আলেক্সান্দ্রিয়া
সন্ধ্যা হয়ে আসছে। আলেক্সান্দ্রিয়ার আকাশে অস্তমিত সূর্যের লালচে আর হলদে রঙের খেলা। আজ সারাদিন দুই বন্ধু ‘হেরোফিলাস’ আর ‘এরাসিসষ্ট্রাটাস’ আলেক্সান্দ্রিয়ার লাইব্রেরীতে পড়াশোনা করেছে। দুই গ্রীক তরুণ চিকিৎসককেই চিকিৎসাশাস্ত্রের ভবিষ্যত বলে মনে করে আলেক্সান্দ্রিয়া। দুই বন্ধুর মধ্যে দীর্ঘকায় ও সুদর্শন হেরোফিলাস যেন বেশী প্রতিভাবান। আলেক্সান্দ্রিয়ার লাইব্রেরীতে বই, পুস্তিকা, প্যাপিরাস,পান্ডুলিপির কোনো শেষ নেই। লোকে বলে পৃথিবীর সেরা লাইব্রেরী। হেরোফিলাস আর এরাসিসষ্ট্রাটাস চিকিৎসাকেন্দ্র ও লাইব্রেরীতেই দিনের বেশীরভাগ সময় কাটায়।
লাইব্রেরী থেকে বেরোতেই হাঁটতে হাঁটতে পায়ে ব্যাথা হয়ে যায়। লাইব্রেরীর বাড়িগুলো এত বড় আর এত সিঁড়ি বাড়িগুলোতে! ওরা দুজনে হাঁটতে হাঁটতে পশ্চিম দিকে সমুদ্রের ধারে এসে দাঁড়াল। জায়গাটা উপদ্বীপের মত। পুবদিকে অনন্ত জলরাশি। পশ্চিমে জলের ওপারে দূরে লাইট হাউস। উত্তরে ভূমধ্যসাগর। মাসের পর মাস ধরে ভূমধ্যসাগর পার হয়ে আসা জাহাজগুলো বন্দরে ঢুকছে।
হেরোফিলাসের জীবনে মনে হচ্ছে এখন একটা লাইটহাউস দরকার। তাদের গুরু আলেক্সান্দ্রিয়ার বিখ্যাত ও প্রবীণ চিকিৎসক প্র্যাক্সাগোরাস আছেন। কিন্তু তাঁর শারীরবিদ্যার জ্ঞান তাঁর গুরু হিপোক্রেটিস আর সেই পুরনো অ্যারিষ্টটলেই সীমাবদ্ধ। তাঁদের দোষ নেই। অ্যারিষ্টটল গৃহপালিত জন্তুজানোয়ার কেটে তাদের শরীরে ভেতরটা দেখে মানুষের শরীরের আন্দাজ করে চিকিৎসা করতেন। কিন্তু, মানুষের শরীর আর জীবজন্তুর শরীর কি এক? অথচ এই চিকিৎসাবিদ্যা শেখার জন্য এথেন্স থেকে জলপথ পাড়ি দিয়ে এতদূর আলেক্সান্দ্রিয়ায় চলে এসেছে সে।
‘বসফোরাস’ প্রণালীর ধারে ছোট্ট শহর ‘ক্যালসেডন’-এ জন্মেছিল হেরোফিলাস। বাবা ওখানে জড়িবুটি, ওষুধের ব্যবসা করতেন। সেসব জিনিস আসত পূবের দেশ থেকে। ছোটবেলার কথা আর বিশেষ মনে নেই তার। ব্যবসা বাড়ানোর জন্য সব গুটিয়ে তার বাবা পরিবার নিয়ে চলে যান এথেন্সে। বন্ধু এরাসিসষ্ট্রাটাস অবশ্য আলেক্সান্দ্রিয়ায় জন্মেছে। আর চিকিৎসাশাস্ত্র শেখার সেরা সুযোগ তো এখানেই।
চিকিৎসাশাস্ত্র সেই যুগে ছিল প্রায় পুরোটাই গুরু বা শিক্ষকের কাছে লব্ধ জ্ঞান। খুব সামান্য অংশ আছে পুঁথিতে লেখাজোখা। হিপোক্রেটিসের লেখায় শারীরবিদ্যার সামান্য দিকনির্দেশ আছে। কিন্তু তাঁরও ছিল হাত-পা বাঁধা। সম্রাট দ্বিতীয় ফিলিপ ছিলেন গোঁড়া। তিনি এবং সমাজের গণ্যমান্যদের মত ছিল, মৃতদেহ কাঁটাছেড়া করা যাবে না। কারণ, তাতে দেহে উপবিত আত্মার অসম্মান হয়। সম্রাট আলেক্সান্ডার জানতেন শুধু যুদ্ধ আর দেশজয় করতে। শিক্ষাদীক্ষা নিয়ে ভাবার সময় কোথায় ছিল তাঁর?
