নিষ্ক্রান্ত হইতেছিলেন। কক্ষের দ্বারের নিকট দীপান্বিতার সহিত তাঁহার সংঘর্ষ হইয়া গেল। দীপান্বিতা তৎক্ষণাৎ রাণীর পদপ্রান্তে উপবিষ্ট হইয়া অনিচ্ছাকৃত আঘাতের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করিল — যদিচ আপাতদৃষ্টিতে অপরাধ তাহার নহে। দুর্গাবতী কঠোরচক্ষে তাহাকে নিরীক্ষণ করিয়া বিনা মন্তব্যে সোমদত্তাকে লইয়া আপন বিশ্রামকক্ষের উদ্দেশ্যে গমন করিলেন।
দেবী রাজ্যশ্রীর কক্ষাভ্যন্তরে তখন অস্বস্তিকর নীরবতা বিরাজ করিতেছে। রাণী দুর্গাবতীর অভিযোগগুলি লইয়া রাজ্যশ্রীর মনোমধ্যে প্রবল আন্দোলন চলিতেছিল। কিন্তু তিনি পরমসৌগতা, তথাগত তাঁহার উপাস্য। তাঁহার ধর্ম তাঁহাকে উত্তেজনা পরিহার করিতে শিখাইয়াছিল। শান্তকণ্ঠে দীপান্বিতাকে উপবেশন করিতে অনুরোধ করিয়া তিনি প্রশ্ন করিলেন — “রত্নাবলী, তুমি কি রাজা হর্ষবর্ধনকে ভালবাসিয়াছ?”
তিলেক দ্বিধার পরে দীপান্বিতা যখন কথা কহিল, তাহার কণ্ঠে কোনওরূপ অপরাধবোধের চিহ্নমাত্র নাই । সে অকুণ্ঠিত স্নিগ্ধস্বরে উত্তর করিল — “হাঁ আর্যা, অবশ্য ভালবাসিয়াছি। কামনার দৃষ্টিতে বাসি নাই — যেমন করিয়া সমগ্র উত্তরাপথবাসী তাঁহাকে ভালবাসিয়াছে, তেমন করিয়া বাসিয়াছি।”
রাজ্যশ্রী মৃদুকণ্ঠে কহিলেন — “ঠিক বুঝিলাম না — বিশদে বলো।”
দীপান্বিতা রাজ্যশ্রীর শয়নাগারের ভূমিতলে উপবেশনপূর্বক ধীরে ধীরে কহিতে লাগিল –“বর্ধন এবং মৌখরী রাজবংশ যখন নষ্টমতি দেবগুপ্ত ও গৌড়াধিপ শশাঙ্কের চক্রান্তে নিপাত যাইবার উপক্রম করিয়াছিল, তখন দুর্ভাগা প্রজাগণ রাজা হর্ষবর্ধনকেই উদ্ধারকর্তা স্থির করিয়া তাঁহার চরণপ্রান্তে আপন ভাগ্য গচ্ছিত রাখিয়াছিল — আমিও ব্যতিক্রম নহি দেবি! পুষ্যভূতিকুলতিলক তাঁহার প্রজাদিগের আশা পূর্ণ করিবেন, সদ্ধর্মাচারী নরপতি হিসাবে সুনাম অক্ষুণ্ণ রাখিবেন, কায়মনোবাক্যে ইহাই চাহিয়াছিলাম। আমৃত্যু, তাহাই চাহিব। আমার নিকট কান্যকুব্জের মঙ্গলের তুল্য প্রেয় অন্য কিছুই নাই আর্যা।”
রাজ্যশ্রী পূর্ববৎ কোমলকণ্ঠে কহিলেন – “রাজা কি তোমাকে ভালবাসেন?”
দ্বিধাহীন স্বরে দীপান্বিতা উত্তর করিল — “তাঁহার কথা তিনি জানেন। শাক্যশ্রেষ্ঠ সিদ্ধার্থ ব্যতীত ত্রিভুবনে কাহাকেও আমি অন্তর হইতে কামনা করি নাই।”
রাজ্যশ্রীর কণ্ঠ স্তিমিত হইল। তিনি ম্লান, বিষণ্ণমুখে কহিলেন — “রাজার বিবাহের চারি বৎসর অতিক্রান্ত হইয়া গিয়াছে — তিনি অদ্যাবধি রাণীর সহিত সহবাস করেন নাই। তুমি কি ইহা সম্বন্ধে অবগত ছিলে, রত্নাবলী?”
