চিকিৎসক আজ প্রায় সমাজবিরোধী অথবা অসামাজিক একদল মানুষ হিসেবে গণ্য হচ্ছে । তার জন্যে অনেক অনেক কারণ আছে ।
প্রথমতঃ একজন ডাক্তার সাধারণতঃ অত্যন্ত ধোপদুরস্ত – স্যুটেড বুটেড হন । চিকিৎসক বন্ধুরা রাগ করবেন না । তারা সাধারণতঃ চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দ্যান না । ক্রমাগত একটা গন্ডিবদ্ধ মানুষ হয়ে পড়েন । ক্রমশ পাড়ার লোক খেয়াল করে যে আমাদের পাড়ার প্রিয় ছেলেটা আস্তে আস্তে অন্য একটা মানুষ হয়ে যাচ্ছে ।
গরমকালে স্যুটেড বুটেড থাকা অনেকটাই ঔপনিবেশিক এবং কর্পোরেট সংস্কৃতি । কিন্তু টিভি সিনেমা গল্পের বই – স-ব জায়গায় একজন সফল মানুষের চিত্র এইভাবেই আঁকা হয়েছে । ডাক্তারি পড়া ছেলেটাও সেই দেখেই কিন্তু বড় হয়েছে । হয়তো ডাক্তারদের এই মানসিকতা থেকে বেরোতে হবে । যদি বেরোতেই হয় তবে কেন বেরোতে হবে সেটা আমার জানা নেই ।
দ্বিতীয়তঃ ডাক্তারি একটা পেশা । এবং সম্পূর্ণভাবে একটা পেশা । পাড়ার মানুষ যারা পাড়ার ডাক্তারের সঙ্গে পরিচিত তিনি অবশ্যই চাইবেন ডাক্তার যেন তাঁর চিকিৎসা বিনা পয়সায় করেন । অথচ ডাক্তারের পেনশন নেই , ব্যাঙ্কেও ইন্টারেস্ট নেই । ডাক্তার কিন্তু পাড়ার চায়ের দোকানে চা খেয়ে পয়সাটা পুরোটাই দ্যায় । পাড়ার পুজোয় একটু বেশীই চাঁদা দ্যায় । বাজারেও কেউ একটা টাকাও কম নেয় না । বিনা পয়সায় দ্যাখা অবশ্যই ডাক্তারের নিজস্ব সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে কিন্তু সাধারণভাবে মানুষ এটা চায় । একজন ডাক্তার যখন এটা পূরণ করতে পারে না , তখন সে ক্রমশ নিজের গন্ডির মধ্যে ঢুকে পড়ে – তৈরি হয় এক অসামাজিক মানুষ ।
স্থানীয় মানুষের দাবী থাকে রাত বিরেতে বৃদ্ধ বৃদ্ধারা অসুস্থ হয়ে পড়লে পাড়ার ডাক্তার যেন অন্ততঃ সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ে আসে । বয়সের সঙ্গে মৃত্যুও কাছে আসতে থাকে । সামান্য একটা প্রস্রাবের ইনফেকশন একজন বৃদ্ধ মানুষের রক্তের ভেতরে এসে খুব তাড়াতাড়ি সেপ্টিসিমিয়া এবং মাল্টি অর্গ্যান ফেইলিওর ঘটায় যেটা মৃত্যুকে ডেকে আনে । ডাক্তার জানে বয়সকালে কোনও অসুখই সামান্য নয় – এই যুগে তাকে প্রথমে কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করা অবশ্যই উচিত ।
এবং যিনি সারা বছর অন্য একজনের চিকিৎসাধীন রয়েছেন , সাধারণতঃ পাড়ার মানুষ বাইরের বিখ্যাত কোনও ডাক্তারকেই সারা বছর দেখায় তাই হঠাৎ করে তাঁকে বুঝে ওঠা – বিশেষ মাঝরাতে এবং ঘুমের ঘোরে সেই পাড়ার ডাক্তারটির পক্ষে অসম্ভবপ্রায় ।
তৃতীয়তঃ কমিশন এবং ডাক্তার – এটা বহুল প্রচলিত যে ডাক্তার নিয়ে থাকে । ওষুধে নেয় টেস্টেও নেয় । অবশ্যই অনেক ডাক্তার নেয় । যেমন অনেক অফিসার ঘুষ খান , অনেক শিক্ষক প্রাইভেট ছাত্রদের কাউকে কাউকে পরীক্ষার প্রশ্ন বলে দেন , এটাতো ব্যক্তিগত অভিরুচি – অথবা সামাজিক অবক্ষয়ের সূচক । যদি কোনও ডাক্তার কাউকে বিশেষ কোনও দোকানের ওষুধ কিনতে বলে তাহলে অবশ্যই সম্ভব । কিন্তু রায়গঞ্জের রোগী বর্ধমানে দেখালো ওষুধ কিনলো কলকাতার পিজি হাসপাতালের সামনে থেকে তাহলে এটা কি পদ্ধতিতে সম্ভব সেটা লেখকের মাথায় আসছে না ।
টেস্টের কমিশন এক্ষেত্রে একই কথা বলা যায় যদি ডাক্তারবাবু বিশেষ কোনও একটি প্যাথলজি কেন্দ্রের নাম বলে দ্যান তাহলে তার ভাগ্যে লভ্যাংশ থাকতেই পারে কিন্তু রোগী যদি নিজের পছন্দের কোনও জায়গা থেকে পরীক্ষা করে আনেন এবং ডাক্তার সেটা মেনে নেয় তাহলে তো এই কমিশনের প্রশ্নটা আর ওঠে না ।
