১৮ বছরের তরতাজা প্রাণ চলে যাওয়া মর্মান্তিক। আর সেটা নিয়ে জনগণের ইমোশন নিয়ে খেলে খবর বানানো মিডিয়ারই কাজ। কিন্তু এই মিডিয়া তখন কথা বলে নি যখন এই রকম কিছু হতে চলেছে ভেবে মেডিকেল কলেজ, বাঙুর, সাগর দত্ত আন্দোলনে বসেছিল। যখন বারবার বলা হয়েছিল ‘এক্সক্লুসিভ কোভিড’ মডেলে এই হেলথ ক্রাইসিসকে সামলানো পসিবল নয়।
ডাক্তাররা ভগবান নয়, আসলে আমরা হতেও চাই নি কোনদিন। কিন্তু তবুও আমরা হয়তো মুমূর্ষু রোগীকে বাঁচিয়ে তুলতে পারি কিন্তু সেটা একটা নির্দিষ্ট সময় পেলেই। আজ যদি পশ্চিমবঙ্গের সব জায়গায় কোভিড ওয়ার্ড থাকতো? তাহলে ছেলেটাকে ১০ ঘন্টা অপেক্ষা করতে হত না একটা বেডের জন্যে। কোভিড পজিটিভ একটা পেশেন্টকে যে কোন জায়গায় ভর্তি করা যায় না, কারণ ওই ওয়ার্ডে কোভিড নেগেটিভ পেশেন্টও থাকেন।
আপনি হার্ট ফেলিওর-এর একজন পেশেন্টের পাশে চাইবেন তো একটা কোভিড পেশেন্টকে রাখতে? না সেটা করা যায় না। তাই সব হাসপাতালে নির্দিষ্ট প্রোটোকল মেনে কোভিড ব্লক থাকার দরকার। কোভিড শুধু একা হয় না, আগের থেকে কোন রোগ থেকে থাকলে কোভিড সেটার সমস্যাগুলোকে বাড়িয়ে দেয়। এবার কোন পেশেন্টের ডায়াবেটিস থাকলে ব্যাপারটা কীরকম হয়? যদি সে ইনসুলিন না পায় অনেকক্ষণ, তাহলে তার অবস্থা ক্রমশ ডিটোরিয়েট করতে থাকে,ব্লাড সুগার খুব বেড়ে যায়, ডাক্তারি পরিভাষায় ডায়াবেটিক কিটো অ্যাসিডোসিস,যেমনটা হয়েছিল ছেলেটির।
এবার এই কোভিড এক্সক্লুসিভ মডেলে নন-কোভিড ইমার্জেন্সি ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ভাবে পঙ্গু করে রাখা হয়েছে। মেডিকেল কলেজের ইমার্জেন্সি বন্ধ, সেখানে কেবল করোনা পেশে্নটের ক্লারিকাল কাজ হচ্ছে। এম্বুলেন্স-এ রেফার রোগী আসছেন আর সেই কাগজ দেখে ভর্তি লিখে কোন বিল্ডিং-এ বেড ফাঁকা সেখানে পাঠানো হচ্ছে।
সাম্প্রতিক আন্দোলনে বারেবারে এই দাবী তোলা হয়েছিল যে নন-কোভিড ইমার্জেন্সি ফাংশনিং করতে হবে। আজ যদি হঠাৎ করে AMI-র পেশেন্ট মেডিকেল কলেজে আসেন ডাক্তাররা কী করবেন? কোভিড টেস্ট আগে করাবেন নাকি ইমার্জেন্সিতে কোন ব্যবস্থা নেই বলে NRS বা RG Kar-এ রেফার করবেন? যেতে যেতে কিছু হয়ে গেলে তার দায় কার?
ডাক্তারদের বাপ-বাপান্ত করার থেকে সহজ কাজ দুটো হয় না। কিন্তু সিস্টেমকে প্রশ্ন করা খুব কঠিন যেটা টিভির নিউজ শোগুলোর পক্ষে অসম্ভব, তাদের টিকে থাকতে গেলেও এই ব্যবস্থা তেই মানিয়ে নিয়ে থাকতে হবে।
ছেলেটির মৃত্যু মেডিকেল কলেজে হয়েছে। তার পর থেকে ডাক্তারদের অমানবিকতার যে প্রশ্ন উঠছে সেই কলেজের ডাক্তাররাই গোটা ব্যাপারটাতে সব থেকে বেশি কষ্ট পেয়েছেন। আমরা চাই না এরকম হোক। আমরা তো চেষ্টা করছি বলুন? কিন্তু মেডিকেল কলেজে এখন কোন ইমার্জেন্সি নেই। এখানে ইমার্জেন্সি ওটি হচ্ছে না। আন্দোলনের চাপে নন-কোভিড পেশেন্ট ভর্তি করা শুরু হলেও এখনও মেডিকেল কলেজের ইমার্জেন্সি খোলে নি, সেখানে ট্রিটমেন্টের বেসিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার নেই। ডাক্তারদের দোষ দেওয়া এরকম ইস্যুতে সব থেকে সহজ কাজগুলোর একটা।
কিন্তু এভাবে কোভিড এক্সক্লুসিভ একটা বা দুটো হাসপাতালকে করে রাখলে দূরের পেশেন্টরা যখন অনেক ঘুরে এখানে আসবেন তখন তাঁরা খুব খারাপ অবস্থায় চলে যাবেন, ডাক্তারদেরও হয়তো আর কিছু করার থাকবে না আর তার সাথে কোভিড হাসপাতাল গুলোর ইমার্জেন্সিকে পুরোপুরি পঙ্গু করে রাখলে খারাপ পেশেন্টের চিকিৎসা কিভাবে করবো আমরা? স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে প্রশ্ন করতে শিখুন। ডাক্তাররা এখানে বসে আছে আপনাদেরই জন্যে, আপনাদেরই সব থেকে ভালো পরিষেবাটুকু দেওয়ার জন্যে কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা নিধিরাম সর্দারের মত।
ইনফ্রাস্ট্রাকচার বানাতে হবে এই দাবী করুন। তারপর কিছু না হলে ডাক্তাররা তো আছেই দূর্গা পুজোতে অসুর সাজার জন্যে!