–‘বেড আর বিছানা কী এক?’
অনিমেষ ডাক্তারের মুখোমুখি ফিন্যান্স ডিপার্টমেন্ট-এর জয়েন্ট সেক্রেটারি। অনিমেষ তখন সরকারী চাকুরে। মফস্বলের ব্যস্ত হাসপাতালের ৩৪ টা বেড বাড়ানোর প্রচেষ্টায় ফাইলের পেছনে ছুটতে ছুটতে এখানে এসে পড়েছে।
কী দুর্মতি যে হলো! রোজ ‘রিগ্রেট নো বেড ভেকেন্ট’ লিখতে লিখতে আর গালাগাল খেতে খেতে হঠাৎই ঠিক করল ২১৬ বেডের হাসপাতালের ৩৪ টা বেড বাড়িয়ে ২৫০ করা যেতে পারে। বিল্ডিং-এর একটা দিক তো প্রায় ফাঁকাই পড়ে আছে। ঐখানে স্বচ্ছন্দে একটা ওয়ার্ড খোলা যেতে পারে। ওজনের ভারে ও এখন হাসপাতালের সুপার। সুতরাং প্রোপোজাল ছুটল থ্রু প্রপার চ্যানেল।
আর যথারীতি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ মাস ছয়েক নিরুত্তর নিশ্চুপ থাকায় চিরকালের অভ্যাস মতো ফাইলের পেছনে ছুটতে ছুটতে আজ এখানে হাজির।
ঘন্টা খানেক অপেক্ষার পর ফিনান্স ডিপার্টমেন্টের জয়েন্ট সেক্রেটারির ঘরে ডাক। অনিমেষের মনে হলো, এই অপেক্ষা করানোটাও একটা আর্ট। –তোমার উৎসাহের দীপটা একটু একটু নিভু নিভু হবে।
ঢোকমাত্র ঐ প্রশ্নবাণ– বেড আর বিছানা কী এক?
আপনার কি মনে হয় ডা চ্যাটার্জি?
— স্যার, আমাদের হাসপাতালে সাফিসিয়েন্ট স্পেস আছে আর এবারের অ্যালটমেন্ট থেকে বেডগুলোও কেনা যাবে।
— ফাইন। তারপর? এদের ডায়েট? অন্য কোনো স্টাফ বাদ দিলাম। শুধু গ্রুপ ডি কর্মচারী ক’জন লাগবে ঐ ওয়ার্ড চালাতে?
এরপর এক জটিল অংকের হিসেব দিলেন–হিউম্যান রিসোর্স, ইনস্ট্রুমেন্ট, ডায়েট সবকিছুর আর্থিক হিসেব কষতে হয়। ওখানেই জানা গেল একটা নাকি ওয়ান টাইম এক্সপেন্ডিচার আর একটা নাকি রেকারিং এক্সপেন্ডিচার। এ সব জটিল অংক কষে আবার ফাইল পাঠাতে বললেন।
— বুঝলেন ডা চ্যাটার্জি, হাসপাতালের বেড আর আপনার বাড়ির বিছানা এক নয়। ওসব আগেকার বাবার জমিদারিতে হতো– ইচ্ছে হলো হাসপাতাল খুলে ফেললাম, ইচ্ছে হলো একশ বেড বাড়িয়ে ফেললাম। এটা তো আর আপনার বা আমার বাবার জমিদারি নয়। জনগণের সম্পত্তি, তাই কিছু নিয়ম কানুন মানতে হয় আর কি!
বলা বাহুল্য সেই অংক কষে আবার ফাইল ছুটল।
এরই মাঝে আজকাল শ্রীকান্ত রোজই খবর আনে–
দাদা সি এম আরো পাঁচশো বেড বাড়িয়ে দিলেন, দুটো হাসপাতালের উদ্বোধন করেছেন। তখন হঠাৎ করেই অনিমেষের ঐ কথাটা মনে পড়ে যায়—-
‘বেড আর বিছানা কী এক?’
দারুন।