সাধারণ রোগীর স্বার্থে, মাত্র ১ কানাডিয়ন ডলারের বিনিময়ে তাঁদের ইনসুলিন স্বত্ব টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে অর্পণ করেন বান্টিঙ, বেস্ট ও কলিপ। এখন দেখার পালা কোন ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা পায় ইনসুলিন উৎপাদনের ছাড়পত্র। দৌড়ে এগিয়ে ছিল ইলাই লিলি অ্যান্ড কোম্পানি। ইলাই লিলির রিসার্চ ডিরেক্টর ডা. ক্লজ [৩৭] ম্যাক্লাউডের বিশেষ পরিচিত। ডিসেম্বরের ন্যু হাভেনের সভায় ম্যাক্লাউড যখন ইনসুলিন গবেষণার কথা প্রথম ঘোষণা করেছিলেন, সেই সময় সেই সভায় উপস্থিত ছিলেন ডা. ক্লজ। ইলাই লিলির রিসার্চ ডিরেক্টর হওয়ার সুবাদে বন্ধুর নতুন এই গবেষণার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন ক্লজ। সেই থেকে এক নাগাড়ে ইনসুলিন পরিশোধনের সমস্ত খবরাখবর রাখতেন তিনি। ক্লজের সুবাদেই, বাণিজ্যিক উৎপাদনের প্রশ্নে, ইলাই লিলি অন্যান্য ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থার থেকে অনেকটাই এগিয়ে ছিল। ৩০শে মে ১৯২২, ইলাই লিলি অ্যান্ড কোম্পানির সাথে টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের গভর্নরের বাণিজ্যিক চুক্তি সাক্ষরিত হলো। চুক্তি মোতাবেক ইউএসএ, মেক্সিকো, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকায় তাঁদের পণ্য বিক্রি করে পারবেন ইলাই লিলি, কিন্তু কানাডায় নয়। কানাডায় ইনসুলিন প্রস্তুতির যাবতীয় দায়িত্ব থাকল কনট মেডিক্যাল রিসার্চ ল্যাবরেটরিসের হাতেই। চুক্তিতে বলা হলো মোট বিক্রির ৫% রয়েলটি পাবে টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়।
ম্যাক্লাউড (বামে) ও ক্লজ |
জুন ১৯২২, বাণিজ্যিক ভাবে ইনসুলিন উৎপাদন চালু হলো ইলাই লিলিতে। তাঁদের প্রস্তুত করা ইঞ্জেকশনের নাম দেওয়া হলো ‘আইলেটিন’! পরের বছর, ১৯২৩ সালে, জার্মানি, ডেনমার্ক, অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি প্রভৃতি দেশও ইনসুলিন উৎপাদনের ছাড়পত্র লাভ করে।
বিশ্ব বাজারে এসে গেছে ইনসুলিন। এইবার তাঁর কাজ শেষ হয়ে গেছে বলেই মনে করছেন ম্যাক্লাউড। পরিশোধনের দায়িত্ব থেকে তাই অব্যহতি দেওয়া হলো কলিপকে। মে মাসেই, আলবেরটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে গেলেন কলিপ। সেখানে গিয়েও অবশ্য ইনসুলিন নিয়ে গবেষণা জারি রেখাছিলেন তিনি। কলিপ চলে যাওয়ায়, কনট ল্যাবে ইনসুলিন পরিশোধনের দায়িত্ব দেওয়া হলো বেস্টকে। কারণ, বান্টিঙ যে পরিশোধিত ইনসুলিন ব্যবহার করতেন, তা আখেরে বেস্টই পরিশোধন করতেন।
ইলাই লিলির আইলেটিন। |