তাই হিপোক্রেটিস যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়ে নিজের জীবন তুচ্ছ করে মৃত্যুপথযাত্রী ও মৃত সৈনিকদের কাটা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আর কাটা ঘা গুলো পর্যবেক্ষণ করে মানুষের শরীরের ভিতরটা বোঝার চেষ্টা করতেন। এছাড়া মাঝে মাঝে যেতেন জিমন্যাসিয়ামে। সেখানে মল্লযোদ্ধাদের পেশীগুলো দেখে ছবি এঁকে নিতেন। এখনো পর্যন্ত এই-ই হল সকলের শারীরবিদ্যার জ্ঞানের উৎস।
তবে আলেক্সান্দ্রিয়ার চিকিৎসাকেন্দ্রের চিকিৎসকদের অনেকেই লুকিয়ে লুকিয়ে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামীদের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ চিরে শরীরের ভিতরের কলকব্জা প্রত্যক্ষ করেছে কয়েক বার। কারাগারের দায়িত্বপ্রাপ্ত অমাত্য ‘ফিরোফিলাস’ এর মদত ছিল এতে। কিন্তু ওই ভাবেও মানবশরীরের শারীরবিদ্যার জ্ঞান সম্পূর্ণ হয় না। আর তাছাড়া, বিষয়টা চাপা থাকেনি। যদিও তারা মৃত্যুদন্ডাজ্ঞাপ্রাপ্ত, তবু এভাবে জীবন্ত মানুষের শরীরে ব্যবচ্ছেদ করা নিয়ে আলেক্সান্দ্রিয়ার গণ্যমান্য মানুষের মধ্যে গুঞ্জন উঠেছে। সুতরাং বিষয়টা বিতর্কিত। অনেক চিকিৎসকও এই নিষ্ঠুর পদ্ধতির তীব্র সমালোচক। এমনকি এই খবর এথেন্স ও ম্যাসিডোনিয়াতেও পৌঁছেছে।
তবে বর্তমান সম্রাট প্রথম ‘টলেমি’ কিছুটা সহনশীল। মৃতদেহের ব্যবচ্ছেদের মূল আপত্তিটা গ্রীক সমাজের নয়। মিশরীয় ধর্মগুরু,ইহুদি ও সিরীয়া থেকে আগত সমাজপতিদের প্রবল বিরোধিতাতেই বিষয়টা এখনো নিষিদ্ধ। অথচ, মানবদেহের অভ্যন্তরের ভুগোল, কলকব্জা, তার নক্সা, তার খুঁটিনাটি ভালো করে না বুঝলে চিকিৎসকরা রোগীর চিকিৎসা করবেন কি করে? তাই প্রবীণ ও বিদগ্ধ চিকিৎসক প্র্যাক্সাগোরাস ম্যাসিডোনিয়া গেছেন এবারে শবব্যবচ্ছেদের বিষয়ে একটা হেস্তনেস্ত হওয়ার আশায়। দেখা যাক!
বিরোধী দলের অবশ্য বক্তব্য, মানবদেহের সমস্ত রোগের উৎস হল পিত্ত, কালো পিত্ত, শ্লেষ্বা বা কফ এবং রক্ত। রোগব্যাধির চিকিৎসার জন্য রোগের কারণ বা প্রমাণ খোঁজার কোনো প্রয়োজন নেই। শারীরবিদ্যা, অর্থ্যাৎ অ্যানাটমি তো সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয়। মিশরীয়,গ্রীক,আসিরীয়, রোমান- সকল সাম্রাজ্যের চিকিৎসক এবং সমাজপতিদের এই একই মতামত। এমনকি, তৎকালীন জ্ঞানের উৎকর্ষ কেন্দ্র আলেক্সান্দ্রিয়াতেও এক অংশের চিকিৎসাবিদরা তাই মনে করেন।
প্র্যাক্সাগোরাসের দুই প্রিয় ছাত্র ও সহকর্মী উৎকন্ঠা নিয়ে দিন কাটাচ্ছে তাঁর ফেরার অপেক্ষায়। ম্যাসিডোনিয়া থেকে কি বার্তা নিয়ে আসেন তিনি!
