কপালে দুর্বাসা বসেছিল সেদিন| কপালে দুর্বাসা বসা —শব্দগুলো আমার ঠাকুমা রাধারাণীর আবিষ্কার| খুব মুডি আমি| ইচ্ছে আর অনিচ্ছেতে দুলতেই থাকি সারা দিন| সারা মাস| বছর কে বছর| তো যেদিন ইচ্ছে আর অনিচ্ছেতে চরকি খেতে খেতে প্রবল ইচ্ছেতে একান্ত অনিচ্ছের কাজটি করে বসতাম সেদিন ঠাকুমা বলতেন ,আজ তোর কপালে দুর্বাসা পিড়ি পেতেছে —পেতে বসেছে| অনিচ্ছের কাজে যদি সেদিন সেরকম কোনো দুর্ঘটনা নাও ঘটত, তাও এমনটাই থাকত রাধারাণীর বিধান| আসলে অনিচ্ছের কাজ ভালো ফল দেয় না –এমনটাই ছিল রাধারাণীর বিশ্বাস|
যাবো না যাবো না করেও সেবার চলে গিয়েছিলাম নাগেরবাজার ডায়মন্ড প্লাজায়| তিননম্বর ফ্লোরে আজব খেলা| বিশাল এক রঙিন বাথটবে অগুনতি কেলে কুচ্ছিত মাছ| কুচো ট্যাংরার চেয়েও ছোট| একেবারে কিলবিল করছে| আর তাতে পা ডুবিয়ে বসে আছে বেশ কিছু দামড়া| মেয়ে পুরুষ সবকটারই হাঁটু অব্দি প্যান্টু | সবার চোখ বাথটাবের জলে| জলে ছলবল করতে লাগা মাছে| মাছগুলো তাদের পায়ের ময়লা খুঁটে খেয়ে সাফ করবে| পায়ের পাতায় নড়েচড়ে আরাম দেবে মৎসবাচ্ছা| বিনিময়ে মাছুয়া মানে টবের মালিককে চার্জ দিতে হবে | যতটা ময়লা যতক্ষণ ধরে খুঁটে খাবে তদানুযায়ী চার্জ|
তো মায়েরা তো সব লাইন দিয়ে বসে পড়েছে কালো মাছের জলাধারে| বাচ্চাগুলো এই আজব কিস্যা দেখে হৈ হৈ করছে| কোলের শিশুকে কোলে টেনে নিয়ে মা দেখাচ্ছে নিজের ক্রমশ পরিস্কার হতে লাগা পা| মা বাচ্চা সবাই মাপছে পায়ের পাতায় মাছের দেয়া আরাম|
একটি বাচ্চা ব্যতিক্রম| কিছুতেই দেখবে না সে মায়ের পায়ে মাছের নাচ| প্রথমে খানিক বায়না —–ওপরে গিয়ে অনেকগুলো কলম কিনবে| আর তাতে নাকি অনেকখানি সময় লাগবে তার| মা পটলো না| এবার বাচ্চাটা প্লাজার মাইকে গাওয়া রবিঠাকুরের গানের সাথে নাচল খানিক|
বাচ্চার চোখ পড়তে পারি| বুঝলাম নিজের নাচ দেখানো যত না উদ্দেশ্য, মাছের নাচ থেকে মায়ের দৃষ্টি ঘোরানোটাই মূল ইচ্ছে| কেন জানি প্রথম থেকেই মাছের ওই খেলা এবং তা নিয়ে পয়সার ছড়াছড়িকে তীব্র বিরাগে দেখছিল সেই অন্যরকম শিশুটি|
কোনটাই কিছু করতে না পেরে মায়ের চুমকিবুটি ব্যাগ ছিনিয়ে নিল| ঠাস! ঠাস! ঠাস! মাগো! মেঝেতে লুটিয়ে পড়লো সে| চিললে চিললে কী কান্নাটাই না কাঁদলে বাচ্চাটা! আছাড়িপিছাড়ি| মাছের আবেশে চক্ষু মুদে মা| টইটম্বুর জলাধার| বড় রংদার|হাবুডুবু ভারত|
বাথটবেই ডুবে মোলো ভারতমায়ের দল| দুর্বাসা রে! চললি কোথা? কপাল ছেড়ে খোকার মাথায়|
মা তার সন্তানের ভাবনা চিন্তা কে সঙ্গ না দিয়ে আপন রূপ চর্চায় মশগুল। এনারা মা সেজেছেন। মা হবার যোগ্যতা অর্জন করেনি। এদের সন্তান শাসন বড়ই নির্মম। আমাদের দেশের এই মায়ের কবে সুমতি হবে কে জানে।
অনবদ্য,এই সময়ের অন্বেষণ । চোখে পড়ে সবাই ।শিশুর মনবিকাশের অবকাশ নেই । জানিনা এটাই হয়তো শিশুমনে অবসাদ এনে দেবে । কপালে দুর্বাসা নিয়ে থাকতে হবে ।