বান্টিঙের ডায়াবিটিস ক্লিনিক আজ সংবাদ শিরোনামে। ডায়াবিটিস ক্লিনিক চালু করে দারুণ সাফল্য লাভ করেছে ক্রিস্টি স্ট্রিট মিলিটারি হসপিটালও। অথচ টরন্টোর নামজাদা টরন্টো জেনারল হাসপাতালেই ডায়াবিটিস ক্লিনিক নেই এখনও। এদিকে রোগীর সংখ্যা ক্রমবর্ধমান সেখানেও। রোগীর চাহিদা বুঝে, ২১শে অগস্ট ১৯২২ সালে, টরন্টো জেনারল হাসপাতালে ৩২ শয্যার ডায়াবিটিস ক্লিনিক চালু করা হলো। টরন্টো হাসপাতালে এখনও ডায়াবিটিস রোগী দেখার দায়িত্ব সামালাচ্ছেন বান্টিঙের সহযোগী ডা. ক্যাম্বল এবং ডা. ফ্লেচার। কিন্তু টরন্টোর বুকে বান্টিঙ ছাড়া ডায়াবিটিস ক্লিনিক যেন নুন ছাড়া তরকারির মতো। অচিরেই তাই ক্যাম্বলের সাথে যুক্ত করা হলো বান্টিঙকে। বান্টিঙ এখন সেই হাসপাতালের ডায়াবিটিসের ডাক্তার, একদিন যে হাসপাতাল তাঁর ইনসুলিন ইঞ্জেকশন দিতে অসম্মত হয়েছিল। বাধা তখনও পেয়েছিলেন, বাধা এখনও পেলেন বান্টিঙ। ক্যাম্বল থাকতেও বান্টিঙের মনোনয়নের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন ডা. ডানকান গ্রাহাম [থম্পসনের চিকিৎসার দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক] সমেত আরও দু’এক জন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে ডা. ডি.ই. রবার্টসন বললেন, “ডা. ক্যাম্বল ডায়াবিটিস বিষয়ে জানেন কিন্তু চিকিৎসা করতে পারেন না এবং বান্টিঙ ডায়াবিটিস বিষয়ে কিছুই জানেন না কিন্তু চিকিৎসা করতে পারেন”।
এই একটা মাত্র বাক্যে ডায়াবিটিস বিশেষজ্ঞ হিসেবে বান্টিঙকে চমৎকার ভাবে বর্ণনা করেছেন ডা. রবার্টসন। আমরা জেনেছি, বছর দুয়েক আগেও, লন্ডনে প্র্যাকটিসকালীন, ডায়াবিটিস নিয়ে বান্টিঙের না ছিল কোনও ধারণা, না ছিল কোন আগ্রহ। সে কথা গোপনও করেন নি তিনি। টরন্টো এসে প্রথমে ডায়াবিটিস বিশেষজ্ঞ হিসেবে কোনও পরিচিতিই পান নি বান্টিঙ। ডায়াবিটিস নিয়ে তেমন কিছু না জানা সত্বেও ডায়াবিটিস নিরাময়ে শেষ পর্যন্ত তিনিই সবচেয়ে কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। আবিষ্কার করেছিলেন ডায়াবিটিসের মোক্ষম দাওয়াই- ইনসুলিন। আবার আমরা এও দেখবো, পরবর্তী জীবনে ডায়াবিটিস নিয়ে উচ্চতর কোনও গবেষণায় কোনও আগ্রহই প্রকাশ করেন নি বান্টিঙ। ইনসুলিনোত্তর কোনও কাজে কোনও উৎসাহই দেখান নি তিনি। ৩১শে অক্টোবর ১৯২৩, বান্টিঙ এসেছিলেন তাঁর পূর্বতন শহর লন্ডনে। তিন বছর আগে এই শহরে এসেই ‘ইনসুলিনের প্রেমে’ পড়েছিলেন তিনি। এবার তাই লন্ডন এসে বান্টিঙ বললেন, “তিন বছর আগে প্রেমে পড়েছিলাম আমি, দু’বছর আগে গত মে মাসে আমার বিয়ে হয়েছিল আর আজ আমি ইনসুলিনের সাথে বিচ্ছেদ চাইছি”। বান্টিঙের বক্তব্যে স্পষ্ট, ইনসুলিন নিয়ে আর ভাবতে রাজি নন তিনি। ইনসুলিন তাঁর জীবনের অস্থায়ী এক পর্যায় মাত্র। ইনসুলিনের পাঠ সাঙ্গ করে, এখন অন্য কিছু নিয়ে কাজ করতে চান তিনি। করেও ছিলেন, পরবর্তী জীবনে ভিন্ন ধরনের কিছু কাজ। সে আশ্চর্য কাজের কথা আমাদের প্রায় সকলেরই অজানা। শুনবো আমরা সে কথা, তবে তার আগে জেনে নেবো, ইনসুলিনের বাকি গল্পটা।