অপরিসীম ক্ষোভে, লজ্জায়, অন্তর্দাহে দীপান্বিতার যেন বাকরোধ হইয়া গেল। সে অধোবদন হইল। দেবী রাজ্যশ্রীর বাক্যের ইঙ্গিত কল্পনা করিয়া গ্লানিতে তাহার হৃদয় পরিপূর্ণ হইল, ঘৃণায় সমস্ত দেহ কন্টকিত হইয়া উঠিল।
বহুক্ষণ পরে দীপান্বিতা যখন কথা কহিল, রাজ্যশ্রী সবিস্ময়ে লক্ষ্য করিলেন, তাহার দেহের ভাষা সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তিত হইয়াছে।
মেরুদণ্ড ঋজু, মস্তক উন্নত, মুখাবয়বে কোনও অন্যায় আচরণজনিত অনুশোচনার চিহ্ন নাই। দীপান্বিতা দেবী রাজ্যশ্রীর মুখোপরি আপন দৃষ্টি স্থাপন করিয়া নিষ্কম্প স্বরে কহিল — “রাজার চিত্তদৌর্বল্যের দায় তাঁহার নিজের। যে নরপতি আপন অবাধ্য ইন্দ্রিয়কে সংযত রাখিতে অক্ষম, তাঁহার আচরণের দায়িত্ব কেবল তাঁহারই। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, ধরাধামে একের কৃতকর্মের ফল অন্যে ভোগ করিতে বাধ্য হয়। মহারাণী দুর্গাবতীর চক্ষে আমি অপরাধ না করিয়াও দোষী সাব্যস্ত হইয়াছি। আমি আমার জন্য নির্ধারিত শাস্তি অবশ্যই গ্রহণ করিব। অদ্যই আমি কান্যকুব্জের রাজ অবরোধ ত্যাগ করিয়া যাইব দেবী।”
রাজ্যশ্রী ব্যথিত কণ্ঠে কহিলেন — “তোমার অবস্থা আমি সম্যকরূপে উপলব্ধি করিতেছি। তুমি নিরপরাধ। অনাথা রমণী, একাকী কোথায় যাইবে? যাইও না রত্নাবলী। আমি দুর্গাবতীকে সমস্ত বিষয় বিবেচনা করিতে নিশ্চয় অনুরোধ করিব।”
দীপান্বিতা উঠিয়া দাঁড়াইল। তাহার পরে মৃদু হাসিয়া কহিল — “আপনার অপার করুণা আমি কদাচ বিস্মৃত হইব না দেবি। জগতের সকল অনাথের যিনি নাথ, তাঁহারই চরণতলে আশ্রয় লইব। আচার্য মণিপদ্ম বর্তমানে জেতবন বিহারে বিরাজ করিতেছেন। আমি তাঁহার নিকট প্রব্রজ্যা গ্রহণ করিব।”
রাজ্যশ্রীর চরণপ্রান্তে সশ্রদ্ধ প্রণতি জানাইয়া দীপান্বিতা গাত্রোত্থান করিল। ধীর, দৃঢ়পদে তাঁহার কক্ষ হইতে নিষ্ক্রান্ত হইয়া সে আপন প্রকোষ্ঠের উদ্দেশে চলিল।
অদ্য প্রভাত হইতে সংঘটিত ঘটনাপারম্পর্যের অভিঘাতে তাহার চিত্তবৈকল্য ঘটিয়াছিল। সে ভাবিতেছিল, স্রোতের শৈবালসম তাহার জীবন — কোনও স্থানে স্থিত হওয়া তাহার ভাগ্যে নাই। পিতা-মাতার স্নেহচ্ছায়া, বাল্যসখার সাহচর্য, স্থানীশ্বর নগরীর সেই ক্ষুদ্র কুটীরের অপার শান্তি, কান্যকুব্জের প্রাসাদের রাজকীয়তা, মাধুর্য্যহীন জীবনে অনাহূত অপ্রত্যাশিত আশ্চর্য প্রেম — সমস্তই মরীচিকাতুল্য অলীক বলিয়া তাহার ভ্রম হইতে লাগিল।
দীপান্বিতার প্রতীতি জন্মিল, জগতে সত্য কেবল তথাগত বুদ্ধ, আর সকলই মধুর প্রমাদ।
মৈত্রীং কারুণ্যরত্নপ্রমুদিতহৃদয়ঃ প্রেয়সীং সন্দধানঃ
জিত্বা যঃ কামকারিপ্রভবভিভবং শাশ্বতীং প্রাপ্য শান্তিং
স শ্রীমান লোকনাথো জয়তি দশবলোহনাশ্চ তথাগতঃ।
