শেষ পর্যন্ত করোনা ভাইরাস বিদেশ থেকে দেশে এবং ভিন রাজ্য থেকে আমাদের রাজ্যেও তার প্রকোপ ও আতঙ্ক বিস্তার করেছে। এই মুহূর্তে এই ভাইরাসের হাত থেকে বাঁচার প্রধান তিনটি অস্ত্র হল মাস্কের সঠিক ব্যবহার, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং বার বার হাত ধোয়া বা স্যানিটাইজ করা। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল বেশ কিছু ক্ষেত্রে উপরোক্ত বিষয়গুলি ঠিকমত মেনে চলা হচ্ছে না। বিশেষতঃ অনেকেই ঠিক মত ভাবে মাস্ক পরছেন না। রোগী দেখতে গিয়ে ডাক্তারবাবুরা প্রায়ই বেশ কয়েকটি দৃশ্যের মুখোমুখি হচ্ছেন–
দৃশ্য ১
রোগী যখন ডাক্তারবাবুর সামনে এসে পৌঁছালেন, তখন ডাক্তারবাবুর চোখে পড়ল রোগীর সাথে যে ভদ্রমহিলা এসেছেন,তিনি মাস্ক পরেন নি। ডাক্তারবাবু জিজ্ঞেস করলেন “মা আপনি মাস্ক পরেন নি কেন?” ভদ্রমহিলা উত্তর দিলেন “মাস্ক পরলে হাঁফ ধরে যাচ্ছে। বাড়ি থেকে খুব একটা বেরোই না। খুব একটা পরার দরকারও হয় না। তবে রাস্তায় পুলিশ ধরবে বলে মাস্ক একটা নিয়ে এসেছি। এই দেখুন ব্যাগে ছিল।” এই বলে ভদ্রমহিলা মুখে আঁচল ঢাকা দিলেন।
দৃশ্য ২
ডাক্তারবাবুর সামনে বসে ডাক্তারবাবু কিছু বলার আগেই মাস্কটাকে মুখ থেকে খুলে রোগী তাঁর সমস্যা বলতে শুরু করলেন।
দৃশ্য ৩
রোগী ও তাঁর বাড়ির লোক চেম্বারে ঢোকার পরে ডাক্তারবাবু খেয়াল করলেন যে দুজনেরই মাস্ক নাকের নীচে রয়ে গেছে।
দৃশ্য ৪
এ বারের রোগী ডাক্তারবাবুর পাড়ার লোক। মাস্ক পরেননি কেন জিজ্ঞাসা করায় রোগী বললেন “আমি তো আপনার পাড়াতেই থাকি। তাড়াহুড়োয় আর মাস্ক পরা হয় নি।”
দৃশ্য ৫
রোগী ও তাঁর বাড়ির লোক চেম্বারে ঢুকেই পকেট থেকে স্যানিটাইজারের বোতল বার করে নিজেদের হাত পরিষ্কার করে নিলেন। ডাক্তারবাবুও ব্যাপারটা দেখে খুব খুশি। কিন্তু এর পরেই রোগী বলে উঠলেন “অনেকটা রাস্তা মাস্ক পরে এলাম। খুব ঘেমে যাচ্ছি”৷ এরপরেই রোগী আর কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে মাস্ক খুলে ফেললেন।
দৃশ্য ৬
এবারের রোগী খুব সচেতন। রোগী ও তাঁর বাড়ির লোক দুজনেই n 95 মাস্ক পরে এসেছেন, বার বার হাত স্যানিটাইজ করছেন। ডাক্তারবাবু ও খুব আনন্দিত।প্রেসক্রিপশন নিয়ে বেরোনোর সময় ডাক্তারবাবু দেখলেন রোগীর বাড়ির লোক তাঁর ও রোগীর মাস্কের ওপর কিছুটা করে স্যানিটাইজার স্প্রে করে দিচ্ছেন।
দৃশ্য ৭
রোগী এক বয়স্ক ভদ্রলোক। সাথে এসেছেন তাঁর স্ত্রী। দুজনের মুখেই একই রকমের মাস্ক। কিন্তু মাস্ক একটু অন্য রকমের- সার্জিক্যাল মাস্কও নয় আবার কাপড়েরও নয়। ডাক্তারবাবু জিজ্ঞেস করলেন “এই মাস্ক গুলো কোথায় পেলেন?” ভদ্রমহিলা এক গাল হেসে বললেন “আসলে বাজারের মাস্কগুলো পরে থাকতে খুব অসুবিধা হচ্ছে তো। তাই বাড়িতেই উল দিয়ে সোয়েটারের মত করে এগুলো বানিয়েছি। দিব্বি শ্বাস নেওয়া যাচ্ছে।”
- দয়া করে ডাক্তারবাবুর চেম্বারে বা হাসপাতালে গিয়ে মাস্ক খুলবেন না। আপনি মাস্ক না খুললেও ডাক্তারবাবু আপনার কথা শুনতে পাবেন। পরিচিত লোকজনের সাথে কথা বলবার সময়ও মাস্ক পরে থাকুন।
- মনে রাখুন নাকের নীচে মাস্ক পরা ও মাস্ক না পরার মধ্যে খুব একটা পার্থক্য নেই। খেয়াল রাখুন যাতে নাক ও মুখ দুটোই ঢাকা থাকে।
- মাস্কের ওপর স্যানিটাইজার স্প্রে করা ঠিক নয় কারণ এর ফলে আপনার নাকের মধ্য দিয়ে শরীরে কিছু ক্ষতিকারক পদার্থ ঢুকতে পারে।
- চেষ্টা করুন ভালভ যুক্ত মাস্ক না ব্যবহার করতে।
- উলের মাস্ক ব্যবহার করে খুব একটা লাভ নেই। অন্তত পক্ষে কাপড়ের মাস্ক ব্যবহার করুন।
- আর অবশ্যই বাড়ির বাইরে কোন অবস্থাতেই মাস্ক না খোলার চেষ্টা করুন।