অগস্ট ক্রোহ, মারি ক্রোহ |
ইউএসএর ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে ন্যু হাভেনে বক্তৃতা করতে এলেন ডেনমার্কের কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শ্যাক অগস্ট স্টিনবার্গ ক্রোহ। পেশিতন্ত্রে সূক্ষ রক্তবাহের (ক্যাপিলারি) ভূমিকা নির্ধারণের জন্য ১৯২০ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন অধ্যাপক ক্রোহ। ১৯২২ সালের শরৎকালে ইউএসএ পৌঁছন ক্রোহ। ইউএসএ থাকাকালীনই টরন্টোয় সদ্য আবিষ্কৃত ইনসুলিনের কথা জানতে পারেন ক্রোহ। ক্রোহর সহধর্মিণী মারি ক্রোহ একজন চিকিৎসক এবং তিনি নিজে ডায়াবিটিসাক্রান্ত। এছাড়াও ডেনমার্কে বেশকিছু ডায়াবিটিস রোগীও রয়েছেন তাঁর চিকিৎসাধীনে। টরন্টোয় ইনসুলিন আবিষ্কারের খবর পেয়ে বিশেষ উৎসাহী হয়ে পড়েন ক্রোহ দম্পতি। সরাসরি টরেন্টো গিয়ে খোঁজ খবর নেওয়ার উদ্যোগ নিলেন তাঁরা। নভেম্বর ১৯২২, টরন্টো গিয়ে ম্যাক্লাউডের সাথে সাক্ষাৎ করেন অগস্ট ও মারি ক্রোহ। ইওরোপের বাজারে তখনও এসে পৌঁছয় নি ইনসুলিন। ক্রোহ দম্পতির একান্ত ইচ্ছা, যে ইওরোপের বাজারেও যেন সহজলভ্য হয় ইনসুলিন। সেই সূত্রে নিজে বাণিজ্যিক ভাবে ইনসুলিন উৎপাদন ও বিপণনের আগ্রহ প্রকাশ করেন অধ্যাপক ক্রোহ। ক্রোহ দম্পতির তদবিরে, স্ক্যান্ডিনেভিয়ন অঞ্চলে ইনসুলিন উৎপাদন এবং বিক্রির অনুমতি লাভ করেন অগস্ট ক্রোহ।
ডিসেম্বরে দেশে ফিরেই বন্ধু ডা. হান্স ক্রিশ্চিয়ন হাগেডর্নকে সাথে নিয়ে ইনসুলিন নিষ্কাশনে ব্রতী হন ক্রোহ। ২১শে ডিসেম্বর ১৯২২, মোষের প্যানক্রিয়াস থেকে ইনসুলিন নিষ্কাশনে সমর্থ হন ক্রোহ এবং হাগেডর্ন। ১৯২৩ সালের বসন্ত কালে পরীক্ষামূলক ভাবে রোগীর দেহে ইনসুলিন প্রয়োগ করেন ক্রোহ। সেই পরীক্ষায় সফলও হন তিনি। এবার বাণিজ্যিক ভাবে ইনসুলিন উৎপাদনের কথা ভাবলেন তাঁরা। স্ক্যান্ডিনেভিয়ন অঞ্চলে বৃহদাকারে ইনসুলিন উৎপাদন ও বিক্রির জন্য ‘নর্ডিস্ক ইনসুলিনল্যাবরেটরিয়ম’ [৩৮] নামে একটা ওষুধ কোম্পানি স্থাপন করেন ক্রোহ এবং হাগেডর্ন। এই সংস্থাকে আর্থিকভাবে সাহায্য করতে সম্মত হন ডেনমার্কের ‘লিও ফার্মাসিউটিকল প্রোডক্টস্’এর মালিক অগস্ট কঙ্গস্টেড। তবে একটা শর্তেই ক্রোহকে সাহায্য করতে সম্মত হন কঙ্গস্টেড। পণ্যর [ইনসুলিনের] নাম রাখতে হবে ‘লিও’। সেই শর্তে ১৯২৩ সালের বসন্ত কালে, স্ক্যান্ডিনেভিয়ন অঞ্চলে ‘ইনসুলিন লিও’ হাজির হয় বাজারে।
তাঁর কানাডা সফরের সময় ইনসুলিন সম্পর্কে বিশদে খোঁজ খবর করেছিলেন ক্রোহ। ক্রোহর এই সফর বান্টিঙের জীবনে শ্রেষ্ঠ আশীর্বাদ হিসেবে বর্ষিত হয়েছিল। তাঁর জীবদ্দশাতে অবশ্য সে কথা জানতে পারেন নি বান্টিঙ। ক্রোহর কানাডা সফরের ৫০ বছর পর জানা গেল, ১৯২৩ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কারের জন্য নোবেল কমিটির কাছে বান্টিঙ ও ম্যাক্লাউডের নাম প্রস্তাব [৩৯] করেছিলেন ক্রোহ। শেষ পর্যন্ত ক্রোহর প্রস্তাবেই সিলমোহর দিয়েছিলেন নোবেল কমিটি।
