খবরের কাগজ মানেই দুঃসংবাদ। ভালো খবর-টবর বিশেষ থাকে টাকে না। তিন বছর ছ’ বছর আট বছর কোনও শিশু ছাড় পায় না। শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতন হলে প্রথম পাতায় সম্ভব হলে সচিত্র খবর হয়। যতদূর আকর্ষণীয় আর উত্তেজক করা যায় আর কি! শিশুধর্ষণ এক ভয়ঙ্কর বিকৃতির প্রমাণ। এটা কে পিডোফিলিয়া বলে অর্থাৎ কিনা যৌবনোদ্গমের আগের শিশুদের ধর্ষণের ইচ্ছা। একে ঘেন্না করুন। মনে হয় ধর্ষককে সামনে পেলে তার শিশ্নটা কাঁচি দিয়ে কেটে দিই। তাই না? অথচ গিরিজা উমার বিয়েও অতি অল্প বয়সে হয়েছিলো। কার সঙ্গে ? এক অনার্য দেবতার সঙ্গে। (তাও ওনার দ্বিতীয় বিবাহ। প্রথমা স্ত্রীর নাম দাক্ষায়ণী।) অনার্যের কাজ কি? শ্মশানে মশানে ঘুরে ঘুরে গাঁজা ভাং খাওয়া। তাহলে উমা বা পার্বতী ঐ ভয়ানক তপস্যাটা কবে করলেন? একরাত্রে শিবঠাকুর ভোলানাথ গাঁজার নেশায় কৃষ্ণবর্ণা উমাকে খামাখা ‘কেলে ভূত কালিন্দী’ বলে সম্বোধন করায় বালিকা উমা ভয়ানক দুঃখিত হয়ে কঠোর তপস্যায় নেমে পড়েন ( মৎসপুরাণ। এবং এই ব্যাখ্যায় কালী এবং দুর্গার দুই গাত্রবর্ণের ব্যাপারটা গ্রহণযোগ্য মনে হয়)। অবশেষে তপস্যার ঠ্যালায় ব্রহ্মা এসে ওই বালিকার ত্বকের কৃষ্ণবর্ণ তুলে দিয়ে (কোন ক্রীম ব্যবহার করেছিলেন তা লেখা নেইকো – ত্বকবিশেষজ্ঞরা বলতে পারেন) ‘আর্যনারীর’ মতো টকটকে ফর্সা বর্ণ বার করে দ্যান । তখন তার নাম হয় গৌরী। থাকা কালো চামড়া থেকে সৃষ্টি হয় দেবী একেশ্বরীর। এই তপস্যাকালীন উমাদেবী কেবলমাত্র গাছের পাতা খেয়ে বেঁচে ছিলেন (আমি চেষ্টা করে দেখেছি – হ্যাক ত্থুঃ – অখাদ্য) তাই তাঁর নাম হয় অপর্ণা। এবং উনি ফের ঐ গেঁজেল অনার্য দেবতার মন জয় করে ফ্যালেন।
মন্ডপে মন্ডপে মা দুগ্গার মুখখানি দেখলে মনে হয় কতো আর বয়স হবে? পঁচিশ বা তিরিশ বছর । অথচ পাশে তীরধনুক নিয়ে যে ময়ূরবাহন গুঁফোকাত্তিকটি রয়েছেন তিনি অন্ততঃ বাইশ বছরের তো বটেই। তাহলে মায়ের বিয়ের বয়সটা কতো ছিলো?