চতুর্থতঃ- ভেন্টিলেটর এবং মৃতদেহ । সমাজে একটা বহুল প্রচলিত ধারণা আছে এবং প্রায় সবাই বিশ্বাসও করেন যে মানুষ মরে গেলেও ভেন্টিলেটর দিয়ে তাকে বহুদিন বাঁচিয়ে রাখা যায় । ভেন্টিলেটর মানুষের ফুসফুসকে চালু রাখে – যাতে শরীরের অক্সিজেন কমে না যায় । আর হার্ট মানে হৃদপিণ্ড ? রক্তকে গোটা শরীরে পাঠায় । হার্ট বন্ধ হলে মৃত্যু হয়েছে বলা যেতে পারে । তাহলে শরীরে কোনও জায়গায় রক্ত যাতায়াত করবে না । অর্থাৎ ফুসফুস যতটুকু রক্ত হৃদপিণ্ডের শেষবারের স্পন্দনে পেয়েছে সেটাকেই সে পরিশ্রুত করতে পারবে । দ্বিতীয় বার আর রক্ত তার ভেতরে আসবে না । আর শেষবারের পরিশ্রুত রক্তও আর শরীরের কোনও অংশে পৌঁছোবে না – কেননা হার্ট আর পাম্প করছে না । এগুলো কিন্তু মাধ্যমিক পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত । ফুসফুসের পরিস্রুত এবং অক্সিজেন সমেত রক্ত শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গে না পৌঁছলে বাকি অঙ্গে পচন ধরবে । সুতরাং মৃত ব্যক্তির শরীর দীর্ঘদিন ভেন্টিলেটর দিয়ে রাখা সম্ভব নয় । এখানে ব্রেন ডেথ বলে একটা কথা এসে পড়ে । কিন্তু সেক্ষেত্রে রোগীর হার্ট সচল থাকে । এটা সবার ক্ষেত্রে ঘটে না আর এটা কিছুটা বিতর্কিত বিষয় ।
শেষ কথা পঞ্চমতঃ -আমরা সবাই চাই আমাদের ডাক্তার আমাকে অনেক সময় ধরে দেখুক । এটা বাস্তব দাবী । পুরোপুরি হিস্ট্রি নিয়ে একটা রোগীকে ঠিকমতো দেখতে কমপক্ষে পনেরো মিনিট লাগার কথা । প্রত্যেক ডাক্তারের উচিত রোগীর সংখ্যা নির্দিষ্ট করে রাখা । হয়তো সবাই ধৈর্য রাখতে পারে না । এই শিক্ষাটা ডাক্তারদের সবার দরকার । তেমনি সবাইকে মনে রাখতে হবে এই ডাক্তার যে মেডিক্যাল কলেজে পড়াশোনা করেছে হাতে কলমে কাজ শিখেছে সেখানে তাকে তিনঘন্টায় তিনশো রোগী দেখে আউটডোর শেষ করতে হয়েছে নাহলে আউটডোরের দরজা বন্ধ করার লোকটি চলে যাবে । সুতরাং তাকে নাম কা ওয়াস্তে রোগী দেখতে হয়েছে ।
চোর সব পেশাতেই আছে । তার মানে সব পেশার সবাই চোর তা তো নয় কিম্বা হয়তো সব পেশাতেই সবাই চোর । এই অনিশ্চিত সময়ে – সমাজে সবাই হয়তো মনে করছে আমার টাকাই আমাকে রক্ষা করবে , আর কেউই – আত্মীয় স্বজন সরকার – আমার পাশে নেই । তবুও ব্যতিক্রমী সব জায়গাতেই কেউ না কেউ আছেন এই টুকুই ভরসা থাকুক ।
Very nice representation.
ধন্যবাদ
I think corporate houses are responsible for these. And they are making the doctors in favour of them. Doctors should take action against them.
কিছু দূর সত্যি ।
ওই সব জায়গায় ডাক্তার কেবলমাত্র সামান্য চাকুরে মাত্র ।
এরোপ্লেনের ভাড়ার জন্য যেমন পাইলট দায়ী নয় । তেমনি।ডাক্তার শুধু মাইনেটুকু পায় ।
খুব সুন্দর ভাবে সমস্ত বিষয়গুলোতে আলোকপাত করেছেন। অনেক ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ
Valuable explanation
ধন্যবাদ জানাই
Khub valo bujhiyechhen.Sob pesatei valo mondo du dhoroner manus achhen.Tobuo vorosai sombal.
ধন্যবাদ জানাই
রোগীপিছু পনেরো মিনিট? হপ্তায় একদিন কলকাতা থেকে মফসসলের চেম্বারের হট্টমেলার কী হবে তা হলে? আশি… একশ… দুর্জনে বলে দেড়শও ছাড়িয়ে যায় কারওর কারওর।
এটার জন্য কিছু মানুষের লোভ আর ভগ্ন স্বাস্থ্যব্যবস্থা দায়ী ।
Heartiest congratulation for revealing the truth. It is us who is more responsible in setting up wrong expectations.
এটার জন্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থা দায়ী
Like!! I blog frequently and I really thank you for your content. The article has truly peaked my interest.
Thanks so much for the blog post.
ধন্যবাদ