অধিকার বুঝে নেওয়ার দিনে যে সমস্ত নারীর ন্যায্য MTP Request Refused হয়েছে তাঁদের বক্তব্যটাও থাক।
সদ্য কয়েক সপ্তাহ হলো Medical Termination of Pregnancy (MTP) Act সংশোধিত হয়েছে। উর্দ্ধসীমা কুড়ি থেকে বেড়ে এখন চব্বিশ। ক্ষেত্রবিশেষে এই আইনী উর্দ্ধসীমাও প্রযোজ্য নয়। নতুন নিয়মে মেয়েদের reproductive rights কতখানি সুরক্ষিত তা বুঝতে হয়তো আরো সময় লাগবে। তবে আমাদের যে এখনও অনেক দূর যেতে বাকি সে নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
– – – – –
সংশোধিত গর্ভপাত আইন (MTP Act 2021) ও নারীর প্রজননগত স্বাধিকার
ন্যায়াধীশ, এই সন্তান আমি চাই না। আট মাস অন্ত:সত্তার এই ছিল আকুতি। গর্ভস্থ ভ্রূণের হৃদযন্ত্রে দূরারোগ্য ত্রুটি। একাধিক অপারেশনেও তার স্বাভাবিক জীবন আসা সম্ভব নয়। আদালতের নির্দেশে গঠিত সাত সদস্যের মেডিকেল বোর্ড রোগের ভয়াবহতা মেনে নিলেও গর্ভপাতের আবেদন প্রত্যাখ্যান করলেন। প্রত্যাশিত সময়ে গুরুতর অসুস্থ সন্তানের জন্ম হলো। তিন দিনের মাথায় নিরূপায় মা তাঁর শিশুকে চলে যেতে দেখলেন। বলা যেতে পারে তাঁকে দেখতে বাধ্য করা হল। বাস্তবিক জীবনে মিল খোঁজার দরকার নেই কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই তো বাঁধা গতের চিত্রনাট্য!
নিখুঁত না হলেও সংশোধিত গর্ভপাত আইন নারীকে এর চেয়ে ঢের বেশি বিকল্প দেয়। তবে সে স্বাধীনতা এখনও তৃতীয় ব্যক্তির দয়ার দানের ওপর নির্ভরশীল। আক্রমনাত্মক শোনালেও মূল প্রশ্ন আরো গভীরে। সন্তানধারণ, প্রসবের ধরণ ইত্যাদি সব প্রশ্নে যদি নারীর মতামতই চূড়ান্ত, সেখানে গর্ভপাত প্রসঙ্গে এতো তৃতীয় ব্যক্তির ভিড় কেনো?
পাঁচ দশকের পুরনো গর্ভপাত আইন। 2003 এ সামান্য পরিবর্তনের পর সর্বশেষ সংশোধন সদ্য এবছর। তবু কি এই আইন এখনো মহিলা কেন্দ্রিক? না কি তার মূল উপজীব্য এখনো চিকিৎসক। কোন কোন পরিস্থিতিতে গর্ভপাত করালে চিকিৎসক শাস্তি পাবেন না সেটা বলাই কি মূল উদ্যেশ্য নয়? ইতিহাস ঘাঁটলে দেখতে পাবেন 1860 সালে রচিত ইন্ডিয়ান পেনাল কোড (ধারা 312) অনুযায়ী ইচ্ছাকৃতভাবে কারো মিসক্যারেজ ঘটানো একটি দন্ডনীয় অপরাধ। তার একশো বছর পর 1960 সালে গিয়ে আমরা একটু নড়ে চড়ে বসলাম। দশ বছরের চেষ্টায় MTP Act বানালাম 1971 সালে। তখনও সারা বিশ্বে খুব বেশি হলে মাত্র খান পাঁচেক দেশে এ ধরনের আইন জারি। সেদিক থেকে আমরা সামনের সারি তে থাকার কৃতিত্ব দাবী করতে পারি। তাও সেখানে প্রগতিশীলতার যথেষ্ট অভাব। নারী এখনো শেষ কথা বলেন না। অনেক ক্ষেত্রেই তাকে চেয়ে থাকতে হয় তৃতীয় ব্যক্তির দিকে। স্বামী, পার্টনার, পরিবার, মেডিকেল বোর্ড, আদালত সবাই বাতলে দেন নারীর ভাগ্য।
তার মানে কি খুল্লামখুল্লা self medication এর বাড়বাড়ন্ত চাইছি? তা ঠিক নয়। চাইছি নারীর স্বায়ত্বশাসন। প্রশিক্ষিত হাতে, সঠিক পরিকাঠামোয় গর্ভপাত যথেষ্ট নিরাপদ। অন্তত বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা তাই বলে। তবে আমরা হয়তো জঙ্গলের প্রাচীন প্রবাদে বিশ্বাসী। আমরা ভুলে যাই গর্ভমোচনে যদি বা কিছু ঝুঁকি থাকে তা কখনো দশ মাসে ডেলিভারির চেয়ে বেশি নয়। কিছুদিন আগে পর্যন্তও কুড়ি সপ্তাহ ছিল লক্ষ্মণরেখা। কিন্তু দেশজুড়ে অসংখ্য আবেদনের জেরে তা বাড়িয়ে চব্বিশ করা হলো।পরিস্থিতির বিচারে আইনবলেই সে উর্দ্ধসীমাও লঙ্ঘন করা যায়। গুরুতর অস্বাভাবিক গর্ভস্থ শিশু অথবা অন্ত:সত্তার ভয়াবহ শারীরিক বা মানসিক স্বাস্হ্যের কারণে যে কোন সময় যতি টানা সম্ভব। ইদানীং খানিকটা স্ট্রিমলাইনিং হয়েছে বটে তবে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায় বিস্তর।
প্রতিটি MTP Request ই সর্বোচ্চ গোপনীয়তার দাবি রাখে। ভুললে চলবে না প্রজননগত স্বশাসন প্রতিটি নারীর ন্যায্য অধিকার। দেশের সংবিধানও তা সমর্থন করে। গর্ভস্থ শিশুকে সুরক্ষা প্রদান আমাদের নৈতিক কর্তব্য। তবে অগ্রাধিকার পায় মা। তাঁর মানসিক বা শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর ভয়াবহ ঝুঁকি নিয়ে তাঁকে সন্তান নিতে বাধ্য করা যাবে না। সংশ্লিষ্ট সকলের আরও সংবেদনশীল হবার সময় এসেছে।