প্র্যাক্সাগোরাসের গল্প
প্রায় এসে পড়েছেন প্র্যাক্সাগোরাস। আর তর সইছে না। পালতোলা বিশাল জাহাজের ডেক থেকে ওই দেখা যায় আলেক্সান্দ্রিয়ার লাইট হাউস।
কয়েকটা দিন প্রয়োজন হবে প্রস্তুতি নেবার জন্যে। আর তার পরেই আলেক্সান্দ্রিয়ার চিকিৎসাকেন্দ্রে প্রথমবার হবে আইনসম্মত শবব্যবচ্ছেদ। অনেক টালবাহানার পরে সম্রাট টলেমি টলে গেছেন। আলেক্সান্দ্রিয়ার চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীদের সমস্যাকে উপেক্ষা করতে পারেন নি তিনি। সম্রাট-সম্রাজ্ঞীদেরও রোগব্যাধি হয়। আর তখন তাদের চিকিৎসাবিদ্যার উপরেই নির্ভর করতে হয়। তাই চিকিৎসাবিদ্যার উৎকর্ষ সাধনে তাঁদেরও স্বার্থ আছে।
কিছু বিরোধী মতামতাবলম্বীদের অসন্তুষ্টি সত্ত্বেও চিকিৎসাবিজ্ঞানের স্বার্থে সম্রাট টলেমি এবারে অনুমতি দিয়েছেন শব ব্যবচ্ছেদের। তবে শুধুমাত্র আলেক্সান্দ্রিয়াকেই এই অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কারণ, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও চিকিৎসাবিদ্যা চর্চায় আলেকজান্দ্রিয়া হল তখন পৃথিবীর সেরা কেন্দ্র। সেই শহরের চিকিৎসাকেন্দ্রে শবব্যবচ্ছেদ এবং তার থেকে আহরিত জ্ঞান সংরক্ষণের ভাল ব্যবস্থা আছে। শর্তানুযায়ী, এখানকার চিকিৎসাকেন্দ্রের শারীরবিদ্যা বিভাগে কেবলমাত্র মৃত্যুদন্ডের পর আসামীর শব ব্যবচ্ছেদ করা যাবে।
কে নেতৃত্ব দেবে এই অনুসন্ধানের, একথা ভাবতে গিয়ে হেরোফিলাসের কথাই তাঁর মনে হল। তাঁর নিজের অবসরের সময় হয়ে এসেছে। এখন তাঁর নতুন জ্ঞানার্জনের আর ইচ্ছা নেই। তাছাড়া, হেরোফিলাস তাঁর সবচেয়ে প্রতিভাবান ছাত্র। সে সুযোগ্য, সফল ও জনপ্রিয় চিকিৎসক। বিজ্ঞানভিত্তিক ও প্রমাণিত পথেই সে চিকিৎসা করে। শারীরবিদ্যাতেও সে অত্যন্ত উৎসাহী। এরাসিসষ্ট্রাটাস এবং অন্যান্য কয়েকজন উৎসাহী চিকিৎসক হেরোফিলাসকে সাহায্য করবে।
শবব্যবচ্ছেদ
প্র্যাক্সাগোরাসের আগমনের খবর ছড়িয়ে পড়ল সারা আলেক্সান্দ্রিয়ার বিদ্বৎমহলে। চিকিৎসাকেন্দ্রে সাজোসাজো রব। শারীরবিদ্যা বিভাগ সেজে উঠল, উপযুক্ত আলো এবং যন্ত্রপাতিতে। বিরোধীকুল স্তব্ধ। সম্রাটের অনুমতির পরে আর কোনো আপত্তি টিঁকল না।
উপযুক্ত দিনে শব এসে পৌঁছলে হেরোফিলাসের নেতৃত্বে শুরু হল মৃতদেহের ব্যবচ্ছেদ। এরাসিসষ্ট্রাটাস এবং হেরোফিলাস এর দুই ছাত্র ‘ইয়াসোনাস’ এবং ‘লিওনিডাস’ তাঁকে সাহায্য করত। ব্যবচ্ছেদের প্রত্যেকটি পদক্ষেপে প্রতিটি পর্যবেক্ষণ লিপিবদ্ধ করে রাখত তারা। রক্তবাহী নালী এবং নার্ভ আলাদা করে চেনালেন হেরোফিলাস। আগেই তাঁর ধারণা ছিল, দুটি আলাদা ধরণের রক্তনালী আছে। কালচে, দুষিত রক্তের জন্য শিরা এবং লাল ও পরিশ্রুত রক্তের জন্য ধমণী। ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদান্ত্র আলাদা করে চিনলেন।
