আজ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দেশে করোনা বিশেষ ক্ষতি করতে পারে নি। এমন দিনে তিনি এই কথা বলেছেন যখন মৃতের সংখ্যা 11000 ছাড়িয়ে গেল। তিন লক্ষ 54 হাজার মানুষ আক্রান্ত ও প্রতিদিন তা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। প্রধানমন্ত্রী এটাও বলেছেন যে লকডাউন পুরোপুরি সফল। তাঁর সাফল্যের গুণগান অবশ্য কেবল স্বাস্থ্যক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ নেই। তিনি সীমান্ত সমস্যা নিয়ে 2009 সাল থেকে চিন্তিত। তখন সরকারের দুর্বলতা দেখতে অভ্যস্ত বর্তমান প্রধানমন্ত্রী চীনা আক্রমণে নিহত 20 জন সৈনিকের মৃত্যুতে তাঁর শক্তিমান রূপ দেখাতে ব্যর্থ যদিও তিনি সেখানেও তাঁর সাফল্য দেখতে পাচ্ছেন। আমরা 2019-এ ও দেখেছিলাম 300 কেজি বারুদ জোগাড় করে নির্বাচনের ঠিক প্রাক মূহুর্তে কিভাবে বিএসএফ জওয়ানের প্রাণ গিয়েছিল। তখনো তাঁর বাকচাতুর্যে দেশসুদ্ধ মানুষ মুগ্ধ হয়েছিল।
করোনা মোকাবিলায় বৈজ্ঞানিক মানসিকতার অভাব আমরা দেখেছি। লকডাউনেও সেই মানসিকতার প্রতিফলন দেখা গিয়েছে। যেসব দেশ লকডাউনে সফল হয়েছে তাদের সাফল্যের চাবিকাঠি আছে বৈজ্ঞানিকদের সহায়তায় সঠিক সময়ে লকডাউন করা ও তোলার মধ্যে। এই দেশে লকডাউন যখন হয়েছে তখন হাতে গোনা কিছু কেস ছিল আর যখন লকডাউন তোলা হল তখন লাফিয়ে লাফিয়ে কেস বেড়ে চলেছে।
শ্রমিকদের অপরিকল্পিত ভাবে ফেরত পাঠানো ও রেশন ব্যবস্থার দুর্বলতা পদে পদে ফুটে উঠেছে। 800 প্রবাসী শ্রমিক রাস্তায় মৃত ও এখন যারা বাড়ী ফিরেছেন তাদেরও একটা অংশ আক্রান্ত। প্রবাসী শ্রমিকদের ঘরে ফেরানো দরকার ছিল যখন তখন সরকার হাত গুটিয়ে অবশ্য বসেছিল। এই রাজ্যে মোট 12 লক্ষ প্রবাসী শ্রমিক বাড়ী ফিরেছেন। তাদের বাড়ীতে কোয়ারান্টিনে করা হয়েছে। কিন্তু অনেকে কোয়ারান্টিনের তোয়াক্কা না করে বাইরে বেরোচ্ছেন। ইতিমধ্যে উত্তরবঙ্গে দুজন করোনা পজিটিভ হওয়ার পর বাড়ী থেকে উধাও হয়ে গেছেন। ঠিক একই ভাবে চেন্নাই ফেরত দুজন সংশ্লিষ্ট কেরিয়ার ফ্লাইটের ঢিলেঢালা মনোভাবের সুযোগ নিয়ে করোনা পজিটিভ অবস্থায় পশ্চিম মেদিনীপুর পৌঁছে গেছেন। সর্বত্র একটা অব্যবস্থা ও অবৈজ্ঞানিক মানসিকতার ছাপ স্পষ্ট।
এই অবস্থায় পশ্চিমবঙ্গ যথেষ্ট কৃতিত্বের দাবিদার। আম্ফানে বিধ্বস্ত বাংলা সবার সহযোগিতায় ফিনিক্সের মতো উঠে দাঁড়াচ্ছে। একদিকে যখন ত্রাণ, উদ্ধার ও মেডিকেল ক্যাম্প করছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও নানা ধরনের বামপন্থী যুবক ও ছাত্ররা তখন স্বাস্থ্য ব্যবস্থার যথেষ্ট বৈজ্ঞানিক প্রয়োগ করে করোনার বিপুল গতি স্লথ করতে এই রাজ্য সক্ষমতা দেখিয়েছে।
জনগণের হেঁশেল চালানোর জন্য বামপন্থী যুবকদের কোন প্রশংসা যথেষ্ট নয়, তেমনি স্বাস্থ্য কর্মীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে। খাবার পৌঁছে দেওয়ার জন্য রাস্তায় নিরন্ন মানুষের ভীড় আটকানো গেছে তেমনি সক্রিয় কেসের সংখ্যা নিম্নমুখী। গত পর পর চারদিন মোট কেসের তুলনায় ডিসচার্জ অনেকটা বেড়েছে। আজ (17জুন) মোট কেস 125 জন কমে 5221 জন দাঁড়িয়েছে। নতুন পজিটিভ কেস 3.4% হয়েছে, যা আগের তুলনায় (2.7%) সামান্য বেশি। প্রবাসী শ্রমিকদের আগমন ও পজিটিভ হয়ে পড়া তার অন্যতম প্রধান কারণ। আজকের 351 জনের 197 জন প্রবাসী। এই রাজ্যে আশঙ্কা সত্বেও যে সামাজিক সংক্রমণ হয়নি তার সাফল্যের ভাগীদার চিকিৎসক, চিকিৎসাকর্মী ও স্বাস্থ্য দপ্তরের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও ছাত্র যুবকরাও।
সরকারের উচিত হবে কড়াভাবে সব প্রবাসীদের বাধ্যতামূলক কোয়ারান্টিন করা- হোম কোয়ারান্টিনের দুর্বলতা শুধরে নিতে পারলে সাফল্য আরো দ্রুত আসবে।
রেশন ব্যবস্থা শক্তিশালী করা ও 100 দিনের কাজ দিয়ে মানুষের হাতে অর্থ পৌঁছে দিতে হবে। বিজ্ঞানমনস্ক মানসিকতার বিস্তার করতে হবে। একমাত্র করোনা শত্রুও নয়, লকডাউনে মানসিক চাপ কমানো, খোলাখুলি সাম্প্রদায়িক প্রচারের মাধ্যমে মানুষে মানুষে বিভেদ করানোর চেষ্টা যা ভাইরাসের মতোই ভয়ঙ্কর–সব রুখতে হবে। শারীরিক দূরত্ব ও সামাজিক সংহতি রক্ষা করার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
সব ধরনের ভাইরাস ও মহামারি রুখে রাজ্য ও দেশ আবার স্বমহিমায় উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।
ভালো লেখা।