মোহাবিষ্ট নারী আপনাকে ভুলাইবার জন্য বারম্বার স্বগতোক্তি করিল –
‘যিনি কারুণ্যরত্নপ্রমুদিত হৃদয়ে মৈত্রীকে প্রেয়সীরূপে ধারণ করিয়াছেন, যিনি মাররূপ অরির আক্রমণ পরাভূত করিয়া শাশ্বত শান্তি প্রাপ্ত হইয়াছেন, সেই শ্রীমান দশবল লোকনাথ এবং তথাগত জয়যুক্ত হউন। আমার চির আরাধ্য অমিতাভ, বহু শতাব্দী পূর্বে মহানির্বাণের পথে বিলীন গোতম ভগবানের করুণাকণা কামনা করিয়া আমি ভিক্ষাবৃত্তি করিব — জড়জগতে অন্য কাহারও নিকট আমার আর কোনও আকাঙ্ক্ষা অবশিষ্ট থাকিবে না।’
সায়ংকালে সম্রাট হর্ষবর্ধন ভগিনী রাজ্যশ্রীর নিকট কান্যকুব্জের রাজপুরী হইতে দীপান্বিতার প্রস্থানসংবাদ শুনিলেন। তাঁহার হৃদয় প্রবলভাবে বিচলিত হইলেও হর্ষ শান্তমুখে কহিলেন — “দুঃখ করিও না ভগিনী। কেহ যদি তথাগতের শরণ লইতে উদগ্রীব হয়, তাহার ধর্মাচরণে বাধা দিবার অধিকার রাজার নাই।”
রাজ্যশ্রী মৃদুস্বরে বলিলেন — “এই মতামত কি রাজার? নাকি রত্নাবলী-সখা হর্ষের?”
হর্ষ ঈষৎ উষ্মা সহকারে বলিয়া উঠিলেন — “এ কেমন প্রশ্ন? উভয়ের কি পৃথক অস্তিত্ব রহিয়াছে?”
রাজ্যশ্রী বুঝিলেন, জ্যেষ্ঠভ্রাতার অন্তরের কোমল স্থানে তিনি আঘাত করিয়াছেন। তথাপি বিন্দুমাত্র অনুতপ্ত না হইয়া তিনি কহিলেন –“উভয়ই যদি এক হ’ন রাজন, তাহা হইলে আজ অবধি দুর্গাবতীকে আপনি পত্নীত্বের গৌরব হইতে বঞ্চিত করিয়া রাখিয়াছেন কোন অধিকারে? এই বিবাহ কি মৈত্রক রাজপরিবার এবং পুষ্যভূতিরাজবংশের মধ্যে অনুষ্ঠিত হইয়াছিল? মানব হর্ষবর্ধন এবং মানবী দুর্গাবতীর মধ্যে হয় নাই?”
হর্ষ বিমর্ষমুখে নীরব রহিলেন।
রাজ্যশ্রী অল্প হাসিয়া বলিলেন – “মহারাজ, আমরা মনুষ্য — আমাদিগের চিত্তে শোক, ক্রোধ, প্রণয়, প্রতিহিংসা, সকল রিপুই বর্তমান — ইহা জৈব প্রবৃত্তি। কিন্তু সদ্ধর্মাচরণের মাধ্যমে প্রবৃত্তিকে সংযত রাখিতে হয়, ক্রমাগত অভ্যাসের ফলে অন্তে রিপুর সার্থক নিবৃত্তি হয়। ইহাই তথাগতের শিক্ষা, তাঁহার মার্গদর্শন।”
হর্ষকে তথাপি কোনও বাক্যস্ফূর্তি না করিতে দেখিয়া রাজ্যশ্রী ভ্রাতার নিকটে আসিয়া তাঁহার হস্ত ধৃত করিয়া অনুনয়ের কণ্ঠে বলিলেন —
“রত্নাবলীকে আপনি ভালবাসিয়াছিলেন, তাহাতে কোনও অন্যায় নাই। কিন্তু সে আপনার ভালবাসার বন্ধন স্বীকার করে নাই। সাধারণের হিতকর্মে নিজেকে নিয়োজিত করিবার আকাঙ্ক্ষায় প্রব্রজ্যা গ্রহণের অভিলাষে পথে নামিয়াছে। সেই মহৎহৃদয় নারী তাহার উপযুক্ত কার্যই করিয়াছে। এক্ষণে আপনি প্রজানুরঞ্জনের সহিত সঠিকভাবে গার্হস্থ্যধর্ম পালন করুন ভ্রাতা — দুর্গাবতীর প্রতি অবিচার করিবেন না।”