১৯২৩ সালের গ্রীষ্ম কাল, বান্টিঙের খ্যাতি, পদমর্যাদা, সম্মান, আর্থিক অবস্থা ঊর্ধ্বমুখী তখন। বান্টিঙের চিকিৎসায় উপকৃত রোগীর সংখ্যা সমানে বেড়ে চলেছে, আর পাল্লা দিয়ে সেই হারেই বেড়ে চলেছে তাঁর গুণগ্রাহীর সংখ্যাও। বান্টিঙ নিজে সরাসরি কোনও রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত ছিলেন না [তবে তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধবদের অধিকাংশই বাম মনস্ক ছিলেন]। কিন্তু বেশ কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আজ তাঁর গুণগ্রাহী। ফলস্বরূপ, মে ১৯২৩ সালে ‘অন্টারিয় লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলি’তে [বিধানসভা] টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার জন্য ‘বান্টিঙ চেয়ার’ চালু করার প্রস্তাব রাখা হয়। এই চেয়ারের সাথে তাঁর যোগ্য সাথী বেস্টের নাম যুক্ত করার অনুরোধ করেন স্বয়ং বান্টিঙ। বান্টিঙের অনুরোধ ক্রমেই সেই চেয়ারের নাম রাখা হয় ‘বান্টিঙ অ্যান্ড বেস্ট চেয়ার অব মেডিক্যাল রিসার্চ’। মে মাসেই অ্যাসেম্বলিতে পাশ হয় ‘বান্টিঙ অ্যান্ড বেস্ট মেডিক্যাল রিসার্চ অ্যাক্ট’। এই আইনানুসারে টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বান্টিঙ অ্যান্ড বেস্ট চেয়ার অব মেডিক্যাল রিসার্চ’ পদ চালু করেন সরকার এবং বান্টিঙ হন তাঁর প্রথম ডিরেক্টর [বান্টিঙের মৃত্যুর পর বেস্ট ওই পদ গ্রহণ করেন]। এই পদের জন্য বার্ষিক ৫,০০০ কানাডিয়ন ডলার বেতন ধার্য করা হয়। ২৭শে জুন ১৯২৩, কানাডিয়ন হাউস অব কমন্স [লোকসভা] বান্টিঙের জন্য আমৃত্যু বার্ষিক ৭,৫০০ কানাডিয়ন ডলার পেনশন ঘোষণা করেন। লক্ষ্যণীয়, এই সমস্ত প্রাপ্তি থেকে কিন্তু বাদ পড়লেন ম্যাক্লাউড, কলিপ এবং অংশত বেস্ট।
ইনসুলিন লিওর বাক্স। |
তবে সরকারি পেনশন থেকেবেস্টের নাম বাদ যাওয়ায় মনঃক্ষুন্ন হয়েছিলেন বান্টিঙ। ওইদিনই এক চিঠিতে বেস্টকে লেখেন,
প্রিয় চার্লি, এইমাত্র সরকারের তরফ থেকে একটা মার্কনিগ্রাম [৪০] পেলাম আমি। আশা করি ওঁরা তোমাকেও সমপরিমাণ [পেনসন] দেবে। এটা নিশ্চিত যে, আশীর্বাদ এখন দ্রুত বর্ষিত হচ্ছে আমাদের উপর। এটা যেন আমরা মাথায় রাখি। ফ্রেড।
২৫শে অগস্ট ১৯২৩, টরন্টো শহরে ‘কানাডিয়ন ন্যাশনাল এগজিবিশন’এর উদ্বোধন করেন বান্টিঙ। ৭৬,৫০০ জনতার সামনে সেদিন বক্তৃতা করেন সেই বান্টিঙ, যিনি একদিন ঘরোয়া সভায় বক্তৃতা করতে গিয়ে আবোল তাবোল বকে ফেলেছিলেন। আর আজ তাঁর কন্ঠস্বর শ্রোতাদের করতালি আর হর্ষধ্বনিতে ঢাকা পড়ে গেছে। অ্যালিস্টনের চাষার ছেলে আজ যে জাতীয় নায়কে পর্যবসিত হয়েছেন।
(চলবে)
