দুর্বল লাগে, গা হাত পা টিস্টিস করে, মাথা ঝিমঝিম করে ,খিদে নেই, স্যাক্স (সেক্সকে এই ভাবে বলতে শুনি) কমে গেছে, গ্যাস হয়, পায়খানা পরিষ্কার হয় না, পুরুষ মহিলা নির্বিশেষে গ্রামের বহু মানুষ আসেন এই সমস্যা নিয়ে।
হাতে প্লাস্টিকের প্যাকেট। তার মধ্যে গ্রামের কোয়াক ডাক্তার থেকে মাসে একবার করে আসা চেন্নাই এর বড়ো ডাক্তারবাবু সবাই। গ্রামের স্টেরয়েড ইনজেকশন নেওয়া থেকে শুরু করে গাদা গুচ্ছের টেস্ট সব নিয়ে আসা।
এরপরের গন্তব্য কটক।
কেন আসেন এখানে???
না, মানে একটু আলোচনা করে নেবো আর কি। একটু পরামর্শ দ্যান যদি।
নার্স একটা ইসিজি করায়। হাসপাতালের সামনে পার্কের চারধারে বার দশেক জোরে হেঁটে আসতে বলে আবার ইসিজি। হার্ট দেখা শেষ।
মহিলা হলে চোখ দেখে অ্যানিমিয়া বুঝে কুলেখারা শাক, থোর, কলা, এসব খেতে বলা, সাদা স্রাব কমাতে পুকুরে স্নান বন্ধ। কৃমির ওষুধ দেওয়া।
জ্বর আর সঙ্গে র্যাশ থাকলে প্রথমেই স্টেরয়েড মলমটা বাদ দিয়ে scabies মাথায় রাখা, measles মাথায় রাখা।
তেমন ই স্ক্রাব টাইফাস, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু।
ডায়াগনস্টিক ল্যাব আশে পাশে যেসব থাকে সেসব জায়গায় কোনো pathologist থাকে না, ইন্সট্রুমেন্ট ক্যালিব্রেশন তো দূর অস্ত।
শুকনো কাশি সিরাপ খেয়ে হাঁপানি বাড়িয়ে আসা,
ফাঙ্গাল ইনফেকশন এ দিন দিন স্টেরয়েড মলম লাগানো,
সকালে বিকালে ইচ্ছামত গ্যাসের ওষুধ খেয়ে যাওয়া,
নানারকমের রং বেরঙ এর ভিটামিন, বলবর্ধক ওষুধের শিশি
এভাবেই চলে, এভাবেই চলছে।
এভাবেই অধিকাংশ গ্রামের মানুষ বেঁচে থাকেন।
ঘটি বাটি বিক্রি করে দালাল ধরে ভিন রাজ্যে বা কলকাতায় পড়ে থেকে দিনের পর দিন চিকিৎসা করে যাচ্ছেন কেউ কেউ।
আর বাকিরা এদিক ওদিক নানা রকমের প্যাথি সহযোগে খিচুড়ি খান।
শেষ করি এক বয়স্ক মানুষের কোমরে ব্যথা নিয়ে।
প্রথমে অর্থো, তারপর নিউরো, তারপর ইউরো, তারপর মেডিসিন
এসব ঘুরে এক গাদা টেস্ট শুধু আর প্রতিটিতে কিছু সমস্যা পেয়ে শেষ অবধি পালিয়ে আসেন ভয়ে।
ভারী কাজ বন্ধ করে ,ব্যায়াম করে মামুলি কিছু ওষুধ খেয়ে এখন অবধি বেঁচে।
শর্ত একটাই
নিজের দায়িত্ব নিয়ে এটা করছেন কিন্তু দাদা। যেসব টেস্ট আর ওষুধ লেখা তাকে অগ্রাহ্য করার ক্ষমতা আমার নেই।
নিশ্চিন্তে থাকেন ডাক্তারবাবু। ওসব নিয়ে ভাববেন না। আমি এটুকুতেই সন্তুষ্ট।