আসুন না আমরা একটু প্রাচীন বাংলার বিবাহ প্রকরণে চলে যাই। তাহলে বিয়ের বয়স টয়স নিয়ে একটা স্বচ্ছ ধারণা হবে।
বাংলার হিন্দু পরিবারগুলিতে বহুকাল থেকে বাল্যবিবাহ চালু ছিলো। হিন্দু সমাজে মেয়েদের শৈশবে বয়ঃসন্ধির পূর্বেই বিবাহ দেওয়াকে ধর্মীয় কর্তব্য বলে মনে করা হতো। হে ধার্মিক নারী – প্রাচীন হিন্দু আইনপ্রণেতা মনু নারীর বিয়ের বয়সের যে বিধান দিয়েছেন, তা হলো তিরিশ বছরের পুরুষ বারো বছরের কন্যাকে বিয়ে করবে। চবিবশ বছরের পুরুষ আট বছরের কন্যাকে বিয়ে করবে, নইলে ধর্ম লঙ্ঘিত হয়। সুতরাং পিডোফিলিয়া আমাদের ধর্মাচরণের মধ্যেই পড়ে।
আর বহু বিবাহ? সেতো আরও চমৎকার! অর্জুনের উলুপী কৃষ্ণা চিত্রাঙ্গদা সুভদ্রা ইত্যাদি মহিলাদের সঙ্গে বিয়ে হয়। কৃষ্ণঠাকুরের শোনা যায় ষোড়শসহস্র বৌ ছিলো! বহুবিবাহ নিয়ে জীমূতবাহনের ব্যাখ্যায় এবং সেকালের প্রাচীন শিলালিপিতে এর প্রমাণ পাওয়া যায়। ধর্মশাস্ত্রীয় বিধান অনুযায়ী ব্রাহ্মণ চার পত্নী, ক্ষত্রিয় তিন পত্নী আর বৈশ্য দুই পত্নী গ্রহণ করতে পারেন।
সুতরাং বাল্যবিবাহও আমাদের দেশের ধর্মীয় বিধান। শিশু ধর্ষণ সেক্ষেত্রে পৈশাচ পদ্ধতিতে সিদ্ধ বিবাহ। ও হরি! আপনি বিবাহের আটটি প্রকার জানেন না? কিমাশ্চর্যম কিমাশ্চর্যম !
প্রথম হলো ব্রাহ্ম বিবাহ “কোনও বেদজ্ঞ ব্যক্তিকে ডেকে উপঢৌকন সহ কন্যাকে তুলে দেওয়া হতো – বিড়াল বিদায়”
দৈব বিবাহ “এতে পুজোর পুরোহিতকে দক্ষিণার বদলে একটা আস্ত গোটা কন্যা তুলে দেওয়া হতো” চমৎকার তাই না ?
অর্শ বিবাহ “কন্যার পিতাকে এক জোড়া গরু/মহিষ দিয়ে কন্যাকে নিয়ে যেতো” সুধিপাঠিকা যথেষ্ট ভালো মূল্যেই নিতো বলেই কী মনে হচ্ছে? বঙ্কিমচন্দ্র একবার রহস্যছলে মহিষ এবং মহিষী নিয়ে রহস্য করেছিলেন। মনে আছে? এখানে তুলনীয়।
প্রজাপত্য বিবাহ “অবিবাহিত পাত্র কন্যার বাবার কাছে কন্যাকে প্রার্থনা করতো” (এটা তবু ভালো তবে কন্যার মতামতের কোনও দাম নেই)
গন্ধর্ব বিবাহ “এটা পিওর অ্যান্ড সিম্পল লাভ ম্যারেজ। জাস্ট ভালবেসে বিয়ে।” এখানে পাত্র পাত্রী উভয়েই রাজি। ক্যা করেগা কাজী? চমৎকার আধুনিকীকরণ।
অসুর বিবাহ “এতে কন্যার পিতা মেয়েটার একটা দাম চাইতো – যে সঠিক দাম দিতে পারতো সে মেয়েটিকে নিয়ে যেতো” ( পণ্য )
রাক্ষস বিবাহ “যে কন্যাকে জোর করে তুলে নিয়ে যাবে কন্যা তারই হবে” (জোর যার মুলুক তার)
এবার আসি পৈশাচ বিবাহে। পাঠিকা মন দিয়ে পড়ুন।
“ঘুমন্ত অচেতন কন্যাকে (পড়ুন শিশুকে) যে জোর করে ‘ধর্ষণ’
করতে পারবে সে’ই ব্যক্তি হবে কন্যার স্বামী।” তাহলে ধর্ষণ সম্বন্ধে শাস্ত্রবচন কি? যে ধর্ষণ করবে মেয়েটি তার সম্পত্তি হবে।
এরপর আপনি ধর্ষণের বিরুদ্ধে আর কোনও শাস্ত্রবচন আওড়াতে পারবেন না। আপনার নারী স্বাধীনতা নারীমুক্তি ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি সব শেষ। আসুন আমরা শাস্ত্র আর ধর্ম নিয়ে বাঁচি! অবশ্য মনুবাদী সমাজের পুনরাগমন দেখতে আর দূরবীন লাগে না, খবরের কাগজে নেতাদের ধর্ষণ সমর্থন করা সুভাষিত চোখ রাখলেই দেখা যায় ।
তাহলে ধর্ষণ একটি শাস্ত্রসম্মত বিবাহপদ্ধতি এবং বহুবিবাহ শাস্ত্র অনুমোদিত। সুতরাং স্পিকটি নট। ফটরফট। এখানে একটা স্মাইলি দিলে বোধহয় ভালো হোতো ☺️।