অনেক বছর আগে| মুক বধিরদের শিক্ষিকা হয়ে সবে ঢুকেছি তখন স্পেশাল স্কুলে| এ বিষয়ে প্রথাগত শিক্ষাটাই শেষ করেছি মাত্র|কী করে বধির শিশুর কাছে ভাষা পৌঁছে দিতে হয়, সকাল সন্ধ্যের আলোর তফাৎ ধরিয়ে দিতে হয়– শেখাতে গিয়ে তখন প্রাণান্তকর অবস্থা আমার|
মনে পড়ে, একবার একটি বাচ্চাকে বোঝাচ্ছিলাম রানী কাকে বলে! এইখানে একটি কথা বলে রাখি আপনাদের, বধির শিশু চারপাশে যা দেখে তাই শেখে বা শিখতে চায়| সহজে এবং দ্রুত| যা সে দেখেনি, সেই না দেখার চত্বরের কোনো কিছুই কিছুতে শিখতে চায় না| দেখতে পায় না বলে বুঝতে পারে না| অদ্ভুত ব্যাপার — বুঝতে চায়ও না অনেক সময়ই|
বুঝতে পারে না বলেই তার সবসময় অনীহা থাকে বিমূর্ত বিষয়ে, ঐতিহাসিক, প্রাগৈতিহাসিকের রহস্যমোচনে| সেদিনও ক্লাসে বাচ্চটি কিছুতেই রানী বুঝতে পারছিল না| যতবার রানীর ছবি দেখাই, ততবার সে বোঝে রানী তার চারপাশের দেখা মেয়েদের মধ্যে কোনো একজন| ফলে hearing aid দিয়ে আমার বলা রানী উচ্চারণ তার কানে গেলেই সে তার মাকে দেখাতে লাগে| মা আর রানীর পার্থক্য বোঝাতে এবার একটি খবরের কাগজের মুকুট বানিয়ে নিজের মাথায় পরি| আর বারবার বলতে থাকি, যে সব মেয়ে মাথায় এমন মুকুট পরে, সেই তো রানী! এই দ্যাখ আমি মুকুট পরে কেমন রানী হয়ে গেছি!
কী করলো জানেন! আমার মাথা থেকে মুকুটটা খুলে পরিয়ে দিলে তার মায়ের মাথায়| আর তারপর চড়ে বসলো মুকুট পরা মায়ের কোলে| কী দোল খেতে লাগলো! রানী মা দোলে| মুকুট দোলে| দোলে রানীমেয়ে! বদমাশ একটা|
Very good indeed.
কী মিষ্টি! মা ওর কাছে সবচেয়ে প্রিয়।
ঐ শিশুটির কাছে ‘মা’ মানে রাণী,যে তাকে রক্ষা করে আদর করে ,পালন করে ,ভালোবাসে,স্নেহের বাঁধনে বেঁধে রাখে । বধির শিশুদের এই বোধের তারিফ করতেই হয় । তোমার অভিনব শিক্ষা পদ্ধতিকে সেলাম । সুস্থ থেকো।
কেমন সুন্দর চিনিয়ে দিল তার রানী কে তার নিজস্ব ভঙ্গিতে !
আর তুমি সেটা দেখলে, বুঝলে, বুঝিয়ে দিলে আপন ভঙ্গিতে । সাবাস–