আজ পর্যন্ত ভারতে মোট করোনা-মৃত্যু কতো?
তথ্য সত্য রিকভারি এবং মৃত্যু
সাবধান।। সাবধান।। সাবধান।। নওজওয়ান।। হুঁশিয়ার ।।
[একটা ছোট্ট ফিরে দ্যাখা]
মহামান্য ভারত সরকারের তথ্য দেখে আমরা উৎফুল্ল। এ পর্যন্ত আমাদের দেশে মাত্র (?) সাড়ে চার লক্ষ মানুষ করোনায় মারা গেছে। মানুষের মৃত্যুহার আমাদের দেশে সবচে’ কম। সেটা ভারতের অভূতপূর্ব লক ডাউন, অনমনীয় শৃঙ্খলা এবং বিভিন্ন টোটকা ওষুধের গুণও বটে।
সরকারি হিসেবে আমাদের দেশে করোনামৃত, আজ পর্যন্ত মাত্র সাড়ে চার লক্ষ।
কতোটা সত্যি আর কতোটা গুল্প?
নদী বেয়ে লাশ বয়ে যায়।
অনাহার না অসুখে
কী আসে যায়?
শহরের শ্মশানে আগুন
আর
গ্রামের চুল্লি দেখুন
নিভে যায়।
গেঁয়ো মানুষ
নাকে গোঁজে আম গাছ,
(যদি মেলে কিছুটা বা
অক্সিজেন)
শহরের তরে অক্সিজেন।
গরীবের আছে ভুখা পেট
আর শহরের তরে ক্যান্টিন ।
ঠিক তাই। আলোর বৃত্ত থেকে দূরে আমাদের বিস্তীর্ণ গ্রামাঞ্চল। সেখানে কোভিড পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। লক ডাউনে গতবছর দীর্ঘদিন সব বন্ধ ছিলো। চলাচলের জন্য গাড়ি, ট্রেন নেই। জ্বর হলে’ গাড়ি ভাড়া করে’ শহরে আসা প্রায় অসম্ভব কথা। সুতরাং গ্রামের মানুষ পঙ্গপালের মতো মরেছে। শুধুমাত্র ২০২০ সালের মে মাসে তিন লক্ষ মানুষ অজানা জ্বর আর শ্বাসকষ্টে মারা গেছে। যেহেতু পরীক্ষা হয়নি, তাই কোভিড বলে’ স্বীকার করা যাবে না।ডব্লিউ এইচ ও’র মত অনুযায়ী আজ পর্যন্ত ভারতবর্ষে কোভিড মৃতের সংখ্যা-একচল্লিশ লক্ষ পঞ্চাশ হাজার (৪১,৫০,০০০),জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি এবং সিডিসি (সেন্টার ফর ইনফেক্টিভ ডিজিজ কন্ট্রোল)ও একই ধারণা পোষণ করে। এবং এটাও সরকারি ভাবে স্বীকৃত এক বছরের মৃত্যুখতিয়ান। এঁরা সবাই অজানা জ্বর ও শ্বাসকষ্টে মারা গেছেন। কোভিড পরীক্ষা হয়নি। সুতরাং যাঁরা ভাবছেন, ভারতে কোভিড কিছু করতে পারবে না, তাঁরা সাবধান হলেই সবাইকার মঙ্গল।
●●●● ●●●● ●●●● ●●●● ●●●● ●●●● ●●●● ●●●●
আমার ছোটোবেলাটা উত্তরবঙ্গের দিনহাটা বলে একটা আধা শহরে কেটেছে। তখন ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ। কাছেই পূর্ব পাকিস্তানের সীমান্ত। বাড়িতেই বাঙ্কার,ব্ল্যাক আউটের জন্য কাগজে ঢাকা লন্ঠন আর ট্রেঞ্চ তৈরি আছে, যুদ্ধের সাইরেনের একঘেয়ে ওঠাপড়ার আওয়াজ শুনলেই সবাই বাঙ্কারে। আমরা ছোটরা তখন আকাশে তাকিয়ে দেখতাম জলপাই রংয়ের যুদ্ধবিমান তীব্র শব্দে একে অপরকে তাড়া করেছে। চোখের সামনে গুলি লেগে ধোঁয়া ওঠা বিমানকে ঘুরতে ঘুরতে পড়ে যেতে দেখতাম আর উল্লাসে বলতাম ঐ দ্যাখ পাকিস্তানি প্লেন। আমাদের মতো দু দেশের সরকারই দাবী করতো ধ্বংস হওয়া প্লেনটা বিপক্ষের।