[৩৭] ইংলন্ডের ইপসুইচ শহরে জন্মগ্রহণ করেন জর্জ হেনরি আলেক্সান্দার ক্লজ (১৮৭৭-১৯৫৮)। লন্ডন, জার্মানি, ফ্রান্সে রসায়ন নিয়ে পড়াশুনা করেন তিনি। চাকরি সূত্রে ১৯০১ সালে ইউএসএ আসেন। ‘গ্রাটউইক ক্যান্সার রিসার্চ ল্যাবরেটরিস’এ কো-ডিরেক্টর পদে নিযুক্ত হন তিনি। ১৯১৯ সালে ইলাই লিলিতে ‘রিসার্চ এসোসিয়েট’ পদে যোগদান করেন। ১৯২১ সালে ওই কোম্পানির রিসার্চ ডিরেক্টর পদে অধিষ্ঠিত হন। ইনসুলিন বাজারিকরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন ক্লজ। ১৯৬১ সাল থেকে, ইলাই লিলির তরফে এক যৌথ উদ্যোগে ক্যান্সার গবেষণারত চিকিৎসকদের ১০,০০০ ডলার মূল্যের ‘ক্লজ মেমোরিয়াল এওয়ার্ড’ প্রদান করা হয়ে থাকে।
[৩৮] এপ্রিল ১৯২৪, হান্স ক্রিশ্চিয়ন হাগেডর্নের (১৮৮৮-১৯৭১) সাথে এক বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন নর্ডিস্ক ইনসুলিনল্যাবরেটরিয়মের দুই উচ্চপদস্থ ফার্মাসিস্ট হেরল্ড পেডারসন (১৮৮৭-১৯৬১) ও থরভাল্ড পেডারসন (১৮৮৭-১৯৬৬)। বিতন্ডার জেরে নর্ডিস্ক থেকে পদত্যাগ করে পৃথক ভাবে ইনসুলিন উৎপাদন ও বিক্রি করতে উদ্যোগী হন এই দুই যমজ ভাই। ১৯২৪ সালেই ‘নোভো টেরাপিউটিস্ক ল্যাবরেটরিয়ম’ স্থাপন করেন তাঁরা। ১৬ই ফেব্রুয়ারি ১৯২৫, ইনসুলিন প্রস্তুতি ও বিক্রির ছাড়পত্র পায় নোভো। সেই থেকে ডেনমার্কের দুই যুযুধান ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা স্ক্যান্ডিনেভিয়ন অঞ্চলে ইনসুলিন প্রস্তুত করে চলেছেন। অবশেষে ১৯৮৯ সালে, নোভো টেরাপিউটিস্ক ল্যাবটরিয়ম এবং নর্ডিস্ক ইনসুলিনল্যাবরেটরিয়ম একীভূত হয়ে ‘নোভো নর্ডিস্ক’ কোম্পানির জন্ম হয়। বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ইনসুলিন উৎপাদন করে থাকে নোভো নর্ডিস্ক।
[৩৯] ১৯২৩ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কারের জন্য একক ভাবে বান্টিঙের নাম প্রস্তাব করেছিলেন দু’জন চিকিৎসক। ইউএসএর ক্লিভল্যান্ড শহরের ‘ওয়েস্টার্ন রিসার্ভ ইউনিভার্সিটি’র শল্যবিদ অধ্যাপক জর্জ ওয়াশিংটন ক্রায়েল (১৮৬৪-১৯৪৩) এবং ইউএসএর কানেকটিকাট প্রদেশের ‘ওয়েসলিয়ান ইউনিভার্সিটি’র চিকিৎসক ফ্রান্সিস গানো বেনেডিক্ট (১৮৭০-১৯৫৭)। ওই বছর চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কারের জন্য একক ভাবে ম্যাক্লাউডের নাম প্রস্তাব করেছিলেন ইউএসএর ক্লিভল্যান্ড শহরের ফিজিওলজিস্ট জর্জ নিল স্টুয়ার্ট (১৮৬০-১৯৩০)। অপরদিকে ১৯২৩ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কারের জন্য যুগ্ম ভাবে বান্টিঙ এবং ম্যাক্লাউডের নাম প্রস্তাব করেছিলেন অধ্যাপক অগস্ট ক্রোহ (১৮৭৪-১৯৪৯)।
[৪০] রেডিও আবিষ্কারের পর, রেডিও ব্যবস্থার সাহায্যে পাঠানো বার্তাকে ‘রেডিওটেলিগ্রাম’ বলা হতো। আবিষ্কারকের নাম জুড়ে রেডিও টেলিগ্রামকেই কেউ কেউ ‘মার্কনিগ্রাম’ বলে অভিহিত করতেন।