হর্ষ অবরুদ্ধ স্বরে জিজ্ঞাসা করিলেন — “রাজ্যশ্রী, রত্নাবলী কোন মহাচার্যের নিকট প্রব্রজ্যা গ্রহণের অভিলাষ ব্যক্ত করিয়াছিল, তাহা তোমার জ্ঞাত আছে কি”?
রাজ্যশ্রী ধীরে ধীরে রাজার হস্ত ছাড়িয়া আপনার কক্ষের দক্ষিণপ্রান্তে অবস্থিত গবাক্ষের নিকট গিয়া দাঁড়াইলেন।
কান্যকুব্জের রাজপ্রাসাদ স্থানীশ্বর অপেক্ষা বৃহৎ — প্রাকারের পরপারে অবস্থিত রাজপথ দেবী রাজ্যশ্রীর গবাক্ষ হইতে দৃষ্টিগোচর হয় না। তিনি অন্ধকার আকাশে আপনার দৃষ্টি পাতিয়া নিঃশব্দে প্রার্থনা করিলেন —
“হে গোতম, আমার ভ্রাতাকে প্রবৃত্তির মার হইতে রক্ষা করুন। তিনি তো কেবল একজন একনিষ্ঠ প্রণয়ী নন, তিনি যে রাজা — পুষ্যভূতিকুলতিলক, পরমভট্টারক সম্রাট – প্রজাগণের হিতচিন্তা, আপন রাজ্যরক্ষা ব্যতীত প্রকাশ্যে অন্য কোনও কিছুই যাঁহার কাম্য হইতে পারে না। রাজা যদি আপন অন্তরের দুর্বলতাকে পরাস্ত না করিতে পারেন, সমগ্র উত্তরাপথ অধর্মের আঁধারে নিমজ্জিত হইবে। হে মহাকারুণিক, জগতের সকল জীবের বন্দনার্হ ভগবান সুগত, আপনার সদ্ধর্মের আলোকে আমার ভ্রাতার জীবনপথ আলোকিত করুন।”
কিয়ৎকাল পরে আত্মসংবরণ করিয়া রাজ্যশ্রী হর্ষের দিকে ফিরিয়া অপেক্ষাকৃত সহজ স্বরে বলিলেন — “রত্নাবলী শ্রাবস্তীর জেতবন বিহারের আচার্য মণিপদ্মের নিকট প্রব্রজ্যা গ্রহণ করিতে চাহিয়াছিল। কিন্তু আপনি জানিয়া কি করিবেন রাজন? অশ্বপৃষ্ঠে তাহার পশ্চাদ্ধাবন করিবেন?”
হর্ষ অতীব লজ্জিত হইয়া নিশ্চুপ থাকাই শ্রেয় স্থির করিলেন। বস্তুত,এই বাসনা তাঁহার মনে জাগরূক হইয়াছিল, ইহা সত্য।
রাজ্যশ্রী পূর্ববৎ সহজ স্বরেই বলিতে লাগিলেন — “আপনি স্বচ্ছন্দে যাইতে পারেন, আপনি রাজা — জেতবন বিহার আপনার রাজ্যের সীমানার মধ্যেই অবস্থিত। কিন্তু যে নারী আত্মনির্বাণের ইচ্ছার ঊর্ধ্বে উঠিয়া সকল জীবের দুঃখমুক্তির পথ অনুসন্ধানের উদ্দেশ্যে বোধিসত্ত্বের অনুসারী হইতে চলিয়াছে সে কদাপি আপনার প্রণয়কে গ্রাহ্য করিবে না, সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করিবে। তাহার অন্তরে বুদ্ধ জাগিয়াছেন, সেই স্থলে কোনও মনুষ্যমূর্তি স্থাপন করিয়া রত্নাবলী তাহার আরাধনা করিতে পারিবে না। আপনাকে রিক্তহস্তে প্রত্যাবর্তন করিতে হইবে। এখন আপনার ইচ্ছা।”
হর্ষ দীর্ঘক্ষণ রাজ্যশ্রীর কক্ষে নির্বাক, নতমস্তক হইয়া বসিয়া রহিলেন।
রাজ্যশ্রী বুঝিলেন, ভ্রাতার হৃদয়াভ্যন্তরে মহাপ্রলয় চলিতেছে। ন্যায়পরায়ণ সম্রাটের বিবেকের সহিত প্রণয়াভিলাষী, অনুরাগী যুবকের হৃদয়াবেগের প্রচণ্ড স্নায়ুযুদ্ধ চলিতেছে। হর্ষের মুখের ভাব পরমা প্রকৃতির ঋতুবদলের ন্যায় ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তিত হইতেছে। রাজ্যশ্রী সংশয়ব্যাকুল চক্ষে রাজার দিকে চাহিয়া মিনতিপূর্ণ অন্তরে ভগবান সুগতকে নিরন্তর স্মরণ করিতে প্রবৃত্ত হইলেন।