আজও চারপাশে সারাদিন সাইরেনের আওয়াজ। এ অন্য আওয়াজ। অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন। এ অন্য যুদ্ধ। বিপক্ষে একটা মাইক্রোস্কোপিক জীব। আজও সরকারি বয়ানে আমরা জিতছি। অথচ শ্মশানে জমে আছে মৃতদেহের স্তুপ। গঙ্গা যমুনায় ভাসছে সারি সারি মৃতদেহ। এটা কি গণহত্যা না মহামারী? ভারতে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে সাতাশ হাজার মানুষ মারা যায়। করোনা ছাড়াই। অথচ সারা ভারত জুড়ে অতিরিক্ত মাত্র চার হাজার মৃত্যুতেই জমে থাকছে লাশের পাহাড়? উত্তর কিন্তু জানা নেই। অন্ততঃ খাতায় তো লেখা থাকছে- আমরা জয়ী। তাতেই আমি, আপনি সবাই খুশি।
“সরকার সর্বদাই চায় নিজের কৃতিত্ব জাহির করতে। তাতে ভুলে মরণফাঁদে পড়বেন না”
যদি ভাবেন ঝড়ের সময় মরুভূমির বালিতে মুখ লুকিয়ে থাকা মানেই সাহস দেখানো আর বাস্তবটাকে জানানোর অর্থ ভয় দেখানো তাহলে সেই ঈশ্বরবাবুর গল্পের মতো মরণকালে মাসির কান কামড়ে ছিঁড়ে ফেলা ছাড়া আপনার আর গত্যন্তর থাকবে না।
★★★ ★★★ ★★★ ★★★ ★★★ ★★★
বাস্তব পরিস্থিতি
আমাদের দেশে কমপক্ষে একশো চল্লিশ (সহজ শতকরা হিসেবে হয় একশো ষাঠ) কোটি লোকের বসবাস। গ্রামে গঞ্জে করোনা টেস্টের সংখ্যা ভীষণ ভীষণ কম। তাই মৃতদেহে ভরে যাচ্ছে ভারতের নদী-গঙ্গা যমুনা। আর বাকি খবর ভবিষ্যৎ বলবে।
আমরা ঢাক বাজিয়েছি, ঢোল কত্তাল বাজিয়েছি, কাঁসর ঝাঁঝর বাজিয়ে হাত্তালি দিয়েছি। মোম জ্বেলেছি, বাজি পটকা ফুটিয়েছি আর এখন দিশাহীন রাত্তিরে হাতে হ্যারিকেন নিয়ে বসে আছি।
** ** ** ** ** ** ** **
বেরিলি। উত্তর প্রদেশের একটা ছোট্ট গ্রাম। গত দশদিন ধরে গণচিতা জ্বলছে। সরকারি বক্তব্য এক অজানা রোগে শ্বাসকষ্ট, জ্বর আর কাশিতে মানুষ মরছে।গ্রামবাসীদের বক্তব্য সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থা, রক্ত পরীক্ষা কিচ্ছু নেই (সংবাদ সূত্রঃ আজ তক টিভি) সুধী পাঠিকা আপনি সহমত তো? চমৎকার চিত্র তাই না?
■ ■ ■ ■ ■ ■ ■ ■
লাশ গোনা যায় না, মৃতদেহ গঙ্গায় ভাসিয়ে দিতে হয়। হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে। নদীর জলে ধর্ম ভেসে যায়।প্রমাণ করে দ্যায় যে আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বলে কিচ্ছু নেই। সবাইকার পরীক্ষা করার মতো ব্যবস্থাও নেই।এমনকি অন্তিম সৎকার করার ব্যবস্থাও নেই।
■■■■■■■■ ■■■■■■■■■ ■■■■■■■■■■
ও মা, ও কিসের আগুন, কোন কারখানার? আকাশ লাল করে দাউদাউ করে উঠছে?