প্র্যাক্স্যাগোরাস এবং অন্য অনেক প্রবীণ চিকিৎসক ঘোষণা করলেন- পৃথিবীর প্রথম শব ব্যবচ্ছেদ হল আলেক্সান্দ্রিয়ায়। কিন্তু তাঁরা জানতেন না অন্ততঃ তিনশ’ বছর আগেই পুবের দেশ ভারতবর্ষে শুশ্রুত নামক এক বিস্ময় চিকিৎসক ও শল্যবিশারদ মৃতদেহের শবব্যবচ্ছেদ করে গেছেন। কিন্তু তার সংবাদ ভারতবর্ষের বাইরে কেউ জানত না।
পরবর্তী ক্ষেত্রে হেরোফিলাস মস্তকের করোটি খুলে মস্তিস্ক পর্যবেক্ষণ করলেন। সুষুম্নাকান্ড ও অনেক নার্ভের উৎস ও তাদের পথ খুঁজে পেলেন। চোখের ব্যবচ্ছেদ করে অনেক পর্যবেক্ষণ লিখে গেছিলেন তিনি।
হেরোফিলাসের গল্প
হেরোফিলাসের (খ্রীষ্টপূর্ব ৩৩৫-২৮০) জন্ম এশিয়া মাইনরের (এখনকার তুরস্ক) ‘ক্যালসেডন’ নামক ছোট্ট শহরে। শহরটা ছিল বসফোরাস প্রণালীর পাশে ইস্তাম্বুলের ঠিক উল্টোদিকে এখন যেখানে ‘উস্কুদার’ শহর, সেখানে। খুব ছোটবেলা সেখানে কাটানোর পরে তাঁর পরিবার চলে যায় এথেন্স শহরে। হেরোফিলাসের প্রবল আগ্রহ ছিল চিকিৎসাবিদ হওয়ার। তাই এথেন্সে শিক্ষা সমাপ্ত করে তিনি চলে আসেন জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিক্ষা-চিকিৎসায় তখনকার পৃথিবীর সেরা উৎকর্ষকেন্দ্র আলেক্সান্দ্রিয়ায়।
হেরোফিলাস তাঁর ব্যবহার, শিক্ষা ও প্রতিভার গুণে খুব দ্রুত আলেক্সন্দ্রিয়ার সেরা চিকিৎসক হয়ে ওঠেন এবং অ্যারিস্টটল ও হিপোক্রেটিসের লব্ধ জ্ঞানকে আরো অনেক প্রসারিত করেন। মৃতদেহের ব্যবচ্ছেদ করে ব্যবহারিক জ্ঞান আহরণের বিরল সুবিধা তিনি পেয়েছিলেন।
মানবদেহের মস্তিষ্কের প্রথম বর্ণনা করেন তিনি। সেরিবেলাম ও মস্তিষ্কের ভেন্ট্রিকল গুলো তিনি যেভাবে বর্ণনা করেছিলেন তাঁর উত্তরসূরি গ্যালেন-এর লেখায় সেটা পাওয়া যায়। তিনি এগারোটা বই লিখেছিলেন- যথাক্রমে ‘অ্যানাটমি’, ‘অন পালসেস’, ‘মিড ওয়াইফারি’, ‘থেরাপিউটিকস’, ‘ডায়েটেটিকস’, ‘অন আই ডিজিসেস’ প্রভৃতি। এগুলো সব হাতে লেখা পুঁথি। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে তার প্রায় সবগুলোই আলেকজান্দ্রিয়ার লাইব্রেরীর কুখ্যাত অগ্নিকান্ডে পুড়ে যায়। শুধু ‘অন আই ডিজিসেস’ এর কিছু অংশ বেঁচে যায়। বাকি জ্ঞান শ্রুতির মাধ্যমে প্রবাহিত হয়েছিল তাঁর ছাত্রদের মধ্যে এবং পরবর্তীযুগের চিকিৎসাবিজ্ঞানী পার্গামনবাসী ‘গ্যালেন’, এফেসাস-এর ‘রুফাস’ ও ‘সোলানাস’, ‘সেলসাস’ এবং ‘প্লিনি’-র লেখায় কিছু কিছু থেকে যায়।