অবশেষে হর্ষ আসন ত্যাগ করিয়া দণ্ডায়মান হইলেন। তাঁহার মুখশ্রী দেখিয়া রাজ্যশ্রীর বোধ হইল, যে সম্ভবত ভ্রাতার চিত্তবিক্ষোভ কিঞ্চিৎ প্রশমিত হইয়াছে। ভগিনীকে আশীর্বাদপূর্বক তাঁহার নিকট বিদায় লইবার কালে হর্ষ বলিলেন – “তুমিই শ্রেষ্ঠা ভগিনী — আপন ভ্রাতাকে, রাজ্যের নৃপতিকে স্বীয় দায়িত্ব যথাকালে স্মরণ করাইয়া আমার অশেষ উপকার করিয়াছ। চিন্তা করিও না — আমি কাহারও পশ্চাদ্ধাবন করিব না। আমি নিরপেক্ষ রাজা, দুষ্কৃতকারী নহি। প্রতিটি প্রজার স্বার্থ সুরক্ষিত করা আমার কর্তব্য। আপৎকালে আমার কর্তব্য স্মরণ করাইয়া তুমি তোমার উপযুক্ত কার্য্য করিয়াছ। এই মুহূর্ত হইতে যতদিন যশোমতীনন্দন হর্ষ জীবিত থাকিবে, আমার সাম্রাজ্যে কোনও নারীর স্বাধিকার ক্ষুণ্ণ হইবে না, সে রাণীই হউন অথবা দাসী — আমার বিরুদ্ধে কাহারও কোনও অভিযোগ তোমাকে শুনিতে হইবে না রাজ্যশ্রী। অদ্য আমার সহোদরার নিকট এই অঙ্গীকার করিলাম।”
মধ্যরাত্রি পার হইয়া গিয়াছে। শয্যায় একাকিনী রাণী দুর্গাবতী উষ্ণ অশ্রুতে উপাধান সিক্ত করিয়া অবশেষে নিদ্রাদেবীর ক্রোড়ে আপনাকে সমর্পণ করিতে সচেষ্ট হইয়াছেন।
অকস্মাৎ তিনি অনুভব করিলেন, কয়েকটি পেলব অঙ্গুলি তাঁহার ঊর্ধাঙ্গের অঙ্গাবরণের গ্রন্থিমোচনের উদ্যোগ করিতেছে। তিনি চমকিত হইয়া ত্রস্তে শয্যার উপরে উপবিষ্ট হইবার চেষ্টা করিলেন, কিন্তু সফল হইলেন না — মুহূর্তের মধ্যে দুইটি দৃঢ় বাহুর বন্ধনে আবদ্ধ হইয়া গেলেন। পালঙ্ক সংলগ্ন দীপদণ্ডের নির্বাপিতপ্রায় শিখার মলিন আলোকে দুর্গাবতী দেখিলেন, তিনি সম্রাট হর্ষবর্ধনের আলিঙ্গনমধ্যে বাঁধা পড়িয়াছেন।
দেহের প্রতিটি রোমকূপে বিপুল রসোল্লাসের আকস্মিক উদ্ভাসে বিহ্বলা রাণী আবিষ্কার করিলেন, স্বামী তাঁহাকে চুম্বন করিতেছেন। বিবাহের পরে স্বামীর প্রথম স্নেহচুম্বনের আবেশে দুর্গাবতীর আঁখিপল্লব নিমীলিত হইয়া আসিল। তাঁহার সযত্নবদ্ধ কবরী খুলিয়া গেল, মহামূল্য কণ্ঠহার ছিন্ন হইল, নীবিবন্ধ স্খলিত হইয়া পড়িল। সঙ্গমকালে, রাগমোচনের তুঙ্গ মুহূর্তে হর্ষের বাহুপাশে নিষ্পেষিত হইতে হইতে দুর্গাবতী আপন কর্ণমূলে স্বামীর অস্ফুট কণ্ঠস্বর শুনিতে পাইলেন — ‘রত্নাবলী, রত্নাবলী, তুমি আমার, তুমি আমার, কেবলমাত্র আমারই —‘
(ক্রমশ)
PrevPreviousঅঙ্ক ও স্বপ্নের গল্প
NextA National Tragedy That Has Shaken Us All!Next
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত পোস্ট