না রে বাছা। এ আগুন গণহত্যার। সারা দেশে জমে আছে লাশের পাহাড়। কবর দেওয়ার মাটিও আর পড়ে নেই।তাই এক সঙ্গে হিন্দু মুসলমান, খৃষ্টান, দলিত সব মৃতদেহ এক জায়গায় জমা করে পুড়িয়ে দিচ্ছে।
তাই বুঝি মা মাংস পোড়া গন্ধ আসে?
(তথ্য:-সুরাট, টাইমস অফ ইন্ডিয়া)
★★ ★★ ★★ ★★ ★★ ★★ ★★ ★★
করোনা আক্রান্ত হলে , রোগ লক্ষণ ফুটে ওঠে আক্রান্ত হওয়ার চৌদ্দ দিনের মধ্যে। সাধারণতঃ। রোগ যদি হয়, নেগেটিভ হলে তবে রোগমুক্তি। করোনা রোগী হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরছে। নেগেটিভ কিন্তু হয়নি। তারপর মারা গেলে বুকে মাথা রেখে প্রিয়জনের কান্না। সে কি সেরে গেছিলো? সম্ভবতঃ না। সুতরাং বাড়ির সবাই আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে।
কিম্বা আদৌ পরীক্ষা যদি না করা হয় তাহলে কি তার করোনাই হয়নি? প্রশ্নের উত্তর খুঁজে খুঁজে আকাশে তাকিয়ে থাকি। যদি শ্মশানের আগুনে কোনও দিশা দেখায়। এ দেশে মানুষের প্রাণ পিঁপড়ের প্রাণের সমান।(কিম্বা তাও নয়)
এবং
মনে রাখবেন র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টে এই ডেল্টা ওয়েভের জীবাণু ধরা পড়ছে না। সর্বশক্তিমান আমেরিকা স্বীকার করেছে সবাইকার জন্য আরটিপিসিআর টেস্ট করার মতো পরিকাঠামো তাদেরও নেই। আমাদের দেশে তো সরকারিভাবে র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টটাই স্বীকৃত।সুতরাং আমাদের ডাক্তারদের পক্ষে রোগ ধরা এবার আরও কঠিন। সবাইকে সিটি স্ক্যান, আইএল সিক্স, ডি-ডাইমার আর এলডিএইচ লেখা যাবে না। আমাদের দেশে দারিদ্র্য সীমার নিচে (শহরে প্রতিদিন মাথাপিছু তেত্রিশ টাকা, গ্রামে প্রতিদিন মাথাপিছু সাতাশ টাকা হলো দারিদ্র্য সীমা। তার ওপরে উপার্জন হলেই সে আর গরীব নয়) কোটি কোটি মানুষ পড়ে আছে বিনা চিকিৎসায়, বিনা খাদ্যে, খোলা আকাশের নিচে।
গ্রেট ব্রিটেন, আমেরিকার মতো দেশগুলোতে সমস্ত মানুষের উপার্জন অনেক বেশী। তাও তারা আর্থিক ধাক্কা খাচ্ছে। আমাদের দেশের সরকার গরীবদের কথা ভাবছেই না। তাই একচল্লিশ লক্ষ মৃত্যুও অবহেলায় ঢাকা পড়ে যায় আড়ম্বর, মূর্তি আর মন্দিরের তলায়, কোনও বিলাসেই ঘাটতি নেই।
◆◆◆ ◆◆◆ ◆◆◆ ◆◆◆ ◆◆◆ ◆◆◆
যাই হোক, যাই করুন সম্ভব হলে- ‘পয়সা থাকলে দুটো করে মাস্ক পরুন। মুখে হাত দেওয়ার আগে হাত স্যানিটাইজ করুন। বাইরে বেরোবেন না। (অন্ততঃ এই টুকু মেনে চলুন)।
[Statutory warning:- এই লাইনগুলো সম্বলহীন দিন আনা দিন খাওয়া মানুষের জন্য নয়, খেতে না পাওয়া, ক্ষেতে কাজ করা চাষীর জন্য নয়, রাস্তায় শুয়ে থাকা পথ শিশুর জন্য নয়। কেননা তাদের মাস্ক পরার পয়সা নেই।]
ভালো থাকুন মধ্যবিত্ত মানুষ।
চমৎকার লেখা!
ধন্যবাদ জয়ন্তদাদা
কঠোর সত্য
অসহায় জাতি মরিছে ডুবিয়া জানে না সন্তরণ
(নি)দারুণ লেখা!
আমি নির্বাক