ক্ষুদ্রান্ত্র, যকৃত, প্লীহা, হৃদযন্ত্র, জরায়ু, চোখ, অপটিক নার্ভ প্রভৃতির ব্যবচ্ছেদ করে নিঁখুত বর্ণনা করে গেছেন হেরোফিলাস। এইসব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এবং স্নায়ু ও রক্তনালী গুলোর রঙ, আকৃতি, প্রকৃতি, অবস্থান ইত্যাদির সঠিক বর্ণনা করার কৃতিত্বও তাঁর। স্ত্রীরোগ বিষয়ে তাঁর বর্ণনা যুগান্তকারী। ‘অন পালসেস’ এ তিনিই প্রথম লেখেন হৃদযন্ত্রের স্পন্দন ও নাড়ি(পালস)-র গতি একই। রক্তনালী নয়, মানবদেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঞ্চালন করায় স্নায়ু। শুধু তাই নয়, হৃদযন্ত্রের অলিন্দ যে ফুলে ওঠা শিরা নয়, হৃদযন্ত্রের অংশ এবং মানুষের বুদ্ধিবৃত্তির উৎস যে হৃদযন্ত্র নয়, মস্তিষ্ক- এইসব ধারণা তিনিই প্রথম দেন।
নিউরোন, প্রষ্টেট, ডুওডেনাম, রেটিনা ইত্যাদি মানবদেহের অনেক প্রত্যঙ্গের নামকরণ করেন হেরোফিলাস।
শবব্যবচ্ছেদ আইনসিদ্ধ ছিল মাত্র চল্লিশ বছর। গ্রীক সম্রাট প্রথম টলেমি এবং দ্বিতীয় টলেমি- এর শাসনকালে। ২৮০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে হেরোফিলাসের মৃত্যুর কিছুদিন পরে কোনো এক অজানা কারণে শবব্যবচ্ছেদ আবার নিষিদ্ধ হয়ে যায়। যথাক্রমে গ্রীক, রোমান, বাইজান্টাইন, খ্রীষ্টান ও মুসলিম শাসনে তা প্রায় ১৮০০ বছর নিষিদ্ধ থাকার পরে আবার শুরু হয় রেনেসাঁ যুগে। সপ্তদশ শতকের প্রথম দিকে, ইউরোপে।
‘ভিভিসেকশন’ অর্থ্যাৎ মৃত্যুদন্ডাজ্ঞা প্রাপ্ত কয়েদিদের শরীরে কাটাছেঁড়া করে শারীরবিদ্যার পরীক্ষানিরীক্ষা বিষয়ক কিছু বিতর্ক তাঁকে নিয়ে থাকলেও শারীরবিদ্যা ও চিকিৎসাশাস্ত্রে হেরোফিলাসের মহান অবদান চিরকাল মানবসভ্যতাকে স্বীকার করতে হবে।
তথ্যসূত্র
1.Acar F, Naderi S, Guvencer M, Türe U, Arda MN. Herophilus of Chalcedon: A pioneer in Neuroscience. Neurosurgery 2005; 56(4)861-7
2.Štrkalj G, Chorn D. Herophilus of Chalcedon and the practice of dissection in Hellenistic Alexandra. South African Medical Journal 2008; 98(2):86-89
3.Spyros G. Marketos, and Panagiotis K. Skiadas. Galen: A Pioneer of Spine Research. SPINE Volume 24, Number 22, pp 2358–2362
4.Wikipedia- https://en.wikipedia.org/wiki/Herophilos
এই সিরিজের প্রথম প্রবন্ধের লিঙ্ক নীচে দেখুন।