Memoirs of a Travel Fellow Chapter 2: Chhattisgarh: Where Red Dust Meets Red-Green Flags

July 7, 2025 No Comments

When I first scanned the list of centres offered through the travel fellowship, one name leapt out at me: Shaheed Hospital—a Martyrs’ Hospital. There was

অভয়া আন্দোলন: রাজপথ থেকে এবার ছড়িয়ে পড়ুক আল পথে

July 7, 2025 No Comments

৫ই জুলাই

July 7, 2025 No Comments

তেরো বছর আগে এইরকমই এক বর্ষাদিনে শত শত বাঙালির হাত একটি শবদেহ স্পর্শ করে শপথ নিয়েছিল — পশ্চিমবঙ্গকে নৈরাজ্যের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হওয়া থেকে প্রতিহত করতে

Memoirs of An Accidental Doctor: প্রথম পর্ব

July 6, 2025 No Comments

হঠাৎ আমার লেখাপত্রের এমন ইংরেজি শিরোনাম কেন দিলাম, তাই নিয়ে বন্ধুরা ধন্দে পড়তে পারেন। আসলে কয়েক পর্বে যে লেখাটা লিখতে বসেছি, এর চেয়ে উপযুক্ত নাম

“মরমিয়া মন অজানা যখন” মন এবং আত্মহনন নিয়ে ডা: সুমিত দাশের বক্তব্য

July 6, 2025 1 Comment

সাম্প্রতিক পোস্ট

Memoirs of a Travel Fellow Chapter 2: Chhattisgarh: Where Red Dust Meets Red-Green Flags

Dr. Avani Unni July 7, 2025

অভয়া আন্দোলন: রাজপথ থেকে এবার ছড়িয়ে পড়ুক আল পথে

Abhaya Mancha July 7, 2025

৫ই জুলাই

Dr. Sukanya Bandopadhyay July 7, 2025

Memoirs of An Accidental Doctor: প্রথম পর্ব

Dr. Sukanya Bandopadhyay July 6, 2025

“মরমিয়া মন অজানা যখন” মন এবং আত্মহনন নিয়ে ডা: সুমিত দাশের বক্তব্য

Abhaya Mancha July 6, 2025

An Initiative of Swasthyer Britto society

আমাদের লক্ষ্য সবার জন্য স্বাস্থ্য আর সবার জন্য চিকিৎসা পরিষেবা। আমাদের আশা, এই লক্ষ্যে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, রোগী ও আপামর মানুষ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমস্ত স্টেক হোল্ডারদের আলোচনা ও কর্মকাণ্ডের একটি মঞ্চ হয়ে উঠবে ডক্টরস ডায়ালগ।

Contact Us

Editorial Committee:
Dr. Punyabrata Gun
Dr. Jayanta Das
Dr. Chinmay Nath
Dr. Indranil Saha
Dr. Aindril Bhowmik
Executive Editor: Piyali Dey Biswas

Address: 

Shramajibi Swasthya Udyog
HA 44, Salt Lake, Sector-3, Kolkata-700097

Leave an audio message

নীচে Justori র মাধ্যমে আমাদের সদস্য হন  – নিজে বলুন আপনার প্রশ্ন, মতামত – সরাসরি উত্তর পান ডাক্তারের কাছ থেকে

Total Visitor

565723
Share on facebook
Share on google
Share on twitter
Share on linkedin

Copyright © 2019 by Doctors’ Dialogue

wpDiscuz

আমাদের লক্ষ্য সবার জন্য স্বাস্থ্য আর সবার জন্য চিকিৎসা পরিষেবা। আমাদের আশা, এই লক্ষ্যে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, রোগী ও আপামর মানুষ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমস্ত স্টেক হোল্ডারদের আলোচনা ও কর্মকাণ্ডের একটি মঞ্চ হয়ে উঠবে ডক্টরস ডায়ালগ।

[wppb-register]